জীবনে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর বজ্রপাতের ঘটনা
হাই বন্ধুরা!
আমার গল্পের রাজ্যে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগতম। পূর্বসপ্তার ন্যায় আজকে উপস্থিত হয়ে গেলাম সুন্দর একটি গল্প নিয়ে। যে গল্পের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন আমার জীবনে কোন একটা লুকিয়ে থাকা ঘটনা। একজনের জানা ঘটনা অন্য জনের মাঝে ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয় অজানা তথ্য। ঠিক তেমনি সুন্দর একটি গল্প নিয়ে উপস্থিত হয়েছি আজ। আশা করি স্মৃতিচারণ মূলক এই গল্প আপনাদের অনেক অনেক ভালো লাগবে। তাই চলুন আর দেরি না করে গল্পটা পড়ি এবং গল্প পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।
২০১১ সালে মাঠে প্রথম পুকুর কাটছিলাম। এরপর থেকে মাঠের পুকুর পাড়ে শাকসবজি উৎপাদন করা হয়। আর বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিস ও মাছের খাবার রাখতে ছোট্ট একটি বাঁশের ঘর করেছিলাম। এরপর সেই জায়গায় প্রায় বছর বছর ঘরটা নষ্ট হয়ে যায় আবার সংস্কার করি। আমি যখন মাস্টার্স কমপ্লিট করব এমন মুহূর্তে মাঠের ওই ঘরটাতে বেশি সময় পার করতাম। সকালে ঘুম থেকে উঠেই খাওয়া-দাওয়া করে বই ও সবজিতে ব্যবহার করা জিনিস নিয়ে চলে যেতাম পুকুরে। এদিকে ছোট ঘরটির মধ্যে বেশ কিছু জিনিস রেখে আসতাম। সাথে বসে থাকার জন্য একটি পার্টি সহ অন্যান্য জিনিস। আর এভাবেই প্রত্যেকটা দিন আমার চলতে থাকতো বাড়ি থেকে পুকুর পর্যন্ত। শুধু খাওয়ার জন্য; দুপুরে নামাজ পড়ার জন্য ও গোসলের জন্য বাড়িতে আসতাম এরপর আবার পুকুরে। সকাল ও বিকালে মাছের খাবার দিতে হয়। বিকালে মাছের খাবার দেওয়া শেষ করে একদম সন্ধ্যার মুহূর্তে বাড়িতে এসে মাগরিবের নামাজ পড়তাম। আর এভাবেই দিনের রুটিন হয়ে গেছিল আমার।
কখনো কখনো বৃষ্টি হলে আমি ওই ঘরটার মধ্যেই অবস্থান করতাম। অতিবৃষ্টি হলে ঘরের মধ্যে হালকা পানি আসতো। ঘাটার পূর্ব সাইডে ছিল একটি কলার ঝাড়। কলা গাছের পাতার জন্য বেশি পানি ঘরে আসতো না। তবে সাপের ভয় ছিলে একটু। ঘরটা এমন ভাবে তৈরি করা ছিল ভিতরে কোন মাচা ছিল না, মাটিতেই বসা লাগবে পাটি পেড়ে। যাইহোক ঘটনার দিন আমি দুপুরের খাবার খেয়ে গোসল করে নামাজ পড়ে বের হব পুকুরপাড়ের সেই ঘরের দিকে। কারণ সেখানে গিয়ে পড়তে হবে আরো অন্যান্য কাজ রয়েছে। ঘরের মধ্যে মাছের খাবার আর বই রেখে আসা হয়েছে। ইতোমধ্যে আকাশের অবস্থা বেশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠল। আমি আকাশের দিকে লক্ষ্য রাখলাম। আকাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে। তাই বাড়িতেই অপেক্ষা করছি। বৃষ্টি থেমে যাক এরপরে পুকুরপাড়ে সেই ঘরে যাব,পড়ার টাইম ওভার হয়ে গেলেও মাছের খাবার তো দিতে হবে।
হঠাৎ প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি হয়ে গেল, সাথে হালকা হালকা বৃষ্টি পড়ছে। মনে হল এই বেলায় আর মাঠে বসে পড়া সম্ভব হবে না। বৃষ্টি কমলেই মাছের খাবার দিতে হবে এবং সবজি গাছে যদি পারা যায় ইউরিয়া সার দিতে হবে। এমনই পরিকল্পনা। এদিকে আমার চাচাতো ছোট ভাই ইমনভি(@emonv) স্টিমিটে প্রথম কাজ করা শুরু করেছিল। তাই নেট কিনে আমাদের পুকুর থেকে দুইটা পুকুর শেষে একটি মাচায় বসে কাজ করছিল আর ছাগল চড়াই করছিল। সে অপেক্ষা করছিল আমি পুকুরে আসব। প্রতিদিন আমরা একসাথে হই মাছের খাবার দি গল্প করি। অনলাইন সম্পর্কে গল্প করি। তাই দুজনার মন ছিল খুব শীঘ্রই পুকুর পাড়ে উপস্থিত হবই। কিন্তু ইতোমধ্যে যে বৃষ্টি হচ্ছে হালকা আমি কোনদিন হালকা বৃষ্টিতে থেমে থাকি না। হঠাৎ প্রচন্ড বেগে ঝড় উঠেই থেমে গেল। এরপর বিকট শব্দ করে একটি বাজ বা বজ্রপাত হলো। কিছুক্ষণ পর আমার ঘর থেকে বের হয়ে আসলাম। মনে হলো আমাদের বাড়ির পাশের দুই তিনটা তালগাছ আছে এই গাছের মধ্যেই বাজ পরলো। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলাম না কোথায় পড়লো। আমার আর মাঠে যাওয়া হলো না। এরপর আবার বৃষ্টি পড়তে থাকলো। ওই মুহূর্তে ইমন, আমাদের পুকুর পার হয়ে দুই পুকুর পর যেই বাঁশের মাচা ছিল, সেখান থেকে লক্ষ্য করে দেখল আমি পুকুরে আসছি না। অতঃপর সে তার ছাগলগুলো নিয়ে বাড়ি চলে আসলো। মাচার উপরে টিনের ছাওনি ছিল। যার জন্য মাঠে চড়াই করা গরু ছাগল দাঁড়ানোর জায়গা জুটে। আর এমন জায়গায় জায়গায় দাঁড়ানোর অনেকগুলো মাচা ও ছাউনি পাওয়া যায় পুকুরে। যাইহোক ইমন বাড়ি চলে আসলো। এরপর বিকালে সে বলল মনে হল যেন সে বসেছিল, তার সামনে পুকুরের মধ্যে বাজ পড়লো। আমি বললাম মনে হল তো আমাদের বাড়ির পাশে পড়লো। ইমন বলছিল না আমি যেখানে ছিলাম আমাদের সামনের ওই পুকুরটার মধ্যে পড়েছে। আমি প্রশ্ন করলাম তুই কি করছিলে তখন। সে বসলে ভাইয়া আমি তখন কাজ করছিলাম স্টিমিটে।
যাইহোক সেদিন আর পুকুরে যাওয়া হলো না আমার। আমাদের বাড়ি থেকেও কেউ আমাদের পুকুরে উপস্থিত হলো না। তিনটা পুকুরে মাছের কোন খাবার দেওয়া হলো না সেদিন। তাই চিন্তায় ছিলাম সকাল ভোর হতেই আগেই পুকুরে উপস্থিত হয়ে মাছের খাবার দিয়ে দিব। কারণ মাছের খাবার সে ছোট্ট ঘরের মধ্যে রাখা ছিল। ঠিক তেমনি পরের দিন সকালে ভরে মাঠে গেলাম। আমাদের পুকুরে উপস্থিত হওয়ার পূর্বে অন্যজনের পুকুর থেকে লক্ষ্য করে দেখলাম, আমি যে ঘরে অবস্থান করি সেই ঘরের পাশের কলাগাছ গুলো ঘরসহ ভেঙে পড়ে রয়েছে পুকুরের ধার সোজা। এমন অবস্থা দেখে আমি চমকে উঠলাম। এরপর লক্ষ্য করে দেখলাম ঘর থেকে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকলে আর একটা কলার ঝাড় ছিল পুকুরের চতুর্ভুজের এক কর্নার থেকে দ্বিতীয় কর্নারে। সেই কলা ছাড়ের বেশ কিছু কলা গাছের পাতা পুড়ে গেছে গাছ ভেঙে রয়েছে। তখনই অনুমান করে বুঝতে পারলাম ঘরের পাশের এই কলা ঝাড় থেকে শুরু করে দ্বিতীয় কর্নারের কলা ঝার পর্যন্ত ডাক বা বাজ সিটকিয়ে পড়েছে। অর্থাৎ যত আমরা ধারণা করেছিলাম পুরোটাই ভুল। এই বাজ পড়েছে আমার ছোট্ট ঘরের এখানে এবং ক্ষতি যা হয়েছে আমারই হয়েছে। আরো ক্ষতি হতো আমি যদি পূর্ব দিনগুলোর মত বৃষ্টি পড়া অবস্থায় আমার পুকুরপাড়ের এই ছোট্ট ঘরে চলে আসতাম। তাহলে হয়তো সেদিনই আমার জীবনের সমাপ্তি হতো। কারণ বৃষ্টি হলেও আমি ওই ঘরে থাকি না হলে ওই ঘরেই থাকি। আবার হালকা বৃষ্টি পড়লে তারপরেও আমি পুকুরে ওই ঘরে চলে যেতাম। কিন্তু ঐদিন আল্লাহ আমার হেফাজতে রাখবে বলেই বাড়িঘর থেকে মাঠে যাওয়ার মন-মানসিকতা থামিয়ে দিয়েছে।
এরপর দিনের দিন ঘরের পাশে থাকা কলাঝাড়ের কলা গাছগুলো সব মারা গেল। এরপর দ্বিতীয় কর্নারে যে কলা গাছগুলো ছিল তার মধ্যে অর্ধেক কলাগাছ মরে গেল। বেশ অনেকগুলো কলার কাইন ছিল। সেগুলো দিন দিন ভেঙ্গে পড়ে যেতে থাকলো। আর এভাবে আমার ঘরের পাশে থাকা গাছগুলো সব নষ্ট হয়ে গেল, তারপর থেকে আর সেই জায়গায় ঘর তৈরি করা হয়নি।
গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফি | ঘটনাস্থল এরিয়া |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Infinix Hot 11s |
লোকেশন | জুগীরগোফা |
বিষয় | অতীত ঘটনা |
ঠিকানা | গাংনী-মেহেরপুর, বাংলাদেশ |