আত্নহত্যা - শেষ পর্ব || একটি বাস্তব ঘটনা
"হ্যালো",
আমার বাংলা ব্লগ বাসি, সবাই কেমন আছেন? আশা করছি সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও আপনাদের দোয়াই এবং আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। সবার সময় ভালো কাটুক এই কামনাই করছি।
আত্মহত্যা মহাপাপ তবে কেউ যদি আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে সেটাকে তখন কি বলা হয়। আমরা এই সুন্দর পৃথিবীতে অনেক দিন বাঁচতে চাই বাচার আকাঙ্ক্ষা আমাদের সবারই আছে কিন্তু কিছু কিছু কর্মক্ষেত্রে সেটা উল্টো হয়ে যায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হয়। অনেক সময় গিয়ে মনে হয় বেঁচে থাকার প্রয়োজন টুকু হয়তো ফুরিয়ে গেছে। বিশেষ করে যখন ভালোবাসার মানুষ আঘাত দেয় সেই আঘাত মেনে নিতে অনেক কষ্ট হয় যাইহোক আজ আমি আত্মহত্যা গল্পের তৃতীয় এবং শেষ পর্ব শেয়ার করছি। আশা করছি আপনারা যারা প্রথম পর্ব এবং দ্বিতীয় পর্ব পড়েছেন তৃতীয় পর্বটি পড়লে এখান থেকে বেশ ভালো একটি শিক্ষা নিতে পারবেন। সেটা হচ্ছে যা কিছুই হোক না কেন আত্মহত্যা কখনো কোনো সমাধান হতে পারে না। লড়াই করে বেঁচে থাকার নামই জীবন।
এবার রতনকে হাসপাতালে তিন দিন থাকতে হয়েছিল। আমরা সবাই একে একে গিয়েছিলাম তার সঙ্গে দেখা করতে। যেহেতু আমার শহরে বাসা তাই দ্রুত শহরে চলে গিয়েছিলাম কখন কি দরকার লাগে সেটা তো আর বলা যায় না। তিনদিন পর রতনকে বাসায় দেওয়া হয়। সবকিছু ঠিকঠাক ছিল হঠাৎ বাসায় ফেরার সাত দিন পর ঘটে যায় সেই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা।
(চলবে)
বাসায় এসে রতন প্রায় অনেকটা সুস্থ হয়ে গিয়েছিল।এবার পরিবার থেকে সবকিছু যখন জানাজানি হয়ে গেলো তখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিল সেই মেয়ের সঙ্গে রতনের দিয়ে দেওয়া হবে। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মেয়ের বাড়িতে গেলে মেয়ে বিয়েতে রাজি হয় না। এরপর থেকে শুরু হয়ে যায় রতনের টেনশন। সাথে আরও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা তো ছিলই। সব মিলিয়ে ও বাসায় আসার ৭ দিন পর আবারো হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অক্টোবরের পাঁচ তারিখ আমি তখন শহরের বাসায়। বিকেলবেলা দেখলাম আপনাদের ভাইয়া আমাকে কিছু না বলেই বাহিরে চলে গেল। বললো বাহিরে নাকি জরুরি কাজ আছে।
হঠাৎ আমার মায়ের ফোন। ফোনের ওপারে অনেক কান্নাকাটির আওয়াজ।মাকে জিজ্ঞেস করার সাথে সাথে মা কান্না করে উঠে বলল রতন মারা গেছে।আমি কিছুতেই আমার কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। যে আমি ঠিক শুনছি নাকি ভুল শুনছি। ফোন কেটে সাথে সাথে আপনাদের ভাইয়াকে ফোন দিলাম। সে বলল হাসপাতালে আছে। তখন কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছিল এবং আপনার ভাইয়া বলছিল কিচ্ছু হয়নি রতন সুস্থ আছে। মনকে কিছুতে শান্ত করতে পারছিলাম না।
খুব তাড়াহুড়া করে একটা বোরকা পড়ে বাসার সামনে থেকে রিক্সা নিয়ে হাসপাতালে গেলাম। সেখানে গিয়ে যা দেখলাম তা দেখার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।ইমারজেন্সি রুমের সামনে অ্যাম্বুলেন্স তার করানো আমার ভাইকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে। তার নিথর দেহটা কয়েকজন মিলে এম্বুলেন্সে তুলছে। পাশে আমার চাচিরা কান্নাকাটি করছেন। আমিও আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না।যাইহোক এবার আমার ভাইকে এম্বুলেন্সে করে বাড়িতে আনা হয় এবং আমি আর আপনার ভাইয়া অন্য একটা গাড়িতে করে বাড়িতে আসি।
