পেলে ' রা মরে না। ফিরে আসে বারবার।
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
সাল ১৯৬৭, নাইজেরিয়ায় চলছে গৃহযুদ্ধ। হঠাৎ খবর এলো যে একজন ফুটবলার আসছে। খবর টা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ৪৮ ঘন্টার জন্য যুদ্ধবিরতি দেওয়া হয়। এটা ছিল প্রথম এমন ঘটনা যে একজন ফুটবলার আসার কথা শুনে যুদ্ধবিরতি। একজন ফুটবলার যাকে কীনা ১৮ বছর বয়সেই তার দেশের সরকার তাকে জাতীয় সম্পদ ঘোষণা করে। এবং তাকে ঘোষণা করে অরপ্তানিযোগ্য সম্পদ। সেজন্য তার কখনো ইউরোপের কোনো ক্লাবের হয়ে খেলা হয়ে উঠেনি। ফুটবলের এমন কিছু নেই যা তিনি করেন নি। বতর্মানে ফুটবলার রা যা করে দেখাই সেগুলো পেলে প্রথম করেছেন। সেজন্যই বলে ""Pele did it first ". এতোক্ষণে বুঝে গিয়েছেন আমি কার কথা বলছি। হ্যা সেই কিংবদন্তি ফুটবলার যাকে বলা হয় ফুটবলের রাজা সেই ব্রাজিলিয়ান কালো মানিক পেলে গতকাল রাতে মারা গেছে। পেলে মারা গেছে ঠিকই কিন্তু পৃথিবীতে যতদিন ফুটবল নামক খেলাটা থাকবে ততদিন পেলের নাম থাকবে।
ফুটবল টিমে সবচেয়ে দামী বা গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়ারের জার্সি নাম্বার ধরা হয় দশ। বা যে খেলোয়ার দশ নাম্বার জার্সি নেয় সবাই ভাবে সেই খেলোয়ার অবশ্যই ভালো খেলে। এখনকার খেলোয়াররা দশ নাম্বার জার্সির জন্য বিখ্যাত। না ঐ খেলোয়ার টা দশ নাম্বার নিয়ে খেলে। কিন্তু দশ নাম্বার জার্সিটা বিখ্যাত পেলের জন্য। সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলে খেলেছেন ঐ দশ নাম্বার জার্সি পড়ে। সাও পাওলোর একটা বস্তিতে জন্ম তার। বাবা অনেক ভালো ফুটবল খেলত কিন্তু ইঞ্জুরিতে পড়ে শেষ হয়ে যায় ক্যারিয়ার টা। সেজন্য পেলের মা চাইত না পেলে ফুটবল খেলুক এবং তার বাবার মতো পরিণতি হোক। কিন্তু পেলের বাবা সবসময় তাকে অনুপ্রেরণা দিত। ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল। ব্রাজিল ফাইনালে হেরে যাওয়ায় স্টেডিয়ামেই আত্মহত্যা করে ১৬ জন। ব্রাজিল হেরে যাওয়ার পর পেলের বাবা কান্না করছিল। তখন ছোট ১০ বছরের পেলে তার বাবাকে কথা দেয় আমি ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ জিতব। হ্যা ছেলেটা তার বাবাকে দেওয়া কথাটা রেখেছিল। ১৯৫৮ সালে কিশোর পেলের অতিমানবীয় পারফরম্যান্সে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল। ফুটবল ইতিহাসে তিনটা বিশ্বকাপ জেতা একমাএ খেলোয়ার পেলে।
১৯৭০ বিশ্বকাপের ফাইনাল। ইতালির ডিফেন্ডার তারনেচিসিও এর উপর দায়িত্ব ছিল পেলেকে মার্ক করে রাখার। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচের পর তিনি বলেছিলেন: ফাইনালের আগে আমি নিজেই নিজেকে বুঝিয়েছিলাম পেলে আমাদের মতোই মানুষ। কিন্তু আমি ভুল ভেবেছিলাম। সেই ম্যাচেই পেলে এক একটা এসিস্ট করে যেটাকে পরবর্তীতে এসিস্ট অফ দ্যা সেঞ্চুরি ঘোষণা করা হয়। পেলে তার ১৩৬৬ ম্যাচে ১২৮২ টি গোল করেছেন(তর্ক সাপেক্ষে)। কিন্তু শুধু গোলের জন্য পেলে বিখ্যাত না। ফুটবল মাঠে এমন কিছু নেই যেটা পেলে করে দেখাইনি। কিন্তু এতোকিছুর পরও মানুষের একটা জায়গাই থামতে হয়। প্রাকৃতিক নিয়মে থেমে যায় মানুষের জীবন প্রকৃতি। জীবনের সবচেয়ে বাস্তব এবং নির্মম সত্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিতে হয়। কিন্তু ঐ যে বলে না বিখ্যাত মানুষেরা মরে না তাদের নাম আজীবন পৃথিবীতে থেকে যায় মানুষের মুখে মুখে। পেলেও এইরকম একজন বিখ্যাত মানুষ যার নাম আজীবন থাকবে মানুষের মুখে মুখে।।
