প্রচন্ড বৃষ্টির দিনে পরীক্ষা দিতে যাওয়া

in আমার বাংলা ব্লগ7 days ago


আসসালামু আলাইকুম



হাই বন্ধুরা!

আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।

IMG_20240830_105534_1.jpg

photography device:
Infinix Hot 11s

What3words Location


পরীক্ষা দিতে যাওয়ার গল্প:


তখন ২০১৫ সাল। অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে মেহেরপুর গভমেন্ট কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছি। অনার্স ফার্স্ট ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আমাদের বাড়ি থেকে আমাদের মেহেরপুর কলেজে পৌঁছাতে প্রায় দেড় থেকে এক ঘন্টা ৪৫ মিনিট মতো সময় লেগে যায়। আমার যাওয়ার যানবাহন ছিল প্রথম বাড়ি থেকে সাইকেল চড়ে মরকা বাজার নামক স্থানে। এরপর সেখান থেকে ইঞ্জিন চালিত গাড়িতে করে গাংনী বাজারে। এরপর গাংনী বাজার থেকে বাসে উঠে সোজাসুজি মেহেরপুর কলেজ মোড়। আর এভাবেই দেড় ঘন্টার একঘন্টা ৪৫ মিনিট এর মধ্যেই কলেজে পৌঁছে যেতাম। শুধু পরীক্ষা বলেই নয় কলেজে ক্লাস করার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে যখন বের হতাম আটটার আগ দিয়ে বের হতাম সময় মত পৌঁছে যেতাম। আর পরীক্ষার সময় গুলোতে সাড়ে সাতটার দিকে বের হয়ে পড়ার চেষ্টা করতাম। দেখা যাচ্ছে ৮:০০ টার আগেই বের হয়ে গেছে। এমনই একটা দিন পরীক্ষার জন্য বাড়ি থেকে বের হলাম। হঠাৎ আকাশের অবস্থা খুবই খারাপ হলো। মড়কা বাজারে পৌঁছানোর পূর্বেই এতটা অন্ধকার হয়ে আসলো মনে হল যেন সন্ধ্যা নেমে এসেছে আর সাথে সাথে টিপটাপ বৃষ্টি। বেশ ভালো রকমের বৃষ্টি হয়ে গেল দশ মিনিটের জন্য। সকাল আটটার দিকে রাস্তায় কোন মানুষ নেই নেই, কোন যানবাহন। আমি তো রাস্তায় ভীষণ চিন্তায় পড়লাম। বাজারের দোকানগুলো একটাও খোলেনি ততক্ষণে। একলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতেছিলাম যদি এই মুহূর্তে বাজ পড়ে তাহলে কি অবস্থা হবে। হঠাৎ চোখ পড়ল রাস্তার আরেক পাশে বট গাছের কর্নারের দিকে। লক্ষ্য করে দেখলাম আমাদের সাথে বাংলায় অনার্সে ভর্তি হয়েছে এমন দুইটা মেয়ে। তাদের বাসা মড়কা বাজারের পাশের গ্রাম। আমি সাইকেল চালিয়ে এসেছি, বৃষ্টির সময় অপেক্ষা করছি। তারা আমাকে লক্ষ্য করেছে কিন্তু আমি তাদের দুজনাকে দেখি নাই।


