কনকনে শীতের সকালে খেঁজুরের রস খেতে ছুটে চলা।
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি বাসী, কি অবস্থা সবার? আজ আমি আমার একটি সুন্দরতম সকালের গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। ভালো লাগবে আশা করি। তাহলে চলুন শুরু করি।
গত পরশুদিন সন্ধার সময় আমার এক ফ্রেন্ডের বাসায় গেলাম। ওর বাসা আমার বাসা থেকে দুই মিনিটের হাঁটা পথ। ওর ওখানে গিয়ে দুজনেই ওদের বাড়ির পাশের একটা মাঠের মধ্যে চলে গেলাম। মাঠের মধ্যে ছোট্ট একটা বাগান আছে। ঐ বাগানে অনেক লিচু গাছ আছে। প্রচুর সবজি ও চাষ করা হয় ওইখানে। আমরা একটি ফাঁকা জায়গায় গিয়ে বসেছিলাম। আরো তিনজন আসলো কিছুক্ষণ পরেই। আমি শুধুমাত্র একটা শার্ট পড়ে মাঠের মধ্যে গিয়েছিলাম, এজন্য প্রচন্ড শীত লাগছিল। এজন্য আমরা ওইখানে কিছু ডালপালা জোগাড় করে আগুন ধরিয়েছিল। আগুন পোহাতে পোহাতে আমরা একটা জিনিস চিন্তা করলাম। আমাদের এলাকাতেই খেঁজুরের রস পাওয়া যায়, কিন্তু আমাদের জেলা শহরের আরো একটু দূরে একটি জায়গা আছে ওই জায়গায় প্রচুর খেজুর গাছ আছে। আর ওইখানের খেজুরের রস আমাদের পুরো জেলাতেই বিখ্যাত। এমনকি মানুষ দূর দুরন্ত থেকেও চলে আসে শুধুমাত্র খেজুরের রস খাওয়ার জন্য।
আমরা তখনই ডিসিশন নিয়ে নিলাম আমরা আগামীকাল সকালে রস খেতে যাব ওইখানে। অনেক ভোরে যেতে হবে কারণ শীতের কনকনে সকাল ছাড়া রস খাওয়ার মধ্যে তেমন একটা ফিলিংস নেই। তাছাড়া রস নাও পাওয়া যেতে পারে। আমরা ডিসিশন নিলাম সকাল ছয়টার দিকে রওনা দিব। প্লান প্রোগ্রাম ফাইনাল করে সবাই বাড়িতে চলে আসলাম।
পরের দিন সকাল অর্থাৎ গত কালকে আমার ঘুম ভেঙেছিল সকাল সাড়ে পাঁচটায়। সাড়ে পাঁচটার সময় আমি সবাইকে ফোন দিলাম কিন্তু একজনের ফোনেও ফোন ঢুকছিল না। যার কারণে আমার প্রচণ্ড রাগ হয়ে গিয়েছিল তখন। আমি আবার ঘুমিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। চিন্তা করলাম আজ যাবই না। কিন্তু আমার যখন ঘুম ঘুম ভাব ঠিক ওই সময় আমাকে ফোন দিল। এরপর আমি বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এরপর আমি জানতে পেরেছিলাম ওদের ফোনে নেটওয়ার্ক এর সমস্যা ছিল। যার কারণে ফোন ঢোকেনি। আর প্রত্যেক জনের ফোনে একসাথে নেটওয়ার্ক না থাকার কারণ হচ্ছে সবগুলো ওই রাতে এক রুমেই ছিলো। আর ওই রুমের মধ্যে থাকলে ফোনের নেটওয়ার্ক খুব ডিস্টার্ব দেয়। যাইহোক সবাই রেডি হয়ে সকাল সাড়ে ৬ টার পরে একত্রিত হলাম। এরপর রওনা দিলাম। আমরা ফ্রেন্ডরা ছিলাম মোট ৮ জন। বাইক ছিল তিনটি। আমাদের যেতে হবে আনুমানিক ২৭ থেকে ২৮ কিলোমিটার।
গতকাল সকালে কুয়াশা ছিল না তেমন একটা। কুয়াশা থাকলে ড্রাইভ করতে অনেক বেগ পেতে হতো। যাই হোক আমরা ৪৪ মিনিটের মধ্যে ওই জায়গাটিতে পৌঁছে গেলাম। পূর্বে আমি কখনো এখানে আসিনি। কিন্তু আমার সাথে যাঁরা এসেছে তাদের মধ্যে অনেকেই আগেও এখানে এসেছিল। যার কারণে জায়গাটা চিনতে সমস্যা হয়নি।
