ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়

আশাকরি " আমার বাংলা ব্লগ " পরিবারের সবাই ভালো আছেন। আশাকরি মহান সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আপনারা সবাই সুস্থ আছেন। মহান সৃষ্টিকর্তা এবং আপনাদের আশীর্বাদে আমিও সুস্থ আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় সম্পর্কে একটি জেনারেল রাইটিং পোস্ট করলাম।


আশা করি সকলে ভালো আছেন । আল্লাহর রহমতে আমিও ভালো আছি। বর্তমান যুগে যেভাবে মানুষের ইচ্ছে ও আশা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে ততটাই স্পিডে তাদের মধ্যে চিন্তা এবং দুঃখ বেড়েই চলেছে । আজ আমাদের দেশে প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন ব্যক্তি ডিপ্রেশনের রোগী রয়েছে । আর ভয়ানক কথা কি জানেন? বহু লোক এটা মেনে নিতে চায় না যে তারা ডিপ্রেশনের স্বীকার হয়েছেন । কারণ লোকেদের মধ্যে ডিপ্রেশন কে নিয়ে একটি বড় কনফিউশন রয়েছে । প্রশ্ন হল ডিপ্রেশন কি একটি জটিল অসুখ? ডিপ্রেশন কি আমাদের শরীর ও মনকে ক্ষতি করে? ডিপ্রেশন নামে কি আদৌ কোন রোগ রয়েছে নাকি এগুলো সবই মিথ্যে? আর এই সবগুলোর উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তাহলে ডিপ্রেশনের শিকার হওয়ার পর আমাদের ব্রেইনের কী ক্ষতি হয়? আজ এই সকল প্রশ্নের উত্তর আমরা ব্যাখ্যা করব ।

1000075385.jpg

সোর্স

ডিপ্রেশন হলো একটা মানসিক সমস্যা, তাই এটি আমাদের বুঝতে অনেক অসুবিধা হয় । আপনার শরীরে যখন কোথাও আঘাত লাগে তখন সেটাকে চিহ্নিত করে রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ । কিন্তু যদি আপনার ব্রেইনে কোথাও চোট লাগে, ব্রেইনে চোট পাওয়া বলতে দুঃখী হয়ে যাওয়া, মন খারাপ হাওয়া, কোন কিছু ভালো না লাগা, চিন্তা হওয়া, অনিদ্রা অনুভব করা এই সকল মানসিক সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করে রক্ষণাবেক্ষণ করা খুবই কঠিন কাজ । দুঃখ এবং ডিপ্রেশন দুটি আলাদা জিনিস । উদাহরণের জন্য আজ হয়তো আপনার পরীক্ষা ভালো হয়নি বা আপনি শিক্ষকের বকা খেয়েছেন অথবা আপনার চাকরি চলে গেছে অথবা এমন একটা বিরক্তিকর দিন, যে দিনটা পার হতে চাচ্ছেনা । এ সকল ঘটনা গুলোতে আপনি যা অনুভব করেন সেটাকে দুঃখ বলা হয় । কিন্তু এই একই দুঃখের অনুভূতি যদি কারো সাথে বারবার হতে থাকে তখন সে ব্যক্তির ব্রেইন থেকে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল খুব বেশি মাত্রায় রিলিজ হতে শুরু করে আর মোটিভেশন তৈরি করতে সাহায্য করা ডোপামিন হরমোন খুব কম মাত্রায় রিলিজ হতে শুরু করে, ব্যক্তির মধ্যে খুশির অনুভব তৈরি করতে সাহায্য করা সেরোটোনিন হরমোন খুব কম মাত্রা রিলিজ হতে শুরু করে । আর এই সবগুলো মিলিয়ে সে ব্যক্তির নিউরোকেমিক্যাল ভারসাম্যহীনতা হওয়া শুরু হয় ।


