বাবা মানেই সমস্যার সমাধান।

আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আবার এসেছি নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আজকের পোস্ট আমি গতকাল লিখেছিলাম। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কারণে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তাই শেয়ার করতে পারিনি। গতকাল বাবা দিবস ছিল। তাই বাবাকে নিয়ে কিছু একটা লিখতে ইচ্ছে করেছিল কিন্তু সেই লেখা আজ শেয়ার করছি।

সোর্স pixabay

আমি তখন ইন্টারমিডিয়েট এ পড়ি। আমার কলেজ আমার গ্রামের বাড়ি থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূর কুমিল্লা শহরে । প্রতিদিন এতটা রাস্তা গাড়ি করে আসা যাওয়া খুব কষ্টকর। তাই শহরেই ফুফুর বাসায় থেকে পড়াশোনা করতে হয়েছে। ফুফুর বাসা থেকে কলেজ প্রায় ৪ কিলোমিটার দূর। যেহেতু সায়েন্স এর ছাত্র ছিলাম সেহেতু টিউশন নেয়া বাধ্যতামূলক ছিল। যদিও আমার শহর খুব বড় না কিন্তু একেকটা টিউশন টিচারের বাসা একেক জায়গায়। প্রথম প্রথম রিকশা করে কলেজ এ যেতাম তারপর টিউশন এর সময় যদি কাছাকাছি সময় হত তাহলে একবারেই টিউশন নিয়ে তারপর ফুফুর বাসায় ফিরতাম। ফুফুর বাসা শহরের এক কোনায় হওয়ায় রিকশা ভাড়া একটু বেশিই লাগত।

কিছুদিন এভাবে যাওয়া আসা করলাম। কয়েক মাস যেতেই টিউশনের সংখ্যা গিয়ে দাড়াল ৪ এ পদার্থ, রসায়ন, জীব, হায়ার ম্যাথ। কোনটা সকালে কোনটা বিকেলে আবার কোনটা সন্ধায়। এক সময় আমার জন্য সময় ম্যানেজ করা, খাওয়া দাওয়া ঠিকভাবে করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল। কারণ সবসময় রিকশা পাওয়া যেত না। আর পেলেও অনেক টাকা ভাড়া দিয়ে যেতে আসতে হয়। এই চিন্তা করে অনেক সময় দুপুর বেলায় বাসায় খেতে না যেয়ে কিছু একটা খেয়ে টিউশন নিয়ে তারপর বাসায় আসতে হত।

ফুফু একদিন আমাকে বলছে তুই ত এই কয়েক মাসে শুকিয়ে গিয়েছিস। এভাবে না খেয়ে ঠিকভাবে না চললে শরীর খারাপ করবে। আমি বললাম ফুফু সমস্যা নেই আমি পারব। এত রিকশা ভাড়া যাচ্ছে দেখে কিছু টিউশন আমি হেঁটেই চলে যেতাম। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর একদিন আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়লাম। অসুস্থতার কথা শুনে আব্বা আমাকে দেখতে এলেন। আমাকে ডাক্তার এর কাছে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার এর ওখান থেকে এসে আব্বাকে বেশ চিন্তিত মনে হল। ডাক্তার বললেন আমার শরীর অনেক দুর্বল পানিশূন্যতা ছিল। দু-তিনদিন বেড রেস্ট এ থেকে আমি আবার আগের রুটিন মত কলেজ এবং টিউশন এটেন্ড করতে থাকলাম।

একদিন টিউশন শেষে বিকেলে ফুফুর বাসায় ফিরলাম। ফিরে দেখি আব্বার বাইক নিচে আছে। আমার ভালো লাগলো আব্বা এসেছেন দেখে। আব্বার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর আব্বা আমাকে নিচে নিয়ে গেলেন। তারপর বললেন তুমি অনেক কষ্ট করছ পড়ালেখা করতে গিয়ে। আজ থেকে তুমি সাইকেল চালিয়ে সব জায়গায় যাবে। আব্বা আমাকে অনেক সুন্দর একটি সাইকেল কিনে দিয়েছেন। আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম। আসলে আমি মনে মনে অনেক চাচ্ছিলাম একটি সাইকেল। সাইকেল হলে যেকোন জায়গায় সহজেই আসা যাওয়া করা যায়।

সাইকেল পাওয়ার পর আমার সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই চলেছে। কলেজ, টিউশন, খাওয়া সব সুন্দরভাবে চলেছিল।

আসলে সন্তান কোন ঝামেলায় পড়লেই বাবা ব্যাকুল হয়ে যায় কখন সমস্যা সমাধান করবে। সব বাবারা ভালো থাকুক এই কামনা।

ধন্যবাদ সবাইকে।