অনুভূতির গল্প- হৃদয়ের টানে কোলকাতা (পর্ব-০৬)
হ্যালো বন্ধুরা,
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন এবং সময়গুলোকে উপভোগ করার চেষ্টা করছেন। আজ অনুভূতির গল্পের ষষ্ঠ পর্ব শেয়ার করবো আপনাদের সাথে। কমবেশি নানা ধরনের নতুন পদের খাবারের স্বাদ এবং দাদার প্রতি ভিন্ন অনুভূতির আবেগ ও ভালোবাসা নিয়ে আমরা রাতে হোটেলে ফিরে আসলাম। আসলে সেদিনের রাতটা ছিলো আমাদের জন্য প্রাপ্তির চেয়ে বেশী কিছু, আমরা হোটেলে ফিরে তিনজন আবার বসলাম এবং নিজেদের অনুভুতি নিয়ে পুনরায় কিছু সময় আড্ডা দিলাম, স্মৃতিগুলোকে হৃদয়ের মাঝে স্থায়ী করে নিলাম। কারন ভালোবাসা এবং ভালোলাগার অনুভূতি খুব সহজেই হৃদয়ের গভীরতা থেকে হারিয়ে যায় না, অন্য রকম এক উচ্চতায় তার অবস্থান থাকে। তাই আমরা নিজেদের অনুভূতিগুলো পুনরায় নিজেদের সাথে শেয়ার করলাম এবং তারপর কিছুটা সময় আবার হোটেলের নিচে নেমে হাঁটাহাঁটি করলাম এবং পরের দিন সকালে ফেরার ট্রেনের টিকেট কাটার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম হতে উঠলাম তারপর নাস্তা সেরে আমরা ট্রেনের টিকেট কাটতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলাম কিন্তু এই ফাঁকে সুমন ভাই কিংপ্রস ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করলেন এবং খুব দ্রুত কোথা হতে টিকেট কাটা যায় সে ব্যাপারে কিছু টিপস নিয়ে নিলেন। এটা ছিলো দারুণ একটা বুদ্ধি সুমন ভাইয়ের, কারন যেহেতু আমাদের এই ব্যাপারে কোন অভিজ্ঞতা নেই আর সেদিন ছিলো রবিবার মানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন। কিংপ্রস ভাই দারুণ রেসপন্স করেছিলেন এবং তারপর পরামর্শ অনুযায়ী আমরা চলে গেলাম ইস্টার্ন রেলওয়ে ফরেন টুরিস্ট বুরো, কলকাতা। এটাকে নাকি অফিস পাড়াও বলে পরে শুনেছিলাম। আমরা দ্রুত চলে গেলাম সেখানে, দেখলাম চারপাশটা একদম ফাঁকা, আশে পাশে সব বড় বড় বিল্ডিং এবং সবগুলো বেশ পুরনো। কিন্তু অফিসে গিয়ে হতাশ হলাম, যিনি টিকেট দিবেন তিনি এখনো আসেন নাই, কখন আসবেন সেটা কেউ বলতে পারেন না। আমরা টিকেটের ফরম নিলাম এবং পূরণ করে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
অপেক্ষা খুব কঠিন একটা বিষয়, যেহেতু বসে থাকতে ভালো লাগছিলো না তাই আমরা বাহিরে চলে আসলাম এবং চারপাশটা একটু ঘুরে দেখার চেষ্টা করলাম। সড়কগুলো একদম ফাঁকা ছিলো বিল্ডিংগুলোর মতো। হাঁটতে হাঁটতে আমরা অনেকটা সামনের দিকে চলে আসলাম। কিছু দূর যাওয়ার পর একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়লো আমাদের। গঙ্গাতীর এবং তার পাশেই দেখলাম চক্রকার রেলষ্টেশন। আমরা হাঁটা ধরলাম সেদিকে কৌতুহল দূর করার জন্য। হাঁটার সাথে সাথে চারপাশের প্রকৃতি, দৃশ্য, ফাঁকা সড়ক এবং ভিন্ন ধরনের বাসের চিত্র, সব কিছুই ভালোভাবে উপভোগ করার চেষ্টা করলাম। অবশ্য আরো একটা উদ্দেশ্য ছিলো মনে মনে, এগুলো মনে না রাখলে আবার যদি হারিয়ে যাই হা হা হা। না না আমি ছোট বেলা হতেই কোথায় গেলে চারপাশের দৃশ্যগুলো মনে রাখার চেষ্টা করি যেন পথ হারিয়ে না ফেলি।