আর এভাবেই একটা জীবন মৃত্যুর দিকে চলে যায়। অনেক ছোটবেলায় নিজের মায়ের পেটের ভাইকে হারিয়েছি।তারপর থেকে ওই ছিল আমার খেলার সাথী, পড়ার সাথী,ঝগড়া করার সাথী।এখনো প্রত্যেক বার যখন গ্রামে আসি আমার বাড়ির পাশেই তাদের বাড়ি। মনে হয় এখন বেঁচে থাকলে কত সুন্দর একটা সম্পর্ক হতো আমাদের। আমার ছেলে মামা পেত। আমার ভাইয়েরও হয়তো একটা পরিবার হতো। কি আর করার আল্লাহ ওকে যেখানে রেখেছেন যেন ভালো রাখেন। ওর ভুলগুলো যেন আল্লাহ ক্ষমা করেন।
বেশি কিছু লিখতে পারছি না।আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। সবাই দোয়া করবেন যেন আল্লাহ আমার ভাইকে বেহেস্ত নসিব করেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
❤️আমার পরিচয়❤️
আমি হাবিবা সুলতানা হীরা । জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশাঃ গৃহিণী। শখঃ নতুন নতুন রেসিপি বানাতে ভালো লাগে। তাছাড়া গান গাওয়া, আর্ট করা, ফটোগ্রাফি করা ও বাগান করতে আমি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। আমি স্টিমিটে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে যুক্ত হই।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপু আপনার লেখা এই গল্পের প্রথম পর্বটা আমি পড়েছিলাম। তবে দ্বিতীয় পর্বটি পড়া হয়নি। তাই জন্য মাঝখানে কি হয়েছে এটা আমার জানা নেই। সময় করে দ্বিতীয় পর্বটা পড়ার জন্য চেষ্টা করবো আমি। শেষ পর্যন্ত আপনার ভাই মারা গিয়েছে এরকম ভাবে এটা শুনে অনেক খারাপ লেগেছে আপু। প্রিয়জনের মৃত্যুর কথা শুনলে বিশ্বাস করা যায় না। তবে দোয়া করি আপনার ভাইয়ের জন্য যেন তিনি ওপারে ভালো থাকেন। আর সৃষ্টিকর্তা যেন উনার ভুলগুলো ক্ষমা করে দেয়।
ধন্যবাদ আপু আপনার মন্তব্যের জন্য।
আপু আপনার গল্পের আগের দু'টো পর্ব পড়া হয়নি। তবে এই পর্ব পড়ে খুব খারাপ লাগলো। একটি মেয়ের জন্য নিজের সুন্দর জীবন এভাবে নষ্ট করে দেওয়া ঠিক হয়নি। তবে হয়তো আমরা আমাদের জায়গা থেকে এই কথাগুলো বলি কিন্তু যে এই পরিস্থিতিতে পড়ে একমাত্র সেই বুঝে সেই সময় তার কতটা যন্ত্রনা হয়। যতই কষ্ট হোক নিজেকে সামলিয়ে বেঁচে থাকা উচিত, এভাবে আত্মহত্যা করে পালিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আপনার ভাইয়ের জন্য সত্যি খুব খারাপ লাগে। আপনার ভাইয়ের জন্য দোয়া রইল। ধন্যবাদ আপু সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।
এটা ঠিক যে পরিস্থিতির স্বীকার হয় সেই একমাএ বুঝতে পারে কি থেকে কি হয়।ধন্যবাদ আপু মন্তব্যের জন্য।
আত্মহত্যা মহাপাপ তারপরও মানুষ জীবনের উপর অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহত্যা করে। আপনার সহপাঠী এবং ছোটকালের বন্ধু রতনের কথা শুনে বেশ খারাপ লাগলো। আসলে কিছু কিছু ভালোবাসার কারণে অনেক সময় মানুষ সিরিয়াস হয়ে অনেক কিছু করে ফেলে। হয়তোবা তারা চিন্তা করে না তাদের এই জীবনের পিছে মা-বাবা এবং অনেকের অবদান আছে। এবং তারা কষ্ট পাবে তার জন্য। সত্যি বলতে আপু এরকম মৃত্যু কারো কামনা করি না।
কতই বা বয়স হয়েছিলো চলে যাওয়ার মতো। যাইহোক বিধাতার যা ভালো বুঝেন করেন।ধন্যবাদ আপু মন্তব্য করার জন্য।