"ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি বাংলাদেশের রেস্টুরেন্টের স্বাদের ফালুদা তৈরি"
বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ বাংলাদেশের একটি খাবার আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আমি বাংলাদেশে ঘুরতে গিয়ে খেয়েছিলাম। বাংলাদেশের কিছু কিছু খাবার আমার খুবই ভালো লেগেছে। তার ভিতর ফালুদা একটি। আমাদের এখানে একবার ফালুদা খেয়েছিলাম কিন্তু খুব একটা স্বাদ ছিলো না। এবার বাংলাদেশে গিয়ে ফালুদা খেয়েছিলাম সেটা এতটা স্বাদের ছিলো তা বলার বাইরে। আমি যতবার মন চেয়েছিলো ততবার খেয়েছিলাম। সেই থেকে আমি ভেবেছিলাম বাড়ীতে একদিন তৈরি করবো। কিন্তু এত দিন সময় অভাবে তৈরি করতে পারিনি। কিছুদিন আগে আপনাদের দাদা বললো রমজান মাস চলছে এবার তো সন্ধ্যায় তেমন কিছু তৈরি করলে না। আসলে আমি প্রতিবছর ওর জন্য বাড়ীতে ইফতার তৈরি করি। ও তেলে ভাজা খাবার খুবই পছন্দ করে তাই ইফতারের খাবার গুলো বেশ পছন্দ করে। তাই ওর জন্য প্রতিবছর ওকে তৈরি করে দেই। এবার শরীরটা খুব একটা ভালো না। তাই ওকে এবার গুছিয়ে সব কিছু তৈরি করে দিতে পারিনি। তাই ভাবলাম সামান্য কিছু তৈরি করে দেই। পরে শরীর ঠিক হলে একদিন আবার ওকে তৈরি করে দিবো। তখনই ভাবলাম ফালুদা তৈরি করা যাক। এতে ওর ভালো লাগবে। তবে আমি সঠিক ভাবে জানিনা ফালুদা তৈরি করতে কি কি লাগে। তাই ঘরে যা কিছু আছে তাই দিয়ে তৈরি করলাম। তৈরি করে খেয়ে দেখি সত্যি অনেক স্বাদের হয়েছিলো। আমার ভাই খেয়ে বলে একেবারে রেস্টুরেন্টের স্বাদের হয়েছে। পরে আমি খেয়ে দেখি অনেক স্বাদ হয়েছিলো কিন্তু আমি খুব একটা খেতে পারিনি। কারণ আমি ডায়েটে আছি তো তাই বেশি খেতে পারিনি। তবে ভেবেছি একদিন আমি ডায়েটের ফালুদা তৈরি করবো।বাংলাদেশে গিয়ে আমি কিছু খাবারের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। এর পর আবার কখনো গেলে তখন আমি ফালুদা তৈরি করা শিখে আসবো। আজকে আমি নিজের মত করে ঘরে থাকা জিনিস দিয়ে তৈরি করেছি। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
উপকরণ:
১.তরল দুধ - দেড় লিটার
২.চিনি - ২ কাপ
৩. আগার আগার পাউডার -১ চামচ
৪. ফুড কালার - লাল ও সবুজ -১ ফোঁটা
৫. সাবু - দেড় কাপ
৬. সেদ্ধ নুডুলস - পরিমান মতো
৭. গুঁড়া দুধ - ১ কাপ
৮. কাস্টার্ড পাউডার - ৩ চামচ
৯. কলা - ১ টি
১০. আপেল - ১ টি
১১. আঙ্গুর - পরিমান মতো
তরল দুধ
চিনি
গুঁড়া দুধ
আগার আগার পাউডার
ফুড কালার
কাস্টার্ড পাউডার
সেদ্ধ নুডুলস
আপেল, কলা ও আঙ্গুর
সাবু
প্রস্তুত প্রণালী:
১. প্রথমে চুলা জ্বালিয়ে দিয়ে এর উপরে একটা কড়াই বসিয়ে দিয়ে দুই কাপ জল দিয়ে দিতে হবে। সেই সাথে ১ কাপ চিনি ও আগার আগার পাউডার চামচ দিয়ে ভালো করে জ্বাল দিয়ে নিতে হবে।
২.কিছুক্ষন ধরে জ্বাল দিয়ে নিতে হবে। বার বার নাড়তে থাকতে হবে তা না হলে কড়াইয়ের নিচে লেগে যাবে। এক পর্যায়ে যখন দেখবেন চিনি আর জলের মিশ্রণটি একটু ঘন আটালো হয়ে যাবে ঠিক তখনই একটা পাত্রে নামিয়ে নিতে হবে। এবার এই মিশ্রণটিকে দুই ভাগে বাটিতে ভাগ করে নিতে হবে।
