গল্প-জীবনের শেষ প্রান্তে||

in আমার বাংলা ব্লগ4 days ago

আসসালামু আলাইকুম/নমস্কার


আমি @monira999 বাংলাদেশ থেকে। আজকে আমি ভিন্ন ধরনের একটি পোস্ট আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে এসেছি। যদিও আজকে আমার ভীষণ মন খারাপ। আসলে শরীরটাও খুব একটা ভালো নেই। তাই কি পোস্ট করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তাই ভাবলাম একটি গল্প লিখে পোস্ট করি। মাঝে মাঝে গল্প লিখতে অনেক ভালো লাগে। তাই যখনই সময় পাই তখনই গল্প লিখার চেষ্টা করি। কিন্তু মানসিক প্রস্তুতি ছাড়া আসলে গল্প লেখা সম্ভব হয় না। তবুও আজকে আমি একটি গল্প লেখার চেষ্টা করবো।


জীবনের শেষ প্রান্তে:

litle-girl-5461388_1280.jpg

Source


জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে অহনা বুঝতে পারল তার জীবনটা সত্যি একাকিত্বে ভরা। হয়তো এরকমটা নাও হতে পারতো। সবার মত তার জীবনটাও সাজানো গোছানো হতে পারতো। কিন্তু বিধাতা তাকে সেই সুখ থেকে বঞ্চিত করেছে। অহনা বাবা-মায়ের বড্ড আদরের মেয়ে। মধ্যবিত্ত ঘরে বেশ আদরে বেড়ে উঠেছে অহনা। পড়াশোনাতে যেমন ভালো ছিল মেয়েটি তেমনি ছিল তার মায়াবী চোখের চাহনি। কাজল কালো চোখ দুটো যে বড্ড বেশি মায়ায় ভরা। তার লম্বা চুলের মায়ায় হাজারো ছেলে পাগল হয়ে যেত।


অহনা যখন বড় হতে লাগলো তখন বিভিন্ন জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু করলো। অহনার বাবা-মা চাইতেন তাদের মেয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করুক। অহনা ও তাই চাইতো। তার বাবা মা যেমন তাকে ভালোবাসতো তেমনি মেয়েটিও তার বাবা মাকে অনেক ভালোবাসতো। পড়াশোনায় বড্ড মেধাবী ছিল মেয়েটি। দেখতে দেখতে পড়াশোনা শেষ হয়ে গেল। এখন তার চাকরির পালা। পড়াশোনার পন্ডি পেরিয়ে গ্রামের একটি স্কুলে চাকরি হয়ে গেল অহনার। বেশ ভালোই কাটছিল তার দিনগুলো। হঠাৎ করেই তার বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক হয়ে গেল। পারিবারিকভাবেই তার বিয়েটা হয়ে গেল।


ছেলে ভালো চাকরি করে। কোন কিছুতেই অভাব নেই তার। দেখতে দেখতে কেটে গেল কয়েক মাস। সময় ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করলো। অহনার স্বামী শিহাব এবং তার পরিবার বিয়ের আগে বলেছিল ওরা অহনাকে চাকরি করতে দিবে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তাদের রূপ বদলে গেল। তারা চায় না তাদের বাড়ির বউ বাইরে গিয়ে চাকরি করুক। অবশেষে শিহাব এবং তার পরিবারের কথায় অহনার বাবা-মা সবকিছু মেনে নিল। অহনা নিজের মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে চাকরিতে রিজাইন দিয়েছিল। যদিও তাকে স্কুল থেকে কিছুদিন সময় দেওয়া হয়েছিল ভাবনা চিন্তা করার জন্য।


অহনা সংসার জীবনে নিজেকে আটকে নিয়েছিল। সংসার, শ্বশুর বাড়ি সবকিছু সামলাতে সামলাতে বড্ড ক্লান্ত হয়ে মেয়েটা। তার কাজল কালো চোখ দুটো কেন জানি বিষন্ন দেখাচ্ছে। মুখটা যে তারা মলিন হয়ে গেছে। অহনা মাঝে মাঝেই ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়তো। এরপর হঠাৎ একদিন অহনা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। দ্রুতই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানতে পারে কহনার ক্যান্সার হয়েছে। তার সময়টা ফুরিয়ে এসেছে। অহনা কেন জানি কষ্ট পেতেও ভুলে গিয়েছিল। হয়তো কষ্ট পেতে পেতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। অহনার চোখে মুখে বিষন্নতা ফুটে উঠেছিল। তার লম্বা চুলগুলো ধীরে ধীরে পাতলা হতে শুরু করেছে। মাথায় চিরুনি করতে আজকাল তার ভয় হয়। এই বুঝি সব চুল উঠে যাবে। অন্যদিকে অহনার স্বামী শিহাব ধীরে ধীরে বদলে যেতে শুরু করেছে। অহনাকে সময় দেওয়ার মত সময় তার নেই।


অহনা তার পরিবারের কাছে একটি আবদার করেছে। তার জীবনের শেষ কয়টি দিন সে তার স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সময় কাটাতে চায়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিজের মতো করে বাঁচতে চায়। পরনির্ভরশীল হয়ে সে আর জীবন কাটাতে পারছে না। আত্মনির্ভরশীল সেই অহনা আবারও তার আগের জীবনে ফিরে যেতে চায়। হয়তো তার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জীবনটাকে নিজের মতো করেই গুছিয়ে নিতে চায়। অহনা তার শ্বশুরবাড়ির সবার অমতে গিয়ে নিজের ইচ্ছে পূর্ণ করে জীবনের শেষ কয়টা দিন নিজের মতো করে বাঁচার চেষ্টা করেছে। হয়তো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে মেয়েটা বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচতে পেরেছিল। হয়তো তার জীবনের হাজারো অপূর্ণতার মাঝে পূর্ণতা খুঁজে নিয়েছিল।



আমার পরিচয়

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

আমি মনিরা মুন্নী। আমার স্টিমিট আইডি নাম @monira999 । আমি ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। গল্প লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে পেইন্টিং করতে ভালো লাগে। অবসর সময়ে বাগান করতে অনেক ভালো লাগে। পাখি পালন করা আমার আরও একটি শখের কাজ। ২০২১ সালের জুলাই মাসে আমি স্টিমিট ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করি। আমার এই ব্লগিং ক্যারিয়ারে আমার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো আমি "আমার বাংলা ব্লগ" কমিউনিটির একজন সদস্য।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Thank you for sharing on steem! I'm witness fuli, and I've given you a free upvote. If you'd like to support me, please consider voting at https://steemitwallet.com/~witnesses 🌟

 4 days ago 

IMG_20250411_204934.jpg

Screenshot_2025-04-11-20-12-51-26.jpg

Screenshot_2025-04-11-20-14-10-76.jpg

 4 days ago 

অহনার জীবনভিত্তিক গল্পটি হৃদয় ছুঁয়ে গেল। এক নারীর স্বপ্নভঙ্গ, কষ্ট আর আত্মসম্মানের সংগ্রাম খুব বাস্তবভাবে তুলে ধরেছেন। গল্পটি পড়ে ভালো লাগলো। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপু।

 3 days ago 

আমার লেখা গল্প আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.14
TRX 0.25
JST 0.031
BTC 85940.51
ETH 1647.44
USDT 1.00
SBD 0.78