লোডশেডিং ও আমাদের শৈশব
নমস্কার বন্ধুরা,
আশা করি সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন।সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আজকে আমি আমার পোস্ট লেখা শুরু করছি।
লোডশেডিং যা একসময় আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল তা শুধু অস্বস্তি বা বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠেনি বরং এর মধ্যে লুকিয়ে ছিল শৈশবের সরল আনন্দ ও গভীর স্মৃতির এক অনন্য ভান্ডার।দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিদ্যুৎ চলে গেলে পরিবেশ হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে যেত।কিন্তু সেই স্তব্ধতার মধ্যেই যেন শুরু হতো এক ভিন্ন জগৎ।বাড়ির উঠোনে বসে দাদু-ঠাকুমার কাছে শোনা পুরোনো দিনের গল্প, যেখানে রাজা-রানির কাহিনি কিংবা বনজঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া কোনো চরিত্র আমাদের কল্পনায় জীবন্ত হয়ে উঠত।সেই গল্পগুলো কেবল বিনোদনের উৎস ছিল না;সেগুলো আমাদের কল্পনা শক্তি, মানবিকতা ও সংস্কৃতির গভীর শিকড়ের সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দিত।
লোডশেডিং মানেই ছিল বন্ধুদের সঙ্গে জমজমাট লুকোচুরি খেলা।অন্ধকার উঠোন বা ঘরের কোণে মোমবাতির আলোয় আমরা এমন এক জগৎ তৈরি করতাম যা ছিল সম্পূর্ণ নিজেদের।কোনো ডিভাইস, কোনো স্ক্রিন—কিছুই ছিল না।শুধু ছিল মুখোমুখি বসে প্রাণ খুলে হাসার, দৌড়াদৌড়ি করার এবং সম্পর্কের গভীরতাকে অনুভব করার এক মধুর সময়।সেই মুহূর্তগুলো আমাদের বন্ধুত্বকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়েছে। এমনকি বিদ্যুৎ ফেরত আসার পরও আমরা খেলায় এতটাই মগ্ন থাকতাম যে আলো ফিরে আসার খবরও অনেক সময় অজানা থাকত।
তখনকার লোডশেডিং আমাদের শিখিয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগের অর্থ।বিদ্যুৎ চলে গেলে পুরো পৃথিবী যেন নতুনভাবে ধরা দিত। তারাদের আকাশ যা আজ শহুরে জীবনের কৃত্রিম আলোয় প্রায় অদৃশ্য,তখন আমাদের শৈশবের রাতের সঙ্গী ছিল।ছাদের ওপর শুয়ে তারা গণনা করা, ধ্রুবতারা খুঁজে পাওয়া, কিংবা দূর কোনো গ্রহের কল্পনায় হারিয়ে যাওয়া ছিল সেই সময়ের অবসরের প্রধান বিনোদন। আকাশের নিচে সেই নীরব মুহূর্তগুলো আমাদের শিখিয়েছে কল্পনার সীমানা ছড়ানো এবং অজানাকে নিয়ে ভাবা।
তবে সময় বদলেছে।প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ঘটনা ক্রমেই কমে এসেছে।এখনকার প্রজন্ম হয়তো বিদ্যুতের অভাবকে বিরক্তি ছাড়া আর কিছুই মনে করে না।মোমবাতির আলোয় বসে গল্প শোনার পরিবর্তে তারা স্ক্রিনে ডুবে থাকে।তাদের জীবনে নেই সেই মায়াবী ছোঁয়া যা লোডশেডিংয়ের অন্ধকার আমাদের দিত।বিদ্যুতের অভাব ছিল একধরনের সীমাবদ্ধতা কিন্তু সেই সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমরা আনন্দ খুঁজে নিতে শিখেছিলাম।
লোডশেডিংয়ের সেই সময়গুলো কেবল শৈশবের স্মৃতি নয়; এগুলো আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে ছোটখাটো সমস্যার মধ্যেও সুখ খুঁজে পাওয়া যায়।এটি কল্পনার প্রসার, সম্পর্কের গভীরতা এবং সরল আনন্দের এক অনন্য শিক্ষা।আজকের সময়ে আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়লেও সেই অন্ধকারে হারানো মুহূর্তগুলো আমাদের হৃদয়ে চিরকাল জ্বলজ্বল করবে। লোডশেডিং আমাদের শিখিয়েছে জীবনের গভীরতা যা কোনো প্রযুক্তিই প্রতিস্থাপন করতে পারবে না।
VOTE @bangla.witness as witness

OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

Congratulations, your post has been upvoted by @nixiee with a 5.180318208058216 % upvote Vote may not be displayed on Steemit due to the current Steemit API issue, but there is a normal upvote record in the blockchain data, so don't worry.
ছেলেবেলায় লোডশেডিং এর স্মৃতি মনে পড়ে গেল আপনার এই পোস্ট পড়ে। পড়াশুনা করতে করতে মাঝে মাঝে চাইতাম লোডশেডিং হয়ে যাক। তাহলে পড়াশোনা করতে হতো না। সেইসব মজার স্মৃতি আজকাল আর নেই। আপনার পোস্ট পড়ে এই স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল।
শৈশবে লোডশেডিং হলেই, সন্ধ্যেবেলা বাসার গলির ভিতরে লুকোচুরি খেলতাম সবাই মিলে, আজ সেই দিনগুলো শুধুই স্মৃতি। দারুণ উপভোগ করলাম লেখাটা দিদিভাই।
আমি গ্রামেরই ছেলে। লোডশেডিং হলে আমরা ছোটরা বাড়ির উঠোনে চলে যেতাম। সবাই মিলে খেলা শুরু করে দিতাম। আর গরমের দিনে পুকুরের পাড়ে মাদুর বিছিয়ে দিয়ে গল্প শুরু করে দিতাম! এ যেন এক অন্যরকম ভালো লাগা ছিল। আমরা তখন অন্ধকারেই আনন্দ খুঁজে পেতাম।
ছোটবেলা সন্ধ্যার পর পড়তে বসলে,ভাবতাম যে কখন লোডশেডিং শুরু হবে এবং লুকোচুরি খেলা শুরু করবো। বেশ মজা করে বাড়ির উঠানে এবং আশেপাশে লুকোচুরি খেলতাম। তাছাড়া বড়দের মুখে রাজা রাণীর গল্প শুনতেও খুব ভালো লাগতো। সেই দিনগুলো সত্যিই খুব মিস করি। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
অনেক স্মৃতি মনে এলো পোস্টটি পড়ে। সত্যি দিদি ছেলেবেলার লোডশেডিংয়ের মধ্যে শুধু বিরক্তিই ছিল না।এর মধ্যে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে।লোডশেডিং হলে চারিপাশ স্তব্ধ হয়ে যেতো। আর যেই না বিদ্যুৎ চলে আসতো তখন চারিদিকে হৈ চৈ পরে যেতো।
আমরা যখন ছোট ছিলাম মোটামুটি সন্ধ্যা হলেই লোডশেডিং হতো। আর লোডশেডিং হলেই পড়া বাদ। শুরু করে দিতাম লুকোচুরি খেলা। আরেকটু বড় হলে একটু অন্য রকম দুষ্টুমি করতাম। আস্তে আস্তে লোডশেডিং কমে গেল হারিয়ে গেল আমাদের সেই শৈশব সেই সব মূহুর্ত। দারুণ লাগল আপনার পোস্ট টা আপু। অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন।