পিতা-পুত্রের হাতাহাতি ও সামাজিক অবক্ষয় - বাস্তব ঘটনা
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভালো আছেন। আজ আমি আপনাদের সাথে একটি দুঃখজনক বিষয় শেয়ার করব। দিন দিন আমাদের নৈতিকতা যেন লোপ পাচ্ছে। তেমনই একটি ঘটনা এখন আপনাদের সাথে শেয়ার করব। ঘটনাটি গতকাল আমার চোখের সামনেই ঘটেছে।

গতকাল দুপুরের খাবার সেরে বিছানায় শুয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। আমাদের পাশের বিল্ডিং হচ্ছে একটি টিনশেড বাড়ি। সেখান থেকে একটি ছেলে ও একটি মেয়ের গলার আওয়াজ আসছিল। আমি প্রথমে তেমন গুরুত্ব দেয়নি। কারণ এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ছেলেটির গলার আওয়াজ চড়ে যায় এবং বুঝতে পারলাম তার অভিযোগ মেয়েটির দিকে নয়, বরং তৃতীয় কোন পক্ষের দিকে। আমি তখন উঠে বসে দেখতে লাগলাম কি ঘটে?
একজন মধ্য বয়স্ক লোক ছেলেটিকে চিকন শুকনো এক লাঠি দিয়ে কয়েকটি বাড়ি দিলেন। এতে করে ছেলেটি ব্যথা পাক আর না পাক, লাঠিটি ভেঙ্গে যায়। ওই মুহূর্তে ছেলেটি এবং মধ্য বয়স্ক লোকটির কথাবার্তার মধ্যে আমি ঘটনাটা কিছুটা বুঝতে পারি। ছেলেটি আর মেয়েটি তারা হচ্ছে স্বামী-স্ত্রী। ছেলেটি মেয়েটিকে নিয়ে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে যাবে কিন্তু মধ্যবয়স্ক লোকটি তাতে রাজি না। আমি তখনো পর্যন্ত লোকটি এবং ছেলেটির মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়ে জানতাম না।
ছেলেটি তখন মেয়েটিকে নিয়ে অর্থাৎ তার স্ত্রীকে নিয়ে হেঁটে সামনের দিকে যাচ্ছিল। বয়স্ক লোকটি দৌড়ে এসে একটি বাঁশ হাতে নিয়ে ছেলেটিকে মারতে যায়। কিন্তু লোকটি মারেনি, হাতে নিয়ে তাকে বাসায় ফিরতে বলেন। ছেলেটি রাজি হয়নি, সে সামনে যেতে থাকে। তখন লোকটি ছেলেটির পায়ের পিছনে বাড়ি দেয়। যদিও এই বাড়িতে ছেলেটির তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। মুহূর্তেই বয়স্ক লোকটিকে ছেলেটিও জাপটে ধরে এবং তাদের মধ্যে হাতাহাতি চলতে থাকে। তখন খানিকটা দূরে দুজন লোক আসছিলেন। তারা দৌড়ে এসে দুজনের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে চাইলেন। কথায় কথায় তখন বের হয়ে আসলো, ছেলেটি এবং মধ্যবয়স্ক লোকটি আসলে পিতা-পুত্র। অর্থাৎ এতক্ষণ আমি পিতা-পুত্রের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা স্বচক্ষে দেখলাম।
কেবল এটাই নয়। কয়েক মাস আগেও এমন একটি ঘটনা আমার সামনে ঘটেছিল। সেই আঙ্কেল একটি কাপড়ের দোকানদার। তার সাথেও তার ছেলের মারামারি হয় রাস্তার উপরে। দুদিন আগেও তাকে আক্ষেপ করে বলতে শুনেছি, তার ছেলে এখনো তার কাছে ক্ষমা চায়নি।
আমার চোখের সামনে ঘটা গতকালের ঘটনায় আমার যতটুকু ধারণা, যতটুকু জানতে পেরেছি, তাতে বয়স্ক লোকটির বেশ খানিকটা দোষ রয়েছে যার কারণে তার ছেলে তার উপরে ক্ষিপ্ত ছিল। কিন্তু যত যাই হোক কোন ছেলেই তার বাবার গায়ে হাত তোলার মত জঘন্য অনৈতিক কাজ করতে পারেনা। লোকটিরো ছেলেটিকে এভাবে হেনস্তা করা উচিৎ ছিল না। কিন্তু, তারপরেও বাবা ছেলের মারামারি, এধরনের কথাবার্তা সমাজের অধঃপতন সম্পর্কে নিশ্চিত করে। একমাত্র অধঃপতিত সমাজেই এই ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটতে পারে। ভদ্রলোকটির ছেলেটি কে শারীরিকভাবে খোলা পরিবেশে হেনস্তা করা উচিৎ হয়নি। তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো অভ্যন্তরেই মীমাংসা করার প্রয়োজন ছিল।
আমাদের ধর্ম মতে মহান আল্লাহতালার পরেই আমরা পিতা-মাতার কথাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার বিষয় বলা হয়েছে। আমি বোধ করি, সকল ধর্মেই এই বিষয়টি, অর্থাৎ পিতা মাতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার, সর্বোচ্চ সম্মান করার বিষয় বলা হয়েছে। এধরনের ঘটনা প্রমাণ করে, দিন দিন আমরা নৈতিকতার দিক থেকে নিচে নেমে যাচ্ছি। আমাদের নৈতিকতার অবক্ষয় ঘটেছে, যা খুবই নেতিবাচক একটি বিষয় আমাদের সমাজের জন্য। আমাদের উচিত সকলকেই প্রাপ্য সম্মান দেওয়া। কোন অবস্থাতেই শারীরিক লাঞ্ছনার দিকে না যাওয়া। যতটুকু সম্ভব হয় যেকোন বিষয়ে আপোষে মীমাংসা করা।

আপনার পোস্ট পড়ে অনেক খারাপ লাগলো। সত্যি বাবা মা যতই খারাপ হোক না কেন তাদের সাথে অনৈতিক ব্যবহার করা মোটেও উচিত নয়। ছেলেটি মোটেও ভালো কাজ করে নি।এমন ঘটনা আমাদের সমাজে অনেকে ঘটে থাকে।
হ্যাঁ ছেলেটি মোটেও ভালো কাজ করেনি। বাবা-মায়ের সাথে এ ধরনের আচরণ অপ্রত্যাশিত। ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।