আমরা চারপাশের পরিবেশটা ঘুরে দেখলাম, আবার মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম টিকেট কাউন্টারের লোক যদি ফিরে আসে তাহলে তো আমরা আবার টিকেট মিস করবো। তাই দ্রুত আবার সেখান হতে ফিরে আসলাম। স্টেশনটা অনেকটাই আমাদের মতো মানে আমাদের স্টেশনগুলোর মতো কিন্তু একদম ফাঁকা মানে যাত্রীর উপস্থিতি খুব একটা চোখে পড়লো না। লেবুর শরবতের দোকান দেখে সেখানে গেলাম এবং ভিন্ন স্বাদের লেবুর শরবত খেয়ে আমার টিকেট কাউন্টারের দিকে হাঁটা ধরলাম। সড়কের দুই পাশে বেশ প্রসস্ত ফুটপাত রয়েছে এবং সেগুলোতে ছোট ছোট অনেক দোকান রয়েছে, আমরা ঢাকা শহরে যেগুলোকে বলে থাকি হোটেল আল সালা দিয়ে ঢাকা। যদিও সবগুলো বন্ধ ছিলো, যেহেতু সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিলো। আমাদের শহরের মাঝেও এই রকম প্রচুর দোকান রয়েছে সেখানে সস্তায় নাস্তা কিংবা লাঞ্চ করার সুযোগ থাকে। প্রায় প্রতিটি শহরের মাঝেই এই রকম দোকান থাকে। কিছু দোকান অবশ্য খোলা ছিলো এবং কিছু লোক সেখানে খাবারও খাচ্ছিলেন। একটা বিষয় বেশ বুঝতে পারছি কলকাতায় সস্তায় অনেক জিনিষ পাওয়া যায় এবং খাবারও খাওয়া যায়।
আমরা আবার ইস্টার্ন রেলওয়ে অফিসে ফিরে আসলাম, তারপর আবার শুরু হলো অপেক্ষার পালা। আমরা অন্য যাত্রীদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠলাম, এর মাঝে হঠাৎ পাশে দাঁড়ানো একজন ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষন হলো এবং তাৎক্ষনিকভাবে আমি তাকে চিনে ফেললাম। তারপর কিংপ্রস ভাইয়ের সাথে কোলাকোলি করলাম এবং কৌশল বিনিময় করলাম। উনি অবশ্য আরো আগেই এসেছিলেন আর দূর হতে আমাদেরকে ফলো করতেছিলেন, বুদ্ধিমান উকিল বলে কথা। কিংপ্রস ভাই আসার পর আড্ডাটা আরো জমে উঠলো এবং সময় আরো দ্রুত যেতে লাগলো। তারপর হঠাৎ ঘোষণা আসলো, নতুন কাউকে ফরম দেয়া হবে না, যতগুলো দেয়া হয়েছে যদি সময়ের মাঝে সম্ভব হয় তাহলে তাদের সবাইকে টিকেট টিকেট দেয়া হবে। আশা জেগে উঠলো আবার, ধৈর্য্য নিয়ে আবার অপেক্ষা করতে লাগলাম এবং একটা সময় কাংখিত টিকেট হাতে পেলাম।
কিন্তু ততক্ষনে একটা দিনের পুরো অর্ধেক সময় উধাও হয়ে গেলো। আমরা সেই সকাল সাড়ে নয়টায় এখানে এসেছিলাম আর বের হলাম যখন তখন প্রায় দুটো বাজে, তাহলে বুঝে নিন কি পরিমান ধৈর্য্য পরীক্ষা দিয়েছিলাম আমরা। তাও ভালো যে টিকেট হাতে পেলাম। আসলে আমাদের পরিকল্পনা ছিলো যাওয়ার টিকেটটা নিশ্চিত হলে তাহলে ঘুরাঘুরিতে আর কোন চিন্তা থাকবে না। অবশ্য এখানে না আসলে নাকি পুরো দিনটাই মাটি হয়ে যেতো কারন কিংপ্রস ভাইয়ের কাছে পরে জানতে পেরেছিলাম কোলকাতা শহরে গিয়ে টিকেট কাটতে গেলে আরো বেশী ঝামেলায় পড়তাম কারণ সেটা নাকি দুপুরের পর খোলা হয়। এরপর সেখান হতে বেরিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা করলাম দিনের বাকি অংশের সময়গুলো কোথায় কিভাবে ব্যয় করবো এবং দুপুরের খাবার কোথায় খাবো। বাকিটা পরের পর্বগুলোতে পাবেন ......
তারিখঃ মার্চ ২৬, ২০২৩ইং।
লোকেশনঃ ইস্টার্ন রেলওয়ে অফিস সংলগ্ন এরিয়া, কলকাতা।
ক্যামেরাঃ রেডমি-৯ স্মার্টফোন।
ধন্যবাদ সবাইকে।
@hafizullah
আমি মোঃ হাফিজ উল্লাহ, চাকুরীজীবী। বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। বাঙালী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করি। ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সমর্থন করি, তবে সর্বদা নিজেকে ব্যতিক্রমধর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে পছন্দ করি। পড়তে, শুনতে এবং লিখতে ভালোবাসি। নিজের মত প্রকাশের এবং অন্যের মতামতকে মূল্যায়নের চেষ্টা করি। ব্যক্তি হিসেবে অলস এবং ভ্রমন প্রিয়।

|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||




>>>>>|| এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness

OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
হৃদয়ের টানে পর্ব-৬ গল্প টা পড়ে অনেক ভালো লাগলো এবং সেই সাথে অনেক কিছুই জানতে পারলাম।দূর্ভাগ্যবশত আগের পর্ব গুলো পড়তে পারিনি।আগের পর্ব গুলো পড়লে হয়তো আরও অনেক কিছু জানা যেতো।কিংপ্রোস দাদার কথা অনুযায়ী ইস্টার্ন রেলওয়ে টিকিট কাউন্টারে গিয়ে যথাসময়ে ফরম পূরণ করতে পেরেছিলেন বলেই হয়তো তাড়াতাড়ি টিকিট পেয়েছিলেন।টিকিট কাটা চারদিকের মনোরম পরিবেশ উপভোগ করা,লেবুর শরবত খাওয়া কিংপ্রোস দাদা সহ আড্ডা দিয়ে সময় পার করা সবমিলিয়ে অসাধারণ কিছু মুহুর্ত তুলে ধরেছেন ভাইয়া।আপনা প্রতিটি ফটোগ্রাফি অসাধারণ লেগেছে।অনেক সুন্দর করে অনুভূতি গুলো শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই ভাইয়া।সর্বদাই ভালো থাকবেন এই প্রত্যাশা করি।🙏
আসলে কিংপ্রস ভাই থাকাতে অনেক বিষয়ে আমরা বেশ ভালো অভিজ্ঞতা নিতে পেরেছিলাম, কিংপ্রস ভাই বেশ সুন্দরভাবে আমাদের অনেক জায়গা ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন। ধীরে ধীরে সব লিখবো।
কিংপ্রোস দাদার সবকিছু পরিচিত আর উনি নিঃসন্দেহে একজন পরোপকারী মানুষ তা বোঝাই যাচ্ছে।আপনাদের ঘোরাঘুরি করার মুহূর্ত গুলো দেখার অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া।ধন্যবাদ।🙏
হ্রদয়ের টানে কলকাতা এই পর্বটি পড়ে খুব ভাল লাগলো। যদিও সুমন ভাইয়ার পোস্টে আগেই কিছুটা পড়েছিলাম।আপনার পোস্টে ডিটেইলস পেলাম।ভাইয়া টিকিট কাটতে গিয়ে সত্যি ই ধৈর্যের পরীক্ষা দিলেন সাড়ে নয়টা থেকে দুইটা তাতো মেলা সময়।আর আপনার মতো আমারও এ অভ্যাস কোথাও গেলে চারপাশটা দেখে দেখে রাখি, এখনও।যাক শেষ পর্যন্ত টিকিট পেয়েছেন, বাঁচলেন।সুন্দর অনুভূতি খুব সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে শেয়ার করলেন,খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে। পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা.....
