আমাদের অঞ্চলের যেভাবে দেশি চিংড়ি মাছ ধরা হয়
আজ - মঙ্গলবার
হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাই-বোন বন্ধুদের কে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট।
আপনারা অনেকেই জানেন নিত্য নতুন ভিন্ন ধরনের পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়ে থাকি আমি সুমন। ঠিক তেমনি আজকে আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে উপস্থিত হয়ে গেলাম। যে অভিজ্ঞতা হয়তো অনেকের মধ্যে নেই। নতুন কোন অভিজ্ঞতা নিয়ে শেয়ার করবো বলে সৃষ্টি করতে যাচ্ছি আজকের এই ব্লগ। তাই আশা করি আপনারা খুব মনোযোগ সহকারে আমার এই পোস্ট পড়বেন এবং নতুন ধারণা অর্জন করবেন। হয়তো উপরের টাইটেল এবং ভেতরের প্রাথমিক পর্যায়ের কথা দেখেই বুঝে ফেলেছেন আমি কি বিষয়ে পোস্ট করতে চলেছি। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য চিংড়ি মাছ সংরক্ষণ নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি, তাই আশা করি খুব মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করবেন। কথা না বাড়িয়ে চলুন এক নজরে পড়ে এবং দেখে আসি, দেশী চিংড়ি মাছ পুকুর থেকে সংরক্ষণ করার গ্রাম্য পদ্ধতি।
'আমার বাংলা ব্লগ' কোয়ালিটি সম্পন্ন পোস্ট |
---|
চিংড়ি মাছ
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য দেশি চিংড়ি মাছ সংরক্ষণ। খুব ছোট থেকে লক্ষ্য করে আসছি অনেক মানুষ এভাবেই চিংড়ি মাছ সংরক্ষণ করে বাজারে বিক্রয় করে নিজেদের জীবিকা সরবরাহ করে থাকে। বৃত্তি দিয়ে বিভিন্ন পুকুরে চিংড়ি মাছ সংরক্ষণ করে থাকে এনারা তবে চিংড়ি মাছ সংরক্ষণকারী মানুষের সংখ্যা খুবই কম। গ্রামে এক দুই থেকে তিনজন এর বেশি চিংড়ি মাছ সংরক্ষণকারী নেই। আপনারা ফটোগ্রাফিতে জিনাকে দেখতে পাচ্ছেন দীর্ঘদিন থেকে উনি এবং উনার ছেলে চিংড়ি মাছ সংরক্ষণ করেন এবং বাজারে বিক্রয় করেন। ঠিক তেমনি আপনাদের মত কিছু মানুষ চিংড়ি মাছের রেসিপি তৈরি করে উনাদের হাতের চিংড়ি মাছ থেকেই।
বৃত্তিগুলো একটি বাঁশের সাহায্যে ঝুলিয়ে কাঁধে করে মাঠের দিকে চলে যায়। আমরা ছোটকালে যেভাবে দেখেছি কাঁধে করে অনেক কুমার মানুষ হাড়ি পাতিল বেঁচে বেড়াতো অথবা অনেক মানুষ হাড়িতে করে মাছের পোনা বিক্রয় করে বেড়াতে গ্রামের গ্রামে, ঠিক তাদের মত করেই কাঁধে করে অসংখ্য বৃত্তি নিয়ে মাঠের দিকে চলে যায় এরা। আর এনারা প্রতিদিন বিকাল টাইমের শুরুতেই মাঠে নেমে পড়ে চিংড়ি মাছ ধরার জন্য, পুকুরে বৃত্তি পাতবার উদ্দেশ্য।
বৃত্তি গুলো তারা নির্দিষ্ট কোন পুকুরের ভেড়ির উপরে রেখে দেয়। এবং প্রাথমিক পর্যায়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করে উপরে একটি একটি করে বৃত্তি দেওয়ার জন্য এবং দিক নির্দিষ্ট করে রাখে কোথায় কোন পুকুরে কয়টা রাখা হচ্ছে। তাই তারা পরিকল্পনা করে নেয় অসংখ্য বৃত্তি থেকে থাকে যার জন্য স্মরণ রাখারটাও বেশ কঠিন। আর আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন আমাদের এলাকায় অসংখ্য পুকুর রয়েছে।
তারা বৃত্তি হাতে পুকুরে নেমে যায় এবং এক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে। দাঁড়িয়ে থাকার প্রধান কারণ হচ্ছে যে তারা নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে পরীক্ষা করে, যদি পুকুরে অসংখ্য চিংড়ি থেকে থাকে তাহলে পায়ে এসে ঠুকাতে থাকবে। তখনই বুঝে নেওয়া যাবে যে এ পুকুরে বৃত্তি পাতলে চিংড়ি মাছ পাওয়া যাবে।
