দীপাবলির আনন্দ
হ্যালো,
কেমন আছেন সবাই,আশা করছি ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। আমিও সৃষ্টিকর্তার কৃপায় ভালো আছি সুস্থ আছি। দূর্গা পূজা, লক্ষী পূজা শেষ বাঙ্গালীদের আর এক উৎসব কালী পূজা।কালী পূজা হচ্ছে শক্তির পূজা।দুর্গাপুজোর বিষাদ কাটতে না কাটতেই। শ্যামা পূজার তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। ঘর সাজানো রং করা, এরপর ছোট্ট ছোট্ট প্রদীপ জ্বালিয়ে রঙিন আলো লাগিয়ে আতশবাজি পুড়িয়ে, আলোর উৎসব পালন করা হয় এই দিনে। দীপাবলি তে আলো জ্বালানোর পিছনে সবচেয়ে বেশি যে কাহিনী মাথায় আসে তা হল। ক্রেতা যুগে শ্রী রামচন্দ্র যখন রাবণ বধ করে ১৪ বছরের বনবাস শেষে, অযোধ্যায় ফিরে আসেন, সেদিন দীপাবলি হিসেবে গোটা রাজ্যে অযোধ্যার প্রতিটি বাড়িতে মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়েছিল। অন্ধকারের কালিমা ঘুচিয়ে নতুন আলোর সূচনা ঘটিয়ে, শুভকামনা করাই এই উৎসবের মূল লক্ষ্য।
আর এই লক্ষ্য পূরণ করার উদ্দেশ্যে আমরাও প্রতি বছর বছর দীপাবলি পালন করে থাকি।তবে আমাদের আর ছোট বেলার মতো আনন্দ নেই।দায়িত্ব কাঁধে।বাচ্চাদের আনন্দের সীমা।কখন রাত্রি হবে আর কখন দীপান্বিতার শুভ সময়ে প্রদীপ প্রজ্বলন করবে।আতস বাজি, ফোটাবে সেই নিয়ে ব্যাস্ত।আমাদের এলাকায় সব ঘরে ঘরে এমন কলা গাছ কেটে তা আঙ্গিনায় পুতে এমন করে প্রদীপ লাগিয়ে থাকে।আমি একটু কলা গাছের গোড়ায় আলপনা দিয়েছি।তারপর নিয়ম অনুযায়ী প্রদীপ লাগিয়েছি।
এরপর প্রতি ঘরে ঘরে প্রদীপ লাগানো হয়েছে। এদিকে মেয়ে বাজি ফাটানোর জন্য ব্যাস্ত হয়ে গেছে। আমার বাবা পাঠিয়েছে এগুলো ওদের জন্য।
অবশ্য এসব যখন ফাটিয়েছে তখন আমি ছিলাম ব্যাস্ত তাই আর দেখা হয়নি।মেয়েতো পারে না এসব ফাটাতে তাই ওর দাদা,কাকুদের সাহায্য নিয়ে ফাটিয়েছে।এর পর গেটে মোমবাতিও প্রদীপ লাগানো হয়েছিল আর মেয়ে গেটের মাঝে বসে ঝাড়বাতি জ্বালিয়ে মজা করছিলো আর আমি ওর কয়েকটি ফটোগ্রাফি করে নিয়েছি।
সব কিছু শেষ করে রুমে আসলাম।অনুভব করলাম বেশ ক্ষুধা পেয়েছে। তাই খেয়ে নিলাম রুটিও বুটের ডাল।যেহেতু অমাবস্যা তাই ভাত খাওয়া যাবে না।তাই রুটি,লুচিও বুটের ডাল খেয়ে নিলাম।
মেয়েকে জোর করে খাইয়ে দিলাম। সে এতোটাই আনন্দ করছে যে খাওয়ার কথাই ভুলে গেছে।
মেয়ের এমন
আনন্দ দেখে ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেলো।আগে কতোই না মজা করতাম এই দীপাবলিতে।দলবেঁধে সবাই গ্রামের এবাড়ি ওবাড়ি দেখে বেড়াতাম কার আলপোনা সব থেকে সুন্দর হয়েছে। কে কতো গুলো প্রদীপ জ্বালিয়েছে।আমার পিসি খুব সুন্দর করে আলপনা দিতো তাই জন্য আমার গর্বের শেষ ছিলো না কারণ আমাদের বাড়ির মতো সুন্দর আলপনা কারো বাড়িতে হইতো না।এছাড়াও আমাদের পুকুর পাড়ে আমার দাদুর সমাধিস্থল সেখানে খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করে প্রদীপ লাগানো হতো।অনেক রাত অবদি আমরা ওখানে থাকতাম।সবাই দেখতো দাঁড়িয়ে। এরপর শুরু হয়ে যেতো ঝালের গুড়া খাওয়ার পালা।