৩.প্রথম বাটিতে লাল রঙের ফুড কালার মিশিয়ে নিতে হবে। দ্বিতীয় বাটিতে সবুজ রঙের ফুড কালার মিশাতে হবে। এবার ঠান্ডা করার জন্য আলাদা জায়গায় রেখে দিতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে জেলি তৈরি হয়ে যাবে।
৪. জেলি ঠান্ডা হয়ে গেলে একটা ছুরি দিয়ে ছোট ছোট
করব কেটে নিতে হবে। এবার আমাদের জেলি তৈরি হয়ে গেল।

৫. এবার দুধ ভালো করে জ্বাল দিয়ে নিতে হবে। কিছুক্ষন দুধ জ্বাল দেওয়ার পর এক কাপ গুড়া দুধ দিয়ে মিশিয়ে আবারো ভালো করে জ্বাল দিয়ে নিতে হবে। ফালুদায় গুঁড়া দুধ দিলে স্বাদটা ভালো আছে। চাইলে আপনারা গুঁড়া দুধ না ও দিতে পারেন।
৬. এবার একটা বাটিতে ৩ চামচ কাস্টার্ড পাউডার সামান্য জল দিয়ে ভালো করে গুলে নিতে হবে। এবার জ্বাল দেওয়া দুধে ধীরে ধীরে মিশিয়ে নিতে হবে। এই পর্যায়ে একটা চামচ দিয়ে বার বার নেড়ে দিতে হবে। এবার এক কাপ চিনি কাস্টার্ড মেশানো দুধের ভিতরে দিয়ে দিতে হবে। চিনি দেওয়ার পর আরো কিছুক্ষন জ্বাল দিয়ে নিতে হবে। কারণ চিনি দেওয়ার পর দুধ পাতলা হয়ে যায়। সেই কারণে আরো কিছুক্ষন জ্বাল দিতে হয়।
৭.এবার দুধ একটা পাত্রে নামিয়ে নিতে হবে।
৮. এবার সাবু সেদ্ধ করে নিতে হবে। সাবু সেদ্ধ হয়ে এলে একটা পাত্রে নামিয়ে নিয়ে ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
৯. ঠিক একই ভাবে নুডুলস ও সেদ্ধ করে নিতে হবে।নুডুলস সেদ্ধ হতে হতে ফল গুলো টুকরো টুকরো করে কেটে নিতে হবে।
১০. দুধ ঠান্ডা হয়ে গেলে একে একে একে সেদ্ধ নুডুলস , সেদ্ধ সাবু দানা, রং বেরংয়ের জেলী ও কেটে নেওয়া ফল গুলো দিয়ে দিতে হবে। এবার চামচ দিয়ে সবগুলো উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর মেশানো হয়ে গেলে কিছুসময় ফ্রীজে রেখে দিতে হবে। এরপর
গ্লাসে পরিবেশন করতে হবে। চাইলে পরিবেশনের
সময় আপনারা কয়েক টুকরো আইস কিউব দিয়ে দিতে পারেন। এটা অপশনাল।
এবার তৈরি হয়ে গেল ঠান্ডা ঠান্ডা রেস্টুরেন্টের স্বাদের ফালুদা। এটা আপনারা সারাদিন রোজা থাকার পর ঠান্ডা ঠান্ডা খেতে ভালোই লাগবে।এমনকি বাড়ীতে আত্মীয়-স্বজন আসলেও তৈরি করে দিতে পারবেন। আশা করি এটা আমার মতো সবাই পছন্দ করেন। আমার তো খুবই পছন্দের এটি। তবে সঠিক ভাবে তৈরি করতে পারছি কি না জানি না। যারা বাংলাদেশে থাকেন তারাই ঠিক ভাবে বলতে পারবেন। কোথাও কোন ভুল হলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দেবেন। আজ এই পর্যন্ত। কাল আবার নতুন কোন বিষয় নিয়ে আবার আসবো। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন।
এটা জেনে খুবই ভালো লাগলো যে আপনি বাংলাদেশে এসে ফালুদা খেয়েছিলেন এবং যতবার ইচ্ছে হয়েছিল ঠিক ততবারই খেয়েছিলেন। অবশেষে বাসায় ফালুদা রেসিপি তৈরি করে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক বেশি সুস্বাদু এবং লোভনীয় ছিল। মজাদার এই রেসিপিটি আমাদের সকলের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
