//সুখের প্রতিক//

IMG20210630183901.jpg

সুখের দেয়াল কখনোই টাইলস করা হয় না। সুখি আমি দেখেছি টিনের ৪ দেয়ালের মাঝে যেখানে সুখ পাখি বসবাস করে নিরালায়। সারা বছর পাখির আওয়াজ শোনা যায় গাছের ডালে, নিরাপত্তাহীন আকাশের বুকে। কিন্তু বর্ষাকালে তাদের অনেকি হারিয়ে যায় নিরাপত্তার কোন সুখের স্থানে। তারা ২ টুকরা খাবারের জন্য ওড়াল দেয় ফাকা মাঠের ঘাসের বুকে, কখনো কখনো গাছের ভাঙ্গা মগডালে তবুও তারা সুখের জন্য ছোটাছুটি করেনা এখানে সেখানে। তাদের জীবন লক্ষ্য করেই জনজীবনে সুখের আহাজারি মিলে।

মাঝে মাঝে গভির রাতেও মানুষের আর্তনাদ ও ভাঙ্গা কন্ঠের আওয়াজে মেলে দুখের পেচা পাখির। তাদের মাঝে চার দেওয়ালের জ্ঞানের দীনতার কারনে। সুখি মানুষের গল্পেও সুখের সন্ধান মেলে ভাঙ্গা সেই ছোট্ট কুড়ে ঘরে। ঢাকার মসলিন কাপড়ের যুগেও মানুষ দিন কাটিয়েছে অঢেল আনন্দে। তখন সুখ মাপা হতো সূর্যের অস্ত যাওয়া আর চন্দ্রের ঝলসানিতে। ডালভাত শেষে তারা বসে যেতো পানের বাটিটা নিয়ে সুখের গল্প ছুটাতে।

যৌথ পরিবারের বিবর্তনের কারনে এখন ছোট হয়ে গেছে পরিবারের সুখ আর একসাথে বসের পানের আনন্দ। তখনো মানুষ মানুষের সাথে ঐক্যের যোটে ভাগাভাগি করে বসবাস করে গেছে। এখন মানুষ আনন্দ পায় মনুষ্যত্ব হারিয়ে একজন আরেকজনকে ঠকিয়ে পয়সা উপার্জনে।

ঐতিহাসিক তথ্যমতে একসময় দরিদ্র মানুষ আনন্দ পেতো এক সাথে ধানের চারা বুনে ও ধান কাটায় মারায় করে প্লল্লি, জারি,সারি, ভাটিয়ালি ও গম্ভিরা গান গেয়ে। সেই দিনগুলোর সন্ধান মেলে না আর গ্রামের দরিদ্রের মাঝে।

দাদার মুখে শুনে ছিলাম সে সময়ের গ্রাম্য বিচার সালিশের গল্প, ভালোই লাগতো সেই মজার মজার গল্প শুনতে। কিন্তু এখন সালিশের জন্য মানুষকে দৌড়াইতে হয় কোট-আদালতে। আমি একটি সালিশের ঘটনা শুনাবো আপনাদের ঃ

আগের আমলে চুরির ভয়ে গ্রামে রাতে ডিউটি দেওয়া হতো। তখন কাকরা দাদা, কাবেচ চাচা, লাটু দাদার ডিউটি পড়লো এক রাতে। তারা অনেক মজার মানুষ ছিলো বটে। তারা সবাই মিলে তমিজ দাদার ঘড়ের দরজার নিচে দিয়ে কলসি দিয়ে পানি ঢেলে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে ডাকতে শুরু করে, এ তমিজ! এ তমিজ! গ্রামে চোর ঢুকেছে তোর গাড়ি নিয়ে গেছে। তমিজ দাদা তারাহুরো করে উঠে বার বার ছল্কানি খায় ঘড়ের মেঝেতে। এখন পরের দিন ছাদেক আলী মাস্টার দাদার কাছে বিচার। তাদের আগে থেকেই প্লান আছে বিচারের মাঝে লাটু তমিজ দাদার হাত ধরে ক্ষমা চাইতে যাবে সেই সময় কাবেচ চাচা হেরকিনের আলো ছোট করে দিবে আর লাটু চাচা দৌড়ে যাবে ধলু দাদার গোয়াল ঘরে তেলে মাখা কালি হাতে নিয়ে তমিজ দাদার মুখ থেকে পা পর্যন্ত দিয়ে পা ধরবে। হেরকিন জ্বালানোর পরে দেখে আর এক ঘটনা ঘটাইছে কিন্তু তাদের মাঝে মারামারি হতো না। গল্পটা আরও দীর্ঘ ছিলো।

আমি এখান থেকে বুঝাইতে চেয়েছি আগের মানুষ কতই না রসিক ছিলো। আমরা দিনের পরিবর্তনের কারনে হারিয়েছি আসল সুখ।

Sort:  
 4 years ago 

অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য ধন্যবাদ।

আপনাকেও অংসখ্য ধন্যবাদ ভাই।

 4 years ago 

সুখ ব্যাপারটা আসলে অনেকটা কাল্পনিক, অনেকটা কাকতালীয়,অনেকটা নিজের উপর নির্ভর করে ।কে কোথায় কিভাবে সুখ খুঁজে পাবে, এটা বলাও ভীষণ মুশকিল। যাইহোক আপনি অনেক বাস্তবিক কথা লিখেছেন ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.25
JST 0.034
BTC 95780.50
ETH 2701.26
SBD 0.68