এরা খুব সহজ যতনে বৃত্তি পেতে থাকে পুকুরের মধ্যে। কিছুটা ভাসিয়ে রেখে যায় যেন সহজেই খুঁজে পাই। আবার অনেক স্থানে চিহ্নিত করে রেখে যায় বৃত্তি গুলো পানির নিচে ডুবিয়ে রেখে কারণ হারিয়ে যাওয়ার ভয়ও থেকে থাকে। অনেক বেয়াদব শ্রেণীর মানুষ আছে চুরি করে নিয়ে যেয়ে থাকে, তাই তাদের সবদিকেই সতর্ক থাকতে হয়। কিছু মানুষ আছে বৃত্তি চুরি করে নিয়ে যায় না মাছগুলো নিয়ে যায়। আবার অনেক মানুষ আছে বৃত্তি ও মাছ সবই চুরি করে নিয়ে চলে যায়। হয়তো আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এরা লোকের পুকুরে পুকুরে বৃত্তি পেতে বেড়ায়, তাহলে পুকুর মালিকরা কিছু কি বলে না? নাকি পুকুর মালিকদের কিছু দিতে হয়? আসলে আমাদের এদিকে প্রতিটা পুকুরেই পাঙ্গাস মাছ চাষ করা হয়ে থাকে। যেই পুকুরে চিংড়ি মাছ বেশি সেখানে পাঙ্গাস মাছ চাষ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে চিংড়ি মাছের আক্রমণের ফলে। দেশি চিংড়ি মাছ দমনের জন্য একপ্রকার ঔষধ ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তবে সেই ঔষধ ব্যবহার করলে পাঙ্গাশ মাছের বৃদ্ধির ব্যাহত হয়ে যায়। যার ফলে এই সমস্ত মানুষেরা চিংড়ি মাছ এভাবে সংরক্ষণ করলে মাছ চাষীদের জন্য খুবই উপকার হয়ে থাকে। তাই স্বেচ্ছায় প্রত্যেক পুকুর মালিক তাদের মাছ ধরার অনুমতি দিয়ে থাকেন। ফলে তাদের প্রত্যেকদিনের জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে। আর্থিক দিক থেকে তারা লাভবান হয়। আর আমি মনে করি, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য টিকে থাকে এভাবেই।
প্রতিটা দিন সকাল ভোর টাইমে তারা পুকুর থেকে বৃত্তিগুলো উঠিয়ে ফেলে। প্রতিটা বৃত্তি থেকে মাছগুলো সংরক্ষণ করে নির্দিষ্ট একটি পাত্রের মধ্যে রেখে জমা করেন। আবার অনেক সময় সময়-স্বল্পতার ফলে বৃত্তির মধ্যে মাছগুলো সেভাবেই রেখে দেন। প্রতিটা পুকুর থেকে বৃত্তি গুলো গুছিয়ে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় রাখেন এবং সব বৃত্তি গুছানো হয়ে গেলে পুনরায় সেভাবে কাঁধে উঠিয়ে বাড়ির দিকে হাটা দেন।
সকাল ভোরে ভোরে বৃত্তি গুলো গুছিয়ে বাড়ির দিকে তারা রহনা হয়। এখানে দুইটা বিষয় তাদের মাথায় বেশি রাখতে হয়, প্রথমত মাছগুলো যেন মারা না যায়, দ্বিতীয়ত বিষয় হচ্ছে দ্রুত বাজার ধরতে হবে। অনেক সময় রয়েছে কষ্ট করে মাছ সংরক্ষণ করে বাজারে গেলে সঠিক দাম পাওয়া যায় না, মরে যাবার ফলে অথবা বাজারের টাইম পার হয়ে গেলে অনেক মাছ বাজারে জুটে যায়। আর এভাবেই তাদের দৈনন্দিন জীবনের চিংড়ি মাছ সংরক্ষণ করা এবং জীবিকা নির্বাহ করা হয়ে থাকে। Photography device: Infinix hot 11s
|
---|
আমার পরিচিতি | কিছু বিশেষ তথ্য |
---|---|
আমার নাম | @sumon09🇧🇩🇧🇩 |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | মোবাইল |
ব্লগিং মোবাইল | Infinix hot 11s |
ক্যামেরা | camera-50mp |
আমার বাসা | মেহেরপুর |
আমার বয়স | ২৫ বছর |
আমার ইচ্ছে | লাইফটাইম স্টিমিট এর 'আমার বাংলা ব্লগ' এ ব্লগিং করা |
পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোষ্টে,ততক্ষণ ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ। |
---|
