গল্প:-বৃদ্ধাশ্রম ( শেষ পর্ব )

in আমার বাংলা ব্লগ17 days ago

হ্যালো সবাইকে

কেমন আছেন সবাই ?আশা করি ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি আল্লাহর রহমতে। আজকে আরও একটি নতুন পোস্ট নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। বৃদ্ধাশ্রম গল্প আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আশা করি আপনাদের কাছে আমার এই পোস্টটি ভালো লাগবে।

1000054204.jpg

আজকে আমি আপনাদের মাঝে আরও একটি নতুন গল্প নিয়ে হাজির হলাম। গল্প করতে এবং গল্প লিখতে দুটোই আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে। গল্পগুলো পড়তে আমার কাছে সব থেকে বেশি ভালো লাগে তাছাড়া গল্পের মধ্যে ভূতের গল্প গুলো সব থেকে বেশি ভালো লাগে। কারণ সে গল্পগুলো পড়ার মধ্যে অনেক কৌতুহল কাজ করে। আমি আপনাদের মাঝে যেই গল্পটি শেয়ার করতে চলেছি সেই গল্পটির নাম হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রম। বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার এবং বৃদ্ধাশ্রমে থাকার যে কত কষ্ট কত কাহিনী রয়েছে সেটা তাদের লোকজন এবং যারা বৃদ্ধাশ্রমে থাকে তারাই জানে। আজকে আমি সেরকমই একটি গল্প আপনাদের মাঝে শেয়ার করব।

গত পর্বে আমি ছিলাম যে বৃদ্ধ লোকটি যখন নিজের সঞ্চয়টুকু শেষ হয়ে যায় তখন তার মেয়ে শ্বশুরবাড়ির এবং নিজের মেয়েরা আচরণ সবে বদলে যায়। একদিন হঠাৎ করে তার মেয়ে এসে বলে যে বাবা আমার ছেলে মেয়েরা তো বড় হচ্ছে আর আমার ছেলেমেয়েদের কেউ আলাদা আলাদা রুম দিতে হবে। এখন দুজনেই আলাদা রুম দেওয়ার জন্য বলছে এখন কি করবো এই রুমটা তুমি তার জন্য তোমার নাতনির জন্য ছেড়ে দাও। তখন তার বাবা বলে যে এই রুমটা ছেড়ে দিলে তাহলে আমি কোথায় থাকব। তখন তার মেয়ে বলেছে তুমি তো এখানে অনেক দিনে ছিলে অনেক বছর ধরে এখানে রয়েছে। এখন তোমার ছোট মেয়ের বাড়ি থেকে কিছুদিন থেকে আসো তাহলে আমাদের এদিকে অনেক সুবিধা হয়।

তখন তিনি তোর ছোট বোনের শ্বশুর বাড়ির অবস্থা তো খুবই খারাপ ছোট্ট একটা ঘর তাদের। তারা স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে থাকে। তাদের ছেলেমেয়ে রয়েছে তাদের টাকা পয়সার অভাব অনটন। আমি যদি সেখানে গিয়ে উঠে তাহলে তাদেরও তো অসুবিধে হবে। তখন তার মেয়ে বলেছে এখন আমি কি করবো আমাদের বাড়িতে তো এতদিন ছিলে এখন আমাদের নিজেদের অসুবিধা হচ্ছে তুমি তার থেকে বড় বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাও। সেখানে গিয়ে আমি তোমাকে দিয়ে আসবো সেখানে সুন্দরভাবে থাকতে পারবে। এই কথা শুনে সে তো আকাশ থেকে ভেঙে পড়ে তার নিজের মেয়ে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে চলে যেতে বলছে এটা সে সহ্য করতে পারছিল না।

তার বড় মেয়ের কথা সে অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছে এবং সে সারাদিনই মনে মনে ভাবছিল কি করবে এই বৃদ্ধ বয়সে সে কোথায় যাবে। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে একা একা তার পক্ষে থাকা সম্ভব নয় কারণ সেখানে কেউ নেই। যদিও গ্রামের বাড়িতে তার বিষয় সম্পত্তি অনেক রয়েছে। কিন্তূ একা থাকা সম্ভব একজন মানুষদের পাশে লাগে অসুস্থ তার কারণে খাওয়া-দাওয়া হাঁটাচলা কিছুই ঠিকভাবে করা যায় না। সে সারাদিনই মনে মনে ভাবছিল যে আমার টাকা শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে হয়তো তাদের সংসারে আমি এখন বোঝার মত। কি আর করা যায় বৃদ্ধ বয়সে একটা সময় ছেলেমেয়েদের কাছে মা-বাবা বোঝা হয়ে যায় এসব নিয়ে এসে চিন্তা করছিল।

এরপর সে বড় মেয়ের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় এবং চিন্তা করে ছোট মেয়ের বাড়িতে ছোট মেয়েকে দেখে সেখান থেকে অন্য কোথাও চলে যাবে। মনে এক সাগর পরিমাণ কষ্ট নিয়ে সে বেরিয়ে পড়ে ছোট মেয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে। সেখানে যেতে ছোট মেয়ে তো তার বাবাকে দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে। অনেকদিন পর তার বাবার সাথে দেখা যেহেতু বড় বোনের বাড়িতে থাকতে অনেক দূরে তাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হতো না। অনেকদিন পর বাবাকে দেখতে পেয়ে অনেক বেশি খুশি হয় এবং তার নাতি নাতনিরাও অনেক খুশি হয়ে যায়। নাতি নাতনিরা জিজ্ঞেস করতে থাকে কেন তুমি এতদিন আমাদের কাছে আসনি আমরা তোমাকে দেখিনি।

এরপর সে সেদিনটা তার ছোট মেয়ের বাড়িতেই থেকে যায়। তার কথাবার্তার মাধ্যমে তার ছোট মেয়ে কিছুটা বুঝতে পারে যে সে এমনি এমনি তার বড় মেয়ের বাড়ি থেকে চলে আসেনি। সেখানে তারা তাদের কিছু হয়েছে তখন সে তার বাবা কি খুঁটিয়ে খুটিয়ে অনেক কথায় জিজ্ঞেস করে। তার বাবা সব কিছু বলে দেয় এবং বলে দেয় যে আমি এখান থেকে বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাব। আমার এখন কেউ নেই সেজন্য আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হবে। তবে জীবনে কখনো ভাবতে পারিনি শেষ বয়সটা এভাবে কাটাতে হবে। তখন ছোট মেয়ে বলে বাবা তুমি এটা কি বলছ আমি বেঁচে থাকতে তুমি কেন বৃদ্ধাশ্রমে যাবে। তুমি আমাদের কাছে থাকবে তখন তার বাবা বলে তোমাদেরই তো চলতে অনেক কষ্ট হয়ে যায় ছোট্ট একটা ঘর। তখন তার মেয়ে বলে তাতে কি হয়েছে তুমি তোমার বড় নাতির সাথে থাকবে তাহলে তো হয়ে যায়। আর টাকা পয়সার কথা তোমাকে চিন্তা করতে হবে না আমরা যা খেয়ে পড়ে আছি তুমিও তা খেয়ে পড়ে থাকবে তাও তুমি বৃদ্ধাশ্রমে যাবে না।

তখন তার বাবা মনে মনে চিন্তা করতে থাকে যে আগেই যদি ছোট মেয়ের বাড়িতে আসতাম তাহলে হয়তো আমার এই অবস্থা হতো না। খুবই সুন্দরভাবে আমি জীবন কাটাতাম শেষ বয়সে এসে এভাবে বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়ার মত কষ্টটা ও সহ্য করতে হতো না। এসবই সে মনে মনে ভাবছিল। এরপর অনেক অনেক দিন কেটে যায় তার বড় মেয়ে তার বাবার কোন খোঁজ খবর নেয়নি। বোনের কাছ থেকেও খোঁজ খবর নেয়নি চিন্তা করেছে বৃদ্ধাশ্রমে চলে গিয়েছে। পরবর্তীতে তার ছোট মেয়ের ছেলে অর্থাৎ তার নাতির নামে তার যে সম্পত্তিগুলো ছিল গ্রামের বাড়িতে সেগুলোই লিখে দেয় এবং সেগুলো বিক্রি করে তারা বাকিটা জীবন সুন্দরভাবে কাটায়। আসলে মানুষ যখন বৃদ্ধ হয়ে যায় এবং সেই মানুষগুলো তাদের সন্তানকে ঠিকভাবে মানুষ করতে পারে না তাদের বাবা-মাকে পরবর্তীতে অনেক কষ্ট করতে হয়। তাদেরকে সারা জীবন অবহেলায় বৃদ্ধাশ্রমে কাটাতে হয়। এই ছিল আমার আজকের গল্প আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

পোস্ট বিবরণ

শ্রেণীজেনারেল
ফটোগ্রাফার@fasoniya
ডিভাইসVivo Y15s
লোকেশনবাংলাদেশ


আমার পরিচয়

1000052972.jpg

আমার নাম ফারজানা আক্তার সোনিয়া। আমি বাংলাদেশী।আমি বর্তমানে লেখাপড়া করি আমি একজন স্টুডেন্ট। আমি আর্ট করতে ভালোবাসি আর যখনই সময় পাই তখনই আর্ট করি।আমি ফটোগ্রাফি করতে খুবই ভালোবাসি । যখনই কোথাও খুব সুন্দর কিছু আমার চোখে পড়ে আমি ফটোগ্রাফি করে ফেলি। এছাড়াও আমি ক্রাফট তৈরি করে থাকি । বিভিন্ন ধরনের রান্না করে থাকি রান্না করতে অনেক পছন্দ করি। আমি আমার পরিবারের সবচেয়ে বড় মেয়ে । আমার ছোট ছোট দুইটা ভাই আছে। আমার অনেক স্বপ্ন রয়েছে যেগুলো স্টিমিট এ কাজ করে পূরণ করতে চাই।


1 (1).png

IMG-20221013-WA0015.jpg

1000041574.jpg

Sort:  
 17 days ago 

1000054561.jpg

 17 days ago 

আপু আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে আপু নিজের সন্তান এভাবে বাবা মাকে বললে তাদের কষ্টের শেষ থাকে না। সত্যি এমন সন্তান থাকার চেয়ে না থাকায় উত্তম। লোকটি অবশেষে সব সম্পত্তি তার ছোট মেয়েকে দিয়ে অনেক ভালো করেছে।ধন্যবাদ আপু সুন্দর লিখেছেন।

 15 days ago 

আমার এই গল্পটি পড়ে ভালো লেগেছে এবং গল্পটি নিয়ে সুন্দর আর গঠনমূলক একটি মন্তব্য করেছেন সেজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

 17 days ago 

অনেক মানুষের জীবন এমন রয়েছে আপু। ছোট সন্তানদের মানুষ করতে গিয়ে তারা হিমশিম খেয়ে যায় বয়সের ভারে। আবার অনেক সময় দেখা যায় তাদের দেখাশোনা করার মানুষ থাকে না। নিজের সন্তানরাও সেভাবে কাজে আসে না। তাই অনেক সময় অনেক মানুষকে ইচ্ছার বাইরে থেকেও বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিতে হয়। আপনার ঘটনাটা পড়ে বৃদ্ধ ব্যক্তির জীবন কাহিনী জানতে পারলাম।

 15 days ago 

হ্যাঁ ভাইয়া বর্তমানে অনেক মানুষেরই জীবন এরকম। বর্তমান পরিস্থিতি এরকম হয়ে উঠেছে যে এই ধরনের ঘটনা এখন সব জায়গায় দেখা যায়। ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি পড়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন।

 17 days ago 

এমন ঘটনা পড়লে মাঝে মাঝে আমার খুব ভয় লাগে। মনে হয় আমাদের শেষ জীবনটা না জানি কেমন হয়। সেই জন্য তো কোন প্রকার হিংসা মনের মধ্যে আনতে পারি না বা ইচ্ছেও নেই। আল্লাহ না করুক আমাদের সবাইকে ভালো রাখার আপনজনদের মাঝে বেঁচে থাকার সুযোগ দিন।

 15 days ago 

হ্যাঁ আপু এই ধরনের ভয় আসলে আমার মধ্যেও কাজ করে। যাই হোক আপনি গল্পটি পড়েছেন এবং সুন্দর একটি মন্তব্য করেছেন দেখে খুবই ভালো লাগলো।

 13 days ago 

এটা ঠিক বলেছেন বয়স্ক লোকের পরিবারের গুরুত্ব কমে যায় কিন্তু এটা মোটেই ঠিক নয়। বাবা-মা কত কষ্ট করে আমাদেরকে মানুষ করেন। আর বয়সকালে আমরা তাদেরকেই অবহেলা করি। যদিও আপনার এই গল্পের প্রথম পর্বটি আমি পড়িনি তবে দ্বিতীয় পর্বের শেষ অংশটুকু পড়ে বেশ ভালো লাগলো। যাক লোকটি অবশেষে ছোট মেয়ের কাছে ভালো আছে জেনে ভালো লাগলো।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.24
JST 0.034
BTC 95696.21
ETH 2793.14
SBD 0.67