শৈশবের ঈদ আনন্দ -- পর্ব ১ /১০% প্রিয় 💞 @shy-fox

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

বিসমিল্লাহি রহমানের রাহিম

আসসালামু আলাইকুম

শ্রদ্ধেয় প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন ? সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আশা করি ভাল আছেন । আমিও সৃষ্টিকর্তার রহমতে ভালো আছি ।

প্রিয় , আমার বাংলা ব্লগ কমিটির সদস্যরা
আপনাদের মাঝে আবার এসে হাজির হলাম।

আজ আমি আপনাদের শৈশবের ঈদ আনন্দ সম্পর্কে আমার অনুভূতি বলতে চাই। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। আপনারা আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে পুরো পোস্টটি দেখবেন আশা করি।

আসুন শুরু করি

pexels-photo-7956566.jpeg

source

ঈদ বলতে আনন্দ অর্থাৎ খুশি। ছোটকালে ঈদ বলতে খুশি আর বাঁধভাঙ্গা আনন্দ যেখানে খুশির সীমা পরিসীমা নেই। শৈশবে ঈদ আসবে ঈদ আসবে ঐ ঈদের একটা দিনের জন্য রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত অপেক্ষা করা। ঐদিন আব্বু আম্মু বড় ভাই বড় আপু আত্মীয়-স্বজন সকলকে সালাম করলেন টাকা পাবো এই আশায় প্রতিক্ষণ কেটে যায়। নতুন জামা কাপড় এক দুইটা হলে তো আনন্দের উচ্ছ্বাসের শেষ নাই। আর যদি জামা কাপড় পাঁচ ছয়টা আনা হয় তাহলেতো আনন্দের কোন সীমা নাই। বিশেষ করে পায়জামা-পাঞ্জাবি দেখলেই বেশী খুশী হতাম কারণ সমবয়সী প্রায় সকলেই ঈদের দিন পায়জামা-পাঞ্জাবি গায়ে দিতো।

পাড়ার সমবয়সী সকলের বন্ধু-বান্ধবের সাথে গিয়ে শুধু জিজ্ঞেস করতাম তোর কয়টা আনা হয়েছে আমার দুইটা আনা হয়েছে। এভাবেই প্রতিদিন জামা কাপড়ের ব্যাপারে সমালোচনা করতে থাকতাম। তোর থেকে আমারটা অনেক দামি আমারটা লাল রঙের বা সাদা রঙের এভাবে কথা কাটাকাটি চলতে থাকতো। প্রতিনিয়ত টাকার হিসাব নিকাশ চলতো। অর্থাৎ গতবছর কয় জনে সালামি দিয়েছে এবং এবারে এই বারে কয় জনে দিবে । কে কত টাকা দিতে পারে এইসব নিয়ে হিসেব নিকেশে ব্যস্ত থাকতাম। আসলে কি যে আনন্দের আমেজ বিরাজ করতো। তা কল্পনার বাহিরে।

pexels-photo-7249733.jpeg

source

২২ বা ২৩ রমজান যখন শেষ হতো তখন বাড়ির পাশে কয়েকটা দোকানে বাজি বিক্রি করা আরম্ভ করতো । তখন আব্বু বা আম্মু থেকে চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, চকলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি খাওয়ার কথা বলে টাকা নিতাম । করে টাকা জমিয়ে দোকান থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বাজি কিনতাম। পাড়ার অন্যান্য বন্ধুরা একত্র হলে বাজি নিয়ে তর্কে জড়িয়ে যেতাম আর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতাম। বাজি কিনা প্রতিযোগিতা অর্থাৎ কারো কাছে যদি দশটা বাজি থাকতো তাহলে আমার বারোটা থাকতে হবে। আর কারো কাছে পনেরো টা থাকলে যেভাবে হোক আমার কাছে বিশটা থাকতে হবে এভাবে দিনগুলো কেটে যেতো।