এই কারণসমূহের জন্য ব্যক্তির স্ট্রেস বেড়ে যায় এবং খুশি ও আনন্দের অনুভূতি কমে যায় আর এটাই হলো ডিপ্রেশনের শুরু । ডিপ্রেশনের কিছু লক্ষণ সমূহের বিষয়ে যদি বলি, তো মনে করুন কোন একটা জিনিস যেটা করতে খুব ভালো লাগতো বা কোন একটি খাবার যেটা খেতে অনেক ভালো লাগতো কিন্তু এখন আর আপনার কাছে ভালো লাগেনা, ছোট ছোট কথায় আপনি খুব রেগে যান, সব সময় আপনি ক্লান্ত অনুভব করেন, সব ব্যাপারে আপনি নিজেকে দোষী মনে করেন আর এই জন্যেই নিজেকে বেকার মনে করেন বা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ঘুমান বা কম ঘুমান, ব্রেইনে সব সময় নেতিবাচক চিন্তা আসতে থাকে । উপরে বলা লক্ষণ গুলোর মধ্য থেকে যেকোনো পাঁচটি লক্ষণ যদি আপনার মধ্যে থাকে তাহলে মানসিক নির্দেশিকার হিসেবে আপনি একজন ডিপ্রেশনের স্বীকার ব্যক্তি । ডিপ্রেশনের সময় ব্রেইনের সেরোটোনিন হরমোন কমে যায়।


এ সকল বিষয়ে ডাক্তার লোকেদের কিছু মেডিসিন ব্যবহার করতে নির্দেশ দেয় যাতে করে সেরোটোনিন হরমোন বেড়ে যায় এবং ব্যক্তি যেন ভালো অনুভব করে । তবে এটা পার্মানেন্ট সলিউশন নয় কারণ আমাদের ব্রেইনের কিছু নির্দিষ্ট অংশ যেগুলো পরিকল্পনা, স্মৃতি, বিচার এবং আমাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে সেগুলো স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট হয়ে যায় যার কারনে এর কার্যকরিতা দুর্বল হয়ে যায় আর এই কারণে বেশ কিছু মানসিক সমস্যার তৈরি হয় । বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় পাওয়া গেছে যখন লোকেরা নিজের মনের দুঃখকে মনে চেপে না রেখে বরং সেটিকে লোকেদের সাথে শেয়ার করে এবং নিজের জীবনে যখন শৃঙ্খলা আনে যেমন ডায়েট, সঠিক সময় ঘুমানো, সঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা, ব্যায়াম করা, খেলাধুলা ইত্যাদি করলে ব্যক্তির ব্রেইনে প্রাকৃতিকভাবে সেরোটোনিন হরমোন তৈরি হতে শুরু করে । তখন ব্যক্তির ব্রেইনে নতুন নতুন নিউরন তৈরি হতে শুরু করে এবং এদের সংযোগ শক্তিশালী হতে শুরু করে । যার ফলে ব্যক্তির ব্রেইন আবার সক্রিয় এবং তরতাজা হয়ে যায় । এর ফলে ব্যক্তি অনেকটা ভালো এবং স্ট্রেস ফ্রি অনুভব করতে পারে ।


ডিপ্রেশনের জন্য মেডিকেল ট্রিটমেন্ট খুবই জরুরী । আর যারা মনে করেন তাদের মেডিকেল ট্রিটমেন্টের দরকার নেই তারাই মাদকের দিকে এবং অতিরিক্ত খাবারের দিকে ধাবিত হয় কারণ এগুলো করার সময় মস্তিষ্ক কিছুটা সময়ের জন্য রিলেক্স এবং সুখী ফিল করে । আর একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর এগুলো নেশায় পরিণত হয়ে যায় । এবার প্রশ্ন আসে আপনি যদি ডিপ্রেশনে থাকেন তাহলে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাবেন কীভাবে? ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে আপনাকে আপনার জীবনে ভারসাম্য আনতে হবে । আপনাকে আপনার ডায়েটের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, জীবনে শৃঙ্খলা আনতে হবে । উদাহরণের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম, শারীরিক ব্যায়াম, মানসিক ব্যায়াম বা মানসিক গেইম, খেলাধুলা এবং সব থেকে জরুরি জীবন থেকে প্রতিদিন কিছু সময় বের করে সুখী থাকা । ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে । আজ এই পর্যন্তই, দেখা হবে নতুন কোনো পোস্টে ।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 3 months ago 

বেশ সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন ডিপ্রেশানের পুরা বিষয়টা। এটা বেশ মারাত্মক একটা রোগ যেটা সুইসাইড পর্যন্ত ঘটাতে পারে। এটার চিকিৎসা করা জরুরী।

ভাল থাকুন।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.24
JST 0.034
BTC 96459.90
ETH 2752.56
SBD 0.67