হুম ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন পরিবেশে নতুন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলাম আমরা, তবে পরীক্ষায় পাশ করেছি কিন্তু ফেল মারি নাই, হা হা হা।
ভাইয়া হৃদয়ের টানে সবাই সব জায়গায় যায়।আসলে ভাইয়া টিকিট কাটতে গিয়ে আপনারা অনেক ধৈর্যের পরিক্ষা দিলেন।সত্যি অপেক্ষা জিনিসটা অনেক কষ্টের। যাইহোক অবশেষে টিকিট ভালো মত পেয়েছেন এটাই বড় কথা। দেখা যাক পরবর্তী পর্বে কি খাওয়া দাওয়া অপেক্ষা করছে।
একদমই টিকেট হাতে পাওয়ার পর কিন্তু সব কিছু ভুলে গিয়েছি নিমিষেই, দারুণ একটা অভিজ্ঞতা ছিলো এটা।
অপেক্ষা জিনিস টা আসলেই অনেক বিরক্তিকর এবং কষ্টের ৷ তবে মাঝে মাঝে বেশ মজারও হয় ৷ আপনাদের তো বেশ ভালোই অপেক্ষা করতে হয়েছে টিকিট কাটতে গিয়ে ৷ যাই হোক অনেকটা ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে অবশেষে টিকিট হাতে পেয়েছেন জেনে ভালো লাগলো ৷ তবে অপেক্ষা মাঝে চারপাশে একটু ঘোরাঘুরি আর ফটোগ্রাফি বেশ ভালোই করেছেন কিন্তু ৷ যাক ভালো লাগলো , অনুভূতির গল্প- হৃদয়ের টানে কোলকাতার ছয় তম পর্ব পড়ে ৷ অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য ৷
হুম এটাও সত্য যে, মাঝে মাঝে অপেক্ষা অনেক বেশী মজার হয়ে থাকে। হ্যা আমরা চেষ্টা করেছি সময়টাকে দারুণভাবে কাজে লাগাতে।
Congratulations, your post has been upvoted by @dsc-r2cornell, which is the curating account for @R2cornell's Discord Community.
প্রিয় ভাইয়া, আপনার লেখা "হৃদয়ের টানে কোলকাতা" ষষ্ঠ পর্বটি পড়ে আমার খুবই ভালো লেগেছে। বিশেষ করে ট্রেনের টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সুমন ভাইয়ের বুদ্ধিটা আমার কাছে সবচাইতে বেশি ভালো লেগেছে। তবে ভাইয়া আপনারা বিশাল একটি ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে। যাহোক ভাইয়া, সপ্তম পর্বটি পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
ভাইয়া আজ আপনি কলকাতা ভ্রমণের ষষ্ঠ পর্ব আমাদের মাঝে শেয়ার করলেন। আসলে ট্রেনের টিকিট কাটতে গিয়ে আপনারা বেশ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন। তবু ইস্টিমেট পুলিশ ছিল বিধায় তার বুদ্ধিতে আপনারা খুব সহজে টিকেট পেয়ে গেলেন। যাইহোক সপ্তম পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
যাক কিংপরস ভাইয়ার সাহায্যে টিকেট কোলকাতা শহর থেকে না নিয়ে ভালোই করেছেন। তা না হলে তো আরও সমস্যায় পড়তে হতো।এখানেও অনেকটা সময় লেগেছিল তাও।যাইহোক এই সময় টা বেশ আড্ডা দিয়েছিলেন সবাই মিলে।খাওয়া দাওয়া সব মিলিয়ে বেশ উপভোগ করেছিলেন।কিংপরস ভাইয়া আপনাদের আগে থেকেই চিনে ফেলেছিল,বুদ্ধিমান উকিল এজন্যই হয়তো।ভালো লেগেছে ভাইয়া এই পর্বটিও।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।