প্রথম ভেটুল ফলের গাড়ি তৈরি করার গল্প
হ্যালো বন্ধুরা!
আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আছেন সবাই? আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে আপনারা অনেক অনেক ভাল রয়েছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় বেশ ভালো আছি। মানুষের দৈনন্দিন জীবনটা বেশ ঘটনাবহোল। একটি দিন চলে যায় সেটা ইতিহাস হয়ে থাকে। যেদিন চলে যায় সেদিন ফিরে পাওয়া যায় না। তবে এমন কিছু দিন রয়েছে যেই দিনে বিশেষ কোনো ঘটনার সম্মুখীন হলে তার স্মৃতি হয়ে থাকে। আমাদের জীবনের ফেলে আসা প্রত্যেকটা দিন আমরা স্মরণ করতে পারবো না। তবে ফেলে আসা দিনগুলোর মধ্যে থেকে থাকা বিশেষ বিশেষ কিছু ঘটনা আমরা স্মরণ করতে পারি যা আমাদের কষ্ট দেয় আবার আনন্দ দেয়। তেমনি ছোট্ট একটা ঘটনা আপনাদের মাঝে শেয়ার করব। আশা করি আমার অতীতের এই গল্পটা অনেক ভালো লাগবে।
আমি তখন অনেক ছোট। নানি বাড়িতে অবস্থান করছিলাম। নানি বাড়িতে অবস্থান করার মুহূর্তে দেখলাম নানি বাড়ির পাশের সমবয়সী একটা ছেলে ভেটুল ফলের গাড়ি দিয়ে খেলা করছে। আমাদের সময় রেডিমেট খেলনা খুবই কম ছিল। প্লাস্টিকের খেলনা গ্রামে কম পাওয়া যেত কিন্তু তখনকার পিতামাতারা ছেলেদের খেলনা বেশি কিনে দিতেন না। এখনকার সময় আমরা যতটা বাচ্চাদের খেলনা কিনে দেওয়ার প্রতি আগ্রহী,এতটা আগ্রহ প্রকাশ করতেন না তারা। মূলত বিভিন্ন জিনিস দিয়ে খেলনা তৈরি করে দিতেই আগ্রহী ছিলেন। মূল গল্পে আসি। আমি তখন ভেটুল ফলের গাড়ি নেওয়ার জন্য বায়না ধরলাম। নানি বাড়িতে দক্ষিণ পশ্চিম কর্নারে একটি ভেটুল গাছ ছিল। সেই গাছে অনেক এই ভেটুল ফল ধরেছিল। আমি গাড়ি তৈরি করে নেওয়ার জন্য আম্মুর কাছে অনেক বায়না করছি। কিন্তু কিছুতেই তারা আমার কথা শুনছেন না।
হঠাৎ ছোট খালাম্মা কোথা থেকে যেন আসলেন। এসে জানতে পারলেন আমি ওই ফলের গাড়ি তৈরি করে নেওয়ার জন্য কান্না করছি। খালা তখন খাওয়া-দাওয়া বাদ রেখে বেশ কিছু ভেটুল ফল কুড়িয়ে আনলেন। তখন আমি খালার পাশে উপস্থিত হলাম। গাড়ি কিভাবে তৈরি করবে সেটা দেখার জন্য খুব আগ্রহ সহকারে বসে পড়লাম খালার পাশে। মাত্র তিনটা নারিকেল পাতার খিল ব্যবহার করে, তিনটা ভেটুল দিয়ে অনেক সুন্দর গাড়ি বানিয়ে দিলেন। আমি তো সেই গাড়ি পেয়ে অনেক আনন্দিত। এরপর আবারও পাঁচটি ভেটুল দিয়ে অনেক সুন্দর গাড়ি তৈরি করে দিলেন। এভাবে বেশ কয়েকটা গাড়ি তৈরি করে দিলেন। খালার এই গাড়িগুলো পেয়ে আমি এতটাই আনন্দিত যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।
এরপর নানীদের বাড়ির আশেপাশের সেই ছেলেরা আমার গাড়িগুলো দেখলো। তারা অনেকগুলো ভেটুল কুড়িয়ে নিল আমার নানীদের সেই গাছ থেকে। এরপর আমার গাড়ি গুলো দেখাদেখি তারা এমনিতেই এমন সুন্দর গাড়ি তৈরি করে ফেলছে। আমি তো তাদের দেখি অবাক হলাম। তখন ভাবলাম এরা পারে আমার খালা পারে আর আমি কেন পারি না। বিষয়টা ছিল আমি তো কোনদিন এ সমস্ত ফল দিয়ে খেলনা তৈরি করিনি। তাই আমি পারিনা। কিন্তু তখন আমি খুব আবেগ প্রবল হয়ে উঠেছিলাম। এরা তৈরি করছে আমি কেন পারব না। খালার দেখাদেখি উৎসাহ কম ছিল কিন্তু সমবয়সী ছেলে মেয়েদের দেখাদেখি আমার খুব উৎসব সৃষ্টি হলো। এরপর আমিও লেগে পড়লাম ভেটুলের ফল দিয়ে গাড়ি তৈরি করাতে। আমি আমার চেষ্টা চালিয়েছি কিন্তু খালাম্মা যেভাবে গাড়ি তৈরি করে দিয়েছে সেভাবে সুন্দর গাড়ি তৈরি করতে পারি নাই। তবে এখন যেন মনে হয় ওই যে গাড়ি তৈরি করাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম, মূলত ওটাই ছিল আমার বড় খেলাধুলা। কিছু একটা পারি না কিন্তু দেখে যে পাড়ার চেষ্টা করছিলাম এটাই আমার বড় বিষয় ছিল। আর এভাবেই প্রথম ভেটুলে ফল দিয়ে গাড়ি তৈরি করা খেলা করেছিলাম।
ব্লগিং ডিভাইস | মোবাইল ফোন |
---|---|
বিষয় | গল্প |
আমার ঠিকানা | গাংনী-মেহেরপুর |
বর্তমান অবস্থান | ঢাকা সাভার |
ফটোগ্রাফার ও ব্লগার | @helal-uddin |
ধর্ম | ইসলাম |
দেশ | বাংলাদেশ |
পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমি মোঃ হেলাল উদ্দিন। আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিক। আমার বাসা গাংনী-মেহেরপুরে। আমার বর্তমান ঠিকানা,ঢাকা সাভার বিশ-মাইল। আমি একজন বিবাহিত ব্যক্তি। কর্মজীবনে একজন বেসরকারি চাকরিজীবী।
Twitter-promotion
আমার আজকের টাস্ক
অনেক সুন্দর গল্প ছিল ভাইয়া। ছোটবেলায় আমরা হাঁড়ি-কুড়ি নিয়ে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে খেলাধুলা করেছি। তখন এখনকার মতো খেলনা ছিলনা। আমারা বিভিন্ন জিনিস নিয়ে খেলাধুলা করতাম ধুলি বালির মধ্যে।
আগের মানুষের খেলাগুলো ছিল ধরি বালির মধ্যে
ভেটুল ফল কি তা আমি সত্যি কখনো দেখিনি না হয়তো জানি আমাদের দেশে অন্য কোন নামে পরিচিত। ছোটবেলায় এই ধরনের গাড়ি তৈরি করা সব বাচ্চাদেরই বোধ হয় মজার খেলা ছিল। আসলে সেই যুগে তো আর এখনকার মত এত অত্যাধুনিক জিনিস পাওয়া যেত না তাই আমাদের মতো বাচ্চারা প্রাকৃতিক জিনিসের উপরে নির্ভর করতো। আপনি যে ওই ছোট্ট বয়সেই আপনার খালাম্মার দেখে উৎসাহিত হয়ে নিজে গাড়ি তৈরি করার চেষ্টা করেছেন এটা সত্যি প্রশংসনীয়। ছোট বাচ্চারা এভাবেই অনেক কিছু শিখে যায়। খুব ভালো লাগলো আপনার স্মৃতিকথা পড়ে।
আমাদের এখানে এই ফলগুলো বেশি দেখা যেত।