ছাত্রজীবন এবং ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ভার্সিটি এক্সাম যেন যুদ্ধক্ষেত্র।
সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সবসময় ভালো থাকবেন, এটাই প্রত্যাশা।
ছাত্র জীবন কতটা সংগ্রামী কতটা যুদ্ধক্ষেত্র, তা হাড়ে হাড়ে অনুভব করছি নতুন করে। যারা এবার এইচএসসি পাশ করে ভার্সিটি ভর্তি এক্সাম দিচ্ছেন।তারা যে কি পরিমাণ কষ্ট করছেন তা আসলে বলে বোঝানোর মত নয়। এইতো কদিন আগে রাজশাহী ভার্সিটির পরীক্ষা দেয়ার জন্য শিপুকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। ট্রেনের অবস্থা কি আর বলব, পা দেয়ার জায়গা ছিলনা। মানুষের উপর মানুষ।প্রচন্ড এই গরমে
ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবক সবাই যেন অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছিল। আমাদের সিটের সামনে বেশ কয়েকজন মেয়ে মানুষ তাদের মা সহ দাঁড়িয়ে ছিল। মানুষের এইসব কষ্ট সহ্য করার মতো ছিল না। প্রতিটি স্টেশন থেকে নতুন নতুন ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবক উঠতেছে ট্রেনে। অঝরে ঘামছে সবাই। পিপাসায় ছটপট করছে।
ভালোভাবে দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত ছিল না। এ যে কি কঠিন যুদ্ধ। শিপু এবং আমি পাশাপাশি সিটে বসে ছিলাম। বাধ্য হয়ে শিপুকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ওখানে বসার সুযোগ করে দিলাম দুজন মেয়েকে। এরপর আমিও মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে দু-একজনকে বসার সুযোগ করে দিচ্ছি। এবার জানালা দিয়ে বড় বড় পানির বোতল কিনে সবাইকে পানি দিয়ে সহযোগিতা করলাম। এক একজন শিক্ষার্থীর অবস্থা অনেক খারাপ ছিল। তার পরেও হাতে বই। তার পরেও ট্রেন খুব স্লো যাচ্ছিল। যেখানে রাজশাহী পৌঁছানোর কথা ছিল রাত নয়টা থেকে সাড়ে নয়টার মধ্যে।সেখানে আমরা গিয়ে পৌছালাম রাত সাড়ে বারোটায়।এরপর শুরু হলো নতুন এক যুদ্ধ। এত এত মানুষের ভিড়ে প্ল্যাটফর্ম ভরে গিয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছিল সেখানকার রিক্সাওয়ালা, সিএনজি, অটোওয়ালা কেউ যেন কথাই শুনতে চাচ্ছে না।সেদিন আমি তাদের নতুন এটিটিউড দেখেছি।কোন রিক্সা নাই, সিএনজি নাই, অটো নাই সে কি অবস্হা। তার পরেও দুটি রিক্সাওয়ালা 20 টাকার ভাড়া প্রায় 200 টাকা চাচ্ছিল। বাধ্য হয়ে 20 টাকার ভাড়া 200 টাকা দিয়ে যেতে হলো।সেখানে আমার এক পরিচিত ভাই ভাবির বাসায় উঠেছিলাম। অত রাতে আমাদের জন্য এত সুন্দর সুন্দর খাবারের আয়োজন করেছিল।কিন্তু আমরা গরমে এতটাই নাজেহাল হয়ে গিয়েছিলাম যে তেমন কিছুই খেতে পারলাম না। ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় তিনটা থেকে সাড়ে তিনটা বেজে গেল।
ভোরবেলা আবার শিপুকে ডেকে দিলাম একটু রিভিশন দেয়ার জন্য। যাইহোক সকালবেলা নাস্তা খেয়ে আবার যখন বাইরে গেলাম তখন দেখি প্রচন্ড রোদ।এবং স্কুল মাদরাসা মসজিদগুলোতে এমনকি ইস্টিশনের প্লাটফর্মে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী।সারা বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক দিয়ে পুরো রাজশাহী পুরো জ্যাম।রাজশাহী রিক্সাওয়ালা গুলো এত পরিমান ব্যবসা করেছেন চারদিনে যা তাদের দুই বছরের ইনকামের সমান।শুধু তাই নয় মানুষকে অনেক ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছিল এই রিক্সাওয়ালা গুলো।রাজশাহী ভার্সিটির কাজলা গেটে শেখ রাসেল মডেল স্কুলে শিপুর সিট পড়েছিল। আমরা যে বাসায় উঠেছিলাম সেখান থেকে রিক্সায় যেতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগে সেন্টারে। কিন্তু সেদিন প্রায় দুই ঘন্টায় ও রিকশা নিয়ে যেতে পারেনি।