গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য : উরুন- গাইন
হ্যাল্লো, আমার বাংলা ব্লগবাসী। আশা করি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। সবার ঈদের ছুটি আশা করি ভালোভাবে কাটছে।
আমি ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে গ্রামে শ্বশুড়বাড়িতে এসেছি। আমার শ্বশুড়বাড়ি মূল শহর থেকে একটু দূরে, একদম গ্রামের দিকে। গ্রামীণ পরিবেশে ঈদের ছুটি আমারো বেশ ভালো কাটছে। তার উপর এখন যেহেতু বৃষ্টি হচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই, গ্রামের বৃষ্টি আমার কাছে ভীষণ উপভোগ্য মনে হয়।
আজ অনেকদিন পর শ্বশুড়বাড়িতে উরুন-গাইন এ আমার কাকী শ্বাশুড়িকে কাজ করতে দেখলাম। যারা শহরে বড় হয়ে উঠেছে, তাদের কাছে এই জিনিস হয়তো একদম নতুন কিছু। আমার মনে আছে, এই উরুন-গাইন দেখেছিলাম ছোট্ট বেলায়, যখন মামার বাড়ি যেতাম। মামার বাড়িতে উরুন -গাইন দিয়ে ধান ভাংগা হতো। আমার মনে আছে, মামার বাড়িতে তিনটি উরুন-গাইন ছিলো। সবগুলো তে যখন একসাথে ধান ভাংগা হতো, কি অদ্ভুত একটা তালের সৃষ্টি হতো৷ সবাই সেই তালের সাথে সাথে ধান ভাংতো। সময়ের সাথে সাথে গ্রাম বাংলার পুরোনো দিনের ঐতিহ্য উরুন -গাইন এখন বিলুপ্ত প্রায়। এর জায়গা দখন করে নিয়েছে যান্ত্রিক মেশিন। অথচ অনেক আগে এই উরুন-গাইন এর সাহায্যেই ধান ভাংগা, চাল থেকে চালের গুড়া তৈরি, ডালের খোসা ছাড়ানোর মতো কাজগুলো করা হতো। তার পাশাপাশি কিছু কিছু অঞ্চলে এই কাজগুলো করতে ব্যবহার করা হতো ঢেকি। যেমন, আমাদের গ্রামের বাড়িতে আমি ছোটবেলায় ঢেকির ব্যবহার দেখেছি।
শ্বশুড়বাড়িতে এখনও কিছু কিছু কাজ উরুন-গাইনের করা হয়। যেমন আজ আমার কাকী শ্বাশুড়ি উরুন গাইনের সাহায্যে খেসারির ডালের খোসা ছাড়ালেন। সেই মুহূর্তে আমি কিছু ছবি তুলে রেখেছি আপনাদের সবার সাথে শেয়ার করবো বলে।
নিচের ছবিতে খোসা সহ ডাল। যেটা আমার কাকী শ্বাশুড়ি খোসা ছাড়াবে উনুন গাইনের সাহায্যে।
অনেকে হয়তো পানের বাটা দেখে থাকবেন। পানের বাটার মতো কিন্তু বড় যে অংশটা, সেটার নাম উরুন। আর লাঠির মতো লম্বা যে অংশটা, তার নাম গাইন। উরুনের মধ্যে কিছুটা ডাল দিয়ে গাইনের সাহায্যে বার কয়েক আঘাত করলেই সুন্দর মতো ডাল থেকে খোসা আলাদা হয়ে যায়।
নিচের ছবিতে উরুন থেকে কুলায় নামানো ডালের ছবি। এতে দেখা যাচ্ছে খোসাগুলো আলাদা হয়ে আছে। সবগুলো ডাল খোসা ছাড়ানো হলে কুলার সাহায্যে সেই খোসাগুলো ডাল থেকে বেছে ফেলা হয়।
এই ছিলো আমার আজকের আয়োজন। আপনাদের কার কার এই উরুন-গাইন পরিচিত, কমেন্টে জানাবেন। কারো বাড়িতে যদি এখনো এর ব্যবহার হয়ে থাকে, সেটাও জানাবেন।
সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন সেই শুভকামনা।
অনেক দিন পর উড়ুন গাইন দেখতে পেয়ে বেশ ভালো লাগলো।আস্তে আস্তে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গুলো হাড়িয়ে যাচ্ছে।মামার বাড়ির এলাকায় গেলে উড়ুন গাইন বেশি চোখে পড়তো। আমাদের বাড়িতে উড়ুন গাইন ছিলো না কিন্তু ঢেঁকি ছিলো এখন এই ধরনের জিনিস গুলো খুবই মিস করি।শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে খুব ভালো এনজয় করছো বিষয় গুলো তা তোমার ফটোগ্রাফি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য অনেক সুন্দর করে তুলে ধরার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ মনা।
হ্যা দিদিভাই। আমাদের বাড়ির ঢেকিটাও তো এখন আর নেই। সবাই বলতে গেলে মেশিনেই কাজ চালিয়ে নেয়। অথচ এইখানে এখনো আশেপাশের বাড়ির মহিলারাও এসে উরুন গাইন ব্যবহার করে, যাতা ব্যবহার করে.... আমার খুব ভালো লাগে
গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্য গুলো এখন যেন বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছে। ছোটবেলায় আমাদের এলাকাতেও এই ধরনের জিনিসগুলো দেখতে পেতাম কিন্তু এখন আর দেখতে পাওয়া যায় না। অনেকদিন পরে আপনার পোষ্টের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া এই জিনিস দেখে ভালই লাগলো।
আমার শ্বাশুড়ি এখনো উরুন গাইন ব্যবহার করেন। তার মাধ্যমেই আমিও অনেক দিন পর দেখলাম। এবং আশেপাশে যাদের প্রয়োজন হয়, আমার শ্বশুড়বাড়িতে এসে নিজেরা নিজেরাই এসে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে যায়।
গ্রাম বাংলায় একটা সময় অনেক কার্যকর্ম চলতো সেটি দিনের পরিবর্তনে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। তবুও ঐতিহ্যবাহী একটি নমুনা আপনার মাধ্যমে দেখতে পেলাম। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
ঠিক বলেছেন। আগে গ্রাম বাংলায় অনেক ধরনের কার্যক্রম চলতো যা এখন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে...