হোস্টেল লাইফ রেগিং (পর্ব -১)|| Hostel life ragging.
(পর্ব -১) |
---|
কেউ যদি আমায় প্রশ্ন করে আমার জীবনের সবথেকে সেরা সময় কোনটি? আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি সেটা হচ্ছে আমার হোস্টেল জীবন। আসলে আমি আমার হোস্টেল জীবন থেকে এত কিছু শিখেছি যা বলে শেষ করতে পারবো না। সত্যি বলতে আজকের আমাকে যা দেখছেন তার শুরুটা কিন্তু সেই হোস্টেল জীবন থেকে মানে আমি এটাই বোঝাতে চেয়েছি আমার অনেক গুণাবলী আমি আমার হোস্টেল জীবন থেকে অর্জন করেছি। আমার হোস্টেল জীবনের এমন অনেক জ্ঞান আমার পুরো জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে।
যাইহোক কোন কিছু শিখতে গেলে কিছু জিনিস ত্যাগ স্বীকার করতেই হয়, তেমনি আমি হোস্টেল জীবনের শুরুতে অনেক ধৈর্য এবং ত্যাগ স্বীকার করেছি। চলুন তাহলে আমার হোস্টেল জীবনের কাহিনী গুলো আপনাদের সাথে ধীরে ধীরে ভাগ করে নেই।
আমি যখন একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হলাম তখন আমার বাবার আর্থিক অবস্থা খুব বেশি ভালো ছিল না। তখন তিনি চাইছিলেন আমার যাতে হোস্টেলে একটি সিটের ব্যবস্থা হয়ে যায়। কিন্তু হোস্টেলে সিট সংখ্যা খুবই সীমিত থাকায় বিষয়টি আমাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। যাই হোক আমি কলেজে ভর্তির পর আমার বাবা অনেক চেষ্টা করে আমার জন্য হোস্টেলে একটা সিটের ব্যবস্থা করেন।
আমি যেদিন হোস্টেলে উঠলাম সেদিন আমি মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছিলাম যাতে আমি খুব ভালো কিছু রুমমেট পাই এবং যারা আমাকে সব সময় বন্ধুর মত সহযোগিতা করবে। যাই হোক আমি যে রুমে উঠলাম সেখানে দেখলাম মোট চারটি বেড রয়েছে অর্থাৎ এক রুমে চারজন করে অবস্থান করতে হবে। যাই হোক আমি রুমে প্রবেশ করে প্রথমেই আমার বিছানাটা ঠিক করলাম এবং আমার টেবিলে বই পুস্তক সহকারে অন্যান্য প্রয়োজনীয় সব জিনিস গুছিয়ে রাখলাম।
রাত তখন সাড়ে আটটা বাজে ততক্ষণে পেটে খিদে চুই চুই। আমি দেখলাম সবাই ধীরে ধীরে ডাইনিং রুমের দিকে যাচ্ছে। বিশাল বড় ডাইনিং রুম যেখানে বড় বড় চারটি টেবিল রয়েছে একটি বড় ভাতের গামলা এবং একটি ডালের গামলা রয়েছে প্রতিটি টেবিলে। আমি বেসিনের পাশ থেকে প্লেট নিয়ে সেটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে টেবিলে বসলাম। আমি খাবারের জন্য অপেক্ষা করছি। কিন্তু অবাক হলাম কেউ আমাকে তরকারি দিচ্ছে না। আমি একটু অবাক হলাম, এরপর আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম এক বড় ভাই রান্নাঘরের এক পাশের থেকে এক বাটি তরকারি নিয়ে তার নির্দিষ্ট খাওয়ার জায়গায় এসে বসলেন। তখন আমাকে একজন চোখে ইশারা দিয়ে বলল যাও নিজের তরকারির বাটি নিয়ে এসো।