বৃষ্টি থেমে গেল। আমি বের হয়ে আসলাম সাইকেল রাখা স্থান থেকে। সাইকেল রেখেছিলাম একটি দোকানের টিনের ছাউনির নিচে। আমি যেখানে ইঞ্জিন চালিত গাড়ি গুলো এসে থামে সেই জায়গা এগিয়ে গেলাম। কিন্তু কোনজন মানুষ নেই গাড়ি ঘোড়া নেই আবারো যেন হালকা হালকা বৃষ্টি শুরু হল। এদিকে মাঝেমধ্যে এমনভাবে মেঘ ঝিলিক মেরে উঠছে দেখেই যেন ভয় লাগা। পাশাপাশি তো বাতাস বয়ে চলছে। আমায় দেখে মেয়ে দুইটাও বের হয়ে আসলো তাদের ওই পার থেকে। সেখানে বটগাছ ছিল তাই আমার বৃষ্টির বাইরে ছিল তারা। তারা এসে উপস্থিত হল। আমাকে বলল ভাই আমরা দুজন মনে করেছিলাম হয়তো পরীক্ষা দিতে আমরা দুজন পিছু পড়ে যাব। এখন দেখছি তুমিও আমাদের মত। ততক্ষণে সকাল ৮.৩০ টা বেজে গেছে। দশটায় পরীক্ষা শুরু হবে। কিন্তু মড়কা বাজারেই রয়ে গেলাম এখনো। তাদের সাথে সেই প্রথম পরিচয় হলাম কথা বলার মধ্য দিয়ে। তবে তারা দুজন আমাকে ইন্টার লাইফ থেকেই চেনে, কথা হয়নি কোনদিন। তিনজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম কখন গাড়ি আসবে। কিন্তু কোন গাড়ি আসলো না। ততক্ষণে বেজে গেল সকাল ৮.৪৫ হবে। কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করে দেখলাম একটি শ্রমিকদের গাড়ি। একটি গাড়িতে দুইজন মানুষ বসা, তারা তাদের কোন একটা কর্মে যাচ্ছিল। বৃষ্টির কারণে আটকা পড়ে গেছিল। তাদের সাথে কিছু যন্ত্রপাতি ছিল। তারা রাস্তার উপর আমাদের দেখে গাড়ি একটু স্লো করলো আমরা হাত উঁচু করে থামতে বলেছিলাম। উনারা আমাদের বলেছিল আমরা শ্রমিক মানুষ, মানুষ বহন করে না, নিজেদের কর্মের জায়গায় যাচ্ছিলাম। তখন বললাম ভাই আমরা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছি আকাশের অবস্থা ভালো না ইতোমধ্যে বৃষ্টি হয়ে গেছে, আবারও হতে পারে, বৃষ্টি যেহেতু পড়ছে, হয়তো আমাদের পরীক্ষাটা মিস হয়ে যাবে, ফাইনাল পরীক্ষা বলে কথা। তারা দেখল আমরা তিনজন মানুষ তাদের গাড়িতে সেভাবে ধরবেনা। গাড়িটাও কেমন সুবিধার ছিল না। তবুও ড্রাইভার আমাদের বলল আপনারা যেভাবে হোক বসেন, আপনাদের পরীক্ষা মিস হবে এটা মেনে নেয়া যায় না। আমরা দেখলাম গাড়িতে বসলে আমাদের জামাকাপড়ে কাদা লেগে যাবে আগেই কিন্তু কিছু করার নেই। আমি রাজি হলাম তাই বান্ধবী দুইটাও রাজি হয়ে গেল। কারণ তারা আমাকে ভরসা করছিল। রাস্তার অবস্থা ভালো নয় আকাশের অবস্থা ভালো নয় কোন গাড়ি ঘোড়া নেই। আমি যদি মিস হয়ে যায় তারা পরবর্তীতে আরো ঝামেলায় পড়তে পারে এটাই তাদের ছিল দূর চিন্তা।


যাহোক আমরা গাড়িতে উঠে পড়লাম আমাদের সমস্ত জামাকাপড় সব ভিজে গেল। শুধু পরীক্ষার জন্য এডমিট কার্ড ফাইল এর মধ্যে থাকায় সেভে ছিল সেটা। এভাবেই প্রায় আধা ঘন্টা ধরে আমরা গাংনীতে পৌঁছালাম, যেখানে ১৩ থেকে ১৫ মিনিট সময় লাগে। ততক্ষণে আমরা ঘড়ির দিকে লক্ষ্য করে দেখলাম প্রায় সাড়ে নয়টার কাছাকাছি সময়। গাংনী বাজারে এসে উপস্থিত হয়ে দেখতে পারলাম একটি বাস ছেড়ে দিবে দিবে। এটা আমাদের কপাল ভালো ছিল যে বাসের জন্য আর অপেক্ষা করতে হলো না। আমরা তিনজন দ্রুত গিয়ে বাসে উঠে পড়লাম। তখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি আর মেঘ জোরে জোরে ঝিলিক মারছে, বাতাস বয়ে চলছে। আমাদের সবার গাঁড় কাপড় গুলো ভেজা কাদা লেগে রয়েছে কিন্তু কি করার। কোনরকম গাড়িতে দাঁড়িয়ে থাকার মত চলতে থাকলাম মেহেরপুরের উদ্দেশ্যে। সকালবেলায় বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষেরা বাস লোড হয়ে যায় বলেই আমরা সিট পাইনি। এভাবেই একটা সময় লক্ষ্য করে দেখলাম মেহেরপুর কলেজ মোড়ে এসে উপস্থিত হলাম। ততক্ষণে পরীক্ষার ঘন্টা অনেক আগেই বেজে গেছে। দ্রুত কলেজের দিকে চলে গেলাম। উপস্থিত হয়ে দেখি সবার খাতা পত্রে কোড নম্বর বসিয়ে দু একটা প্রশ্নের আনসার দেয়া হয়ে গেছে। আর এভাবেই জীবনে প্রথম কোন একদিন পরীক্ষার সময় ঝড় বৃষ্টির বাধার সম্মুখীন হয়েছিলাম।




গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

received_434859771523295.gif

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফটোগ্রাফিবৃষ্টি মুহূর্ত
বিষয়অতীত ঘটনা
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix Hot 11s
ব্লগারSumon
ঠিকানাগাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ


পুনরায় ফিরে আসবো নতুন কোন গল্প নিয়ে। ততক্ষণ ভালো থাকুন সবাই, সবার জন্য শুভকামনা রইল। আল্লাহ হাফেজ।

TZjG7hXReeVoAvXt2X6pMxYAb3q65xMju8wryWxKrsghkLbdtHEKTgRBCYd7pi9pJd6nDf4ZPaJpEx3WAqvFVny2ozAtrhFXaDMnAMUAqtLhNESRQveVFZ7XHcED6WEQD48QkCkVTAvNg6.png


file-g5jU1EzEHAcdc41yLeGvhd2C.webp


Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Coin Marketplace

STEEM 0.13
TRX 0.26
JST 0.031
BTC 84717.20
ETH 1636.87
USDT 1.00
SBD 0.74