একটি বিড়াল ছানার অপমৃত্যু। ১০ শতাংশ লাজুক শিয়ালের জন্য।
আসসালামু-আলাইকুম।
আশা করি সবাই ভাল আছেন। প্রত্যেক মানুষেরই কোন না কোন সখ থাকে। কারো সখ বই পড়া, কারো বাগান করা, আমার কারো বা পশু পাখি পালন করা। বিশেষ করে ছোট বাচ্চা আর মেয়েদের মধ্যে সবথেকে যে সখ বেশি দেখা যায় তা হচ্ছে বিড়াল ছানা পোশা। পশু পাখির প্রতি এই ভালোবাসা খুবই ভালো একটি গুণ। আজ আপনাদের যে গল্পটি শোনাবো তা এই বিড়াল পোষা সম্পর্কিত। আমাদের বাসায় কেউ বিড়াল পোষেনা অন্তত আমার জীবনকালে আমি কাউকে পুষতে দেখিনি। যদিও বিড়াল খুবই সুন্দর এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন একটি প্রাণী। পোষা বিড়াল গুলোর স্বভাবই হচ্ছে মানুষের আশেপাশে থাকা। তবে এই প্রাণীটিকে কেন যেন আমার খুবই অকৃতজ্ঞ মনে হয়। কুকুর এবং বিড়ালের মধ্যে দুটো প্রধান পার্থক্য আছে। যা বিভিন্নভাবে পরীক্ষিত। কুকুর সাধারণত ব্যক্তির প্রতি অনুরক্ত থাকে অর্থাৎ কুকুর সব সময় তার মালিককে ভালোবাসে। মালিক যদি তার বাসস্থান বদলায় কুকুর ও তার মালিকের সঙ্গে সঙ্গে বাসস্থান পরিবর্তন করে কিন্তু বিড়ালের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন। বিড়াল সাধারণত ব্যক্তির চাইতে বাসস্থানের প্রতি বেশী অনুরক্ত থাকে অর্থাৎ মালিক বাসস্থান পরিবর্তন করলেও বিড়াল তার আগের জায়গাতেই থেকে যায়।
আমাদের দেশে যে কয় ধরনের বিড়াল আছে তার মধ্যে একমাত্র হুলো বিড়াল বাদে বাকি সব বিড়ালই পৌষ মেনে যায়। হুলো বেড়ালের কাজই হচ্ছে চুরি করে মাছ মাংস আর দুধের হাঁড়িতে মুখ দেয়া। পোষা বিড়াল গুলো অবশ্য কখনোই এ কাজ করে না। এমনকি প্রাকৃতিক প্রয়োজনগুলোও পোষা বিড়ালগুলো বাইরে থেকে সেরে আসে। এবার মূল ঘটনায় আসি। কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই আমাদের বাসায় কোথা থেকে যেন একটা ছোট্ট বিড়ালছানা এসে হাজির। ধূসর বর্ণের ছোট্ট নরম বিড়ালছানাটি দেখতে বেশ সুন্দর। আমাদের বাড়িতে সব মিলিয়ে মোট তিনটা পিচ্চি। তিন জনই প্রায় সমবয়সী। আমার বড় ভাইয়ের দুই মেয়ে। বড়টার বয়স সাড়ে পাঁচ বছর। আমার ছেলের চার আর সবচাইতে ছোট ভাতিজির বয়স আড়াই বছর। বিড়াল ছানা দেখে তো তারা মহা খুশি। সারাক্ষণ তারা বিড়াল ছানার পেছন পেছন দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলো কিন্তু হাত দিয়ে ধরার মতো সাহস তখনও কারণ হচ্ছিল না। এরপর হঠাৎ করেই ছবিতে যাকে দেখতে পাচ্ছেন তিনি এই দুঃসাহসের কাজটি করে ফেললেন আর শুরু হয়ে গেল বিড়াল ছানার উপর ভালোবাসার অত্যাচার। অবস্থা এমন দাঁড়ালো বিড়ালের বাচ্চাটিকে সে মাটিতেই নামতে দেয় না। এমনকি তার নিজের খাবার সময়ও বিড়ালটি ধরে বসে থাকে। তিন ভাইবোন এর কাছে মনে হচ্ছিল বিড়ালটি যেন একটি খেলনা।
এখানেই শেষ নয়, রাতে ঘুমাতে যাবার আগে তার এক দাবি সে বিড়ালছানা নিয়েই ঘুমাবে। তার কান্নাকাটির কাছে হার মেনে অবশেষে বিড়ালটির স্থান হল কম্বলের একপাশে। আর তখনই বুঝতে পারলাম বিড়ালটি আসলে কারো পোষা। তা না হলে মানুষের সঙ্গে এভাবে থাকতে অভ্যস্ত হতো না। যাই হোক ঘুমানোর পর বাচ্চাটিকে আমরা ছেড়ে দিলাম ওর মতো করে কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠেই তিনি চিৎকার শুরু করে দিলেন আমার বিড়ালের বাচ্চা কোথায়। এদিক সেদিক অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার কোন সন্ধান পেলাম না। তবে বিকেলের দিকে আমাদের অবাক করে দিয়ে আবারো সে কোথা থেকে এসে হাজির হলো। এভাবে কয়েক দিন চলল বিড়ালের সাথে তাদের ভাব বিনিময়। এরই মধ্যে একদিন প্রতিবেশী এক ভদ্র মহিলা জানিয়ে গেল তাদের পোষা বিড়ালের বাচ্চা হারিয়ে গেছে। আমরা কেউ দেখেছি কিনা? তিন পিচ্চি কে বুঝিয়ে বলতেই তারা রাজি হয়ে গেল বিড়ালের বাচ্চা ফেরত দিতে। তিনজনে মিলে দিয়ে আসলো সেই বাড়িতে। এভাবে বেশ কিছুদিন চলল বিড়ালের আসা যাওয়া। হঠাৎ করেই একদিন শুনতে পেলাম বিড়ালের বাচ্চাটি মারা গেছে। প্রতিবেশী এক দুষ্টু ছেলে যার বয়স ছয় কিংবা সাত বিড়ালের বাচ্চাটিকে একটা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। কি আর বলবো আমি জাস্ট বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।
আজকের মত এ পর্যন্তই। আবার কথা হবে অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই কামনায় আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
Photographer | @ferdous3486 |
---|---|
Device | Samsung M21 |
Location | Faridpur |
বিড়ালের চেয়ে কুকুর মালিকের প্রতি বেশি কৃতজ্ঞ থাকে সেটা স্বাভাবিক।প্রায় প্রত্যেক বাচ্চাদের কাছে দেখেছি বিড়াল এবং কুকুরের প্রতি বেশি আকর্ষণ।তবে একটা জিনিস খুবই খারাপ লেগেছে সেটা হচ্ছে বিড়ালের বাচ্চাটিকে অবশেষে মেরে ফেলল।বিষয়টি আসলে খুব খারাপ লাগার।
যে মেরেছে সেই বাচ্চাটি খুবই দুষ্ট প্রকৃতির। আমি যদিও কুকুর বেড়াল পোষা পছন্দ করিনা কিন্তু কেও অযথা প্রাণি হত্যা করলে খুব খারাপ লাগে। ধন্যবাদ আপু আপনার মন্তব্যের জন্য।
আমার ভাই এরকম বিড়াল পোষে। কিভাবে যেন বিড়ালগুলো খুব পোষ মেনে যায় ওর। কিন্তু বেশিরভাগ সময় বিড়াল গুলো অনেক দিন বেঁচে থাকতে পারে না। কারণ বাইরে গেলেই কুকুর মেরে ফেলে। বেশ কিছুদিন আগে ওর সব থেকে পোষ মানা বিড়ালটি কে এভাবে কুকুর মেরে ফেলেছে। তার জন্য ওর দুঃখ দেখে খুবই কষ্ট লেগেছিল। আপনাদের বাচ্চাগুলো খুব বুদ্ধিমান। অন্যের বিড়াল জানার পর খুব সুন্দর করে বিড়াল ফেরত দিয়ে এসেছে। শেষমেষ বিড়ালটি মারা গিয়েছে জেনে খারাপ লাগলো।
