অপেক্ষা।
কেমন আছেন "আমার বাংলা ব্লগ"এর সকল সদস্যরা? আশা করি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে সবাই খুব ভালো আছেন। আমিও খুব ভালো আছি। আজ আমি একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। আশাকরি আমার পোস্টটি পড়ে আপনাদের খুব ভালো লাগবে।
অপেক্ষা শব্দটি ছোট হলেও এর পরিধি অনেকটা বেশি। মানুষ কখনোই অপেক্ষা করতে ভালোবাসে না কিন্তু তার সারা জীবন কেটে যায় কোন না কোন জিনিসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে। আর অপেক্ষা করা আমাদের জীবনের কঠিন থেকেও কঠিনতম সময়। আমরা নিজেরাও জানিনা যে আমাদের এই অপেক্ষার ফলাফল আমরা ভালো পাবো না খারাপ পাবো তবুও আমরা অপেক্ষা করেই চলেছি প্রতিনিয়ত। কারণ আমাদের কাছে কিছু কিছু সময় অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। যেমন বাড়িতে বয়স্ক মানুষ বা হতে পারে কোন অল্প বয়স্ক মানুষ যে কেউ অসুস্থ হলে আমরা ডাক্তার দেখাই এবং সুস্থ করার চেষ্টা করি কিন্তু সেটাও অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে পড়ে কোন কোন ক্ষেত্রে। ডাক্তার হয়তো অনেক সময় বলেন যে আপনারা ভালো করে দেখাশোনা করুন আর একটু ভালো করে ওনার খেয়াল রাখুন তাহলে উনি আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে উঠতে পারেন। কিন্তু তারা কখনোই আমাদের গ্যারান্টি দিয়ে বলেন না যে তারা সুস্থ হয়ে উঠবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের ভগবানকে প্রার্থনা করা আর অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না।
আর এই ক্ষেত্রে এই অপেক্ষার ফলাফল ভালো হবে না খারাপ হবে আমরাও সেটা নিশ্চিত রূপে বলতে পারব না। অনেক ক্ষেত্রে আবার দেখা যায় একটি ছেলে মেয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে। হঠাৎ করে ছেলেটি অথবা মেয়েটি আর সেই সম্পর্কে থাকতে না চাওয়ায় অপরজনকে ছেড়ে চলে যায় এবং সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসে। তাকে শতবার মানানোর পরও সে এই সম্পর্কে আর ফিরে না আসায় অপরজনের শুধুমাত্র অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। সেই ছেলেটি বা মেয়েটি শুধুমাত্র এটা ভেবেই দিনের পর দিন অপেক্ষা করে কাটিয়ে দেয় যে তার ভালোবাসার মানুষ একদিন না একদিন অবশ্যই তার কাছে ফিরে আসবে। এই অপেক্ষার দিনগুলো স্বাভাবিকভাবেই অনেক কষ্টকর হয়ে থাকে কিন্তু সে হয়তো নিজেও জানেনা যে তার ভালোবাসার মানুষ তার কাছে ফিরে আসবে কিনা। এই কষ্টকর অপেক্ষার দিনগুলো হয় বৃদ্ধাশ্রমে থাকা কিছু বৃদ্ধ বাবা মায়ের মত। যাদের সন্তান তাদের বোঝা মনে করে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে, আর হয়তোবা কখনোই সেই বৃদ্ধাশ্রমে থাকা তাদের মা-বাবা কেমন আছেন খোঁজ করতে যায় না।
কিন্তু বৃদ্ধাশ্রমে সেই বাবা মা প্রতিনিয়ত অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকে যে একদিন না একদিন তার সন্তান তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে তাদের বাড়িতে। এবং তারা আবার একসাথে সুখে শান্তিতে সংসার করবে। কিন্তু সেই বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বৃদ্ধ মা বাবার অপেক্ষার অবসান ঘটে যখন তারা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অনেক মা বাবাই আছেন যারা সারা জীবন অনেক কষ্ট করে ছেলে মেয়েকে পড়াশোনা করান। এবং অনেকে তাদের সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়ে দেন যেন তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অনেক বড় কিছু করতে পারে। কিন্তু তারা কখনই চান না যে তাদের সন্তানের কাছ থেকে তারা দূরে থাকবেন। প্রতিনিয়ত তারা অপেক্ষায় থাকেন যে তার সন্তানেরা পড়াশোনা করে আবার দেশে ফিরে আসবেন তাদের কাছে। এবং তাদের সাথে থেকেই সুখে শান্তিতে সংসার করবে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই অপেক্ষা খুব কষ্টকর এবং দীর্ঘমেয়াদী হয়ে পড়ে। কারণ সন্তানেরা বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করে ভালো একটা চাকরি পেয়ে সেখানেই থেকে যায় এবং পরবর্তীতে বিয়ে করে সেখানেই সংসার করা শুরু করে দেয়।
তখন সন্তানদের শুধুমাত্র একবার চোখে দেখার জন্যই বাবা-মার দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয়। যেসব বিবাহিত বউরা আছে কোন চাকরি করেন না তারা সারাদিন বাড়িতে কাজকর্ম করে দিনশেষে অপেক্ষায় থাকে যে তার স্বামী কখন বাড়িতে আসবেন। এবং তার সাথে একটু সময় কাটাবে এবং মনের কথা বলবে। আসলে আমরা প্রতিনিয়ত কোন না কোন কিছুর জন্য অপেক্ষা করেই চলেছি।আমরা প্রতিনিয়তই ভাবতে থাকি যে একদিন না একদিন আমাদের ভালো সময় আসবে এবং সেই সময়ের অপেক্ষায় আমাদের বর্তমান সময়টাকেও অবহেলায় নষ্ট করে ফেলি। আসলে অপেক্ষা করা খারাপ না অনেক সময় অপেক্ষা করলে ভালো কিছু আমরা পেতে পারি বা অনেক ক্ষেত্রে অপেক্ষা করলে আমরা ভালো কিছু ফলাফল পাই। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে যে আমরা কোন জিনিসের জন্য অপেক্ষা করব আর কোন ক্ষেত্রে আমাদের অপেক্ষা করাটা বিফলে যাবে। আমাদের কখনোই ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা করা উচিত নয় কারণ সময় সবসময় ভালই থাকে শুধু কর্ম ভালো করে যেতে হবে তাহলেই ফল ভালো পাওয়া যাবে।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার খুব ভালো লেগেছে। আর ভালো লাগলে কমেন্ট করে অবশ্যই আমাকে জানাতে ভুলবেন না।
জীবনের সবকিছুই আসলে অপেক্ষা। অপেক্ষা ছাড়া পাওয়ার আর কোনো শর্টকাট উপায় নেই। কিন্তু আমরা সেই অপেক্ষায় এখন আর করতে চাই না। মানুষ সবকিছু এখন খুব সহজে হাসিল করতে চায়। আর সহজে চাই বলেই তাতে এত ব্যর্থতা। কথাতেই বলে অপেক্ষার ফল মধুর হয়।