কি অবাক হচ্ছেন যে ঝালের গুড়া আবার কি।ঝালের গুড়া হচ্ছে চাল,চৈ,রসুন,নানাম রকমের মশলা ও অনেক প্রকার ঔষধি গাছের ডালপালা মিশ্রিত চালের গুড়া।চাল ভেজে নিয়ে ঢেকির সাহায্যে এই গুড়ার মিশ্রণ তৈরি হয়।গ্রামের মানুষ জন মনে করেন এই ঝালের গুড়া অমাবশ্যাতে খেলে ঔষধের মতো কাজ করে থাকে।এক কথায় ঔষধি গুন থাকে এই ঝালের গুড়াতে।গ্রামের সবাই এই ঝালের গুড়া খেতে আসতেন। যেহেতু হিন্দু সব বাড়িতেই এই ঝালের গুড়া তৈরি হয় তাই তারা নয়। আশেপাশের মুসলিম পরিবারের সবাই আসতেন।আগে থেকেই তাদেরকে নিমন্ত্রণ করা হতো ঝালের গুড়া খাওয়ার জন্য। আর তেনারা দলে দলে আসতেন রাত্রিতেই কারণ এই ঝালের গুড়া অমাবশ্যাতেই খেতে হয় ঔষধি গুন পেতে গেলে।আমার শ্বশুর বাড়ির এলাকায় আবার এই রকম নয় কেউ আসেন না রাত্রি বেলায় তবে তাদের বাড়িতে পৌঁছাতে হয় ঝালের গুড়া।ছোট বেলায় সব থেকে আনন্দায়ক ছিলো পরদিন সকাল বেলা সব মুসলিম বাচ্চারা দিয়ার নিতে আসতো।দিয়ার হচ্ছে মাটির প্রদীপ।তিনশো চারশো করে প্রদিপ কিনে আনতেন আমার বাবা। শুধু বাচ্চাদের মাঝে বিলনোর জন্য। এতো প্রদীপ তো প্রজ্বলন করতে হতো না।কিন্তুু সব বাচ্চার নিতে আসবে সকাল সকাল। আমরাও খুব সকালে বসে থাকতাম সব বাচ্চাদের মাঝে দিয়ার মানে প্রদীপ বিলিয়ে দেয়ার জন্য।এখানে কম আসে তাই দুইশো প্রদীপ এনেছিলাম আমরা আজ মেয়ে পঞ্চশটির মতো বিলিয়ে দিয়েছে বাকি গুলো আছে।মাঝে মাঝে আবার নাতিনাতনি নিয়ে নিতে আসবে অনেকেই তখন দিতে হবে তাই যত্ন করে রেখে দিয়েছি। এই ছিলো আমার আজকের পোস্ট। দীপাবলি নিয়ে আশা করছি ভালো লাগবে সবার।সবাই সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন।
টাটা
পোস্ট | বিবরণ |
---|---|
শ্রেণী | জেনারেল রাইটিং |
পোস্ট তৈরি | @shapladatta |
ডিভাইস | OppoA95 |
লোকেশন | গাইবান্ধা, বাংলাদেশ |
আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।
দিদি দীপাবলিতে দেখছি বেশ মজা করেছেন সবাই মিলে। আসলে এই দিনটাতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সবাই অনেক মজা করে থাকে। প্রদীপের আলোয় কেটে যাক সব অন্ধকার আলোয় আলোয় ভরে উঠুক প্রতিটি জীবন। সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে বিস্তারিত ভাবে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি।
ধন্যবাদ দাদা সুন্দর কমেন্ট করার জন্য।
আপনি তো দীপাবলীর আনন্দ খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করলেন। তো আগে জানতাম না আসলে দীপাবলি কেন পালন করা হয়। কিন্তু আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম শ্রী রামচন্দ্র রাবনকে বধ করে ১৪ বছর বনবাস শেষ করে রাজ্য ফিরে আসা নিয়ে সুন্দর কাহিনী। তো বেশ ভালো লাগলো অনেক সুন্দর ভাবে আপনি সাজালেন ঘর। সেই সাথে দিনটি আপনি সবার সাথে ভালোভাবে উপভোগ করলেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ আপু খুব সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।