শুধুমাত্র প্রতিবেশীদের জন্যই বড় একটি বিপদের হাত থেকে বেঁচে গেলাম

in Incredible India16 days ago
IMG_20250325_185014.jpg

Hello,

Everyone,

আমরা সারাদিন কর্মব্যস্তার পরে দিনশেষে বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করি ।সারাদিনে কঠিন পরিশ্রমের পর রাতে নিশ্চিন্তে নিজের বাড়িতে থাকব এবং ঘুমাবো এটাই তো স্বাভাবিক । সেই রাতটি যদি হয় খুবই ভয়াবহ এবং খুবই আতঙ্কের। তখন শান্তির ঘুম হারিয়ে যায়।

আপনারা সকলেই জানেন বর্তমানে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তেমন একটা ভালো না। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা খুবই ভেঙে পড়েছে। আমরা প্রতিদিন অনলাইন মাধ্যম এবং পেপাড়-পত্রিকায় যে মর্মান্তিক খবরগুলো আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে তা আমরা কেউ কখনো কল্পনাও করতে পারিনি। আমাদের এই ছোট্ট সুন্দর দেশটি এভাবে অশান্ত হয়ে যাবে তা কখনো ভাবতেও পারিনি ।

এখন তো মেয়েদের রাস্তাঘাটে একা একা চলাফেরা করাটা খুব নিরাপদ নয় ।বলতে পারেন প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হয় ভালো । শহরের মানুষ গ্রামের থেকে কিছুটা নিরাপদ আছে। শহরের বাড়িতে চুরি হচ্ছে যখন স্বামী-স্ত্রী উভয়ই অফিসে চলে যায় কিংবা বাসা ফাঁকা থাকে তখন চুরি হচ্ছে। আর গ্রামের বাড়িতে রাতের বেলা চুড়ি হচ্ছে।

IMG_20250325_185022.jpg

আপনারা সকলেই জানেন কিছুদিন আগে আমরা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলাম ।আমার ছোট দেবরের মেয়ের বিয়েতে। আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন এসেছিল। খুব ভালই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো ।তারপরেও রাতে কিছুটা মনে আতঙ্ক ছিল , একটু ভয় ভয় ছিলাম ।কারণ যেহেতু বর্তমান পরিস্থিতি ভালো না।

বিয়ের সমস্ত প্রোগ্রাম শেষ হবার পরে আমরা কিছু কিছু অতিথি ছিলাম বাড়িতে । বেশিরভাগ আত্মীয়-স্বজনই চলে গেছে। দিনের বেলা কোন কিছুই বোঝা যায়নি, সব স্বাভাবিক ছিল কিন্তু রাত হলেই ভয় লাগে। কারন শুনেছি, গভীর রাতে মিনি ট্রাক নিয়ে আসে তারা। যদি কোন বাড়িতে ডাকাতি করতে না পারে তখন সেই বাড়ির গোয়ালঘর থেকে গরু চুরি করে নিয়ে যায়।

এলাকাবাসী দলগতভাবে রাতে পাহাড়ের ব্যবস্থা করেছিল ।আট জনের একটি দল করে এরকম চারটা দল ছিল ।দলগুলো ভাগ করে প্রতিদিনই রাতে পাহারা দিতেন। পাহারার ব্যবস্থা করেছিল অনেকদিন থেকে। অনেক দিন থেকে ডাকাত দল চেষ্টা করছিল এই গ্রামে প্রবেশ করার কিন্তু গ্রামবাসীর সচেতনতার জন্য প্রবেশ করতে পারেনি । এখন রোজা চলছে তাই রাতের পাহারা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। সবাইকে ক্লান্ত হয়ে যায় । কম সংখ্যক লোক রাতে থাকে ।

ছোট দিদি অনেক সাহস দিচ্ছে এসব কিছুই হবে না ।এখন লোক অনেক সচেতন আছে ,কোন ভয় নেই। তবে ওদের অনেক সাহস। ওরা এরকম অনেকবার সম্মুখীন হয়েছে তো তাই ওদের ভয় অনেকটা কমে গেছে ।যেই ভয় পেয়েছি সেটাই সত্যি হয়ে চলেছিলো । রাতে যখন সবাই ঘুমানোর ব্যবস্থা করছিল , আনুমানিক রাত পৌনে বারোটা হবে তখন আমি শুনতে পেলাম আমাদের ওয়াশরুমের পেছন থেকে কিছু লোকের হেঁটে যাওয়ার শব্দ।

আমি ভয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম। শুকনো পাতার উপরে হেঁটে যাওয়া মানুষের শব্দ বুঝতে আমার একদমই ভুল হয়নি কিন্তু ওরা বিশ্বাস করছিল না বা আমি ভয় পাব তাই বলছে ”কুকুর হেঁটে যাওয়ার শব্দ”। কিন্তু কি হবে মন তো মানছে না ।

IMG_20250325_185007.jpg

আমরা বাড়িতে ২৫ জনের মত সদস্য ছিলাম ।আমারা বিয়েবাড়িতে এসেছি তাই সবারই কিছু কিছু স্বর্ণালংকার ছিল ।আর বেশি ভয় হল মান-সম্মানের। কারণ যে সব খবর গুলো পড়ছি এখন শুধু ডাকাতেরা লুট করছে না তার সাথে সাথে অনেক ক্ষয়ক্ষতিও করে যাচ্ছে । আমরা কেউ ঐ রাতে ঘুমাইনি।

