গল্প: চোরের নারকেল চুরি করার গল্প
গল্প
এক সময় আমাদের নারিকেল গাছগুলোতে অনেক বেশি বেশি নারিকেল হত। যখন গাছে ধরতো,তখন ডাব থেকে শুরু করে দোমালা পর্যন্ত কোন প্রকার ডাব সংরক্ষণ করা হতো না। রেখে দেওয়া হতো নারিকেল হওয়া পর্যন্ত। এরপর নারিকেল হলে বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরি করা হতো নারিকেল দিয়ে। ঠিক তেমনি একটা দিন, পাঁচটা গাছে অনেক নারিকেল ছিল। গ্রামের একজন ব্যক্তিকে দিয়ে সে নারিকেল গুলো সব পেড়ে নেওয়া হলো। গাছ থেকে পেড়ে দেয়া বাবদ পাঁচটা গাছে ওঠার জন্য পাঁচ পিস নারিকেল তাকে দেওয়া হয়েছিল। বাকি নারিকেল গুলো গোলা ঘরের মধ্যে রাখা হয়। আগের সময়ে ধান রাখার জন্য যে ঘর বা গোডাউন ব্যবহার করা হতো। যে সময় ধান থাকতো না, সেই সময় গোলা ঘরের মধ্যে এমনি নারিকেল পালা দিয়ে রাখা হতো। পাঁচটি গাছের নারিকেল। একশোর অধিক নারিকেল ছিল। নারিকেল গুলো সেই ব্যক্তি গাছ থেকে পেড়ে গোলা ঘরের মধ্যে রেখে গেছিল।
ওই সময় নারিকেলের দাম বেশি ছিল না। ডাব বিক্রয় হতো ৫ টাকা পিস আর নারিকেল ৮ থেকে ১০ টাকা পিস। তাই মানুষের বিভিন্ন রকম পিঠা তৈরি করে খাওয়ার জন্য বেশি ব্যবহার করত,বিক্রয় কম করতো। যাইহোক দিনশেষে সবাই আশা করে রয়েছে আগামী দিন থেকে বিভিন্ন রকমের পিঠা তৈরি করবে নারিকেল দিয়ে। রাতটি ছিল জোৎস্না রাত। বাড়িতে আমার আব্বু আম্মু খাওয়া-দাওয়া করে শুয়ে পড়েছে। মাঝেমধ্যে গোয়াল ঘরে গরু খাচ্ছে কিনা বা খাবার আছে কিনা দেখার জন্য উঠে থাকেন। ঠিক তেমনি মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠেই হিসু করার জন্য যায়, এরপর গোয়াল ঘরে গরু খাচ্ছে কিনা দেখতে জায়। ঠিক এমনই মুহূর্তে হঠাৎ একটা শব্দ শুনতে পারলেন মনে হলো কোন কিছু যেন বাড়ি থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। যেহেতু চোখে ঘুম ঘুম ভাব। তখন ভালো লাইট ছিল না বাড়িতে। তাই গোয়াল ঘরের দিকে শুধু লক্ষ্য করে দেখলেন সব ঠিকঠাক রয়েছে অতঃপর আব্বু শুয়ে পড়েন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন গোলা ঘরের মধ্যে থেকে কয়েকটা নারিকেল বের করবেন, ঠিক সেই মুহূর্তে লক্ষ্য করলেন নারিকেল অনেক কম। এছাড়াও নারিকেলের একপাশে একটি লাল গামছা পড়ে রয়েছে। গামছাটা বের করে এনে দেখলেন,যে ব্যক্তি গাছ থেকে নারিকেল পেরেছিলেন তার গামছা। যে ব্যক্তির গাছ থেকে নারিকেল পেড়ে এনেছিলেন উনি সেই সময় ডাটের সাথে বিড়ি সিগারেট খাইতেন। এইজন্য গামছার সাইডে বেশ বড় অংশ পুড়ে যায়। দিনের বেলায় যখন নারিকেল পেরে দিতে এসেছিলেন তখন পুড়া অংশটা নিয়ে বেশ গল্প করেছিলেন এবং অনেকে দেখেছিলেন। যখন নারিকেল সংরক্ষণ করে গোলায় রেখে তার ন্যায্য নারিকেল নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছিলেন তখন গামছাটা খুব সুন্দর করে মাথায় বেঁধেছিলেন। মাথায় গামছাটা বাঁধার মুহূর্তেও গামছা নিয়ে গল্প করছিলেন,কত টাকা দিয়ে কিনেছে কোথা থেকে কিনেছে কিভাবে পুড়ে গেল ইত্যাদি। রাত্রে বেলায় সেই গামছা গুলা ঘরের মধ্যে। তাই বুঝতে আর বাকি রইল না, যিনি নারিকেল পেরে দিয়ে গেছিলেন তিনি চুরি করতে এসেছিলেন। অতঃপর তাকে ডাকা হলো এবং জিজ্ঞাসা করা হয়। উনি কোনমতেই বলতে চাচ্ছিলেন না যে চুরি করেছে।