কাতার বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়েই পেলের অবস্থা ছিল খুব আশংকাজনক। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পেলে ছিল ক্যান্সার আক্রান্ত। গতকাল রাত তখন ১ টা বাজে। আমি ঘুমাতে যাব শেষ সময়ে নিজের ফেসবুকের নিউজফিড টা স্ক্রল করছি। সেই সময়ে ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাংবাদিক ফ্যাবরিজিও রোমানিয়ো এর ফেসবুকে পেইজ এর পোস্ট আমার চোখের সামনে আসে যেটা একমিনিট আগে করা হয়েছে। হ্যা কিংবদন্তি ফুটবলার পেলে আর নেই পরোলোক গমন করেছেন। নিউজ টা দেখে বেশ খারাপ লেগেছিল। ছোটবেলায় জানতাম না ব্রাজিল কোথায়, পেলে কে এবং ফুটবল কতটা জনপ্রিয়। কিন্তু ছোটবেলা থেকে বইয়ের পাতায় একটা নাম পড়ে এসেছি পেলে। প্রশ্ন থাকতো সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে বা ফুটবলের রাজা কাকে বলা হয় সেখানে লেখা থাকত ব্রাজিলিয়ান কালামানিক পেলের নাম।তখন না বুঝলেও এখন বুঝি আসলেই পেলে কে ছিল। পেলের গোলের রেকর্ড হয়তো কেউ ভেঙে দেবে পেলের তিনটা বিশ্বকাপ অর্জনের রেকর্ডও হয়তো একদিন কেউ ভেঙে দেবে। তবে পেলে থাকবে সর্বকালের সেরা হয়েই। কারণ ফুটবলের জন্য পেলে নয়, পেলের জন্যই ফুটবল বিখ্যাত।।
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো গতকাল রাতে এই খবরটি দেখে আমারও মনটি খারাপ হয়ে গিয়ে ছিল। কারণ ফুটবল খেলা আমি খুব ভালো বুঝি না বা আমার অত ভালো লাগে না। তবে পেলের নামটি মনে হলে ফুটবল খেলা মনের মধ্যে বিরাজ করে।
সত্যি পেলেরা মরে না, পেলেরা ফিরে আসে বারবার। হয়তো মেসি হয়তোবা রোনালদো হয়তোবা কাকা হয়ে। ফুটবলের রাজা পেলে চলে গেছে। কিন্তু তাতে কি তিনি ফুটবল বিশ্বকে দিয়ে গেছে এক জাদুরবাশি।
খেলা সম্পর্কে আমি তেমন কিছুই জানিনা। কিন্তু আপনার আজকের পোস্ট পড়ে বুঝলাম আপনি ফুটবল প্রেমী একজন মানুষ। সত্যি বলতে গতকাল শুনেছিলাম পেলে মারা গিয়েছেন। কিন্তু এই খবরটা শুনে সত্যিই খুব খারাপ লেগেছে। ফুটবলের রাজা আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নিয়েছেন কিন্তু চিরকাল সকল ফুটবল প্রেমীদের মাঝে জীবন্ত থাকবেন। পোস্টটি খুব ভালো লিখেছেন ভাইয়া।
এত বছরে যেহেতু পেলের মত কেউ আবিষ্কার হয়নি ভবিষ্যতে হয়তো আর হবে না। কিন্তু পেলে সারাজীবন বেঁচে থাকবে ফুটবলের মধ্যে। আপনার লেখাতে অনেক কিছু জানতে পারলাম পেলে সম্পর্কে। তাছাড়া আপনার মত এই নিউজটি সকালে দেখার পর আমারও খুবই খারাপ লেগেছিল। বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার মধ্যেই দেখছিলাম যে সে খুব অসুস্থ। ব্রাজিল টিম খেলা শেষে তাদের তার ছবি নিয়ে দাঁড়াচ্ছিল। অবশেষে সমাপ্তি হলো সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়ের।
প্রথমেই কিংবদন্তি এই প্লেয়ারের বেদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
তুমি কতটা ভালো ফুটবল প্রেমিক তা তোমার আজকের পোস্টটি পড়ে বুঝতে পারলাম। ভীষণ চমৎকার বিশ্লেষণ করেছো ভাই কিংবদন্তি প্লেয়ারকে নিয়ে। আমি নিজেও তার ভীষণ ভক্ত এবং ব্রাজিল সাপোর্টার। তোমার প্রতিটি বিশ্লেষণ আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এই চমৎকার পোস্টটি আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য 🥀
খুব ভালো থাকো দোয়া রইল।