আমিও তাই শুনেছি রাস্তার কুকুরগুলো কেন যেন পোাষা বিড়ালগুলো মেরে ফেলে। আমার চাচাত বোনও বিড়াল পুষত এই কয়েক মাস আগে ওর বিড়ালটা মারা যাওয়ায় পুরা একদিন সে কোন খাওয়া দাওয়াই করেনি। আসলে কুকুর বিড়াল যারা পোষে তাদের মনটা মনে হয় খুব নরম হয়।
এটা একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া বিড়াল নিজের বাসস্থান পরিবর্তন করতে চায় না। তবে খুব সহজেই পৌষ মেনে যায়। শেষ পর্যন্ত সবাই নিজের ভালোবাসা দিয়েও বিড়ালটিকে আটকে রাখতে পারল না। বাবু গুলোর জন্যও খারাপ লাগছে। তারা বোধ হয় অনেক মন খারাপ করেছে। কি আর করার দুষ্টু ছেলেটির লাঠির আঘাতে বিড়ালটি মরেই গেল। খারাপ লাগলো ভাইয়া।
এ ধরনের পোষ্ট যে কেও পড়বে এটা আমি মোটেই আশা করিনি। আসলে অবুঝ পশু পাখি বিশেষ করে তা যদি পোষা হয় তা মারা গেলে খুবই খারাপ লাগে। আমাদের বাসার বাচ্চাদের সাথে বিড়ালটির বেশ ভাব হয়ে গিয়েছিল। ধন্যবাদ আপু আপনার মন্তব্যের জন্য।
ছবিটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে আপনার বাচ্চার সাথে বিড়ালটির খুবই ভাব বিনিময় হয়েছে। ছোট ছোট বাচ্চারা পশু পাখিদের খুবই ভালোবাসে। অনেক জায়গায় দেখা যায় অনেকেই বিড়াল পালন করে থাকে। বিড়াল এমনিতে খুবই কিউট হয়ে থাকে। আমার কাছে তো ভীষণ ভালো লাগে বিড়াল দেখতে। এই বিডালটি কে লাঠি দিয়ে বাড়ি দিয়ে মেরে ফেলেছে শুনে খুবই খারাপ লাগলো আমার কাছে। আপনার বাচ্চা মনে হয় বিড়ালটির মৃত্যুর সংবাদ শুনে খুবই মন খারাপ করেছিল।
আসলে মৃত্যু ব্যাপারটা কি আমাদের বাড়ির বাচ্চারা এখনো ঠিকমত বোঝেনা তাই খুব একটা দুখঃ পায়নি। তবে এখন আর বিড়ালটা বাসায় আসেনা বলে এক ধরনের শুন্যতা অনুভব করে।
বিড়াল আমারও খুব পছন্দ ভাইয়া। কিন্তু আমি এরকম প্রাণী গুলো কখনও পুষি না। কারণ এরকম প্রাণীর ক্ষেত্রে, তাদের প্রতি খুব তাড়াতাড়ি আমাদের মায়া জন্মায়। তারা খুব বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারে না কিন্তু আমাদের মায়াটা সবসময় থাকে তাদের জন্য। আর যখন তারা আমাদের ছেড়ে চলে যায় তখন অনেক বেশি কষ্ট লাগে। কয়েকদিন আগে আমার এক ফ্রেন্ডের বিড়ালকে এভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। আসলে মানুষ যে কিভাবে এই প্রাণীগুলোর প্রতি এতটা অমানবিক আচরণ করতে পারে সেটা আমি বুঝতে পারি না। আপনার লেখাগুলো পড়ে আসলেই খুব খারাপ লাগছে ভাইয়া।
ঠিক বলেছেন এ ধরনের প্রানি পুষলে শুধু কষ্টই পেতে হয়। আর যারা এই নিরীহ প্রাণিগুলোকে অকারনে মেরে ফেলে তারা যে কোন জাতের মানুষ বুঝিনা। ধন্যবাদ আপু অনুভুতি শেয়ার করার জন্য।
আমার মেয়ে ঈলমা ভীষণ পছন্দ করে বিড়াল কিন্তু রক্ষনাবেক্ষনের ঝামেলার কারণে বাসায় রাখতে পারিনা। মাঝে মাঝে তো ভীষণ জেদ ধরে বিড়াল এনে দেয়ার জন্য। আসলে বাচ্চারা বিড়াল ছানা ভীষণ পছন্দ করে।
বিড়ালের বাচ্চা পেয়ে আপনাদের বাচ্চাদের মধ্যে ভীষণ আনন্দ বিরাজ করছিল দেখলাম। তবে তারা মালিকের বিড়াল ফেরৎ দিয়েছিল জেনে খুশি হয়ে ছিলাম। কিন্তু যখন শুনলাম বিড়াল ছানাটি মারা গেছে সত্যিই ভীষণ খারাপ লাগলো।
খারাপ লাগারই ব্যাপার । যে কদিন বিড়ালটি ছিল সে কয়দিন সবগুলো বাচ্চা বিড়াল নিয়ে খেলায় মেতে ছিল মারা যাবার পর এখন আর সেই উল্লাসটা দেখা যায়না ওদের মধ্যে। শুনেছি আমাদের নবীও নাকি বিড়াল পুষতেন। ধন্যবাদ ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য।
আসলে বিড়াল তাদের জায়গা পরিবর্তন করে না সহজে এটা আমি জানি। আসলে বিড়াল দেখতে এত বেশি কিউট, যে কেউ বিড়াল পুষতে চায়। বিশেষ করে বাচ্চারা তো একদম বেশি খুশি হয়ে যায়। যেমন আপনাদের ৩ জন বিড়ালটির জন্য এত মায়া দেখালো। এমন কি ঘুমোতে যাওয়ার সময় ও বিড়ালকে নিয়ে ঘুমাবে। তবে বিড়ালটি অন্য কারো এটা জানতে পেরে তাদেরকে দিতে রাজি হয়ে গেল এটা শুনে খুবই ভালো লাগলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিড়ালের মৃত্যু হওয়ার খবরটা খুবই খারাপ লাগলো। আসলে এমনিতে মারা যাওয়া আর কেউ ইচ্ছে করে মেরে ফেলাটা মেনে নেওয়া যায় না।
ঠিক বলেছেন প্রাকৃতিক মৃত্যুটা মেনে নেয়া যায় কিন্তু মানুষের মেরে ফেলাটা খুব বেশি দুখঃ দেয়। আর মানুষগুলো দেখতে একই আকৃতি বিশিষ্ট হলেও সবাই তো একরকম নয় তাই পশু পাখিও মানুষ চিনতে ভুল করে ফেলে। ধন্যবাদ আপু।
বিড়াল কমবেশি সব বাড়িতে মানুষ পালন করে থাকে। আমাদের বাড়িতেও একটি বিড়াল আছে বাড়ির মানুষগুলো বিড়াল টিকে অনেক টেক কেয়ার করে। ছোট বাচ্চারা পশু পাখি এবং বিড়াল অনেক পছন্দ করে। ছবি দেখে বোঝা যাচ্ছে বিড়ালটিকে কতটা পছন্দ করে। পরবর্তী জানতে পারলাম যার বিড়াল তাকে দিয়ে দিলেন শুনে খুব ভালো লাগলো। শেষ পর্যন্ত বিড়ালটিকে একটি ছোট বাচ্চা লাঠি দিয়ে একটি বাড়ি দিয়ে মেরে ফেলল শুনে খুব খারাপ লাগলো। অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে ব্যাপারটা অনেক খারাপ লাগে। ধন্যবাদ আমাদের মাঝে খুব সুন্দর করে শেয়ার করার জন্য।
এই ব্লগিং আমার কাছে অনেকটা ডায়েরী লেখার মত। ব্যক্তিগত ছোট ছোট ঘটনাগুলো লিখে রাখি আর আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করি। কুকুর বিড়াল পোষা আমি ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ না করলেও প্রাণিগুলোকে আমি মোটেই অপছন্দ করিনা। ধন্যবাদ আপু।