দাদার স্পেশ্যাল রেসিপি : বিনা তেলে জলে চিকেন
আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলাব্লগের বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন ভাল আছেন নিশ্চয়ই। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালই আছি আলহামদুলিল্লাহ।
আজ আমি আপনাদের সামনে মজার একটি রেসিপি নিয়ে হাজির হয়ে গিয়েছি । রেসিপিটা মজাদার বললে ভুল হবে আমার কাছে রেসিপিটা অসাধারণ লেগেছে । বেশ কয়েকদিন আগে আমাদের @rme দাদা আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিল । সেই চ্যালেঞ্জে এরকম একটি ইউনিক রেসিপি তৈরি করতে বলেছিলেন আমার বাংলা ব্লগের রাধুনীদের জন্য । রেসিপি দেখলে সব সময় তৈরি করতে ইচ্ছা করে আর এরকম ইউনিক রেসিপি যদি হয় তাহলে তো কোনো কথাই নেই । কারণ সব সময় একই রকম খাবার খেতে খেতে আমাদের ভেতরে একটা একঘেয়েমি চলে আসে । এরকম করে ভিন্নভাবে যদি কোন কিছু তৈরি করা হয় তাহলে তো খুবই ভালো লাগে । আর আমি যখন পোস্টটি দেখেছি তখনই মনে মনে ভেবে নিয়েছি যে এই রেসিপিটি অবশ্যই তৈরি করতে হবে । আবার সেটা দেখে মনে মনে ভাবলাম যে পানি ছাড়া অনেক সময় ভুনা মাংস রান্না করা হয় কিন্তু তেল ছাড়া তো আমি চিন্তাই করতে পারি না । কারণ যে কোন খাবারের ভিতরে আমার কাছে মনে হয় যে প্রধান আকর্ষণ হলো তেল । আর তেল না দিলে খাবারের টেস্টটা কেমন হবে সেটা নিয়েও একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিলাম । কিন্তু আবার এই খাবারের ভিতরে যে সব উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো দেখে মনে হয়েছিল যে খাবারটি হান্ড্রেড পার্সেন্ট টেস্টি হবে ।
এই খাবারটি তৈরি করতে আমার কাছে মনে হয়েছে একটু ঝামেলার । কারন সবগুলো উপকরণই একটু ভিন্নভাবে খাবারের ভিতরে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে । এটা এক হাতে করা কিছুতেই সম্ভব না এজন্য একজন হেল্পিং হ্যান্ড থাকলে ভালো হয় । যেদিন এই রেসিপি আয়োজন করা হয়েছে তারপর দিন থেকে আমার কাজের মেয়েটা অসুস্থ হয়ে বাড়িতে পরে রয়েছে ওর অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আজ আমার এতদিন দেরি হল । কিন্তু আজ যখন ও এসেছে ওর এমন অবস্থা যে কাজ করার মতো অবস্থায় ও নেই। ওকে বসিয়ে রেখে আমি নিজের হাতেই সবকিছু করতে শুরু করলাম এবং একে একে সব কিছু করেও ফেললাম ।