এত পরিমান জ্যাম।সে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী হেঁটে হেঁটেই পরীক্ষার হলে গিয়েছিল।এবং অনেকেরই পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১০-১৫ মিনিট পর ঢুকতে পেরেছে।একবার নিজেরাই ভেবে দেখুন সেদিন রাজশাহী শহরের অবস্থাটা কি ছিল।হাজার হাজার গাড়ি মিনি বাস।আর লাখো লাখো মানুষ।একজন শিক্ষার্থীর পেছনে দুই-তিনজন অভিভাবক।এই ভর্তি পরীক্ষা গুলোতে চলে যুদ্ধ আর যুদ্ধ। অভিবাবকরা টাকা যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে।আর শিক্ষার্থীরা দিন রাতে এত পরিমান পরিশ্রম করছে তাদের নেওয়া খাওয়া ঘুম বিসর্জন দিয়ে শুধুমাত্র পড়াশুনা আর ছোটা ছুটি।তারপরেও কেউ চান্স পাচ্ছে কেউ পাচ্ছে না। তাইতো এভাবেই সংগ্রাম করতে করতে হাজারো শিক্ষার্থী অঝোরে ঝরে যায়। আমি সকল শিক্ষার্থীর জন্য শুভ কামনা করছি এবং মন থেকে দোয়া করছি।মহান আল্লাহতায়ালা যেন সবাইকে কোন না কোন ভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ করে দেন।
বন্ধুরা ছাত্রজীবনের এবং ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এটি। খুব কাছ থেকে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী এই সংগ্রাম উপলব্ধি করতে হচ্ছে নতুন করে।পরিবেশ এবং পরিস্থিতি গুলো নানান রকমের প্রশ্ন উদয় করছে মনে।আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং ভর্তি পরীক্ষাগুলোর কিছু পরিবর্তন আনা আবশ্যক।আমার যে যে প্রশ্ন গুলো মনে উদয় হয়েছিল তা আরেকদিন শেয়ার করব আপনাদের সাথে।।পরিশেষে বলবো শিপুর জন্য সবাই দোয়া করবেন।
তো বন্ধুরা আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আপনারা সবাই সবসময় ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। সুন্দর থাকবেন। সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় আজকের মত এখানেই।সকলেই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আর আপনাদের জন্য সব সময় দোয়া এবং অফুরন্ত ভালোবাসা।♥♥
আমি সেলিনা সাথী। আমার প্রফেশন, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার ও মোটিভেটর। আমি একজন সমাজ কর্মি ও সংগঠক। এছারা ও তৃনমূল নারী নেতৃত্ব সংঘের নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ। আমি "নারীসংসদ"
এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি "সাথী পাঠাগার"। আমার লেখা মোট ১০ টি একক ও যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একুশে বই মেলায় প্রতি বছর একটি করে কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের চেস্টা করি। আমার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে "মিস্টি প্রেম" (উপন্যাস), "অশ্রু ভেজা রাত" (কবিতা), "জীবন যখন যেমন" (কবিতা), "একুশের বুকে প্রেম" (কবিতা), "নারীকন্ঠ" (ম্যাগাজিন) অন্যতম।
আসলে আপু বর্তমান যুগ অত্যন্ত প্রতিযোগিতার যুগ। আর বর্তমান সময়ে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চান্স করে নেওয়াটা খুবই কঠিন। তারপরও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আপু আমি আশা করি, আপনার ছেলে শিপু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে দারুন ভাবে সফল হবে। আপু আপনার ছেলে শিপুর জন্য অনেক অনেক দোয়া ও শুভকামনা রইল।
দোয়া করবেন আপু তাই যেন হয়। অনেক টেনশন হয়
শিপুকে নিয়ে। ওকে ভালো কোন ভার্সিটিতে ভর্তি করাতে পারলে বেশ শান্তি পাব।♥♥