যখন গামছাটা দেখানো হয়েছিল তখনও অস্বীকার যাচ্ছিলেন। এরপর যখন গামছার সেই কাঙ্খিত সিগারেটের আগুনে পোড়া অংশ দেখানো হলো তখন সে মাথা নত করল। এরপর সে স্বীকার করলো হ্যাঁ সে রাত্রে চুরি করতে এসেছিল। মানুষের শব্দ পেয়ে দ্রুত গোলাঘর থেকে বের হয়ে সাইড দিয়ে বের হয়ে গেছিল,তাই গামছাটা তুলতে পারেনি। পরবর্তীতে জানা যায় সে কতটুকু নারিকেল কিভাবে বের করে নিয়ে গেছে। সে পুরাটাই স্বীকার করে দুই বস্তায় যে কয়টা নারিকেল ধরে ঠিক সেই কয়টা নারিকেল বের করে নিয়ে যেতে পেরেছে। সে গুলা ঘরের মধ্যে থেকে একটি করে নারিকেল বের করেছে এবং বাইরে বস্তার মধ্যে বন্দি করেছে। তার কৌশল দিয়ে সে নারিকেল গুলো লোড করেছে দ্রুত। সে ব্যক্তির উদ্দেশ্য ছিল নারিকেল গুলো বাজারে নিয়ে বিক্রয় করবে। অতঃপর নারিকেল গুলো উদ্ধার করা হয় পাশের একটি বন জঙ্গলে ঘেরা বাগান থেকে। সে চুরি করে বাগানে নিয়ে গেছে বাড়িতে পৌঁছাতে পারেনি। উদ্দেশ্য ছিল পরবর্তীতে সেখান থেকে তার মত পার করে নিয়ে যাওয়ার কিন্তু সেই সুযোগ তার হয়ে ওঠেনি। অতঃপর তাকে মাফ করে দেওয়া হয় এবং নারিকেল গুলোর বাড়িতে আবার বহন করে এনে দেওয়ার জন্য তার মধ্যে থেকে দুইটা নারিকেল দেওয়া হয়। আর এভাবে চোরের হাত থেকে নারিকেল উদ্ধার হয়।
পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
বিষয় | গল্প |
---|---|
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | Huawei P30 Pro-40mp |
ক্রেডিট | @jannatul01 |
W3w location | source |
দেশ | বাংলাদেশ |
ব্লগার | আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি |
আমার পরিচয়
আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।
আজকের কাজ সম্পন্ন
এজন্যই বলে অপরাধী কোন না কোন প্রমাণ রেখেই যায় সেরকম গামছা ফেলে চলে গেছে নইলে কে চুরি করেছে তা বের করতে পারতেন না।আপনাদের গাছের মতো আমাদের গাছেও অনেক নারিকেল হতো এবং শুধুই দূর্গা পূজায় পাড়তো আত্নীয়দেরকে দিতো।এখন আর আগের মতো নারিকেল হয় না।ধন্যবাদ গল্প টি ভাগ করার জন্য।
।
অনেকে বলাবলি করে নেটওয়ার্ক বা মোবাইলের টাওয়ারের জন্য নারকেল কম ধরে।
অসাধারণ আপু অসাধারণ আপনি অনেক সুন্দর করে গল্পের মাধ্যমে একটি বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন "চোরের নারকেল চুরি করার গল্প"। এই গল্পটা পড়ে কিন্তুু আমার খুবই ভালো লেগেছে। ছোট হোক বড় হোক চোরেরা চুরি করার সময় কোন না কোন কিছু প্রমাণ রেখে যায়। তারই একটি বাস্তব প্রমাণ হলো পুরে যাওয়া গামছা। তবে নারিকেলওয়ালা নারিকেল ফিরে পেয়েছে শুনে যেমন ভালো লেগেছে ঠিক তেমনি দুটো নারিকেল চোরকে দেওয়ার জন্য ভালো লেগেছে। কারণ বেচারা চোর সারারাত ধরে এত কষ্ট করেছে। যাই হোক আপু আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ অনেক সুন্দর একটি বাস্তবমুখী চোরের গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ আগের মানুষ তো পেটের দায়ে চুরি করত। কিন্তু এখনকার মানুষ স্বভাবে চুরি করে