জাফর ইকবালের প্রেমের উপন্যাস - রাতুলের দিন রাতুলের রাত
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা? আশা করি ভাল আছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে চলছে একুশে বইমেলা। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি পুরো মাসে আমি আমার বাংলা ব্লগে শুধুমাত্র বই নিয়ে লিখব। তারই ধারাবাহিকতায় আজ লেখব জাফর ইকবালের প্রেমের উপন্যাস রাতুলের দিন রাতুলের রাত নিয়ে।

বাংলাদেশের সাহিত্য জগতের অন্যতম দুই রত্ন হুমায়ূন আহমেদ এবং তার ভাই জাফর ইকবাল। তারা অনেক উপন্যাস রচনা করেছেন। কিন্তু তাদের কেউই ঠিক সেভাবে প্রেমের উপন্যাস লেখেননি। হুমায়ূন আহমেদ যদিও তার বেশিরভাগ উপন্যাসে কিছুটা প্রেম জনিত জিনিস এনেছিলেন। জাফর ইকবাল ছিলেন তার একদম ব্যতিক্রম। তিনি দুই ধরনের বই লিখেন। শিশুসাহিত অর্থাৎ কিশোরদের জন্য আর সাইন্স ফিকশন। যখন আমি জানতে পারলাম জাফর ইকবাল একটি প্রেমের উপন্যাস লিখেছেন, লোভ সামলাতে পারলাম না। আজ আমি সেই উপন্যাস সম্পর্কেই লেখতে যাচ্ছি। উপন্যাসটি কিছুটা মজাদার ছিল। তাই আমিও মজাদার করে লেখার চেষ্টা করছি।
রাতুল হচ্ছে গল্পের নায়ক। নায়কোচিতো কোনো গুন নেই অবশ্য। তবে তার একটা গার্লফ্রেন্ড আছে। তার সেই গার্লফ্রেন্ড বিভিন্ন কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণের একটু ট্যুর আয়োজন করে। রাতুলকে অনুরোধ করে সেখানে ভলেন্টিয়ার হিসেবে যাওয়ার জন্য। কিন্তু রাতুলকে সেতো চিনে! আগেই বলে দেয়, কোন ভুল করার অপশন থাকবে না। গার্লফ্রেন্ড এর এমন আবদার তো আর ফেলতে পারেনা। সবচেয়ে বড় বিষয়, সবার মধ্যে থেকে হলেও তারা একসাথে কোথাও ভ্রমণে যাচ্ছে।
কিন্তু রাতুল তো রাতুল। প্রথম দিনেই সে ভুল করে ফেলে। খুব ভোরে জাহাজ ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু রাতুল ঘুম থেকে উঠেই দেরি করে। কোনরকমে দৌড়ে ছিড়ে-ফুড়ে সময়মতো জাহাজে উঠতে সক্ষম হয়। সেখানে কবি-সাহিত্যিকদের আচার-আচরণ তাকে বেশ অবাক করে। সাধারণত উচ্চবিত্ত এবং এলিট মানুষদের সাথে মেশার সুযোগ সে পায়নি। তাদের মধ্যে এমন অহংকার কাজ করে তা সে ভাবতেও পারেনি। যাইহোক, এসব নিয়ে আলোচনা না করে পরবর্তী অংশে যাই।
সেই ট্যুরে এক বিলেতি বাংলাদেশি ছিলো রাতুলদের বয়সী। সেই ছেলে বাংলাদেশিদের নিয়ে মোটামুটি তাচ্ছিল্য জড়ছিল তার কন্ঠে। যা রাতুলকে রাগিয়ে দেয় ভেতরে ভেতরে। বাংলাদেশের যুবসমাজতো এতোটাও তুচ্ছ নয় যতটা সে প্রকাশ করছে। সে প্রতিবাদ করতে চাচ্ছিলো। কিন্তু তার গার্লফ্রেন্ডের কথা মনেকরে চুপচাপ সব সহ্য করে।
সেই জাহাজেই একটি ছেলেকে পাওয়া যায়। সে ছিলো টোকাই। জাহাজে ঘুমিয়ে ছিলো। ঘুমের মধ্যেই জাহাজ ছেড়ে দেয়। সে জানতেও পারেনি। রাতুল তার সাথে ভাব জমায়। মিথ্যা অংহকারের মোড়কে মোড়ানো উচ্চবিত্তদের চেয়ে দিলখোলা এই টোকাইকেই তার বেশি ভালো লাগে।
যাইহোক, সুন্দরবনে গিয়ে জাহাজটি ডাকাতদের খপ্পরে পড়ে। ডাকাতরা সবাইকে বন্দী করে। টোকাই ছেলেটি ছিলো মুক্ত৷ কারন সে ছিলো টোকাই। এইজন্য খুব সহজেই ডাকাতদের সঙ্গে মিশে গিয়েছে৷ তখন সে রাতুলের বুদ্ধিতে উলটো ডাকাতদলকেই কব্জা করে ফেলে। এভাবেই গুটি কয়েক ডাকাতের হাত থেকে সবাই মুক্ত হয়। ডাকাতদের বন্দী করে ঢাকায় আনা হয়। ততক্ষণে মিডিয়ায় সবকিছু ছড়িয়ে যায়। সদরঘাটে যখন লঞ্চ ভীড়ে তখন বিলেতি ছেলেটি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয় এবং এমনভাবে কথা বলে, যেন ডাকাতদেরকে সেই ধরেছে। পুরো কৃতিত্বই তার। রাতুল অবশ্য এর প্রতিবাদ করেনা। চুপচাপ সব শুনে। কারন এই ট্যুরে সে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। যার একটি হচ্ছে, যখন কেউ কারো কৃতিত্ব নিয়ে টানাটানি করে, তখন নিজেকে বড় মনের পরিচয় দিতে হয়। সে চুপ থেকে সেটাই করেছে। অবশ্য রাতুলের গার্লফ্রেন্ড আসল ঘটনাটা জানতে পারে। যখন ডাকাতদেরকে পুলিশ নিয়ে যাচ্ছিল, তখন ডাকাত সরদার রাতুলকে দেখিয়ে প্রশংসা করে। যা রাতুলের গার্লফ্রেন্ড শুনতে পায়। এভাবেই তার চোখে রাতুল মহানায়ক বনে যায়।
যদিও লেখকের নিজের দাবী তিনি এটি প্রেমের উপন্যাস হিসাবে রচনা করেছেন, তবে পাঠক হিসাবে এটিকেও একটি কিশোর উপন্যাসই মনে হয়েছে। জাফর ইকবাল ভূমিকায় সেটাও উল্লেখ করেছেন।

![]() | ![]() | ![]() | ![]() |
---|---|---|---|
Twitter Promotion | CMC Promotion | DEXScreen Vote | #CoinGem# Vote |