ছেলের ছোট বেলার একটি দুর্ঘটনার গল্প
আসসালামুআলাইকুম সবাইকে।
আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা কেমন আছেন? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ।
আজকে আবার হাজির হয়ে গেলাম নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। বাচ্চারা কত দ্রুত বড় হয়ে যায় চোখের সামনে বোঝাই যায় না। মনে হল এই তো সেদিন কিন্তু দেখতে দেখতে আমার দুটি ছেলেই বড় হয়ে যাচ্ছে। দুজনকে স্কুলে দিয়ে ভর্তি করে দিয়েছি। কিছুদিন পরে দেখা যাবে এরা কলেজে, ইউনিভার্সিটিতে পড়া শুরু করে দিয়েছে। ছোটবেলায় মনে হতো যে কবে বড় হব দিন যেন কাটে না। আর এখন মনে হচ্ছে দিন খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে। ধরে রাখা যাচ্ছে না। মাঝেমধ্যে বাচ্চাদের ছোটবেলার বিভিন্ন স্মৃতি মনে পড়ে বেশ ভালো লাগে। আবার তার মাঝে কিছু কিছু কষ্টের স্মৃতিও মনে পড়ে। আজকে আমার ছোট ছেলের ছোটবেলার একটি কষ্টের কাহিনী শেয়ার করবো আপনাদের সঙ্গে। যে সময় এরকম কাহিনী গুলো ঘটে ওই সময়ে যেন পার হতে চায় না। অল্প সময়ও অনেক দীর্ঘ মনে হয়। খারাপ সময় গুলো সব সময় বড় হয়।
আমার ছোট ছেলে তখন খুবই ছোট। মাত্র হাটা শিখেছে অথবা শিখেনি এরকম অবস্থা। যখন বাচ্চারা নতুন নতুন হাটা বা হামাগুড়ি দেয়া শিখে তখন তাদেরকে চোখে চোখে রাখতে হয়। কারণ দেখা যায় কখন কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেলে। তাদের আকর্ষণ সবকিছুর উপরে বেশি থাকে। যখন আমার দুই ছেলে ছোট ছিল তখন আমি নিচের কারেন্টের লাইনগুলো সব কস্টেপ দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছিলাম যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে। বাচ্চাদেরকে যতই সাবধানে রাখা হোক না কেন দুর্ঘটনা ঘটেই যায় পাশে বসেই। কিন্তু টেরও পাওয়া যায় না। একদিন দুপুরবেলায় আমি কাজ করছি আর বড় ছেলে ছোট ছেলে পাশে খেলছে। আমাদের বাসায় একটি চেয়ার আছে। অফিসের যে চেয়ারগুলো থাকে নিচে চাকা লাগানো ওগুলো। এই চেয়ারগুলোর হ্যান্ডেল এবং সব বডি খুব শক্তপোক্ত হয়। হ্যান্ডেলের মাঝে ফাঁকা জায়গা থাকে। ছোট ছেলে খেলতে খেলতে হুট করে একটি হ্যান্ডেলের মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে দিয়েছে।
প্রথমে আমিও খুব একটা গুরুত্ব দেইনি। ও খুব বেশি ভয় পাইনি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখলাম যে মাথা বের করতে পারছে না। দেখে আমারও কেমন যেন মনে হল। দৌড়ে কাছে গিয়ে মাথা বের করার চেষ্টা করলাম কিন্তু কিছুতেই মাথা বের করতে পারছিলাম না। কিছুক্ষণ পর কান্না শুরু করে দিয়েছে। আমিও চেষ্টা করি মাথা বের করার জন্য। আমিও কান্না শুরু করি। ওর বাবা বাসায় ছিল না তাড়াতাড়ি করে ওর বাবাকে ফোন দিলাম। কিন্তু আমার কান্নার জন্য ওর বাবা আমার কথাই বুঝতে পারছিল না। তখন বাসায় কাজের মেয়েটা ছিল ও তখন ওর বাবাকে জানালো। ওই সময় যে কিরকম অবস্থা হয়েছিল বলে বোঝাতে পারবো না। বারবার চিন্তা করছিলাম মাথা বের করতে না পারলে কি করবো। এদিক দিয়ে ছেলে ঘাড় বাঁকা করে বেশিক্ষণ থাকতে পারছে না। কষ্ট হচ্ছে। পরে কাজের খালাসহ আমি ওকে ধরে শোয়ালাম চেয়ার সহ। যাতে আরামে থাকতে পারে। আর চেষ্টা করতে থাকলাম। কিন্তু কাজ হচ্ছিলো না। আমি যখন হাল ছেড়ে দিয়ে পাশে বসে কান্না করছিলাম তখন কাজের মেয়েটির আস্তে আস্তে চেষ্টা করছিল মাথা বের করার। কিভাবে নাড়াচাড়া দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হুট করে মাথাটা বের হয়ে গেল। হয়তো আল্লাহই ব্যবস্থা করেছে। তা না হলে এত টানাটানি করে বের করতে পারলাম না সেখানে হঠাৎ করে একাই আবার বের হয়ে গেল।
তখন তাড়াতাড়ি করে ওর বাবাকে আবার ফোন দিলাম। কারণ ওর বাবা নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে বাইরে গিয়েছে। তাকে সেখান থেকে ফিরতে হলে ড্রাইভ করে আসতে হবে। টেনশনে আবার কোন দুর্ঘটনা ঘটে সেজন্য আগে তাকে জানালাম। এরকম অবস্থা জানানোর পর সে কিছুটা স্বস্তি পেল। এজন্য যাদের বাসায় এইরকম ছোট বাচ্চা রয়েছে তারা সবসময় চোখে চোখে রাখবেন। অঘটন কিন্তু পাশে বসেও ঘটতে পারে। বোঝা যায় না। যাইহোক আল্লাহ সবার বাচ্চাকে সুস্থ রাখুক।
এই ছিলো আজকের আয়োজন। সময় নিয়ে আমার পোস্টটি দেখার জন্য সকলকে। ধন্যবাদ সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। পরবর্তীতে দেখা হবে আবার নতুন কিছু নিয়ে।
ধন্যবাদ
@tania
আমি তানিয়া তমা। আমি বাংলাদেশে থাকি। ঢাকায় বসবাস করি। আমি অর্থনীতিতে অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। আমি বিবাহিত। আমার দুটি ছেলে আছে। আমার শখ রান্না করা, শপিং করা,আর্ট করা, ঘুরে বেড়ানো। আমি বাংলায় কথা বলতে এবং ব্লগিং করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলাদেশকে ভালবাসি। |
---|
VOTE @bangla.witness as witness OR SET @rme as your proxy

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
নিজের চোখের সামনে নিজের সন্তানের যদি এমন অবস্থা হয় তাহলে সত্যি কতটা যে বেদনাদায়ক আর কতটা কষ্টের অনুভূতি তা একমাত্র মা ছাড়া কেউ বুঝবে না। আপনি কেমন ঘটনা লিখেছেন পড়তে গিয়ে যেন আমার বুকের মধ্যে আঘাত লাগছিল ভয় ভয় লাগছিল নিজের বাবুর জন্য। দোয়া করি প্রত্যেক সন্তান পিতা মাতার সামনে যেন হাসিখুশি ভালো থাকে।
আসলেই আপু এরকম সময় কি করবো বুঝে উঠতে পারা যায় না। যাই হোক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
মায়ের মন সন্তানের কিছু হলে মা আর ঠিক থাকতে পারে না। কোন মত মাথা ঢুকে গিয়েছিল আর বের হচ্ছিল না, সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করবেন কারণ সেদিন এর থেকে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। আলহামদুলিল্লাহ কিছু হয়েছিল না সবাই শুধু ভয় পেয়েছিলেন।
অলৌকিকভাবেই আবার মাথা বের হয়ে গিয়েছিল চেয়ার থেকে। যাই হোক ভাইয়া ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
ছেলেবেলায় তবে একটি ভালো বিপদ ঘটিয়েছিল আপনার ছেলে। এমন চেয়ারে মাথা গলে গেলে খুবই কষ্টের বিষয়। আসলে এমন কিছু হলে শিশুরা ছটফট করে বেশি। তাই জন্য বের করতে সমস্যা হয়। ঘটনাটি শুনেই কেমন যেন শিহরণ দিয়ে উঠলো। যাইহোক সেই সময় কেটে গেছে, এবং ওর কিছু হয়নি সেটাই মঙ্গলের।
বাচ্চাদের ছটফট দেখলে তো আরও বেশি অস্থির লাগে ওই সময়। যাই হোক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
আমরা যতই সাবধানে থাকি না কেন বিপদ আসলে ঠেকানো মুশকিল। সত্যিই তো যখন বিপদ ঘটে সেই সময় যে পার হতেই চায় না।আর আল্লাহ যা করেন সব কিছু ভালোর জন্যই করেন। আপনারা অনেক চেষ্টা করে যেখানে মাথা বের করতে পারেননি। সেখানে একা একাই বের হয়েছে। আমাদের সবার উচিত বাচ্চাকে সাবধানে রাখা।
ঠিক বলেছেন বিপদ আসলে শত সাবধানতার মাঝেও চলে আসে। যাই হোক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
ঠিক বলেছেন আপু চোখের সামনে যেনো ওরা খুব তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাচ্ছে। আমার ছেলেকে দেখলেই বুঝা যায় সে যেনো আস্তে আস্তে আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এভাবেই একদিন হয়তো আমাদের মাঝে দূরত্ব চলে আসবে। আপু আপনার ছেলের এই ঘটনা শুনে আমার ছেলের দুর্ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো। একদিন শেয়ার করবো। আমারও সেদিন আপনার মতোই অবস্থা হয়েছিল। ঐ সময় মাথায় যেনো কোনো বুদ্ধি আসে না। তবে আল্লাহর তায়ালাই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলেই হয়তো পরবর্তীতে সহজে খুলে গিয়েছে। সত্যিই বাচ্চাদের চোখের সামনে রাখলেও যেনো বিপদ হয়েই যায়। আপনার ছেলে তো তাহলে সেদিন অনেক বড় একটি বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে।
বাচ্চারা খুব দ্রুত বড় হয়ে যায় মনে হয়। সময় যে কোথা দিয়ে যায় বোঝাই যায় না। যাই হোক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।