ছোটবেলায় একদিন নানা বাড়ি যাওয়ার গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ10 months ago


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।



IMG_20231124_162756_839.jpg

নানা বাড়ির গল্প:



আমি তখন খুবই ছোট। ক্লাস বড়-ওয়ান অথবা টু তে পড়ি। ঠিক এমন একটি মুহূর্তে, একটি কাঁঠাল ঘাড়ে করে আমার নানা আমাদের বাড়িতে আসলো। তখন আমার ভাই @bidyut01 নানার পিছু ধরলো নানা বাড়িতে যাওয়ার জন্য। ঐদিন আমার আম্মা এতটা ব্যস্ততা ছিল যে নানা বাড়িতে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। বুঝতে পারছেন কৃষি ফ্যামিলি, নতুন ধান ঘরে এসেছে, ধান শুকানো, ঘরে তোলা এই সেই কাজের শেষ নেই। কিন্তু ভাই মাঝেমধ্যে এমন নাছোড় বান্দা হতো, যেটা ইচ্ছে করত সেটাই তার কথা। কোন কিছু বোঝার চেষ্টা করত না। যাইহোক সে একলা গেলেই বা কি হয়। নানা বলল ওরা দুই ভাই আমার সাথে চলুক, থেকে আসুক। ঠিক এমন একটা সিদ্ধান্ত হল নানার পিছু পিছু দুই ভাই চলে গেলাম। কারণ আমার কোন সিদ্ধান্ত ছিল না, ভাই যখন যাচ্ছে ভাইয়ের আনন্দে আমিও, ঠিক এমন তাই। নানা বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। কিছুটা সময় অতিবাহিত হল। নানা বাড়ির বাঁশ ঝারের পাশে একটি ভেটুল গাছ রয়েছে। আমরা তিন খালাতো ছয় ভাই, ওই ভেটুল গাছের নিচে ভেটুলের ফল দিয়ে খেলতাম।


IMG_20231124_162336_579.jpg



ঠিক ঐদিন নানার সাথে নানা বাড়িতে উপস্থিত হয়ে, কিছুক্ষণ পর ভাই এই গাছের নিচে উপস্থিত হলো। এরপর হঠাৎ তার নাকি মায়ের জন্য মায়া করছে। আমাকে বললো সুমন চল মাঠ দিয়ে আমরা চলে যায়। আমি তখন ভাবলাম আসতে পারলাম না সবে মাত্র, আর এখনই চলে যাব এ কেমন কথা। আর আমার বেশ ভয় লাগছিল তার কথামতো মাঠ দিয়ে যেতে যেয়ে যদি হারিয়ে যায়? কোনভাবে আমি তার কথা শুনলাম না। সে তখন বলল তুই থাক আমি চলে যায়। আমি দেখলাম সে তো হারিয়ে যাবে, কারণ চারটা মাঠ অতিক্রম করে আমাদের নানার বাড়ি। তবে মাঠের পর মাঠ তা কিন্তু নয়। তখন আমার বড্ড ভয় করতে লাগলো। আমি বললাম যেতে হবে না। তুই একলা চলে যেতে গেলে আমি নানাকে বলে দেবো।


IMG_20231124_162704_070.jpg



আর সে যে বোকামি শুরু করল এটাও আমার কাছে খুবই খারাপ লাগলো। থাকার জন্য আসলে দুপুর করে আর বিকেলে এই কথা। তখন আমার বিশেষ কোন কিছু বলার ছিল না, কারণ আমি ছোট মানুষ। এরপর হঠাৎ নানা আমাদের কাছে এসে উপস্থিত। তারপর সে বাড়ি যাব বায়না ধরল। এক কথায় বুঝতে পারছেন বাড়ি থেকে আসার সময় যেমন জিদ ধরেছিল, এখন বাড়ি যাবো জিদ ধরেছে। নানা বেশি রেগে গেল তার কথায়। কারণ সারা পথ পায়ে হেটে এসেছি আমরা। আমার নানা আর্মি ওয়ারেন্ট অফিসার ছিলেন। সে বেশ হাঁটতে পারতেন। আর সেই সময়ে রাস্তাঘাট সব কাঁচা ছিল। কোন গাড়ি ঘোড়ার চিহ্ন ছিল না। যদিও দু-একটা গাড়ি ঘোড়া যেত তার আশা করা মোটেও ঠিক হতো না।


IMG_20231124_162802_439.jpg



নানা ভাইকে খুব সুন্দর করে বোঝালো আজকে রাত থেকে কালকে বিকেলে রেখে আসবো। কিন্তু কিছুতেই ভাই সেই কথা শুনল না। অতঃপর সিদ্ধান্ত হলো বিকেলে নানা আমাদের রেখে আসবে। খাওয়া দাওয়া করে আবার বের হলাম। নানা মাঠের মধ্যে কচুর খেত, পাটের খেত এভাবে অতিক্রম করতে করতে এক এক মাঠ দিয়ে আসা শুরু করল। আমার নানাদের গ্রামের নাম সিন্দুর কোটা, এরপর কামারখালী @kibreay001 এদের বাসা। এরপর আমাদের পাশের গ্রাম শহরবাড়িয়া। ঠিক এই গ্রামের মাঠ, যেখানে আপনাদের প্রিয় @fatema001 এদের বাড়ি। ফাতেমাদের বাড়ির কাছে এসে নানা আমাদের দুই ভাইকে ছেড়ে দিল। আর দেখিয়ে দিল ওই যে তালতলা দেখা যাচ্ছে সোজা হাঁটতে হাঁটতে চলে যা। আর ওখান থেকেই বটগাছ সোজা চলে যাবি। আর বট গাছের পরে কিন্তু আমাদের পরিচিত জায়গা। ভাই কিন্তু সব চিনতে পারছে, আমি কিছুই চিনতে পারছি না। কারণ আমি ছোট, এদিকে পাটের জমিতে পাট থাকায় গাছের মধ্যে থেকে বেশি একটা দেখতে পাচ্ছি না। আমি বেশ ভয় পেলাম। নানাকে বললাম নানা আপনি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন, যতক্ষণ না তাল গাছে পর্যন্ত যাব। নানা খুবই রেগে গেল। বলল এতটা পথ নিয়ে আসছি আবার এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। অর্থাৎ নানা রাগ হয়েছে আমাদের নিয়ে গেছে হাঁটাতে হাঁটাতে আবার যদি কিছুক্ষণ পর এভাবে দীর্ঘ পথ আসতে হয়। তখন ভাই বলল আমি দেখতে পেরেছি। তখন আমি আর কি করার ভাইয়ের পিছু পিছু হাঁটা শুরু করলাম। চলে আসলাম রাস্তার তালতলায়। কিন্তু তালতলা তো আমার পরিচিত নয়। রাস্তা থেকে তাকিয়ে দেখলাম দূরে যেখানে নানা ছিল, সেখানে নানার কোন চিহ্ন নাই। আমার বেশ ভয় করতে লাগলো। এরপর ভায়ের পিছনে পিছনে হাঁটতে হাঁটতে এ বট গাছের কাছে এসে পৌছালাম। এই বটগাছের কাছে এর আগে এসেছি কয়েকবার,মাছ ধরার জন্য। তাই এই বটগাছ আমার পরিচিত ছিল। বট গাছের কাছে উপস্থিত হয়ে নিশ্চিত হলাম। কারণ বট গাছ থেকে আমাদের গ্রামের হাই স্কুল দেখা যাচ্ছিল। এর কিছুক্ষণ পর দেখলাম আমার আব্বা সাইকেলে চড়ে বাদিয়াপাড়া দরবার শরীফে যাচ্ছে। আব্বাকে দেখার পর জানে আমার শান্তি আসলো। আর এভাবেই বাড়ি পৌঁছে গেলাম।


IMG_20231124_162814829_BURST0001_COVER.jpg


গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিঘটনাস্থল এরিয়া
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
লোকেশনজুগীরগোফা
বিষয়অতীত ঘটনা
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 10 months ago 

খুব ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে। যেখানে আপনাদের দুই ভাইয়ের অতীতের ঘটনা জানতে পারলাম। আজকে হয়তো এ ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার না করলে আমি জানতে পারতাম না। যাইহোক আপনাদের জীবনের একটি ঘটনা তো জানতে পারলাম।

 10 months ago 

জানানোর জন্যই তো পোস্ট করেছি

 10 months ago 

আপনার নানার পাশে যে সিন্দুর কোটা গ্রামে এটা আমি আগে জানতাম না। তবে আপনার বড় ভাই সত্যিই ভীষণ জেদি আপনার গল্প করে বুঝলাম। উনি জেদ না করলে হয়তো বা যাওয়া হতো না আর এরকম একটি ঘটনা ঘটতো না। যাইহোক আপনি খুবই সুন্দর ভাবে আপনার নানা বাড়ি থেকে আপনাদের বাড়ির রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে আবার আমাদের বাড়ির পাশের নামটাও বলেছেন দেখছি।

 10 months ago 

হ্যাঁ তোমাদের বাড়ির ঐ স্থানে এসে আমরা মাঠের নামলাম, এরপর সোজাসুজি তালতলা।

 10 months ago 

আজকে তোমার এই পোস্টটি পড়ে সেই ছোটবেলায় নানি বাড়িতে যাওয়ার মধুর স্মৃতিগুলো চোখের সামনে পরিষ্কারভাবে ভেসে উঠলো। আসলে আমরা আজও আমাদের সেই অতি আপনজন নানা ও নানীকে অত্যন্ত মিস করি। মহান সৃষ্টিকর্তা যেন আমাদের প্রিয় নানা ও নানীকে যেন সম্মানের সাথে জান্নাত নসিব দান করেন, আমিন।

 10 months ago 

সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ

 10 months ago 

কৃষি পরিবারের সবসময়ই কাজ থাকে। আপনার নানা আপনাদের বাড়িতে বেড়াতে আসলে আপনার বড় ভাই তার সাথে যার জন্য জিদ ধরে। আর তাই আপনিসহ আপনার নানা বাড়িতে যান। আবার বিকেল না হতে হতেই আপনার বড় ভাই বাড়িতে আসার জন্য কান্না করে। তবে আপনার নানা ফাতেমা দের বাড়ি পর্যন্ত আপনাদেরকে পৌঁছে দিয়ে পথ দেখিয়ে দিয়েছিল ।আর আপনারা ঠিকঠাক ভাবে বাড়ি চলে আসতে পেরেছিলেন জেনে খুবই ভালো লাগলো। ছোটবেলার এরকম সুন্দর একটি স্মৃতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 10 months ago 

হ্যাঁ টানে টানে পৌঁছে গেছিলাম

 10 months ago 

ভাইয়া, আপনার পোষ্টে ভেটুল গাছের নাম নতুন জানলাম হয়তো আমরা অন্য নামে চিনি।আর ছোটবেলায় মামাবাড়ি যাওয়ার মজাই আলাদা।আপনার নানা কাঁধে কাঁঠাল দেখে আপনারা চলে গিয়েছিলেন পিছু পিছু এটা আসলেই অনেক ঝুঁকি ছিল।যাইহোক আবার বাড়িও ফিরে এসেছিলেন জেনে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপনাকে।

 10 months ago 

কোন একদিন সামনে পেলে আপনাকে সেই গাছ আর তার ফল দেখাবো

 10 months ago 

হি হি,সেটা কখনো সম্ভব নয়।

 10 months ago 

আপনার পোস্ট টি পড়ে খুব ভালো লাগলো হাসি পেলো এটা জেনে যে আপনার বড়ো ভাই নানা বাড়িতে জেদ করে গেলো এবং তখনি আবার বাড়িতে আসার জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।আসলে এটাই ছোটবেলা যখন যা মনে পড়ে তাই করতে হবে।নানার তো রাগ হওয়ারি কথা মাত্র এতোটা পথ হেটে এসেছে আবার যেতে হবে। শেষমেশ বাড়িতে পৌঁছাতে পেরেছেন জেনে বেশ ভালো লাগলো।ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট টি ভাগ করে নেয়ার জন্য।

 10 months ago 

হ্যাঁ মাঝে মাঝে এসে এমনটাই হয়ে যেত

Coin Marketplace

STEEM 0.11
TRX 0.23
JST 0.031
BTC 79068.20
ETH 1600.56
USDT 1.00
SBD 0.87