শুক্ত রেসিপি
নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন? আশা করছি সকলেই ভালো আছেন। আজকে আবারো নতুন একটা রেসিপি নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে। আশা করছি সকলেরই ভালো লাগবে।
বাঙ্গালীদের অন্যতম সুস্বাদু খাবারের মধ্যে শুক্ত হল অন্যতম। শুক্ত খেলে অনেক সময় খাবারের স্বাদ কিংবা রুচি ফিরে পায়। শুক্ত সবরকম মিশ্রিত সবজি দিয়ে রান্না করা হয়। যেমন -আলু,উচ্ছে,বিন্স, সজিনা ডাটা,পটল, কাঁচা কলা, টমেটো। এই সমস্ত সবজি আমি নিজের পছন্দমত দিয়েছিলাম। আপনারা চাইলে আরো সবজি এড করতে পারেন। ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি শুক্ত রান্না খুবই কঠিন ব্যাপার। এমনকি আগেকার দিনের মানুষ যখন মেয়ে দেখতে আসতো তখন নাকি আগে জিজ্ঞেস করত শুক্ততে কি কি মসলা দেওয়া হয়। যাইহোক এটা আমার শোনা কথা। তখন থেকেই ভাবতাম শুক্তো রান্না হয়তো কঠিন ব্যাপার। বিয়ের আগে কখনো সেভাবে রান্নাবান্নার কোন চেষ্টাই করিনি কিন্তু এখন মাঝেমধ্যেই রান্না করতে ভীষণ ইচ্ছে করে ।তাই যখন যেটা মনে হয় তখন সেই রান্নাটা করে ফেলি।
ভিডিও লিংক
আমার হাতে শুক্তো রান্না আমার শাশুড়ি মা ভীষণ পছন্দ করে। শুক্ত রান্না আমি একা একাই শিখেছি। কেউ সেভাবে কোনদিন বলে দেয়নি। কিভাবে রান্না করতে হয়। যে কোন রান্নায় আমি নিজের চেষ্টাতেই করি। তবে প্রথম প্রথম ভালো না হলেও পরে চেষ্টা করলে ঠিকঠাক হয়। ঠিকঠাক রান্নাবান্না হলে সেটা খেতে তো ভীষণ পছন্দ করি ।আপনারা তো ভাবেন আমি যে রেসিপিটা আপনাদের মাঝে শেয়ার করি সেটাই খেতে আমি ভীষণ পছন্দ করি । একদমই তাই।আসলে ছোটবেলা থেকে সবকিছু খেয়ে মানুষ হয়েছি। তাই সমস্ত কিছুই কমবেশি আমি খেয়ে থাকি। সবকিছুই মোটামুটি আমার পছন্দের খাবার। আজকে ও খুব সুস্বাদু একটা রেসিপি আপনাদের মাঝে শেয়ার করব একদমই ঘরোয়া উপায়ে বানানো। এইভাবে রেসিপিটি তৈরি করলে অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। চলুন তাহলে শুরু করি আজকে শুক্ত রেসিপি।
নং | সামগ্রী | পরিমাণ |
---|---|---|
১ | উচ্ছে | ১০০ গ্ৰাম |
২ | আলু | ১ টা |
৩ | কাঁচা কলা | ১ টা |
৪ | পটল | ১ টা |
৫ | সজিনা ডাটা | ১০০ গ্ৰাম |
৬ | বিন্স | ৫০ গ্ৰাম |
৭ | বড়ি | ৪ টে |
৮ | সরিষার তেল | ৫০ গ্ৰাম |
৯ | শুকনো লঙ্কা | ১ টা |
১০ | পাঁচফোড়ন | পরিমাণ মতো |
১১ | লবণ | দেড় চামচ |
১২ | হলুদ | হাফ চামচ |
১৩ | টমেটো | হাফ |
১৪ | জিড়ে গুঁড়ো | হাফ চামচ |
১৫ | কাঁচা লঙ্কা | ৩ টে |
১৬ | আদা | সামান্য |
১৭ | কালো সরিষা | ১ চামচ |
১৮ | রাঁধুনি | হাফ চামচ |
১৯ | মিট মসলা | হাফ চামচ |
২০ | ভাজা মশলা | পরিমাণ মতো |
প্রথম ধাপ
