ফিচার | জ্যামের নগরী ঢাকা, সমস্যা ও প্রতিকার | ১০% @btm-school
ঢাকা শহরের জ্যামের কথা সর্বজন বিদীত। একসময় ঢাকা শহর পরিচিত ছিল মসজিদের নগরী হিসাবে, আরও পরে মানুষ চিনতো রিক্সার নগরী হিসাবে, আর বর্তমানে ঢাকা শহরকে মানুষ জানে জ্যামের নগরী হিসাবে। দিন দিন ঢাকায় জনসংখ্যা ও গাড়ির সংখ্যা ভয়াবহ রকমের বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তায় বের হওয়ার উপায় নাই। সারাদিনের যেকোনো সময় বের হন না কেন প্রধান সড়কগুলোতে জ্যামের কবলে পড়বেনই। অতি সম্প্রতি সরকারি প্রতিষ্ঠান, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকের অফিস সময়সূচি সমন্বয় করার কারণে ঢাকার রাস্তায় সকাল-বিকাল জ্যামের মাত্রা আরও বেশি হয়েছে।
জ্যামের কারণ হিসেবে যেসব বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে তারমধ্য অন্যতম প্রধান কারণ হলো গাড়ির তুলনায় অপ্রতুল রাস্তা, প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গাড়ির আগমন, অপরিকল্পিত রাস্তা, যত্রতত্র পার্কিং বিশেষ করে বড় বড় শপিংমল, বানিজ্যিক ভবনের সামনে মেই রাস্তায় গাড়ি পার্ক করে রাখা, উল্টো পথে গাড়ি চালানো, ভিআইপি মুভমেন্ট, ট্রাফিক রুলস না মানা, বড় বড় মেগা প্রজেক্টের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য (যেমন মেট্রোরেল, এক্সপ্রেস হাইওয়ে, ফ্লাইওভার নির্মাণ ইত্যাদি) বর্তমান রাস্তাও সংকুচিত হয়ে যাওয়া, ড্রাইভারদের সচেতনতার অভাব ইত্যাদি। মূলত এসব কারণেই রাস্তায় জ্যাম তৈরি হয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার এই অত্যাধিক জ্যামের কারণে প্রতিদিন যেই পরিমাণ কর্মঘন্টা নষ্ট হয় তাতে বছরে ক্ষতি ৩৬ হাজার কোটি টাকার মতো। ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে ও গরমে রাস্তায় বসে থাকতে থাকতে শহরবাসী নাকাল, ফলস্বরূপ মেজাজ খিটখিটে, উচ্চরক্তচাপ, হাঁপানী ও স্ট্রোকের মতো মরনব্যাঁধি শরীরে বাসা বাঁধছে। অফিসগামী মানুষজন যথাসময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারেনা, বাচ্চারা সময়মত স্কুলে যেতে পারেনা, মুমূর্ষু রোগীর এম্বুলেন্স সময়মত হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেনা, ফলে অনেক সময় রাস্তায় জ্যামের মধ্যেই হতভাগ্য রোগীর মৃত্যু হয়। এছাড়াও জ্যামের কারণে প্রতিনিয়ত ট্রাফিক সিগন্যালে দূর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। আমাদের পরিবেশের উপরও এর বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। অত্যাধিক গাড়ির কারণে তার কালো ধোঁয়া শহরের পরিবেশকে কলুষিত করে, বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া গাড়ির অনিয়ন্ত্রিত হর্ণের শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তির উপরও প্রভাব ফেলছে। এসব নেতিবাচক কারণগুলোর জন্য ঢাকা শহর দিন দিন পৃথিবীর কলুষিত শহরগুলোর তালিকায় প্রথমদিকে স্থান করে নিচ্ছে।
এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ঢাকাবাসীকে আরও দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে, সহসাই এই অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবেনা। তবে কিছু কিছু কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে জ্যামের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। যেমন: সকালে বাচ্চাদের স্কুলের সময় এবং অফিস টাইমের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে হবে, ঢাকার চারিপাশের নদীগুলোর সংস্কার করে সেখানে আধুনিক নৌযানের মাধ্যমে ঢাকাবাসীকে যাতায়াতের সুযোগ করে দিতে হবে, রাস্তা থেকে মেয়াদবিহীন ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলোকে সরিয়ে ফেলতে হবে, দ্রুত মেট্রোরেল চালু করতে হবে, এক্সপ্রেস হাইওয়ের মাধ্যমে দূরপাল্লার গাড়িগুলোকে উপর দিয়েই শহরের বাইরে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে বাসস্ট্যান্ড এবং বড় বড় কাঁচাবাজারগুলো সরিয়ে দূরে নিতে হবে, শপিংমলসহ বড় বড় বাণিজ্যিক ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে, সবাইকে ট্রাফিক রুলস মানতে হবে, ড্রাইভারদেরকে সচেতন করতে হবে, সর্বোপরি জনগণকেও সচেতন হতে হবে।
উপরের পদক্ষেপগুলো যদি আমাদের সরকার, সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়, দুই সিটি কর্পোরেশন এবং স্থানীয় প্রশাসন যথাযথভাবে গ্রহণ করতে পারে, এবং আমরা সাধারণ জনগণ যদি সচেতন হই তাহলে আশা করা যায় ঢাকাবাসী এই তীব্র যানযট থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে পারে।
আজ তাহলে এই পর্যন্ত। খুব শীঘ্রই আবারও নতুন কোন বিষয় নিয়ে হাজির হবো আপনাদের সামনে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
অনেক ধন্যবাদ।
ভাই অনেক সুন্দর একটি লেখা। খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন আপনি। খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই।
খুব ভালো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। পোস্টি খুব সুন্দর!
ধন্যবাদ দাদা।
ঢাকা শহর মানেই একটা যানজটের শহর। সময়ের কোন মূল্য এই শহরে নাই
হুম সেটাই রোমেন।
আমরা যারা ঢাকায় থাকি তারা প্রতিদিন হাড়ে হাড়ে টের পাই।
জ্যামের জন্য ঢাকা শহর আমার অপছন্দ
আসলে ঢাকায় আমরা যারা থাকি তার মধ্যে অধিকাংশই শুধুমাত্র চাকরি, সন্তানের ভালো পড়ালেখা ও একটু উন্নত সুযোগ সুবিধা পাওয়ার আশায় থাকি।
এগুলো যদি গ্রামে পাওয়া যেত, তাহলে ঢাকা ফাঁকা হয়ে যেত!