সবাই লাইট অফ করে চুপ করে ছিলাম। শুধুমাত্র বয়জেষ্ঠদের ও বাচ্চাদের ঘুমাতে বলা হয়েছে। আমার দেবরের অনেক সাহস, সে প্রতিবেশীদেরকে ফোনে সব কিছু জানালেন এবং সবাইকে সচেতন থাকতে বললেন ।দেবরের ছোট্ট ছেলেটা বলে উঠলো ”এখন ডাকাত আসবে না তারা আসবে রাত ২টার পরে, ছোট্ট বাচ্চাটাও জানে ডাকাত কখন আসে পারে।

রাত দুটো থেকে ভোর রাত সাড়ে চারটা পর্যন্ত ওদের টার্গেট থাকে। রাত যখন ১ঃ৩০ বাজলো তখনই কুকুরগুলো সে জোরে আওয়াজ করতে শুরু করল এবং আওয়াজ করতে করতে একদম আমাদের পুকুরের কর্নার পর্যন্ত চলে গেল। যখনই কুকুরগুলো আওয়াজ করছে তখন ওয়াশরুমের লাইট জ্বালিয়ে দিল। তারা বুঝতে পারল যে আমরা এখনো ঘুমাইনি জেগে আছি তাই তারা আবার চলে গেল। এইভাবে আবার ৩০ মিনিট পর কুকুর আবার ডাকতে শুরু করলাম।

IMG_20250305_145029.jpg

আমরা দোতলার জানালা থেকে দেখতে থাকলাম কুকুরগুলো কোথায় যাচ্ছে? ঠিক কুকুর ৩০ মিনিট পরপর এভাবে ডাকছে । আমার দেবর তখন করিম ভাইকে ফোন দিল ।করিম ভাইয়ের বিদেশি গরুর খামার আছে তাই তিনি এই সময় জেগে থাকেন।

করিম ভাই . বাবুল দাদা এবং আবুল ভাই এরা তিনজন প্রতি রাতে দুটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত জেগে থাকেন। যখন রাত তিনটা বাজলো তখন একটা মিনিট ট্রাকের আওয়াজ পেলাম। অমনি সময় করিম ভাইকে ফোন দেয়া হলো। তিনি মসজিদের মাইকে ঘোষণা করে দিলেন এবং গ্রামের সকলকে সচেতন থাকতে বললেন ।

এরই মাঝে এলাকাবাসী সকলে সচেতন হয়ে গেলেন এবং সব বাড়ি থেকে পুরুষেরা লাঠি, দা –বটি হাতের কাছে যা পেয়েছে তাই নিয়ে রাস্তায় নেমে গেল। মনে হচ্ছে, এলাকার সবাই জেগে গেছে, কেউ ঘুমায়নি তাই ডাকাত দল আর সামনে আগাতে সাহস পেল না। তারা ওখান থেকেই চলে গেল। এলাকাবাসী কোন ডাকাত ধরতে পারল না। ।

এভাবে কেটে গেল রাত তিনটা, চারটা ,সাড়ে চারটা । সেহেরির সময় আসলো মসজিদ থেকে ঘোষণা আসলো ,”আর কোন ভয় নেই ,ডাকাত দল চলে গেছে সবাই উঠে সেহেরি খেয়ে নেন আর বেশি সময় হাতে নেই ।মসজিদ থেকেই এই ধ্বনি শোনার পরে অনেকটা ভয় কমে গেল। মনে হলো যেন স্বস্তি ফিরে পেলাম । একটা দুর্বিষহ রাত কাটালাম যা বলে প্রকাশ করতে পারছি না। এখনও আমার গা কাঁটা দিয়ে উঠছে।

আজ এলাকাবাসী সকলেই সচেতন ছিল বিধায় আমরা বড় একটা বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি ।প্রার্থনা করি সৃষ্টিকর্তা সবাইকে ভালো রাখুক , সবাইকে সুস্থ রাখুক এবং সবকিছু স্বাভাবিক করে দিবেন। আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি সবাই ভালো থাকবেন ও সুস্থ থাকবেন।


◦•●◉✿ শুভ রাত্রি✿◉●•◦

Sort:  
Loading...
 14 days ago 

কি বলেছেন শহরে চুরি হয় শুধুমাত্র দিনের বেলা আর গ্রামে শুরু হয় রাতের বেলা যখন মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে আসলে সবাই অনেক বেশি ব্যস্ত থাকে পরিশ্রমী মানুষ রাতে ঘরে এসে নিরাপদ ভাবে ঘুমাবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু নিরাপত্তা এখন আর কোথাও নেই সেটা গ্রামে বলেন আর শহরে।

ঠিকই বলেছেন যেহেতু বিয়েতে গিয়েছেন তাই সবার টুকিটাকে স্বর্ণালংকার ব্যবহার করবেন থাকবে এটাই স্বাভাবিক তবে আপনারা খুব বুদ্ধিমানের কাজ করেছেন সবাই জেগে ছিলেন এবং পাড়া-প্রতিবেশের কাছে বারবার কল করে বিষয়গুলো জানাচ্ছিলেন এটা জানতে পেরে ভালো লাগলো আপনি কিছু বলেছেন আপনার পাড়া প্রতিবেশীর কারণেই কিন্তু আপনারা বেঁচে দিয়েছিলেন অসংখ্য ধন্যবাদ ভয়ংকর রাতের কথা আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.13
TRX 0.24
JST 0.030
BTC 79675.04
ETH 1522.47
USDT 1.00
SBD 0.82