আমার গ্র্যাজুয়েট হবার গল্প। ১০% লাজুক শেয়ালের জন্য

আসসালামুআলাইকুম/আদাপ,

কেমন আছেন আপনারা।আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজকে আমি আমার নিজের গল্প বলবো। আমার গ্র্যাজুয়েট হবার গল্প

diploma-1390785_1280.png
pixabay
ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিলো একজন ব্যবসায়ী হওয়ার। পড়াশোনায় কোন ইচ্ছা ছিলো না। পঞ্চম শ্রেণি পড়া অবস্থায় ব্যবসা আমার হাতে খড়ি। ব্যবসার পাশাপাশি যেটুকু সময় পেতাম সেটিও পড়তে ইচ্ছে হতো না। মনের বিরুদ্ধে এক প্রকার যুদ্ধ করে মাঝে মাঝে স্কুলে যেতাম। এভাবে প্রাথমিকের গন্ডি পার হয়ে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়ে যাই। অনেক চেষ্টা করেও কোনোভাবেই পড়াশোনায় মন স্থির করতে পারিনি। তবে বন্ধু বান্ধবদের সাথে মেলামেশা শুরু হওয়াতে টুক টাক পড়া শুরু করলাম। তবে ব্যবসাকেই বেশি প্রাধান্য দিতাম। এসএসসি পরীক্ষা দিলাম বিজ্ঞান বিভাগ থেকে 4.38 নিয়ে কোনোমতে পাস করলাম।

ceremony-1866532__480.jpg
pixabay
ভর্তি হলাম আমার দোকানের পাশের কলেজে। মাঝে মাঝে কলেজে যাই, টুকটাক আড্ডা দেই, কলেজে খেলাধুলা করি। এভাবে কলেজের দিনগুলো চলতে লাগলো। দেখতে দেখতে এইসএসসি পরীক্ষা এসে গেলো। পরীক্ষা দিলাম 4.58 নিয়ে পাশ করলাম। ভাবলাম গাইবান্ধা সরকারি কলেজে ভর্তি হবো।এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করতে পারিনি। আমি আমার কাছে কোন কিছু আশা না করলেও পরিবার, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধবরা অনেক আশা করতো। এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এসে গেলো। আমার অনেক ইচ্ছে ছিল ঢাকা শহর দেখবো। কিন্তু কোনোভাবেই সুযোগ হয়ে আসছিল না। মন স্থির করলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার সুবাদে ঢাকা যেতে পারবো। যেই ভাবা সেই কাজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম সংগ্রহ করে পূরণ করে দুদিন পর পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আমার স্বপ্নের শহর ঢাকায় আসলাম।

istockphoto-1127115457-612x612.jpg
pixabay
দীর্ঘ 7 ঘণ্টা পর পৌছে গেলাম ঢাকায়। আমার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হলো। পুরো ঢাকা শহর ঘুরলাম মনের আনন্দে। ঢাকা থেকে ফেরার দুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ছিলো। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিয়ে বাসার পথে রওনা দিলাম। তিনদিন পর রেজাল্ট পেলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি। এ যেনো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। নিজেকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। অবশেষে জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম 2016 সালে। এ এক নতুন পরিবেশ, সম্পূর্ণ আলাদা, নতুন মানুষ। জীবনে কখনো বাড়ির বাহিরে বেশিদিন থাকা হয়নি। নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকলাম। অনেক চেষ্টা করেও মানিয়ে উঠতে পারিনি। রেজাল্ট খারাপ হতেই থাকলো। অবশেষে হাল ছেড়ে দিলাম। রেজাল্টের সময় আমার অবস্থান থাকতো শেষের সারির 10 জনের মধ্যে। এভাবে চলতে চলতে যখন আমার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলো তখন আমার বোধোদয় হলো। পরিবারের কথা চিন্তা করে, নিজের কথা চিন্তা করে নতুন উদ্যমে পথ চলা শুরু করলাম। কঠোর পরিশ্রম শুরু করলাম। আলহামদুলিল্লাহ, গত পরশু রেজাল্ট দিয়েছে 120 জনের মধ্যে নবম হয়েছি।আলহামদুলিল্লাহ প্রথম বিভাগে অনার্স পাশ করলাম।

certificate-2760736_1280.png
pixabay
আমি মনে করি এবং বিশ্বাস করি পরিশ্রমীরা কখনো হারে না। আত্মবিশ্বাস এবং একাগ্রতা নিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করলে কেউ ব্যর্থ হয় না। শুভকামনা সবার জন্য।

বিষয়গ্র্যাজুয়েট হবার গল্প
ছবি@pixabay
বর্ণনা@rahman44

IMG_20211219_150308.jpg

আমি@rahaman বাংলাদেশ থেকে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি। মানবিকতার এক চিরায়ত দৃষ্টান্ত @amarbanglablog কমিউনিটি। দুটি দেশ কিন্তু একই সূত্রে আবদ্ধ আমরা। ভালোবাসা চিরদিন বেচে থাকবে মানুষ হিসেবে আমাদের মাঝে।

ধন্যবাদ সবাইকে

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.24
JST 0.034
BTC 96484.42
ETH 2765.60
SBD 0.65