আসলে পাড়ার বন্ধুরা সবাই বাজি ফুটানোর খুবই নেশা ছিল। তাদের এক একজনের কাছে ৬০ - ৭০টা পর্যন্ত বাজি থাকতো। ঈদ আসবে বা, ঈদ হবে এই আশায় আনন্দে মাতোয়ারা থাকতাম। অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার পেরিয়ে চাঁদ রাত হতো। আসলে তখন আনন্দটাই খুব অন্যরকম ছিল। তখন বাড়ির কারো এন্ড্রয়েড মোবাইল ছিল না। সোশ্যাল মিডিয়া বলতে কোনকিছু বুঝতো না‌। শুধু একমাত্র বিটিভি ছাড়া। তাও বিটিভি নেটের সমস্যা কারণে সবসময় চলতো না। ২৯ বা ৩০ রমজান হলে আব্বু আম্মুকে সকাল-দুপুর-বিকেল সারাক্ষণ জিজ্ঞেস করতাম চাঁদ দেখা গেছেনি। আম্মু বলতো চাঁদ দেখা গেলে ঈদ হবে। তাই ইফতার করা ছেড়ে দিয়ে চাঁদ দেখা নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতাম। সন্ধ্যা হওয়ার পর থেকে পাডার অন্যান্য ছেলেদের সাথে দলবেঁধে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতাম। আর বারবার আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদ দেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। আর আমাদের সকলের কাছে বাজি থাকতো। যদি চাঁদ না দেখতাম আমরা অপেক্ষা করতাম আমাদের কোনো বড় ভাই বাজি ফুটায়ছেনি বাজি ফুটানোর শব্দে শুনলে বুঝতাম চাঁদ উঠেছে। আসলে চাঁদ দেখার জন্য কতটা যে পাগল ছিলাম আর কতটা আগ্রহ নিয়ে চাঁদ দেখতাম তা আসলে ভাষা বলে প্রকাশ করা যাবে না।

pexels-photo-2989625.jpeg

source

ঐ দূর আকাশে বাঁকা চাঁদ দেখার পর সবার মুখে হাসি সবার উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছে। চাদ দেখার পরে চারদিকে হইচই আরাম্ভ হতো সকলে দলবেঁধে ঈদ ঈদ বলে বিভিন্নভাবে আনন্দ প্রকাশ করতাম চারদিকে আনন্দের বন্যা বয়ে যেত। তৎক্ষণাৎ সবাই বাজি ফুটানো নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। চারদিকের পরিবেশ বাজির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠলো। সবাই আমরা বাহিরে রাস্তায় খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠতাম। আসলে ঐ মুহূর্তে কি যে আনন্দ লাগতো
সবার চোখে-মুখে আনন্দের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেতাম। এভাবে আনন্দ উপভোগ করতে করতে রাতের নয়টা বা, দশটা টা বেড়ে যেতো। রাত যখন গভীর হতে লাগতো তখন আব্বু, আম্মু, বা- বড় ভাই এসে নানা ভাবে বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে যেত বাসায় যেতো। একদম বাসায় যেতে চাইতাম না। বাসায় যাওয়ার পর আম্মু রাতের খাবার দিতো কিন্তু আনন্দের খুশিতে খাবার খেতাম না। তবুও আম্মু জোর করে সামান্য কিছু খাওয়াতেন। চোখেমুখে শুধু স্বপ্ন দেখতেন একটি রাত শেষ হলে ঈদ। বাসার সবাই মাঝে আনন্দ বিরাজ করতেছে সবাই ঈদের দিনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে । বিশেষ করে আম্মু বিভিন্ন খাওয়া-দাওয়া রান্নার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বা, আলোচনা করতেছে। বাসার সবাই ঘুমিয়ে গেল। কিন্তু আমার ঘুম আসতেছে না। সকাল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেছে। আর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভাবছি। চোখে শুধু রঙ্গিন স্বপ্ন দেখতেছি এই করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম তার বুঝতে পারলাম না। আজ এই পর্যন্ত ।সত্যি এই মুহূর্তগুলো যখনি মনে করে খুবই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি।

আবারো আপনার সাথে কথা হবে আগামী পর্বে আশা করি সবাই সে পর্যন্ত অপেক্ষা থাকবেন।

পোস্টটির কোথায় ভুল ত্রুটি হলে সুন্দর ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

  • অন্য সময়ে আবার অন্য কোন বিষয় নিয়ে কথা হবে।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিবেন ।এই আশাবাদ ব্যক্ত করে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি।

সবাইকে শুভ রাত্রি
আপনারা সবাই ভালো থাকবেন।
আপনাদের সকলকে আমার পক্ষ থেকে ভালোবাসা 💜💙 এবং অভিনন্দন রইলো ।

♥️ আমার ব্লগটি ভিজিট করার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ 🖤

Sort:  

আসলেই দেখলে যেন আমাদের আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ি। আর শৈশবের কথা গুলো বারবার মনে করি আর যারা মুচকি হেসে ফেলি। ছোটবেলায় সমবয়সী বন্ধু বান্ধবের সাথে কত আবেগ জড়ানো আলাপ হত বিশেষ করে ঈদের কেনাকাটা নিয়ে অনেক কথা হত। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর অনুভূতি আমাদের সাথে সাজিয়ে-গুছিয়ে শেয়ার করার জন্য। পরের অংশের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

