গল্পঃ খুশির দিনে দুঃখের ছায়া
আমার বাংলা ব্লগ স্টিম কমিউনিটির বন্ধুগন
আমি @mostafezur001 বাংলাদেশ থেকে
আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন আমিও ভাল আছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে পুনরায় আরও একটা নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হয়ে গেলাম। ঘটনাটা আজ থেকে প্রায় অনেক বছর আগের। সম্ভবত তখন আমার বয়স পাঁচ থেকে ছয় বছর হবে। আমাদের এলাকায় তখন মানুষের মধ্যে ততটা সচেতনতা বোধ এসেছিল না। মানুষেরা তখন যে যার মত থাকতে পছন্দ করত। আমিও কাটাচ্ছিলাম আমার নিজের মতোই। যেহেতু তখন আমার বয়স অল্প তাই স্কুল এবং বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা নিয়ে অনেক মজার সময় অতিবাহিত করছিলাম। যেহেতু মুসলমান পরিবারের জন্মগ্রহণ করেছি তাই একটা সময় পরে একটি ছেলেরই সুন্নতে খাতনার কাজ শেষ করতে হয়। আমাদের তিন বন্ধুর সুন্নতে খাতনার দিন একই নির্ধারণ করা হয়েছিল। যেহেতু আমি একটু চালাক ছিলাম তাই আমি বলেছিলাম যে আমি সবার শেষে সুন্নতে খাতনার কাজ করব। তার মানে হচ্ছে আমি অন্য দুই বন্ধুর বাড়িতে যাব এবং সেখানকার পরিবেশ দেখব এবং সবশেষে আমার বাড়ির পরিবেশ তারা দেখতে পারবে না। ঠিক যেমনটা চিন্তা করেছিলাম তেমনটাই সম্পূর্ণ হয়েছিল। সারাদিনটা ভালোই কাটছিল কোন ধরনের সমস্যা লক্ষ্য করছিলাম না।
কিন্তু সমস্যা যা হবার তা ঘটে গেল রাতের বেলা। আর সমস্যাটা এমনই প্রকৃতির ছিল তা আমরা কোন সময়ে আশা করেছিলাম না। পরবর্তীতে আমি মানুষের মুখে শুনেছি যে এই ধরনের ঘটনা আমাদের গ্রামে এটাই প্রথম। যেহেতু ওই দিনে আমার সুন্নতে খাতনার কাজ শেষ হয়েছিল তাই আমাকে একটা আলাদা ঘরে রাখা হয়েছিল। সম্ভবত ঐদিন আমার দাদি এবং নানী আমার সাথে ছিল। ওই সময়টাতে আমি একটা ক্যাসিও ঘড়ি ব্যবহার করতাম। সেই ঘড়িতে এমন ব্যবস্থা ছিল যে রাতের বেলায় বাড়তি কোনো আলো জ্বালানোর প্রয়োজন হয় না। ঘড়িতে একটা নির্দিষ্ট বাটন ছিল যে বাটনটা চাপ দিলেই আলো জ্বলে উঠবে আর সময় কয়টা সেটা খুব ভালোভাবে দেখা যাবে। রাত তখন গভীর হঠাৎ কিছু মানুষের আনাগোনা লক্ষ্য করলাম। যেহেতু তখন আমাদের মাটির ঘর ছিল আর আমি মেঝেতেই শুয়ে ছিলাম তাই মাটির সাথে যেন কিছু মানুষের পায়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। যেহেতু অনেক গুলো মানুষের পায়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম তাই আমার মনের মধ্যে কেমন জানি একটা ভয় কাজ করতে শুরু করে দিয়েছিল। তার কয়েক মিনিট পরেই দেখতে পেলাম কিছু মানুষ আমাদের বাড়ির দরজা ভেঙ্গে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করছে। যেহেতু আমি শুয়ে রয়েছি আর আমার পক্ষে ওঠা সম্ভব নয় তাই আমি সবকিছু অনুভব করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর তাদের কন্ঠে শুনতে পেলাম দরোজা খোলার জন্য বলছে। তারা বলতে শুরু করলো যে আমরা লাল পতাকা বাহিনীর লোক আপনারা দরজা খুলুন। যেহেতু তারা জোরে জোরে চিৎকার করছিল আর সেই চিৎকারে আমার ভয়ের পরিমাণটা আরো বৃদ্ধি পেয়ে গিয়েছিল। ওই সময় আমার মেজো ভাইয়ের বয়স এক বছরের মত। যেহেতু আমরা দরজা খুলছিলাম না তাই তারা জানালা ভেঙে ফেলল এবং আমার মেজ ভাইয়ের মাথায় বন্দুক ধরে বলল দরজা খোল না হলে এখনই একে মেরে ফেলবো। তখন কোন উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে আমার পরিবারের লোকজন দরজা খুলল। তারপর আমাদের বাড়িতে যা কিছু ছিল সব কিছুই তারা লুটপাট করে নিয়ে চলে গেল। যেহেতু তখন আমাদের একটা মুদিখানার দোকান ছিল তাই তারা আমাদের দোকান থেকে বিস্কুট চানাচুর এমন কি মুড়ি পর্যন্ত বস্তা ভর্তি করে নিয়ে গিয়েছিল। আমাদের বাড়ি যা টাকা পয়সা , সোনার গহনা, টিভি সবই তারা নিয়ে গিয়েছিল। এমনকি আমাদের বাড়িতে থাকা একটা ছাগলও তারা নিয়ে চলে যাচ্ছিল। তারা সবকিছু নিয়ে চলে যাবার পথে গ্রামের মানুষদের মধ্যে বিষয়টা জানাজানি হয় এবং তাদের ধরার জন্য পিছু নিতে শুরু করে। ঠিক সেই মুহূর্তে তারা মানুষদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বোমা ফেলে। যখনই বোমা ফেলে তখনই ছাগলটা ভয়ে পালিয়ে আসে তাদের কাছ থেকে। তাই তারা আর ছাগলটা নিয়ে যেতে পেরেছিল না।
আপনাদের মাঝে আমি যে ঘটনাটা শেয়ার করলাম এটা কোন কাল্পনিক কাহিনী নয়। এটা আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সত্য একটা গল্প। যখন আমি ঘটনাগুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য লিখছিলাম ঠিক তখনই যেন আমি ফিরে গিয়েছিলাম সেই দিনটাতে। কতটা অসহায় ছিলাম আমি আর আমার পরিবার।
আমি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান।আমি বাংলাদেশের খুলনা বিভাগে মেহেরপুর জেলার গাংনী থানায় বসবাস করি।আমি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমি আমার জন্মভূমি বাংলাদেশকে খুবই ভালোবাসি।বর্তমানে আমি গ্রীনরেইন ল্যাবরেটরী স্কুলের একজন শিক্ষক।আমি ফটোগ্রাফি করতে খুব ভালোবাসি এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে নতুন নতুন জিনিস তৈরি করতে আমার খুবই ভালো লাগে।আমি বিশ্বাস করি, আমার এই সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে থেকে কেউ যদি উপকৃত হয় বা নতুন কিছু শিখতে পারে তবেই আমার সৃজনশীল কাজটি সার্থক হবে। তাই আমি চেষ্টা করবো আপনাদের মাঝে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সৃজনশীল জিনিস নিয়ে উপস্থিত হতে।
আমার কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম
ফেসবুক টুইটার
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Posted using SteemPro Mobile
আপনার গল্পটা পড়ে আপনার এবং আপনার পরিবারের সবার জন্য খুব খারাপ লাগছিল। এমন পরিস্থিতিতে পড়লে কারোই কিছু করার থাকে না। আপনার পরিবারের লোকজন দরজা না খোললে হয়তো আপনার মেজো ভাইয়ার প্রাণ চলে যেতো। সব কিছু নিয়ে গেলেও আপনাদের কারো কোনো ক্ষতি হয়নি এটাই শুকরিয়া।
ঠিক বলেছেন আপু ঐদিন দরজা না খুললে হয়তোবা আমার মেজো ভাইয়ের প্রাণ চলে যেতে পারত।
ঘটনাটি পড়ে অনেক খারাপ লেগেছে আমার কাছে। তবে আমি আমার বাস্তব জীবনে দেখিনি কিন্তু গ্রামে এরকম ঘটনা ঘটেছে আমি শুনেছি। তখন কিন্তু মানুষ সরাসরি ডাকাটি করতে ঘরে প্রবেশ করত। যখন এরকম ঘটনা শুনতাম তখন সারারাত ঘুম হতো না। মনে হতো আমাদের বাড়িতেও হামলা দিচ্ছে। খুব মর্মান্তিক একটি ঘটনা ঘটে গেল আপনাদের উপর। যতক্ষণ পড়েছিলাম ততক্ষণ খুবই খারাপ লাগছিল। অনেক ধন্যবাদ বিষয়টি আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য।
ওই সময় এটাই ছিল আমাদের গ্রামের প্রথম ডাকাতি।
আপনার গল্পটি পড়ে আসলেই অতীতের সোনা অনেক গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। বাবার কাছ থেকে অনেক শুনেছি আগে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী বাহিনী ছিল যারা বিভিন্ন এলাকায় এই ধরনের হামলা চালিয়ে লুটপাট করে নিয়ে যেত। সবকিছু সেই রকম একটা ঘটনায় ঘটেছিল যেটা খুবই দুঃখজনক সেই যুগ থেকে এখনো অনেকটাই মানুষ মুক্ত এটাই বড় প্রাপ্তি।
আমিও শুনেছি ওই সময়টাতে আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী বাহিনী ছিল।
ভাই আপনার গল্পটি পড়ে আমার গায়ে কেমন যেন শিহরণ দিয়ে উঠলো। এমন লোমহর্ষক ঘটনার সম্মুখীন আমি কখনো হইনি। তাই আপনার গল্পটি পড়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করছিলাম সেই সময়টাতে আপনার কেমন লেগেছিল। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আপনার ভয় লাগাটাই স্বাভাবিক ছিল। তখনকার সময় আপনাদের ঘরে থাকা সমস্ত মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে কথাটি শুনে খুবই খারাপ লাগলো। তবে সেই সময়টাতে আপনাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি এটা বড়ই ভাগ্যের ব্যাপার। কেননা তাদের হাতে বন্দুক ও বোমা ছিল। যাইহোক ভাই, সুন্দর একটি পোস্ট উপস্থাপন করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ওই দিনে আমিও প্রচুর পরিমাণে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ভাইয়া।
https://twitter.com/mostafezur14/status/1701970779485667507?t=kHEfGiJ692EIQdZP33vjWw&s=19