বাংলা নববর্ষ,১৪৩২
14-04-2025
১লা বৈশাখ , ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি আপনারা সবাই অনেক অনেক ভালো আছেন। শুরুতেই আপনাদের সবাইকে জানাই বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা! বাংলা নববর্ষ আমাদের বাঙালির ঐতিহ্যের একটি অংশ। বাংলা মাসের শুরুটা হয় পহেলা বৈশাখ দিয়ে। আর এ দিনটি আমাদের জন্য এক ঐতিহ্যে লালন করে। বাংলা সনের প্রথম প্রবর্তক ছিলেন মোঘল সম্রাট আকবার। আমরা এটা ক্লাস টেনে মেবি পড়েছিলাম। তখনকার সময়ে চাদঁ দেখে ফসলি উৎপাদন করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল। তাই আকবর সিদ্ধান্ত নেন বাংলা মাসের। আর তখন থেকেই বাংলা সন চলে আসছে। বাংলা মাসের প্রথম মাস বৈশাখ! বাংলাদেশের কৃষকরা বাংলা মাসকে কেন্দ্র করেই ফসলি জমি চাষ করে থাকেন। এটা আপনি যদি গ্রামে থাকেন তাহলে বুঝতে পারবেন।
গ্রামে কৃষকরা ইংরেজি সন তেমন মনে রাখা বললেই চলে। তারা বাংলা সন মনে রাখে। আর বাংলা সন অনুযায়ী ফসল চাষ করা হয়। বৈশাখ মাসের শেষের দিকে ফসল ঘরে তুলে কৃষকেরা আবার অনেক জায়গায় বৈশাখের শুরুতেও ফসল ঘরে তুলে। আমাদের দেশের কথা যদি বলি তাহলে বাংলা মাসে দুইবার ধান চাষ করা হয়। ধান বড় হয়ে গেলে তখন কৃষকরাও আনন্দের সাথে ফসল ঘরে তুলে। তো বাংলা নববর্ষে বছরের পর বছর আমরা বাঙালিরা পালন করে আসছি। এটি আমাদের সংস্কৃতির একটি অংশ। বাংলা নববর্ষে আগে দেখতাম হালখাতার আয়োজন করা হতো। কোনো একটা দোকানে বছরব্যাপী বাকি পয়সায় খাওয়ার পরে তারপর বছরের শুরুতে হালখাতার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা টাকা আদায় করতো। অনেকটা উৎসবের মধ্যে দিয়েই কৃষকরা তাদের পাওনা মিটিয়ে ঘরে যেত এবং ব্যবসায়ীরাও অনেক খুশি হতো।
নববর্ষে ছোটবেলায় অন্যরকম একটা ফ্যান্টাসি কাজ করতো। আমার মা খুব ভোরে আমাদের ঘুম থেকে জেগে তুলতেন। তারপর সারাদিন পড়ার কথা বলতো। গ্রামের মুরুব্বি বলতো পহেলা বৈশাখের দিন যদি সারাদিন পড়ি তাহলে নাকি সারাবছর পড়ার মধ্যেই থাকবো। গ্রামে এটা এখনও বিশ্বাস করে মানুষজন। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই আমরা ভাইবোন মিলে পড়াশোনা শুরু করে দিতাম। পহেলা বৈশাখের দিন খাবারের একটা রেওয়াজ ছিল। এটা এখনও আছে কি না জানা নেই। গরম গরম ভাতের সাথে পাট শাক। সকাল সকাল ভাতের সাথে পাট শাক খাওয়া হতো। একটু তিতা জাতীয় খাবার দিয়ে বছরটা শুরু করা হতো। আর পান্তাভাতের সাথে আলু ভর্তা সাথে লাল মরিচের ভর্তা! কতোদিন হয়ে গেল খাওয়া হয়না। একটা সময় এগুলোই আমাদের সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।
পহেলা বৈশাখে গ্রামের মেলা বসতো। আর মেলার প্রধান আকর্ষণ থাকতো নাগরদোলা, বিন্নি চালের মুড়ি, জিলাপী আরো কতো কি!! তবে আমরা ছোটরা তো নাগরদোলায় উঠার জন্য পাগল হয়ে যেতাম! নাগরদোলায় না উঠলে তো মেলায় জমতো না। তাছাড়া মেলায় মাটির অনেক হাড়ি পাতিল পাওয়া যেত। বিশেষ করে মাটির ব্যাংক। মাটির ব্যাংক কিনে নিয়ে আসতাম টাকা জমানোর জন্য। মেলার পাশাপাশি সেখানে গানের আয়োজন করা হতো। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিল্পীরা এসে মেলা মাতিয়ে রাখতো গান গেয়ে। সেটা বিকালের দিকে শুরু হতো। এখনকার কথা যদি বলি তাহলে পহেলা বৈশাখ ছাড়াও প্রতিনিয়ত অনেক মেলা দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে শহরে এখন বেশি মেলা দেখতে পাওয়া যায়। যেটা আগে গ্রামে বেশি হতো। সময়ের সাথে অনেক কিছুই পাল্টেছে, পাল্টেছে আমাদের জীবনযাত্রা!
বাংলা নববর্ষকে আমরা বাঙালিরা সাদরে গ্রহণ করে নেয়। রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন প্লে কার্ড বানিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। রমনার বটমূলে বাংলা নববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সেখানে অনেক মানুষ আসে। বাংলার সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে। এবারের বাংলা নববর্ষের মেলাটা প্রত্যেকটা বাঙালির কাছে অন্যরকমের। কারণ স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর আমরা আবারো যেন স্বাধীনতা পেয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের মেলা আমাদের কাছে অন্য রকমের এক অনুভূতি দেয়। এবারের নতুন বছরের উদযাপনে আমাদের সবার মনে এটা লালন করা উচিত যেখানে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। বৈষম্যহীন একটি দেশ আমরা দেখতে চাই। বিশ্বের দরবারে আমাদের দেশকে সবার সামনে উঁচু করতে চাই! তবেই বাংলা নতুন বর্ষের স্বার্থকতা হবে।
সবাইকে আবারো নতুন বাংলা বছরের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ। মুছে যাক গ্লানি ,ঘুচে যাক জরা! সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মতো এখানেই বিদায় নিচ্ছি। আল্লাহ হাফেজ।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। বর্তমানে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর বিএসসি করছি ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয় (ডুয়েট) থেকে অধ্যয়নরত আছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত চার বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,কবিতা লেখা,গল্প লেখা ,রিভিউ,ডাই এবং আর্ট করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Twitter share
Puss tweet
Today's comment link:
https://x.com/Emtiaz38/status/1911681065753989394?t=N28vr6_3yZeh-HAxGJmJrg&s=19
https://x.com/Emtiaz38/status/1911682749716664819?t=huUYmloSzRjvftm7V2W64g&s=19
https://x.com/Emtiaz38/status/1911683710791131387?t=1Ou4-QCwys59pME5WeWzTQ&s=19
https://x.com/Emtiaz38/status/1911828828231721166?t=Fr7uSiYPiWm5S9PO_sYVDg&s=19