আমি খেতে বসে খাবার এ খুব বেশি তৃপ্তি অনুভব করলাম না বরং খাবারটি খেয়ে আমার প্রচন্ড বমি আসতে শুরু করল। কারণ অনেকগুলো সবজি একসাথে মাখিয়ে শুধুমাত্র সেদ্ধ করা হয়েছে মনে হল আর মাছের মধ্যে কোন লবণ হলুদ মনে হয় যেন কিছু হয়নি। অনেকটা বমি চলে আসবে এরকম অবস্থা। যাইহোক সামান্য একটু খাবার খেয়ে আমি আমার রুমে চলে আসলাম। কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে আসার সময় আমি বেশ কিছু ভুল করলাম যেমনটা হচ্ছে সিঁড়ির ঠিক নিচেই আমার কিছু সিনিয়র বড় ভাই ছিলেন আমি তাদের সালাম দেইনি এবং অনেকটা তাদের শরীল ঘেঁষে আমার রুমের দিকে দ্রুত যাচ্ছিলাম। এমনকি একজন বড় ভাইয়ের সাথে সামান্য একটু ধাক্কা লেগে গেছে কারণ একে তো নতুন জায়গা আমি বেশ অন্যমনস্ক ছিলাম।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমি সাড়ে দশটার মধ্যে শুয়ে পড়লাম কারণ আমি বাড়ি থেকে জার্নি করে হোস্টেলে উঠেছিলাম এবং বেশ ক্লান্ত ছিলাম। রাত যখন বারোটা বাজে হঠাৎ করে দরজায় জোরে জোরে ধাক্কা দেওয়ার শব্দ পেলাম আমি হুড়মুড় করে লাফিয়ে উঠলাম। শুধু আমি না, আমার আরো তিনজন রুমমেট লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলো এবং আমি লাইট জ্বালাই। হঠাৎ করেই দরজার ওপাশ থেকে কেউ একজন বলছে তাড়াতাড়ি ১০২ নাম্বার রুমে আয় মিটিং আছে তাড়াতাড়ি ১০২ নাম্বার রুমে আয়। আমি সত্যিই অবাক হলাম যাই হোক কোন রকমের ঐ রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম।
রুমে ঢুকতেই আমি অবাক আমাদের দ্বিতীয় বর্ষের সব ভাইয়েরা ওখানে বসে আছেন এবং তাদের ঠিক সামনেই কিছু চেয়ার রয়েছে আমাদের জন্য। আমরা প্রথমে সেখানে বসলাম কিন্তু কাউকে সালাম দিলাম না এবং স্বাভাবিকভাবে বসলাম। সবাই আসার পরে সিনিয়র ভাইয়েরা অনেক জোরে আমাদেরকে ধমক দিলেন এই তোরা ভদ্রতা শিখিসনি। রুমে ঢুকে আগে বড়দের সালাম দিতে হয় সেটা কি তোরা শিখিসনি। এখনি সবগুলো বাইরে যা সালাম দিয়ে আবার ঢুকবি, তারপরে তোদের বিচার করছি ভালোভাবে।
আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।
https://steemitwallet.com/~witnesses
VOTE @bangla.witness as witness
OR

আপনার আজকের এই হোস্টেল লাইফ রেগিং পোস্টটি পড়ে আমার আবরারের কথা গুলো মনে পরে গেলো।খুব বেদনাদায়ক ছিল আসলে।হোস্টেলে এমন রেগিং হয় আমার এমন ধারনাই ছিল না।কিন্তু আবরারের ঘটনায় আমি রীতিমতো শকটড হয়ে গিয়েছিলাম।যাই হোক এরপর কি হল? আশাকরি খুব তাড়াতাড়িই জানতে পারবো।
হোস্টেল লাইফ রেগিং গুলো যদিও খুব খারাপ লাগে। তবে কিছু কিছু রয়েছে যে গুলো ভীষণ মজা লাগে। এত রাতে কেউ হঠাৎ করে ডাকলে তো ভয় পাওয়ার কথা। সবাই বেশ ভালোই ভয় পেয়েছিলেন। আশাকরি পরের পর্বে মজার ঘটনা অপেক্ষা করতেছে। অপেক্ষায় রইলাম আপনার জন্য শুভ কামনা রইল ভালো থাকবেন।
হোস্টেল লাইফে অনেকেই রেগিং এর শিকার হয়েছে বা এখনো হচ্ছে। যাইহোক পরবর্তীতে পর্বে বিস্তারিত জানতে পারবো কি হয়েছিল আপনাদের সাথে। এমন খাবার খেলে তো বমি আসার কথাই। জীবনটা যে কি, সেটা আস্তে আস্তে তখন থেকেই টের পেয়েছিলেন তাহলে। আসলে কিছু কিছু বাস্তব জ্ঞান সারাজীবন কাজে লাগে। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাই।