বিশ্বাস এবং সততা! (Faith & loyalty)
![]() |
---|
প্রতিদিন বাজার করতে যাওয়া পরেশ বাবুর মুখ এখন বাজারে পরিচিত!
মধ্য বয়সী মানুষটি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে একই বাজারে শুধু আসেন তাই নয়, ওনার দোকান ও বাধা!
এই যেমন যে দোকানদার থেকে মাছ কিনবেন প্রতিদিন তার থেকেই মাছ নেবেন, অন্য মাছ বিক্রেতা আগে ডাকাডাকি করলেও এখন পরেশ বাবুর স্বভাব বুঝে গেছেন!
পিছনে সমালোচনা করেন অনেকেই ওনাকে নিয়ে, কখনও সেসব কথা কানে আসলেও বিশেষ আমল দেন নি কোনোদিন পরেশ বাবু।
অনেক পরিচিত পড়শি এই বিষয়টি নিয়ে কৌতুহল প্রকাশ করলে উনি উত্তর দেন বাজারে প্রায় সকলেই নানা দোকান ঘোরাঘুরি করে কেনাকাটি করে, একলা আমার জন্য কারোর ব্যবসায় তেমন ক্ষতি হবে না!
আর, এতদিন যারা আমার বিশ্বাস অক্ষত রেখে চলেছে সঙ্গে অব্যাহত রেখেছে সততা, তাদের চোখ এড়িয়ে অন্য মানুষদের কাছ থেকে জিনিষ নিতে বিবেকে বাধে!
![]() |
---|
অনেকেই বলেন আপনি অন্য কোথাও না গেলে কি করে বুঝবেন তারাও আপনার মাছ, সবজি বিক্রেতার মতো বিশ্বাসী এবং সৎ কিনা?
এবার পরেশ বাবু আর না হেসে পারলেন না!
বললেন 'বলাই এই প্রশ্নটি কিন্তু খাসা করেছো!'
তাহলে শোনো, আমার এই অভ্যেসের সূত্রপাত নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতার কথা তোমাদের শোনাই।
প্রথম অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলাম এক বয়স্ক ফলের দোকানদার থেকে বুঝলে বলাই?
কাঁঠালি কলা কিনতে গিয়েছিলাম তোমার বৌঠানের জন্য।
![]() |
---|
দোকানী বললে একটি কলার দাম চার টাকা।
আমি বললাম বেশ, খান পনেরো নিলে কি কিছু কম হবে?
বললো না! ওই এক্ দর! আমি একশত টাকার একটি নোট দিলাম, আমাকে চল্লিশ টাকার পরিবর্তে ফেরৎ দিলো পঁচিশ টাকা!
বিষয়টা প্রথমে খেয়াল করিনি, তবে বাড়ি ফিরে দেখলাম প্রতিটি কলায় এক টাকা করে বেশি নিয়েছে।
ভাবলাম, বাজারের পরিচিত ব্যবসায়ী পরের দিন গিয়ে বললে নিশ্চই বাড়তি পনেরো টাকা ফেরত দেবেন, কারণ দোকানের ভিড়ে আমিও যেমন নেবার সময় খেয়াল করিনি, হয়তো দেবার সময় উনিও খেয়াল করেননি।
পরের দিন বেশকিছু সবজি কেনার জন্য গেলাম বাজারে। এক দোকান থেকে সব আনাজ পাতি কিনে ব্যাগ তার কাছে রেখে গেলাম সেই ফলের দোকানে।
গিয়ে লোকটিকে আগের দিনের হিসেবের গণ্ডগোলের কথা বলতেই আমার উপরে চিৎকার করে উঠলো!
![]() |
---|
এত লোকের মাঝে ওইরকম ব্যবহার পেয়ে আমার মাথাটাও বেশ গরম হয়ে গেলো, পনেরো টাকার চাইতেও বড় আঘাত লাগলো বিশ্বাসে!
বয়স্ক হলেও ব্যাক্তির সততা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়লাম, এই রকম সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
বাড়ি পৌঁছতেই গিন্নি বললো তোমার বাজারের ব্যাগ কোথায়?
আগের দিনে শুনেছিল ফলের দোকানের কথা, আর ওইদিন বাজার কিনে দোকানদারের থেকে ব্যাগ না নিয়েই বাড়ি ফিরে এসেছি মনের ভুলে!
গিন্নির কথায় হুশ ফিরল! ঐদিনের অভিজ্ঞতা এতটাই খারাপ ছিল যে, মনে মনে ভাবলাম এবার সবজির দোকানী না বলে বসে আপনি তো ব্যাগ নিয়েই গিয়েছিলেন!
কিছুই বলা যায় না! বাজারে পৌঁছে দেখি দোকানদার সযত্নে আগলে রেখেছে আমার সবজির ব্যাগ।
বললো বাবু, আপনার জন্য বসে আছি, নইলে দোকান বন্ধ করে এতক্ষণে চলে যেতাম!
আমিও লজ্জায় পড়ে গেলাম, তবে সেদিন দুটো মানুষের এই আচরণের পার্থক্য আমার আজকের এই অভ্যেস তৈরি করেছে।
![]() |
---|
একই বাজার, দুটি ভিন্ন মানুষ এবং উভয়েই ব্যবসা করতে বসেছে কিন্তু নীতিগত ভাবে একেবারেই বিপরীত মেরুর উভয়েই।
সেই থেকে সবজির দোকান আমার বাঁধাধরা হয়ে গেলো।
এরকম মাছের ক্ষেত্রেও অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তাই যে মানুষগুলো বিশ্বাস এবং সততা অব্যাহত রাখতে অক্ষম, তাদের আসে পাশে থাকা আমি বিশেষ পছন্দ করি না, কি.. বুঝলে বলাই? কেনো আমি একই দোকান থেকে জিনিষ কিনে থাকি।
সমস্ত কাজেই এই বিশ্বাস আর সততা আমাদের অনেকের থেকে পৃথক করে।
দেখো উভয়েই ব্যবসায়ী কিন্তু ব্যবসার ধরনের পার্থক্য বুঝিয়ে দিয়েছে তাদের নীতি পরায়ণতার বৈষম্য।
একরাশ মানুষের ভীড়ে, একটি আচরণ কিছু ব্যক্তিকে সকলের থেকে পৃথক করে।


@tipu curate
আপনার পোস্টটি পড়ে মনে হলো, প্রতিটি মানুষের জীবনেই একেকটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত আসে যখন তাকে সততা এবং বিশ্বাসের মূল্য বুঝতে হয়। পরেশ বাবু যেমন তার ব্যবসার সততার সাথে চালাচ্ছেন, তেমনই আমরা সবাই যদি এমন একটি নীতি অনুসরণ করি, তাহলে সমাজের কাঠামো অনেক সুন্দর হতে পারে।
বিশ্বাস এবং সততার উপর এত সুন্দরভাবে আলোচনাটি তুলে ধরেছেন আমাদের সাথে! পরেশ বাবুর মত একজন মানুষের সততা ও নৈতিকতা আমাদের কাছে এক নতুন শিক্ষার উপহার। আপনার পোস্টটি জীবনের অমূল্য শিক্ষা প্রদান করে, বিশেষত বর্তমান সমাজে যেখানে বিশ্বাস ও সততা হারিয়ে যেতে বসেছে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য।