![]() | ![]() |
---|
আমরা যখন ওইখানে পৌছালাম তখন রস বিক্রেতাদের কাছে রস ফুরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদেরকে কোন টেনশন করতে না করে দিল। আর বলল আপনারা অপেক্ষা করুন রস আরো আনা হবে গাছ থেকে পেড়ে। আমরা বাইকগুলো সাইড করে রেখে একটু হাঁটাহাঁটি করতে লাগলাম। সারি সারি খেঁজুরের গাছ। মাঠের মাঝখান দিয়ে রাস্তা। অনেক সুন্দর একটি প্রাকৃতিক দৃশ্য।
![]() | ![]() |
---|
এখানে আরো একটা কথা বলাই হয়নি। আমাদের কিছু ছোট ভাই আছে ওরা আগেই শহরে এসে রাত কাটিয়েছে। ওদের ও প্ল্যান ছিল আজ সকালে এখানে এসে রস খাবে।আর আমরা চিন্তা করেছিলাম ওদের আগে আমরা গিয়ে ওইখানে উপস্থিত থাকব। আমাদের দেখে ওরা অবাক হয়ে যাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ওখানে গিয়ে ওদের সাথে আর দেখা হয়নি। পরে ফোন দিয়েছিলাম ওরা নাকি ঘুম থেকেই উঠতে পারিনি । হাহাহা বিষয়টি হাস্যকর। যাইহোক এতক্ষণে গাছি, গাছ থেকে রস নামিয়ে নিয়ে চলে এসেছে। আমরা ছিলাম মোট আটজন। প্রথমেই প্রত্যেকেই এক গ্লাস করে খেয়ে নিলাম। শীতের সকালে যখন ঠান্ডা রসে চুমুক দিচ্ছিলাম তখন যেন শরীরের ভিতরটাও শীতল হয়ে আসছিল। এ ফিলিংসটা ও দারুন।
![]() | ![]() |
---|
একে একে আমরা সবাই ২/৩ গ্লাস করে রস খেয়ে নিলাম। আমি সবচেয়ে বেশি খেয়েছিলাম। আমি খেয়েছিলাম ৪ গ্লাস। এ বছরে দ্বিতীয়বার রস খাওয়া হচ্ছে আমার। লোভটা সামলাতে পারিনি। তো খাওয়া শেষ করে হিসেব করে দেখলাম আমরা আটজন মোট ১৯ গ্লাস রস খেয়েছি। এরপর রসের টাকা পরিশোধ করে আমরা বাড়ি ফিরে আসার জন্য গাড়ি স্টার্ট করলাম।
ওইখানে যাওয়ার সময় আমাদের লেগেছিল ৪৪ মিনিট। আর ফিরে যাওয়ার সময় আমাদের একটু বেশি সময় লেগেছিল কারণ কিছু স্থানে দাঁড়িয়েছিলাম। আমরা যখন চলে আসতেছিলাম তখন মোটামুটি ভালই রোদ উঠে গিয়েছিলো। বাড়িতে আসতে আমাদের সময় লেগেছিল ৫০ মিনিট প্লাস । বাড়িতে এসে প্রথমেই সকালের খাবার খেয়ে বিছানায় চলে গিয়েছিলাম। অল্প একটু সময় রেস্ট নিতে নিতেই চোখে ঘুম চলে আসলো। কারন গত রাতে ঘুম হয়নি তেমন একটা। এরপর লম্বা একটা ঘুম ও দিয়েছিলাম। আর উঠেছিলাম দুপুর একটার দিকে। তো এটাই ছিল আমার গতকালকের রস খাওয়ার গল্প। পুরো সময়টা খুব ভালো কেটেছিল। গল্পগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরেও ভালো লাগলো । যাই হোক ভাল থাকবেন সবাই। দেখা হবে আবার পরবর্তী কোন পোস্টে। আল্লাহ্ হাফেজ।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

খেজুরের রস খাওয়ার জন্য মানুষ এত পাগল হতে পারে! 🤔 এতটা পথ যেয়ে এই শীতের ভেতরে রস খাওয়া ,,, প্রণাম জানাই 🙏🙏🙏। বাংলদেশে যাচ্ছি আমি। বাড়িতে খেজুরের গাছ লাগিয়ে দিয়ে আসবো। 😉
হাহাহা,, আমাদের বাড়ির উপর দুই-তিনটা লাগিয়ে দিয়ে যাইয়ো কিন্তু। 😁
শীতের সকালে খেজুর রস খাওয়ার অনূভুতি অন্যরম ভাইয়া। যদিও আমার এইভাবে খাওয়ার অনুভূতি নাই। আপনারা কত আনন্দ করেন তাইনা। যাইহোক শীতের সকালে রস খেতে যাওয়া একটা এডভেঞ্চার কেননা এত সকালে খুব কঠিন ভয়ংকর ব্যাপার ভাইয়া। তারপরে ৩০/৩৫ কিলো বাইক চালিয়ে শুধুমাত্র রস খেতে যাওয়া সত্যি অন্যরকম ব্যাপার।আর সব থেকে বিরক্ত হলো যখন বন্ধুদের ফোন দিয়ে পেলেন না। তবুও যখন সেখানে গেলেন সকালে মিস্টি রোদ গায়ে লাগিয়ে খেজুরের রস খেলেন তাও আবার এত চার গ্লাস। 🙄। প্রাকৃতিক এই পানীয় অনেক সুস্বাদু। আপনার ফটোগ্রাফি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। সব থেকে ভালো লেগেছে গ্লাসে রস ঢেলে দেওয়ার ছবিটি। আমি বিশ্বাস করি এই ছবিটি কোনো প্রতিযোগিতা শেয়ার করলে ব্যাটার অবস্থান নিশ্চিত করবে।আবারো বলছি ভাইয়া প্রতিটি ফটোগ্রাফি অসাধারণ ।
ওই ছবিটি তোলার সময় তেমন কোন প্ল্যান ছিল না। জাস্ট আমার ফ্রেন্ড রস ঢালছিল ওই সময় মন চাইল একটি ছবি তুলতে। পরে দেখলাম ছবিটি সুন্দর হয়েছে।
বাপ রে বাপ , যেমন সিদ্ধান্ত তেমন কাজ । আসলে আপনার ঘটনাটা পড়ার পড়ে , আমার অনেকটাই কৈশোর জীবনের কথা মনে পড়ে গেল । আহা সেই দুরন্ত কৈশোর সময়, যেখানে কোনো বাঁধাই নিজেকে আটকে রাখতে পারে না । যাইহোক খেজুরের রস খাওয়ার ঘটনাটা বেশ ভালই লাগলো। জীবনটাকে উপভোগ করুন, এই কামনাই রইল আপনার জন্য ।। ভালোবাসা অবিরাম ☺❤🙏
আপনি ও একদিন ছুটি নিয়ে চলে আসুন। একসাথে যাব আবার রস খেতে। 🥰
এরকম মজা করে আনন্দঘন পরিবেশে রস খেতে যাওয়া এবং প্রায় 27 কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বন্ধুদের সাথে খুব সকাল বেলা এই আনন্দ সত্যিই অসাধারণ ছিল। এরকম রসের জন্য 27 কিলোমিটার কেন 100 কিলোমিটার পাড়ি দিয়েও কনকনে শীতের মধ্যে রস খাওয়ার ফিলিংসটা অন্যরকম। আপনার রস খাওয়ার গল্পটি দারুন ছিল এবং সুন্দর একটি সকাল কাটিয়েছেন।
ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।
আমি কোনোদিন ই কাচা খেজুরের রস খাইনি।আমার কাছে মনে হয় খেতে যেনো কেমন কেমন হবে।যদিও আমি খাইনি বলেই আমার এই ধারণা।
আপনি তো বিশাল কিছু মিস করেছেন। খুবই সুন্দর লাগে খেতে একদিন ট্রাই করে দেখুন।
শীতকালে খেজুর রস খাওয়া নিশ্চয় দারুন ব্যাপার। আর সাথে যদি থাকে বন্ধু,তাহলে তো কথাই নাই, এক একথায় জব্বর ব্যাপার।যাই হোক,রস খাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডাটা বেশ জমেছিল।নিশ্চয় এটা আপনাকে অন্যরকম এক আনন্দ দিয়েছে।সত্যিই বন্ধুদের নিয়ে, যে কোন আড্ডাই ব্যাপক মজার হয়ে থাকে।এমন সুন্দর একটি মুহুর্ত, আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
জি ভাই ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ, আপনাকেও।
