যেভাবে অডিট রিপোর্ট এর ৩২ লাখ টাকার হিসেব মিলাতে পেরেছিলাম.........
হে লো আমার বাংলা ব্লগ বাসী। কেমন আছেন সবাই। আশা করি ভালো আছেন। আমিও অনেক ভালো আছি। আবার ও হাজির হলাম একটি পোস্ট নিয়ে। আশা করি সবার ভালো লাগবে।
সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের পোস্ট। জানি বাংলাদেশের বন্যার খারাপ পরিস্থিতি নিয়ে কেউই ভালো নেই। আমি নিজেও ভালো নেই। যতই এসব দেখি ততই খারাপ লাগে। যাক আজ পোস্ট করবো অন্য এক টপিক নিয়ে। যার জন্য আমি ২ টি মাস খুব ব্যস্ত ছিলাম। যার জন্য আমি স্টিমিটেই আসতে পারিনি একটুও। তা হচ্ছে আমার অফিসে স্পেয়ার পার্টস এর অডিট রিপোর্ট এর ৩২ লাখ টাকা হিসেব। তো আর কথা না বাড়িয়ে চলুন শুরু করি -
শুরুতেই অডিট রিপোর্ট নিয়ে হালকা পাতলা একটা ধারনা দেওয়া যাক। আমার স্পেয়ার পার্ট সেকশনে যতটাকার পার্টস রয়েছে তা ৩ মাস অন্তর অন্তর গণনা করা হয় । যেনো কোনো হেরফের না লাগে। আমাদের অফিসে নিজস্ব ই-আর-পি সিস্টেম রয়েছে। যেখানে যতগুলো পার্টস ইন হয় সেগুলো ইনপুট দেওয়া হয়। আর যেগুলো সেল হয় সেগুলো আউট করা হয়। আর দিন শেষে যা থাকবে তা ক্লোজিং স্টক। ই-আর-পি সিস্টেম এর ক্লোজিং স্টক এর সাথে ফিজিক্যাল কাউন্ট এর পরিমান মিলে গেলেই অডিট রিপোর্ট ঠিক রয়েছে। এভাবেই হিসেব করা হয়। তো এমনিতেই কিছু ঝামেলার কারণে ৫ মাস ইনভেন্টরি হয়নি। একদিন একটি রিপোর্ট চেক করতে যেয়ে আমার সামনে বিশাল গ্যাপ চোখে পরে। শুধু মাত্র ইঞ্জিন অয়েল সেকশন এ ৩ লাখ টাকার কমতি দেখতে পাই। আমি সাথে সাথেই আমাদের অডিট অফিস্যার বশির ভাইকে বিষয়টা জানাই। তখন তিনি বলেন যে একটা ইনভেন্টরি করে এর সমাধান করতে হবে। কিন্তু ঈদ এসে পরাতে আর আমাদের ইনভেন্টরি হয়নি। মাঝে আমার মিডটার্ম পরীক্ষা ছিলো।
পরীক্ষা শেষে আমরা ইনভেন্টরি করি। তো ইনভেন্টরি রিপোর্ট শুনে তো আমার মাথায় হাত। রিপোর্টে শর্টেজ আসে ৩২ লাখ টাকার। আমি তো কল্পনাতেও এতো টাকার হেরফের চিন্তা করতে পারছিলাম। আমি যেহেতু এই সেকশন এর হেড। তাই এর দায় আমার উপর বর্তাবে। কিন্তু আমি মেনে নেওয়ার পাত্র নই। যেহেতু আমি কিছু করিনি। আর তার উপর আমার কাছে একটা শক্ত লজিক ছিলো। সেটি হচ্ছে শেষ এক মাস আগের হিসেব অনুযায়ী ৬৮ পার্ট স্টক ছিলো। আর ইনভেন্টরির কিছু দিন আগের হিসবে যেটা হয় ৮৬ লাখ টাকা। আর এই এক মাসে আমার পার্টস ইন হয়েছে ২৫ লাখ টাকার আর সেল হয়েছে ২৭ লাখ টাকার। অর্থাৎ সেই ৬৮ লাখ টাকা হওয়ার কথা ৬৬ লাখ। কিন্তু সেটা ৮৬ লাখ কিভাবে হয়। আমি শুরু করলাম গোপন তদন্ত। সব হিসেব আমাকে বের করতেই হবে। যেভাবেই হোক। আমি এই অফিসে জয়েন হওয়ার আগের থেকে হিসেব টান দিলাম। কারণ আগে শর্টেজ থাকলে তার দায় আমি নিবোনা। তো প্রথমেই ওয়ারেন্টির রিপোর্ট টান দিলাম। সেখানে হের ফের দেখলাম ৮ লাখ টাকার মতন। অর্থাৎ আমি ওয়ারেন্টি পার্টস দিয়েছিলাম যা তার থেকে ৮ লাখ টাকার কম হিসেবে এন্ট্রি হয়েছে। মানে এই ৮ লাখ টাকা শর্ট দেখাবে।
এক রিপোর্ট এই ৮ লাখ টাকা কমে গেলো। এবার হিসেব টান দিলাম পার্টস সেল রিপোর্ট এর। ৭২ টা পার্টস পেলাম। যেগুলো আমরা সেল করেছি। কিন্তু সেগুলো হিসেবে এন্ট্রি হয়নি। আর এই ৭২ টা পার্ট এর হিসাব বিগত ২ বছর এর বের করতে করতেই আমার এতো দিন সময় লেগেছে। ২ টা মাস খেটেছি শুধু। এবার ৩২ লাখ টাকার শর্টেজ কমে দাড়ালো ৩ লাখ টাকাতে। অর্থাৎ ওয়ারেন্টি পার্টস আর সেই ৭২ টা পার্টস এর সেল রিপোর্টে ২৯ লাখ টাকার হিসেব মিলিয়ে ফেলি। এবার বাকি ৩ লাখ মেলানোর পালা। কারণ এর দায় ও আমার না। কারণ আমি ১ টি টাকাও মেরে খাইনি। তো আমার এখান থেকে আমাদের সেলস শো রুম এ কিছু পার্টস পিডিআই সেল এর জন্য দেওয়া হয়। তো আমি এবার সে দেওয়ার হিসেব টান দিলাম ৭ মাসের। তো ৭ মাসে সেখানে যে পার্টস দিয়েছি। আর যা সেল হয়েছে তা বাদে যা থাকে তা হিসেব করে দেখি ৩ লাখ টাকার পার্টস এরা খেয়ে ফেলেছে। ধরে ফেললাম এক তুরিতে। এবার আমি দায় মুক্ত। এভাবেই আমার ৩২ লাখ টাকার হিসেব মিলে গিয়েছিলো। জিনিস গুলো বলে ফেললাম কয়েক লাইনে। কিন্তু সেই ৭২ টা পার্টস এর দুই বছর এর সেল রিপোর্ট ক্রস চেক করতে যে আমার কি পরিমান সময় লেগেছে এটা আমি নিজেই জানি। এগুলো নিয়ে আরেকদিন লিখবো।
তো আজ এই পর্যন্তই। আশা করি ভালো লেগেছে। কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেননা। ভালো থাকবেন সবাই। আবার দেখা হবে নতুন এক পোস্ট এ।
░▒▓█►─═ ধন্যবাদ ═─◄█▓▒░
আমি রাজু আহমেদ। আমি একজন ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বি.এস.সি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি থেকে। আমি বাঙ্গালী তাই বাংলা ভাষায় লিখতে ও পড়তে পছন্দ করি। ফোন দিয়ে ছোটখাট ছবি তোলাই আমার সখ। এছাড়াও ঘুরতে অনেক ভালো লাগে।

VOTE @bangla.witness as witness

OR
অডিট এ একবার হিসেব গরমিল হলে জীবন শেষ 😬
আসলেই ভাই। ৩ টা মাস আমার জীবন তেনা তেনা হয়ে গিয়েছিলো।