প্রথমেই আমি শুক্ততে দেওয়ার জন্য গ্যাস অন করে কড়াই বসিয়ে তাতে সামান্য পাঁচফোড়ন ভেজে নিয়েছিলাম। ভাজা মশলা বানানোর জন্য। ভেজে নেওয়ার পর হামাল দিস্তা সাহায্যে সেটাকে প্রথমে গুঁড়ো করে রেখে দিতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপ
এরপরে নিজের পছন্দমত সমস্ত সবজি কেটে ধুয়ে নিয়েছি। সবজি যেভাবে শুক্ততে দেয় আমি সেই ভাবেই কেটে নিয়েছিলাম ।কারণ শাশুড়ি মা বলেন সবজি কাটার উপরে ও নাকি তরকারির স্বাদ ভালো লাগে। তাই আমার মনে হয় যে তরকারি যেভাবে কাটা হয় সেই ভাবেই কাটা উচিত।
তৃতীয় ধাপ
এবারে গ্যাস অন করে কড়াই বসিয়ে দিয়েছি। কড়াই গরম হলে কড়াইতে পরিমাণ মতো সরিষার তেল দিয়ে দিতে হবে। তেল গরম হলে প্রথমেই কেটে রাখা উচ্ছে গুলো ভালো করে ভেজে তুলে রাখতে হবে।
চতুর্থ ধাপ
এরপর ওই তেলের মধ্যেই কেটে রাখা পটল গুলো ভেজে নিতে হবে ।পটল গুলো হালকা ভাজা হয়ে গেলেই এবারে ওর মধ্যে কেটে রাখা আলু গুলো দিয়ে খানিকক্ষণ ভাজার পরে আর সমস্ত সবজি গুলো দিয়ে ভালো করে নেড়েচেড়ে ভেজে নিতে হবে। শেষে সবজি গুলো দেওয়া হয়েছিল সেগুলো দেওয়ার পর সামান্য লবন ,হলুদ দিয়ে নেড়ে চেড়ে ভেজে নিতে হবে।
পঞ্চম ধাপ
এবারে সমস্ত সবজি ভাজা হয়ে গেলে কড়াই থেকে তেল ঝরিয়ে একটা পাত্রে তুলে রাখতে হবে।
ষষ্ঠ ধাপ
এদিকে শুক্ততে দেওয়ার জন্য মসলা যেমন- রাঁধুনি, কালো সরিষা ,আদা আর কাঁচালঙ্কা আমি শিলে বেটে নিয়েছিলাম।
সপ্তম ধাপ
এরপর কড়াই থেকে সবজিগুলো তুলে নেওয়ার পর চার থেকে পাঁচটা বড়ি একটু ভেঙে লাল লাল করে ভেজে নিতে হবে ।বড়ি গুলো ভেঙে দিয়েছি কারণ তাহলে বড়ির ভিতরে ভালো করে ঝোল ঢুকবে। গোটা বড়ি দিলে অনেক সময় বড়ির ভিতরে তরকারির ঝোল ঢুকতে চায় না।
অষ্টম ধাপ
বড়ি ভাজা হয়ে গেলে কড়াই থেকে তুলে রেখে দিতে হবে। এবারে ওই তেলের মধ্যেই আরো খানিকটা সরিষার তেল অ্যাড করে দিতে হবে ।তেল গরম হলে তেলের মধ্যে দিয়েছি একটা শুকনো লঙ্কা আর সামান্য পরিমাণে পাঁচফোড়ন। পাঁচফোড়ন আর শুকনো লঙ্কা ভালো করে ভাজা হয়ে গেলে খুব একটা সুন্দর গন্ধ বেরোবে।
নবম ধাপ
এরপর কড়াইতে আগে থেকে ভেজে রাখা সমস্ত সবজি দিয়ে দিতে হবে ।দেওয়ার পর ডাটা গুলো কড়াইতে দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হবে। আমি আগে থেকে ডাটা গুলো ভেজে নিয়নি। খানিকক্ষণ এইভাবে নাড়াচাড়া করার পর পরিমাণ মতো লবণ, হলুদ দিয়ে দিতে হবে। এরপর কেটে রাখা টমেটো দিয়ে ভালো করে নেড়ে চেড়ে নিতে হবে।
দশম ধাপ
ভালো করে নাড়াচাড়া করতে করতে পরিমাণ মতো জিরে গুঁড়ো আর বেটে রাখা মসলা সমস্ত কিছু দিয়ে আরো ভালো করে নাড়াচাড়া করতে হবে। এরপর সামান্য মিট মসলা দিতে হবে।আমি যেহেতু আগে থেকেই সমস্ত সবজি ভেজে রেখেছিলাম ।তাই বেশিক্ষণ ভাজার দরকার নেই। সমস্ত মসলা দেওয়ার পর মসলা কষানোর জন্য খানিকক্ষণ ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে
একাদশ ধাপ
খানিকক্ষণ পর ঢাকনা খুলে দেখা যাবে তরকারির কালার খুব সুন্দর চলে এসেছে। আর তরকারি থেকে হালকা তেল ছাড়ছে। ঠিক তখনই পরিমাণ মতো জল দিয়ে একটু নেড়ে আবারো খানিকক্ষণ ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে।
দ্বাদশ ধাপ
এরপরে ঢাকনা খুলে দেখা যাবে তরকারির ঝোল ফুটে উঠেছে। ঠিক তখনই ভেজে রাখা বড়ি গুলো তরকারির মধ্যে দিয়ে নেড়ে চেড়ে নিতে হবে ।
শেষ ধাপ
এভাবেই খানিকক্ষণ নেড়েচেড়ে নিয়ে যখন দেখা যাবে তরকারি ঝোল শুকিয়ে আসবে তখনই প্রথমেই ভেজে রাখা মসলা পরিমাণ মতো তরকারিতে ছিটিয়ে দিতে হবে। ভাজা মশলা দিলে তরকারির স্বাদ আরো দ্বিগুণ বেড়ে যায়।
তৈরি
ভাজা মসলা দেওয়ার পর একটু নেড়ে নিয়ে নামিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে শুক্ত।
আমি একদম ঘরোয়া উপায়ে রেসিপি তৈরি করেছিলাম। শুক্ততে আমি ঝোল রাখিনি। তরকারির ঝোলটা আপনারা আপনাদের পরিমাণ মতো রাখবেন। শুক্ততে ঝোল খেতে আমাদের বাড়িতে কেউ পছন্দ করে না। তাই আমি একটু শুকনো শুকনোই রেখেছিলাম। এইরকম পদ্ধতিতে আপনারা বাড়িতে শুক্তো রান্না করলে একদম অনুষ্ঠান বাড়ির মত খেতে লাগবে। আমাদের বাড়িতে সকলেই এইরকম ভাবে শুক্ত খেতে ভীষণ পছন্দ করে ।যেদিন থেকে আমি রান্না করছি সেদিন থেকে আরও সকলের শুক্ত খাওয়ার পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। শুক্ততে আমি বাইরের কোন উপকরণ ব্যবহার করিনি ।প্রতিদিন যে মসলা দিয়ে আমি রান্নাবান্না করি সেই গুলোই ব্যবহার করেছি ।তবে শুক্ততে রাঁধুনি দিলে খেতে একটু বেশি ভালো হয়। আর শেষে লাগে একটু ভাজা মসলা।
বাড়িতে আমার বর একদমই তিতো খেতে চাই না ।কিন্তু এইরকম ভাবে শুক্ত যদি রান্না করে দেওয়া হয়। সে ভীষণ খেতে ভালোবাসে। আমি খুব অল্প পরিমাণে রেসিপিটি তৈরি করেছিলাম। আপনারা আপনাদের পরিমাণ অনুযায়ী সমস্ত কিছু ব্যবহার করবেন। রেসিপিটি গরম ভাতের সাথে খেতে দুর্দান্ত লাগে। শুক্র তে উচ্ছে একটু বেশি দিতে হয়। তাই আমিও একটু বেশি উচ্ছে ব্যবহার করেছি।রেসিপিটি পছন্দ হলে ভিডিও লিংক দেওয়া থাকলো আপনারা অবশ্যই দেখতে পারেন।
আজ এইখানেই শেষ করছি। আবার নতুন কোন রেসিপি নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে।
শুকত আমার কাছে খুবই অজানা একটা রেসিপি যেটা সম্পর্কে আমার কখনো ধারণা আছে বলে আমার মনে হয় না তবে এটা মনে হয় আপনাদের খুবই প্রিয় একটা খাবার যেটা বিয়ে বাড়িতে তৈরি করা হয়ে থাকে সেটা কিভাবে তৈরি করা হয় আপনি আজকে তার রেসিপি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন যেটা জানতে পেরে আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগলো ধন্যবাদ ভালো থাকবেন ।