আমাদের এলাকাতেও এই ভাবে মাছ ধরা হয়। এই জিনিস গুলোকে আমাদের এলাকায় ঘুনি বলে। বর্ষাকালে এইগুলো দিয়ে মাছ ধরা হয় বৃষ্টির সময়। বিশেষ করে ছোট মাছ ধরার ক্ষেত্রে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়।ভাই আপনার ফটোগ্রাফি দেখে খুব ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ নতুন নাম জানতে পেরে খুব ভালো লাগলো।
বর্ষাকাল আসলেই আমাদের এলাকায় এভাবে ছোট ছোট মাছ ধরা হয়। মাছ ধরার এইসব জিনিকে আমাদের এলাকায় দিয়াল বলে থাকে।আপনাদের অঞ্চলে কিভাবে দেশী চিংড়ি ধরা হয় তা আজকে আপনার পোষ্টের মাধ্যমে খুবই সুন্দর ভাবে দেখতে পেলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাই এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।
আমাদের এলাকায় অবশ্য বর্ষাকালে নয় সব সময় ই চিংড়ি মাছ ধরা চলে। শুধু শীতে একটু কম।
আমাদের গ্রাম এলাকায়ও আগে এইভাবে মাছ ধরা হতো। কিন্তু এখন এগুলো খুব একটা দেখা যায় না। এ প্রক্রিয়ায় মাছ ধরা বেশ ভালোই লাগে। আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া এই পোস্ট টি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল।
আশা করি পুনরায় দেখতে পেলে আনন্দিত হয়েছেন।
আমাদের এদিকে এগুলোকে আনতা বলে। বর্ষার সময়ে কিংবা যেকোনো সময়ে একটি বেশি বৃষ্টি হলে মাঠে আলতা পেতে চিংড়ি মাছ সহ বিভিন্ন ছোট ছোট মাছ আটকানো হয়। ছোটকালে এভাবেই অনেক মাছ ধরেছি বর্তমানে আমাদের এদিকে আনতা দিয়ে মাছ ধরার প্রবণতা অনেক কমে গেছে। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর ফটোগ্রাফ ও বর্ণনা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
বিভিন্ন জায়গায় এর নাম বিভিন্ন তবে কাজ এক।
একটা জিনিস বেশ মজা পেয়েছি,বৃত্তি পাতার জন্য এরা ১ মিনিট দাড়িয়ে থাকে,মাছের উপস্থিতি টের পায়।চোরের কথা কি আর বলবো।যাই হোক ভালো ছিলো।আপনার পোস্ট পড়ে ভালোই লাগলো।ধন্যবাদ
হ্যাঁ পরীক্ষা করার জন্য, মাছ আছে কিনা তাই দাড়িয়ে থাকে।
আপনাদের এলাকায় যেগুলোকে বৃত্তি বলে আমাদের এলাকায় এটাকে বলে দোয়ারি। আর এগুলো দিয়ে নদী খাল বিল থেকে চিংড়ি মাছ ধরা হয়। যাই হোক আপনার পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের এলাকার চিংড়ি মাছ ধরার কৌশল সম্পর্কে জানতে পারলাম। ধন্যবাদ এমন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আপনাকে জানাতে পেরে আমারও ভালো লাগলো।
আগে আমরাও এভাবে চিংড়ি মাছ ধরতাম। আপনি আবার পুরনো কথা মনে করিয়ে দিলেন। আপনার পোস্ট দেখে আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগলো। খুব সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থাপনা করে তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সাথে এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
আপনার মন্তব্য পেয়ে বেশ ভালো লাগলো আমার। অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমাদের এইখানে ও আগে এভাবে ছোট মাছ এবং চিংড়ি মাছ ধরে থাকে। বিশেষ করে পুকুরে এবং খালে রাত্রে এগুলো বসালে অনেক চিংড়ি মাছ পাওয়া যেতো। আপনি সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি করেছেন দেখতে অসাধারণ লাগলো। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
এত সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।