প্রিয় উপন্যাস 'লালসালু' নিয়ে কিছু কথা।

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভাল আছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে চলছে একুশে বইমেলা। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি পুরো মাসে আমি আমার বাংলা ব্লগে শুধুমাত্র বই নিয়ে লিখব। তারই ধারাবাহিকতায় আজ লেখব আমার প্রিয় একটি উপন্যাস লালসালু নিয়ে।


pexels-ozgur-yetgi-nli-oglu-2149477012-30635436.jpg

Photo by Özgür YETGİNLİOĞLU


লালসালু সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর অমর সৃষ্টি, যার মূল চরিত্রে রয়েছে মজিদ নামের এক লোক। তার জন্ম হয়েছে নোয়াখালীর কোন এক প্রত্যন্ত গ্রামে। যেখানে খুব অভাব ছিল। কিন্তু সেখানকার মানুষদের মধ্যে কিছুটা ধর্মীয় উন্মাদনা ছিল। মজিদ সেখানে বড় হয়েছে। কিন্তু বড় হয় এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে খাবারের সন্ধান করতে থাকে। সে খাবার সন্ধান করতে করতে প্রত্যন্ত এক গারো পাহাড়ে কোন এক সময় নির্মিত মসজিদের দায়িত্ব নেয়। সেখানকার মানুষদের মধ্যে ধর্মীয় ভীতি ছড়াতে থাকে। এভাবেই সে কোন রকমে খেয়ে পরে বেঁচে ছিল। একদিন সেখানে আসে কোন এক সরকারি কর্মকর্তা শিকারের জন্য। এসে মজিদের সাথে তার দেখা হয়। সে কর্মকর্তা নিজের গ্রামের কথা মজিদকে খুলে বলে। গ্রামের নাম মহব্বতনগর। এভাবেই মহব্বতনগরের কথা মুজিব জানতে পারে। তাই সে আকস্মিক এক এন্ট্রি নেয় মহব্বতনগর গ্রামে।

মহব্বত নগর গ্রামে সেই অফিসারের এক পূর্বপুরুষের কবর ছিল যার নাম ছিল মুদাচ্ছের। মজিদ সেই কবর আর নামকে পুঁজি করে সেটাকে মাজার বানিয়ে ফেলে। আর লোকদের মধ্যে নানারকম সত্য-মিথ্যা ধর্মীয় বাণী ছড়িয়ে ভয় ঢুকিয়ে দেয়। দিন দিন গ্রাম বাসীর মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে তাদেরকে মন্ত্রমধুর কথা বলে। মাজারের মাধ্যমে ভালো উপার্জন করতে থাকে। বিয়ে করে সংসারী হয়। গ্রামের সবাই তার কথা মানত। এমনকি গ্রামের মোড়লও তার কথার বাইরে কিছু করত না।

এভাবেই চলছিলো তার দিন। কেউ তার কথার বাইরে গেলে ভিন্ন উপায়ে নিতো তীব্র প্রতিশোধ। গ্রামের এক ছেলে শহর থেকে পড়াশোনা করে এসে গ্রামে স্কুল খুলতে চায়৷ কিন্তু মজিদ তার গোমর ফাঁস হয়ে যাবার ভয়ে চাতুরতার আশ্রয় নেয় এবং স্কুল প্রতিষ্ঠা বন্ধ করতে সক্ষম হয়।

কিন্তু মজিদের কোন সন্তান হয়না। সন্তানের আশায় সে আরেকটি বিয়ে করে। কম বয়সী এক মেয়েকে। যার নাম ছিলো জমিলা। কিন্তু কম বয়সী জমিলা মজিদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিলো। কোনভাবেই সে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তার গড়ে তোলা মাজারভিত্তিক সাম্রাজ্যে জমিলা যেন ছিলো এক বোবা-প্রতিবাদী চরিত্র।

এই উপন্যাসে ঔপন্যাসিক দারুণ ভাবে আমাদের সমাজে প্রভাব বিস্তারকারী ভুয়া ধর্ম-ব্যবসায়ীদের প্রভাব বিস্তার সম্পর্কে তুলে ধরে। কিভাবে মানুষের অজ্ঞতা এবং অন্ধতাকে পুঁজি করে কিছু মানুষ ক্ষমতাশালী হয়ে সেই চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। কিভাবে তারা নিজেদের সাম্রাজ্য হারানোর ভয়ে সমাজে ভালো কিছু হওয়াকে থামিয়ে দেয় তা তুলে ধরা হয়েছে। কিভাবে নিজের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য অন্যের সংসার ভেঙ্গে দেয় তাও তুলে ধরেছেন অত্যন্ত নিখুঁত ভাবে। বাংলা সাহিত্যের সর্বকালের সেরা কয়েকটি গ্রন্থের মধ্যে লালসালু স্থান করে নিয়েছে আপন মহিমায়।


PUSSFi_NFT22.png

নিজের সম্পর্কে
আমি মুহাম্মদ সাব্বির আকিব। জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশি। জেলাঃ চাঁদপুর, থানাঃ ফরিদগঞ্জ। থাকি ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানাধীন দক্ষিণ গাজীরচট নামক স্থানে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রসায়নে স্নাতক (সম্মান) সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে একটি ফার্মেসিতে ফার্মাসিস্ট হিসাবে কর্মরত রয়েছি। বিবাহিত এবং আল্লাহ একটি পুত্র সন্তানের জনক করেছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
Sort:  
 2 months ago 
az_recorder_20250212_232330.jpgaz_recorder_20250212_215912.jpgaz_recorder_20250212_215819.jpgaz_recorder_20250212_215722.jpg
Twitter PromotionCMC PromotionDEXScreen Vote#CoinGem# Vote
 2 months ago 

লালসালু উপন্যাসটা আমাদের ইন্টারের সিলেবাসে ছিল। সামাজিক সমস্যা নিয়ে লেখা উপন্যাসটি সত্যি চমৎকার ছিল। এটা আমার ও প্রিয় একটা উপন্যাস। একটা সমাজে ধর্ম ব্যবসায়ীদের প্রভাবটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে। আপনি সেই সম্পর্কিত একটা পোস্ট শেয়ার করেছেন দেখে ভালো লাগলো।

 2 months ago 

দেরির জন্য দুঃখিত। ঠিক বলেছেন। এটা একটা সামাজিক সমস্যা নিয়ে লেখা উপন্যাস। ধন্যবাদ আপু আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.13
TRX 0.24
JST 0.030
BTC 82480.06
ETH 1565.00
USDT 1.00
SBD 0.77