এখানে দু একটা উপকরণ আমি মিস করে গিয়েছি কারণ সেগুলো আমি হাতের কাছে পাইনি ।আর আমি আবার এখানে লেবুর উপরের সবুজ অংশটা ব্যবহার করেছি যার কারণে খাবারের টেস্টটা অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছিল । শেষে ওটা দেওয়ার কারনে স্মেলটা খুব ভালো এসেছে। আমি রান্না করার পরে প্রথম আমার হাজব্যান্ড কে সেটা টেস্ট করার জন্য দিয়েছি । সে টেস্ট করে আগেই বলেছে যে খাবারটি টেস্টি হবে কারণ দাদা ভোজন রসিক মানুষ তিনি যে আইডিয়াটা দিয়েছে সেটি ১০০% ভালোই হবে । খাওয়ার পরে সে খুবই ভালো বলেছেন এবং আমার কাছেও খাবারটি অসাধারণ লেগেছে । তেল ছাড়া যে খাবারটি এতটা পরিমাণ টেস্টি হবে সেটা আমি কল্পনাই করতে পারিনি । দাদার জন্য কষ্ট করে হলেও মজার একটি রেসিপি ট্রাই করেছি । এটি এখন থেকে আমরা করে খেতে পারব । আমি চাই দাদা আমাদের জন্য সামনে আরো সুন্দর সুন্দর রেসিপি চ্যালেঞ্জ দিক যার আমাদের মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন রেসিপি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারব । এখন কথা না বাড়িয়ে আমি আমার রেসিপির মূল পর্বে চলে যাচ্ছি ।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
টক দই― ৫০গ্রাম
আলু ―৪ টি
টমেটো― ৪টি
পেঁয়াজ ―৪টি
রসুন ―৪টি
আদা ―২টুকরা
কাঁচা মরিচ ―৪ টি
শুকনো মরিচ― ৪ টি
গোটা জিরা ―২চিমটি
জিরের গুঁড়ো― আধ চা চামচ
হলুদ― দুই চা চামচ
লবণ ―স্বাদ মতো
লেবুর সবুজ অংশ গ্রেড করা―পরিমাণমতো
ধনে পাতা ৮-১০ টা(কুচোনো)
দারচিনি, লবঙ্গ,গোলমরিচ,এলাচ― ৫ টি করে
কার্যপ্রণালী
প্রথমে আমি মাংসগুলো কেটে ধুয়ে নিয়েছি । আমার ফ্রিজে কিছু মাংস আগে থেকেই কাটা ছিল সেই মাংসগুলো একটু পিস ছোট ছিল যার কারণে আমি আবার নতুন করে মাংসগুলো নিজের হাতে একটু বড় বড় পিস করে কেটে নিয়েছি । তারপরে মাংসের ভিতর টক দই, হলুদের গুঁড়া মরিচের গুড়া লবণ দিয়ে ৪০ মিনিটের মেরিনেটের জন্য রেখে দিয়েছি নরমাল টেম্পারেচারে । এই ফাঁকে আমি আমার অন্যান্য সমস্ত উপকরণ কেটে নিয়েছি ।
এরপর চুলায় একটি স্টেইনারের উপরে রেখে আমি আলু এবং অন্যান্য যেগুলো হালকা ছেঁকে নিতে হবে যেমন পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ এগুলো হালকা আঁচে চুলার উপর দিয়ে বেশ খানিকটা সময় ধরে পুড়িয়ে নিয়েছি । প্রথমে আমি চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম যে কিভাবে করে এই কাজটি করব পরে তানিয়া ম্যাডামের কাছ থেকে এই স্ট্রেনারের বুদ্ধিটা আমি নিয়েছি ।
এরপর দারচিনি , এলাচ , গোলমরিচ , লং এগুলো আমি হালকা গরমে একটু ভেজে নিয়েছি বাটার আগে । এরপর পাটার উপরে এগুলো নিয়ে একটু ভেঙে নিয়েছি । তারপর পেঁয়াজ , আদা , কাঁচা মরিচ ,সবকিছু পাটায় নিয়ে পিষে নিয়েছি ।
তারপর মেরিনেট করা মাংসগুলো নিয়ে প্রথমে একটি করাই এর ভিতরে নিয়ে নিয়েছি । তারপর তার ভেতরে আস্ত জিরা ও লবণ দিয়ে দিয়েছি । আমি হলুদ আর এখন দেইনি কারণ আমি মেরিনেট করার সময় হলুদটা একবারে দিয়ে দিয়েছি । তারপর কেটে রাখা টমেটো গুলো দিয়ে দিয়েছি । এরপর চুলায় বসিয়ে হালকা করে চুলার জ্বাল ধরিয়ে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ৫ মিনিটের জন্য ঢেকে দিয়েছি ।
পাঁচ মিনিট পর জ্বাল হওয়ার পরে যখন ঢাকনা খুলবো তখন দেখব যে মাংস থেকে ভালই বেশ খানিকটা পানি উঠে এসেছে । এরপর তার ভেতরে উঠিয়ে রাখা পেঁয়াজ ও আলুগুলো দিয়ে দিয়েছি ।তারপর আবার কিছু সময়ের জন্য ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিয়েছি ।
এরপর ঢাকনা খোলার পরে দেখব যে আমার রান্নাটা প্রায় হয়ে আসার পথে ।সে পর্যায়ে আমি দারুচিনি ,এলাচ যেগুলো আগে থেকে বেটে রেডি করে রেখেছিলাম সেগুলো দিয়ে দিয়েছি । এরপর নেড়েচেড়ে হালকা আঁচে আরো বেশ খানিকটা সময় রান্না করে নিচ্ছি ।
এরপর একটু সময় পরে জিরার গুড়া দিয়ে দিয়েছি । তারপর উপর দিয়ে কিছু ধনিয়া পাতা দিয়ে দিয়েছি । নেড়ে চেড়ে আরো কিছু সময়ের জন্য রান্না করে নেব । তারপর রান্নাটা হয়ে গিয়েছে আমি চুলাটা বন্ধ করে দিয়েছি ।
চুলা বন্ধ করা পরে আমি একটা লেবু নিয়ে সে লেবুর সবুজ অংশটা গ্রেটারে গ্রেট করে নিয়েছি । এখানে শুধুমাত্র সবুজ অংশটাই নিতে হবে । তারপর সবুজ অংশটা নিয়ে রান্না করা মাংসের উপর দিয়ে ছড়িয়ে দিয়েছি । এরপর ঢাকনা দিয়ে অল্প সময়ের জন্য ঢেকে রেখেছি । এই লেবুর অংশটা দেয়ার কারণে রান্নার পরে দারুন একটি ফ্লেভার এসেছে । খেতে খুবই ভালো লেগেছে । এরপর খাবারটা তুলে নিয়ে সুন্দরভাবে পরিবেশন করার চেষ্টা করেছি এবং বেশ কয়েকটা ছবিও তুলে নিয়েছি ।
আশা করছি আমার আজকের এই ব্লগটি আপনাদের সকলের কাছে ভালো লেগেছে। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
ফটোগ্রাফার | @tauhida |
---|---|
ডিভাইস | samsung Galaxy s8 plus |
ধন্যবাদ
আমি তৌহিদা, বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি।বাংলাদেশে আমার জন্ম।আমি আমার মাতৃভূমিকে ভালোবাসি। আমি বিবাহিতা, এক সন্তানের মা। আমি রান্না করতে ও খেতে ভালোবাসি,আমি ঘুরতেও অনেক ভালোবাসি। |
---|
@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 5/7) Get profit votes with @tipU :)
বিনা তেলে জলে চিকেন রেসিপি দেখে যেন সুস্বাদু মনে হয়েছে। এই রেসিপি পরিবেশন আমার খুবই ভালো লেগেছে। ধাপে ধাপে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
শুধু সুস্বাদু মনে হচ্ছে না এটি আসলেই অনেক সুস্বাদু হয়েছিল ।
আপু তেল আর জল ছাড়াও রান্না এতো মজার হয় দাদা না বললে আসলে বুঝতেও পারতাম না।আপনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দারুনভাবে রেসিপিটি শেয়ার করলেন।খেতে খুব মজার হয়েছে আশাকরি।ধন্যবাদ আপু রেসিপিটি শেয়ার করার জন্য।