 3 years ago 

পোস্টটি পড়ে এত সুন্দর অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই ‌‌।

 3 years ago 

শৈশবে ঈদ মানে ভিন্ন রকম আনন্দ এবং তার বাঁধ ভাঙ্গা উচ্ছ্বাস ছিল। শৈশবে ঈদ উপলক্ষে আপনার মত আমরাও অনেক আনন্দ করতাম। প্রথম তো ঈদের জামা কাপড় কেনাকে কেন্দ্র করে পাড়ার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা চলত, এরপর চাঁদ রাতে সবাই মিলে একত্রে চাঁদ দেখা ঈদের দিন সকালে গোসল করা সেমাই খেয়ে মাঠে বন্ধু বান্ধবীরা মিলে একত্রে দল বেধে যাওয়া এসব ঈদ আনন্দের মাত্রা বহুগুণে বাড়িয়ে দিত। স্মৃতিগুলো মনে করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

আপনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল এত সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

আপনার পোস্টটি পড়ে আমারও শৈশবের ঈদের আনন্দগুলো কথা মনে পড়ে গেল। আমার ছোটবেলাযর সেই আনন্দগুলো এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে দেখতেই পাই না। আমরা কত বাজি ফুটিয়েছি আনন্দ করেছি এগুলো কুব মিস করি।। বিশেষ করে ঈদের জামা কাপড় গুলো কিনে আনার পর বার বার বের করে দেখতাম। আর ভাবতাম কবে ঈদ আসবে কেউ দেখতে আসলে দেখাতে চাইতাম না যদি নষ্ট হয়ে যায় সেই ভয়ে। যাইহোক আপনার শৈশবের ঈদ আনন্দের বর্ণনাগুলো আমার খুব ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে। এত সুন্দর ভাবে আপনার মনের অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

ভুলত্রুটি আর কি ধরবো ভাই। নিজের ভুলেরই তো হিসানব খুঁজে পাইনা। শৈশব নিয়ে ভালো কিছু লিখেছেন, এতোটুকুই শুধু বলতে পারি।

 3 years ago 

অনেক অনেক ধন্যবাদ রইল ভাই।

 3 years ago 

আসলে স্থান-কাল ভিন্ন হলেও ঈদের আনন্দ সবার ক্ষেত্রে প্রায় একই রকম। সকল মুসলমান বছরে এই দুটি দিনের জন্য ভীষণ ভাবে অপেক্ষা করে। তবে শৈশবে যে আনন্দমাখা ঈদের স্মৃতি এটা জীবনে কখনোই ভোলার নয়। ভাল লাগল আপনার ছোটবেলার ঈদের অভিজ্ঞতা জেনে। ধন্যবাদ

 3 years ago 

এত চমৎকার মতামত শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

 3 years ago 

টাকা জমিয়ে দোকান থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বাজি কিনতাম।

এখনো ভাই আমি বাজি কিনি। আগে থেকেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতাম। আজকে রাত ১২ টার পর বন্ধুরা মিলে আবার সেই পুরোনো আড্ডায় মেতে উঠবো। আপনার শৈশবের অভিজ্ঞতা পড়ে আমার খুব ভালো লেগেছে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।

 3 years ago 

আপনার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা রইল এত সুন্দর অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

আপনার শৈশবের ঈদ আনন্দ পর্ব পড়ে খুব ভালো লাগলো। আসলে আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন ঈদ আসলে আমাদের ভিতরে অন্যরকম এক আনন্দ খেলা করত যা বর্তমান প্রায় করে না বললেই চলে। আপনি শৈশবের ঈদ আনন্দ দারুন ভাবে আমাদের মাঝে ফুটিয়ে তুলেছেন। সেই সময় গুলো ভীষণ মিস করি এখন। আপনার মত আমরাও দলবেঁধে ঈদের গান গাইতাম ঈদ আনন্দ উপভোগ করতাম। যাইহোক আপনার শৈশবের ঈদের গল্প শুনে অনেক ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ।

 3 years ago 

পোস্টটি দেখে এত অসাধারণ মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অন্তরের স্থল থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

Coin Marketplace

STEEM 0.13
TRX 0.23
JST 0.031
BTC 82369.43
ETH 2098.66
USDT 1.00
SBD 0.76