অনেক বছর পরে ঈদের ছুটিতে মামা বাড়িতে যাত্রা ।২
গতকালকের লেখাতেই লিখেছিলাম যে ঈদের পরে মামা বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলাম।আমরা কেউ-ই রাস্তা না চেনার কারণে ভাই আমাদেরকে লোকেশন শেয়ার করে এবং আমরা সেটা দেখেই সামনে এগুতে থাকি।
কিন্তু সময় বেশি লাগায় আমার কাছে কিছুটা সন্দেহ লাগে কারন এতটা সময় লাগার কথা না।ছোট বেলা থেকে জেনে এসেছি সাটুরিয়া থেকে আমার মামাবাড়ির গ্রাম ৬ মাইল।আগে দুরত্ব কিলোমিটারে হিসেব হতো না বরং মাইলে হতো ।
আমার সন্দেহের কথা প্রকাশ করায় ছেলেরা হেসে গড়িয়ে পরলো এরা বলে যে তোমার ৬ মাইল মাত্রই ২১ কিলোমিটার এবং সাথে ওরা এটাও জানায় যে আমার মামাবাড়ি যেতে হলে ধলেশ্বরী নদী পার হয়ে যেতে হবে ।এটা শুনে আমার আকাশ থেকে পরার অবস্থা ।
কিন্তু আমি যাকিছুই বলি না কেন ওদের এক কথা ওরা আমার ভাই এর দেয়া লোকেশন ফলো করেই যাচ্ছে।আমি বুঝতে পারলাম না ভাই কেন আমাদেরকে ভুল লোকেশন দিলো ।একসময় ওরা আমার চেচামেচিতে বাধ্য হয়ে আমার ভাইকে আবারও কল দিলো নতুন করে লোকেচন শেয়ার করার জন্য ।
কিন্তু কপালে দূর্দশা থাকলে যা হয় , ভাই আবারও একই লোকেশন দিলো এবং আমরা সেটা ফলো করে এগিয়ে চললাম ।
একজায়গায় চাচীতারা নামটা দেখে ভাইকে কল দিলাম ।এই বুদ্ধিটা আগে কেন মাথায় আসলো না সেটাও ভাবলাম ।কল দেয়ার পরে ভাই জানালো আমরা অনেক দুরে চলে এসেছি।
পরে রাস্তায় থাকা মানুষদেরকে জিজ্ঞেস করে করে মামার বাড়িতে গিয়ে পৌঁছাতে পারলাম।
আমার মামারা সবাই ঢাকাতেই থাকেন ।তবে বড় মামা কিছুদিন থেকে গ্রামের বাড়িতে থাকতেছে। আমার এই মামা অদ্ভুত ধরনের মানুষ ।জীবনটাকে পরিপূর্ণ উপভোগ করেছেন বলা যায় ।যখন যা মন চায় তাই করেছেন ।গল্পকে হার মানায় তার জীবন । ইদানীং আউলিয়া টাইপের হয়ে গেছেন।একাকী থাকতেই পছন্দ করেন।
দুপুরের খাবার শেষ করার পরে কথা হলো সবাই মিলে নদীর পারে বেড়াতে যাব।আমি অবশ্য কিছুটা নিমরাজি ছিলাম কারণ নদীর দূরত্ব সম্পর্কে আমার কিছুটা হলেও ধারণা ছিলো।আমি বুঝতে পারতেছিলাম যে নদীর পারে যাওয়া হলে হয়তোবা আমাদের আজকে আর ঢাকা যাওয়া সম্ভব না ও হতে পারে ।
কিন্তু বাকি সবার আগ্রহের জন্যই শেষ পর্যন্ত আমিও রাজী হলাম।বেশ বড়োসড় একটা দল নিয়ে নদীর পারে গেলাম ।নদীর পার থেকে বাসায় আসতে আসতে সন্ধ্যা পার হয়ে গেল।
এরপরে সবাই মিলে চা খেতে গেলাম ।চা খাওয়ার জন্য এতটা দূরত্ব ভ্যানে করে আমি কখনও যাই নাই।প্রচুর ভিড় চায়ের দোকানের সামনে ।আমরা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পরে ভ্যানে বসেই চা খেলাম।
চা খেয়ে বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে ৮টার বেশি বেজে গেল।এরই মাঝে আমার আর এক মামার বাসা থেকে এসে জানালো যে আজকে রাতে তাদের বাসায় খেতে হবে।আমাদের মাঝে কেউ-ই এই প্রস্তাব শুনে খুব একটা খুশি না হলেও কিছু করার ছিলো না ।রাতের খাবার শেষ করতে করতে ১০টার বেশি বেজে গেল ।
আমাদের ঢাকায় আসার কথা শুনে সবাই বাধা দিলো ।কারন ইদানীং সবজায়গাতেই আইনশৃংখলার অনেকটাই অবনতি হয়েছে ।
আমার হাসবেন্ড ও ছেলেদের পরেরদিন কাজ ছিলো তাই তারা থাকতে একদমই রাজি ছিলো না ।কিন্তু সবার নিষেধ এর মুখে একসময় তারা বাধ্য হলো থেকে যেতে।
মামা বাড়িতে থাকা প্রথম দিনটা আমরা এভাবেই কাটালাম।