বিদায় নিঃসঙ্গের কবি!!
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
এখন যৌবন যার
মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার
যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।
জুলাই আগষ্ট জুড়ে বাংলাদেশে হয়ে যাওয়া আন্দোলনে উপরের এই লাইন চারটার গুরুত্ব অনেক। এই চারটা লাইন শিক্ষার্থীদের এতো অনুপ্রেরণা দিয়েছিল যে তারা রাস্তায় নেমে গিয়েছিল। তবে কবি হেলাল হাফিজ এই কবিতা টা লিখেছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কে কেন্দ্র করে। এই লাইনটা আমার ব্যক্তিগত ভাবে অনেক পছন্দের। ছিলেন চিরকুমার। সারাজীবন কাটিয়ে দিয়েছেন সঙ্গীহীনভাবে গভীর একাকিত্বে। বলছি বাংলাদেশের কিংবদন্তি কবি হেলাল হাফিজের কথা। একেবারে নিঃসঙ্গ বলতে বুঝি উনাকেই বোঝায়। উনার কবিতা গুলো আমি যেন একেবারে গভীর থেকে অনূভব করতে পারতাম। আহ কী সুন্দর লিখতেন উনি। কয়েকটা প্রজন্ম তো উনার কবিতার মোহে পড়েছে তার ঠিক নেই।
নিজের কিশোর বয়সে হেলাল হাফিজ প্রেমে পড়েছিলেন প্রতিবেশী হেলেনের। কিন্তু হেলেনের দারোগা বাবা স্কুল মাস্টারের ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেননি। বড়লোক ঘরে হেলেনের বিয়ে দেন। হেলাল হাফিজ আর হেলেনকে ভুলতে পারেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে লেখক হিসেবে বেশ নাম করে উঠেন হেলাল হাফিজ। বের হয় তার প্রথম কবিতার বই যে জ্বলে আগুন জ্বলে। কাকতলীয় ভাবে বইমেলা থেকে অন্য বইগুলোর সঙ্গে হেলাল হাফিজের এই বইটা কিনে নিয়ে যায় হেলেনের স্বামী। হেলেন যখন বইটা পড়ে। হেলেন দেখে পুরো কবিতা জুড়ে কবি শুধু না পাওয়ার আক্ষেপ, আকুতি করে গিয়েছেন। না সেটা দেখে ঠিক থাকতে পারেননি হেলেন। এরপর আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলে মানসিক ভারসাম্য। তার বড়লোক স্বামী তাকে ডিভোর্স দেয়। ।
না জীবনে হেলাল হাফিজও বিয়ে করেননি। বাড়ি থেকে অনেক জোড়াজুড়ি করলেও কোন ফলাফল হয়নি। একপর্যায়ে গিয়ে উনি বাড়ি ছেড়ে দেয়। থাকা শুরু করেন মেসে। এভাবেই নিঃসঙ্গতার সাথে কাটিয়ে দিয়েছেন সারা টা জীবন। ইদানিং তিনি ঢাকার শাহবাগ এলাকার সুপারহোম নামক একটা ব্যাচেলর হোস্টেলে থাকতেন। শারীরিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন পাশাপাশি থাকতেন একা। গতকাল দুপুরের পরে উনাকে হোস্টেলের ওয়াশরুমে পড়ে থাকতে দেখে অন্যরা। পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়ে বেশ রক্তাক্ত হয়েছিলেন উনি। তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে নেওয়া হলেও কোন লাভ হয়নি। চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। কবি যেন অনেক টা অভিমান করেই চলে গেলেন। হেলেন কে ভালোবেসে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন একা।
হেলাল হাফিজের একজন কাছের মানুষ গতকাল বলল ইদানিং উনি নাকী বলতেন যত দ্রুত সৃষ্টিকর্তার কাছে যেতে পারি ততই ভালো। কবি হয়তো নিজের এমন একটা হঠাৎ মর্মান্তিক মৃত্যুই চেয়েছিলেন। তবে যাওয়ার সময় উনার অসংখ্য ভক্তকে উনি কাঁদিয়ে গেলেন। গতকাল চার টার দিকে যখন নিউজ টা দেখলাম আমার শরীর টা শিহরত হয়ে উঠল। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কয়েকবার নিজের নিউজ ফিডটা রিফ্রেশ করলাম। কিন্তু না দেখলাম হ্যা ঘটনা টা সত্যি। ব্যক্তিগত ভাবে আমি উনার অনেক বড় একজন ভক্ত। উনার কবিতা গুলো বরাবরই আমার অনূভুতি তে আঘাত করে। নিজের ইচ্ছায় নিঃসঙ্গ তা কে বরণ করে নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন জীবন। হয়তো একটা প্রজন্মকে দেখিয়ে দিলেন ভালোবাসলে এভাবেই ভালোবাসতে হয়। ওপারে ভালো থাকবেন কবি। শেষ করব উনার আরেকটা কবিতার লাইন দিয়ে
মিছিলেও প্রেম হোক, ভেঙে যাক মোহ...
তুমি সাজ ব্যারিকেড, আমি বিদ্রোহ।
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।
Daily task
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আজ একটু আগেই যখন ফেসবুক খুলেছিলাম তখন খবরটা দেখলাম। কবির লাইনগুলো মনে লেগে থাকার মত। আত্মার প্রতি শান্তি কামনা করি। ওপারে উনি ভালো থাকুন। জাতিকে উনি অনেক দিয়েছেন। ওনার সৃষ্টি অমর হয়ে থাকবে বাঙালির জীবনে।