কবিতা আবৃত্তি " ভাস্কর চৌধুরী - আমার বন্ধু নিরঞ্জন"

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার,

শুরু করছি মহান সৃষ্টিকর্তার নামে। আজকের বৃষ্টি স্নাত সন্ধ্যায় সকলকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আশা করি আপনারা সকলে ভালো আছেন। আপনারা সবাই ভালো থাকুন এই কামনা করি। আজ আপনাদের সামনে অনেক জনপ্রিয় একটি কবিতার আবৃত্তি নিয়ে এসেছি। কবিতাটি লিখেছেন ভাস্কর চৌধুরী। কবিতাটি আমার খুবই ফেভারিট। ভার্সিটি লাইফে কবিতাটি অনেক শুনেছি এবং মনে মনে আবৃত্তিও করেছি। আমার রুমমেটের সকলের পছন্দ ছিল কবিতাটি। আসলে ভালোবেসে সবাই মনের মানুষকে পায় না। কেউ ভালোবাসে সংসার বাধে কেউ আবার রাজপথে সাজায় সংসার । তাই বেশি কিছু না লিখে সরাসরি আবৃত্তিতে চলে গেলাম তাহলে শুনা যাক আমার কবিতা আবৃত্তি।

12.JPG

কবিতাঃ আমার বন্ধু নিরঞ্জন

রচয়িতাঃ ভাস্কর চৌধুরী

অনেক কথা বলবার আছে আমার
তবে সবার আগে নিরঞ্জনের
কথা বলতে হবে আমাকে
নিরঞ্জন আমার বন্ধুর নাম, আর কোনো
নাম ছিল কি তার?
আমি জানতাম না।
ওর একজন বান্ধবী ছিল
অবশ্য কিছু দিনের জন্য
সে তাকে প্রীতম বলে ডাকত।
ওর বান্ধবীর নাম ছিল জয়লতা
নিরঞ্জন
জয়লতা সম্পর্কে আমাকে কিছু
বলেনি তেমন।
জয়লতাকে কখনো কোনো চিঠি লিখেছিল কিনা
সে কথাও আমাকে সে বলেনি।
তবে জয়লতার চিঠি আমি দেখেছি
একটা চিঠি ছিল এরকম-
প্রীতম,
সময় গড়িয়ে যাচ্ছে। তুমি বলেছ, এখন দুঃসময়-
কিন্তু আমি জানি, সবসময়ই সুসময়,
যদি কেউ ব্যবহার
করতে জানে তাকে
আমি বুঝি বেশী দিন নেই। যদি পার
এক্ষুনি তুলে নাও।
নইলে অন্য পুরুষ ছিবড়ে খাবে আমাকে-
আমার ঘরে, বসে সিগারেট টানতে টানতে
নিরঞ্জন চিঠিটা চুপ
করে এগিয়ে দিয়ে বলেছিল, বিভু,
চিঠিটা পড়ুন।
আমি প্রথমে পড়তে চাইনি।
পরে ওইটুকু পড়ে তার
দিকে তাকিয়েছিলাম-
না-ওই সিগারেটের ধোয়ায়
আমি কোন নারী প্রেম-তাড়িত মানুষের
ছায়া দেখিনি- ভয়ানক নির্বিকার।
কিছু বলছেন না যে? আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম
কি বলবো?
এই ব্যাপারে।
কোন ব্যাপারে?
এই যে জয়লতা।
বাদ দিন।
আমি বাদ দিয়েছিলাম।
নিরঞ্জন আমার ঘরে বসে অনেকক্ষণ
সিগারেট টেনে টেনে
ঘরটাকে অন্ধকার করে চলে গিয়েছিল সেদিন।
জয়লতার সঙ্গে অন্য পুরুষের
বিয়ে হয়েছিল
আমি জয়লতা এবং অন্য
পুরুষটিকে দেখেছি বহুবার,
বিশ্ববিদ্যালয়েই। জয়লতা আরো দেমাগী
আরো সুন্দরী হয়ে উঠেছিল।
অন্য পুরুষ ছিবড়ে খেলে মেয়েরা বুঝি
আরো সুন্দরী হতে থাকে?
এ কথার সূত্রে সেদিন নিরঞ্জন
আমাকে বলেছিল,
মানুষকে এত ক্ষুদ্রার্থে নেবেন না,
মানুষ এত বড় যে,
আপনি যদি ‘মানুষ’ শব্দটি
একবার উচ্চারণ করেন
যদি অন্তর থেকে করেন উচ্চারণ
যদি বোঝেন এবং উচ্চারণ করেন ‘মানুষ’
তো আপনি কাঁদবেন।
আমি মানুষের পক্ষে,
মানুষের সঙ্গে এবং মানুষের জন্যে।
হ্যাঁ, মানুষের মুক্তির জন্য
নিরঞ্জন মিছিল করতো।
আমি শুনেছি নিরঞ্জন বলছে…
তুমি দুস্কৃতি মারো, গেরিলা-তামিল মারো
হিন্দু-মুসলমান মারো
এভাবে যেখানে যাকেই মারো না কেন
ইতিহাস লিখবে যে এত মানুষ মরেছে
বড়ই করুণ এবং বড়ই দুঃখজনক
শক্তির স্বপ্নে তুমি যারই মৃত্যু উল্লেখ
করে
উল্লাস করনা কেন
মনে রেখো, মানুষই মরেছে।
এই ভয়ঙ্কর সত্য কথা নিরঞ্জন
বলেছিল
মিছিলে হাত উঠিয়ে বলেছিল,
এভাবে মানুষ মারা চলবে না।
মানুষকে বাঁচতে দাও।
নিরঞ্জন আমার বন্ধু।
নিরঞ্জন বাঁচেনি।
তার উদ্যত হাতে লেগেছিল
মানুষের হাতে বানানো বন্দুকের গুলি।
বুকেও লেগেছিল- যেখান থেকে ‘মানুষ’ শব্দটি
বড় পবিত্রতায় বেরিয়ে আসতো।
সে লাশ-
আমার বন্ধু নিরঞ্জনের লাশ,
আমি দেখেছি
রক্তাক্ত ছিন্ন ভিন্ন লাশ,
মানুষ কাঁধে করে
তাকে বয়ে এনেছিল মানুষের কাছে।
জয়লতা সে লাশ দেখেছিল কিনা
সে প্রশ্ন উঠছে না।
দেখলেও যদি কেঁদে থাকে
সে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে
তাতে নিরঞ্জনের কোন লাভ হয়নি।
মানুষ কেঁদেছিল
আমি জানি তাতে নিরঞ্জনের লাভ ছিল।
নিরঞ্জন প্রমাণ করতে পেরেছিল
গতকাল মিছিলে
আইন অমান্যের অভিযোগে
যে দুস্কৃতি মারা গিয়েছে
তার নাম নিরঞ্জন-
সে আসলে ‘মানুষ।’

sunflowers-1719119_960_720.jpg
সোর্স

Sort:  
 3 years ago 

কবিতা আবৃত্তি " ভাস্কর চৌধুরী - আমার বন্ধু নিরঞ্জন" চমৎকার একটি কবিতা আবৃত্তি করেছেন। আপনার কন্ঠে কবিতা আবৃত্তি শুনে ভীষণ ভালো লাগলো। এভাবেই এগিয়ে যান আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো ভালো থাকুন।

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য্

 3 years ago 

আপনার কবিতা আবৃত্তির প্রশংসা করতে হয়। আপনার এক্সপ্রেশন খুব ভাল ছিল ভাইয়া। অনেক বড় একটি কবিতা আবৃত্তি করেছেন আপনি ভাইয়া। ধন্যবাদ সুন্দর একটি কবিতা আবৃত্তি করার জন্য আমাদের মাঝে।

শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 3 years ago 

আপনাকে ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইল আপনার জন্যও ।

 3 years ago 

ভাইয়া আপনি খুব সুন্দর করে একটা কবিতা আবৃত্তি করেছেন আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। যেখানে যেভাবে কন্ঠ শক্ত করার এবং যেখানে নরম করার আপনি সেখানে সেইভাবেই বলেছেন। অসম্ভব ভালো লেগেছে ভাই আপনার কন্ঠ সত্যি অসাধারণ। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর করে আমাদের মাঝে কবিতা আবৃত্তি শেয়ার করার জন্য ।আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল।

 3 years ago 

এত সুন্দর করে আপনার মূল্যবান মতামত প্রকাশ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 3 years ago 

বাহ বাহ আপনি তো খুব সুন্দর করে কবিতা আবৃত্তি করেন। আপনার এই কবিতা আবৃত্তি শুনে সত্যি বলতে আমি মুগ্ধ খুবই। ভালো লেগেছে আপনার কবিতা আবৃত্তি অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 3 years ago 

"আসসালামু অলাইকুম,
এইতো প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি আবৃতিতে ভাল করার জন্য দোয়া করবেন।

 3 years ago 

পূর্বে আমি আপনার কোন কবিতা আবৃতি শুনিনি তবে আজকের আবৃত্তি শুনে খুবই ভালো লেগেছে আমার কাছে অনেকদিন হলো এরকম আবৃত্তি শোনা হয়না একদম মনটা ভরে গেল অবশ্যই আপনার জন্য শুভকামনা থাকবে পরবর্তীতে আরো ভালো ভালো কবিতা আবৃতি করে আমাদের সাথে শেয়ার করবেন আশা করি

 3 years ago 

আপনার চমৎকার মন্তব্য অনেক অনেক ভাল লাগল ভাই।

 3 years ago 

আপনার কবিতা আবৃত্তি বেশ ভাল লেগেছে ভাই আমার কাছে। খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে উপস্থাপনা করেছেন। যদিও কবিতা আবৃত্তি আমি কখনো পারিনা। আপনার কবিতা আবৃত্তি ভীষণ ভালো লেগেছে আমার কাছে। ধন্যবাদ ভাই আপনাকে এরকম সুন্দর একটি কবিতা আবৃতি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

ধন্যবাদ আপনাকে আপনার গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য।

 3 years ago 

খুবই চমৎকার একটি কবিতা আবৃতি করে আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপনার আবৃত্তি আমি এর আগেও শুনেছিলাম খুবই ভালো লেগেছিল। শুভকামনা রইল আপনার জন্য। পরবর্তীতে ওই রকম আবৃতি আপনার থেকে আশা করব।

 3 years ago 

সুন্দর মন্তব্য করে উৎসাহ দেওয়ার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। আমার কবিতা আবৃত্তি আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুবই খুশি হলাম। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো

 3 years ago 

থেমে থেমে সুন্দরভাবে কবিতা আবৃত্তির উপস্থাপনা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আসলে কবিতা পাঠের মাধ্যমে মনের অনেক কথা আবেগ প্রকাশিত হয়। কবিতা লেখার মাধ্যমে মানুষের ভেতরের কথাগুলো সুন্দর ভাবে পাঠকসমাজে তুলে ধরা সম্ভব। আর তাই আমি কবিতা লেখাকে বা কবিতা পাঠ করাকে বেশি প্রাধান্য দেই।

 3 years ago 

আপনার চমৎকার মন্তব্য ও প্রশংসা আমাকে অনুপ্রাণিত করে

Coin Marketplace

STEEM 0.12
TRX 0.23
JST 0.029
BTC 76142.79
ETH 1453.44
USDT 1.00
SBD 0.65