ঠিকই বলেছেন আপু আমি তো চিন্তাই করতে পারিনি তেল আর জল ছাড়া খাবার এত এতটা মজাদার হবে ।
দাদার স্পেশাল রেসিপিটি আপনি তৈরি করেছেন অনেক সুন্দর ভাবে, এটা দেখে খুব ভালো লেগেছে আমার কাছে। আপনার ডেকোরেশন টা দেখে আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আসলে এই রেসিপিটা যখন আমি তৈরি করেছিলাম তখন আমার কাছেও খেতে খুব ভালো লেগেছিল। আপনার মনে হয় খুব মজা করে খেয়েছিলেন এই মজা তার রেসিপিটা। উপস্থাপনা দেখেও অনেক বেশি ভালো লেগেছে।
রান্না করার আগে মনে হয়েছিল খাবারটা কেমন হবে কিন্তু পরে দেখলাম যে খাবারটা সত্যিই অনেক মজা হয়েছে ।
রেসিপি দেখে তো খুব খেতে ইচ্ছে করছে।কি আর বলবো লোভ সামলাতে পারছি না।বিনা তেলে জলে চিকেন, প্রতিটি ধাপ অসাধারণভাবে আপনি আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। এত সুন্দর একটি রেসিপি শেয়ার করার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন রইল।
লোভ তো আপনাকে সামলাতেই হবে কারণ রেসিপিটা আমি অনেক কষ্ট করে তৈরি করেছি আপনিও কষ্ট করে একদিন বানিয়ে খেয়ে দেখবেন অনেক মজা ।আমারটা আমি দিব না।
দাদার স্পেশাল এই রেসিপিটা দেখছি অনেকেই তৈরি করেছে। আপনিও তৈরি করেছেন । দাদার দেওয়া চ্যালেঞ্জ একসেপ্ট করলেই তো অনেক ভালো লাগে। আসলে সোনিয়া যখন তৈরি করেছিল তখন আমি অনেকবার করে তাকে বলেছিলাম হয়তো এটা সুস্বাদু হবে না, তবে তৈরি করার পরেই বুঝতে পেরেছিলাম এত বেশি সুস্বাদু হয়েছিল যে বলার মত না। আপনারাও সবাই খুবই মজা করে খেয়েছিলেন আশা করছি।
কোথায় আমি তো অসুস্থ ছিলাম না আমি তো সুস্থ স্বাভাবিকভাবেই রেসিপিটা তৈরি করেছি ।
দাদা দেওয়ার রেসিপিটা দেখে খুবই সুস্বাদু চিকেন রেসিপি তৈরি করেছেন আপনি। রেসিপিটা তৈরি করতে যেহেতু প্রত্যেকটা জিনিস আলাদা আলাদা করে তৈরি করা হয়েছে তার মানে রেসিপিটা খেতে অনেক বেশি সুস্বাদু হয়েছে। আপনার রেসিপিটা দেখে আমার জিভে জল চলে এসেছে। রেসিপিটা তৈরি করার প্রতিটি ধাপ খুব সুন্দর ভাবে আপনি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন।
এ ধরনের কোন খাবারের রেসিপি দেখলে জিভে জল আসে আপু । খাবারটা বানাতে অনেক কষ্ট হয়েছিল তবে খেতে কিন্তু অসাধারণ ছিল ।
ঠিক বলেছেন আপু মাঝে মাঝে একই খাবার খেতে খেতে একঘেয়েমি চলে আসে। আর সেই সময় ভিন্ন কিছু খেতে ভালো লাগে। দাদা দারুন একটি রেসিপি তৈরির পদ্ধতি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। দাদার শেয়ার করা রেসিপি তৈরির পদ্ধতি অনুযায়ী আপনি দারুন একটি রেসিপি তৈরি করেছেন আপু।
খাবারের একঘেয়েমি দূর করতে হলে আমাদের সবারই মাঝে মাঝে একটু ভিন্নতা আনা দরকার আছে আপু । দাদা এরকম একটা রেসিপির কথা না বললে তো আমরা কোনদিন এটা তৈরিই করতাম না ।