জীবনে একবারই খেঁজুরের রস খেতে গিয়েছিলাম ৫ জন মিলে। আপনাদের মতোই প্লেন করে যাওয়া হইছিল। ভালোই মজা করছিলাম ২ টা বাইক ছিলো। রস খাওয়ার চেয়ে জার্নিটা বেশি উপভোগ করেছিলাম। আপনার লেখা পড়ে মনে হলো।
আসলে রস আমাদের এদিকেও পাওয়া যায়। কিন্তু জার্নি করে সবাই একসাথে গিয়ে খাওয়ার মজাটা একটু বেশি।
ভাইয়া বেশ দারুণ সময় কাটিয়েছেন বন্ধুদের সাথে। তবে ভাইয়া আমার একটা বিষয় অবাক লাগছে 😯।মাশাআল্লাহ আপনি এতো খেজুর রস পছন্দ করেন ভাইয়া। আর ভাইয়া আপনি একটা ঠিক করেন নাই☹️☹️একা একা সব রস খেয়ে নিলেন ভাবির জন্য নিয়ে যান নাই ভাইয়া।
তবে ভাইয়া আপনার পোস্ট প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খুব ভালো লেগেছে।
আপনার জন্য অনেক দুআ ও শুভকামনা রইলো ভাইয়া।
আপনার ভাবি নিজের বাড়িতে আছে এখন । এজন্য আনিনাই 😋।
তাহলে ভাইয়া ঠিক আছে।
আপনার জন্য অনেক শুভকামনা ও দুআ রইলো।
বর্তমানে আমাদের জেলায় এই জায়গাটা খেজুর রস খাওয়ার জন্য বেশ বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। যদিও আমি এখনো এখানে যায়নি। এবং অনেকদিন এভাবে সন্ধ্যার পর আগুন ধরিয়ে তাপ নেয় না। বেশ মজা হয়।
গতকাল রাহুল ভাইয়ের সাথে কলেজে দেখা হয়েছিল। উনার থেকে শুনছিলাম আপনারা এসেছিলেন। যাইহোক ফটোগ্রাফি গুলো অসাধারণ ছিল। এবং খেজুর রসের কথা আর কী বলব👌👌। অসাধারণ একটি ব্লগ ছিল ভাই।
রাহুলের থেকে তোমাদের কথা শুনেছি গতকাল।
👌🙂
ভাইয়া আপনি সব সময় আপনার বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যান এবং নিজের ইচ্ছা গুলোকে পূরণ করেন এইটা আমার খুবই ভালো লাগে। আমার সবচেয়ে ভালো লাগে বেশি যে আপনি আপনার সেই সুন্দর মুহূর্ত গুলো আমাদের মাঝে শেয়ার করেন। সত্যি কথা বলতে খেজুরের রসের সাথে শীতের সকালের বেশ ভাব রয়েছে। খেজুরের রসের কথা মনে হলেই শীতের সকালের কথা মনে পরে যায়। আপনি শীতের সকালে খেজুরের রস খাওয়ার জন্য এতটা পথ বাইকে করে গিয়েছেন এটা সত্যি অনেক কষ্টের। কারণ সকাল বেলায় কুয়াশায় ঢাকা থাকে রাস্তাঘাট। আর হিমশীতল বাতাসে বাইক চালানো খুবই কষ্টের। তারপরও আপনি আপনার কষ্টগুলোকে উপেক্ষা করে আপনাদের ইচ্ছা গুলো পূরণ করতে সবাই মিলে খেজুরের রস খেতে গিয়েছেন। সব সময় নিজের মনের ইচ্ছা গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া প্রত্যেকেরই উচিত। কারণ মানসিক প্রশান্তি সবচেয়ে বড় জিনিস। মনকে ভালো রাখতে এবং মানসিক প্রশান্তি আনতে মাঝে মাঝেই এই কাজ গুলো করতে ভালোই লাগে। আশা করছি আপনারা সকলে মিলে সেই সময়টা খুবই উপভোগ করেছেন। আপনি যেমন ভ্রমন প্রিয় মানুষ এবং নতুনত্ব খুঁজেন সবকিছুতে তেমনি আপনার বন্ধুরাও। সেজন্যই আপনাদের সব সময় সব উদ্দেশ্য সফল হন। কারণ আপনাদের সবার মাঝেই একতা রয়েছে এবং সবার মানসিকতার মিল রয়েছে। সকলের জন্য শুভকামনা রইল ভাইয়া।
জি আপু আপনি একদম ঠিক বলেছেন। আমরা যারা একসাথে বেড়াই মোটামুটি আমাদের সবার মন মানসিকতা এক ই রকম।