বৌদি আপনি একেবারে পারফেক্টভাবেই তৈরি করেছেন। আর বলতে হবে সত্যিই একেবারে রেস্টুরেন্টের স্টাইলে তৈরি করেছেন। আর এই ফালুদা এক ঘন্টা ফ্রিজে নরম টেম্পারেচারে রেখে এরপর খেতে অনেক বেশি মজা লাগে অর্থাৎ ঠান্ডা ফালুদা টাই বেশি মজা লাগে। আর ফালুদার সাথে যদি উপরে আইসক্রিম সার্ভ করা হয় তাহলে স্বাদ আরো কয়েকগুন বেড়ে যায়।
বাংলাদেশের রেস্টুরেন্টেরে স্টাইলে ফালুদা তৈরি করেছেন দেখে কিন্তু লোভ লেগে গেছে। অনেক গুলো ফ্রুটসের সমন্বয়ে করেছেন। আপনি অনেক কষ্ট করছেন রেসিপি তৈরি করতে। অনেক গুলো ধাপ শেয়ার করেছেন ভালো করে বুঝতে পেরেছি কিভাবে তেরি করছেন।
ফালুদা আমি এর আগে কখনও খাইনি। আর দেখিনিও। আপনার তৈরি করেছেন বলেই এতো সুন্দর একটা খাবার খেতে পারলাম। সত্যিই খুব সুন্দর করে বানিয়েছিলেন আপনি। খুব টেস্ট হয়েছিল। তবে আপনি ডায়েটে থাকার কারণে বেশি একটা খেতে পারেননি জেনে খারাপ লাগলো। এরপর যখন ডায়েটের ফালুদা তৈরি করবেন তখন নিজের ইচ্ছে মতো খেতে পারবেন।
বৌদি নমস্কার
ওয়াও আমি তো শুধু মন ভরে দেখছিলাম ৷ সত্যি বলতে দেখে জিভে জল এসে গেলো ৷ এমন সুন্দর আর ইউনিক ভাবে রেসেপি করেছেন ৷ না জানি কতটা সুস্বাদু হয়েছে ৷ তবে দেখে নিশ্চিত অনেক সুস্বাদু ছিল ৷ আপনি অসুস্থ তাই ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা আপনি যেন খুব তারাতারি সুস্থ হয়ে উঠেন ৷
আর অসাধারণ ধন্যবাদ এতো সুন্দর ফালুদা তৈরি করে শেয়ার করার জন্য ৷
বাংলাদেশের রেস্টুরেন্টের স্বাদের ফালুদা তৈরি দেখে শিখে নিলাম পরবর্তী তৈরি করব। আর এই রেসিপির পরিবেশন আমার খুবই ভাল লেগেছে, দেখে খুবই সুস্বাদু মনে হচ্ছে। তাই মজাদার রেসিপি দেখে শিখে নিলাম পরবর্তীতে তৈরি করে শেয়ার করবো ইনশাআল্লাহ।
ডায়েটের ফালুদা রেসিপি সম্পর্কে আমি অবগত নই। সেই রেসিপিটিও দেখতে চাই আপু। যাইহোক ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফালুদার রেসিপি দেখে বেশ ভালো লাগছে। যদিও আমি এই রেসিপিটি তৈরি করতে রাধুনী হালিম মিক্স এনেই তৈরি। যত বেশি ফল ব্যবহার করা হয় তত বেশি মজা হয়। আপনার রেসিপিটি দেখে বুজা যাচ্ছে এটি কতটা মজার হয়েছে।
দিদি আপনার মত আমারও ফালুদা খুব পছন্দ। আপনার বানানো সবটাই ঠিক আছে।তবে এখানে আরো কিছু ফল,বিভিন্ন রকমের বাদাম কুচি ও আইসক্রিম দিলেই সম্পূর্ণ হয়ে যাবে রেসিপিটি।আমিও রোজার সময় বানাই।খেতে ভীষণ ভাল লাগে।ধন্যবাদ দিদি রেসিপিটি শেয়ার করার জন্য।
বৌদি আপনি তো দেখছি ঘরোয়া পদ্ধতিতে রেস্টুরেন্টের স্বাদের ফালুদা তৈরি করে ফেলেছেন। ফালুদার কালার দেখতে খুব লোভনীয় লাগছে। খেতেও মনে হচ্ছে দারুণ হয়েছে। গরমের সময় ফালুদা খাওয়ার মজাই আলাদা। যাইহোক ধাপে ধাপে এত মজাদার একটি রেসিপি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।