মানবিক দায়িত্ব||১৬তম বার

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)
হ্যালো আমার বাংলা ব্লগবাসী।আশা করি সবাই ভাল আছেন।আমিও ভাল আছি।স্পেশালি আজ অনেক হালকা হয়ে আছে মন ও শরীর।কেন সেটাই শেয়ার করব আপনাদের সাথে

IMG_20230514_123044.jpg

আমরা এমন দেশে আছি যেখানে পানিও কিনে খেতে হয়,সেখানে এক ব্যাগ রক্ত আপনি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পেয়ে যাবেন।ব্যাপারটা চমৎকার না?

মানতেই হবে বিষয়টা চমৎকার।কারন রক্ত পেয়ে যাচ্ছেন পানির থেকেও সস্তা।তবে তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতিও এর পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সোশ্যাল মিডয়ায় শুধু রক্ত চেয়ে একটি পোস্ট লিখতে হয়,দাতা নিজ গরজে নিজ খরচে এসে রক্ত দিয়ে যাবে। যাই হোক অনেক বাজে কথা বললাম এখন আমার ১৬তম বারের রক্ত দেওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করি।

IMG_20230514_124529.jpg

ঠিকই শুনেছেন ১৫তম বার। আমার রক্তদানের জার্নি শুরু হয় মাধ্যমিক এর প্রথমবর্ষে।যদিও রক্তদানের সর্বনিম্ন বয়স ১৮বছর। কিন্তু যে রোগীর রক্তপ্রয়োজন ছিল তার তখন মুমূর্ষু অবস্থা। তাই অত কিছু বিবেচনা না করে রক্ত দিয়ে দেই।সেদিন থেকেই শুরু।তবে সেদিন একটি বিষয় জানতে পারি যে আমার ভেইন খুবই চিকন।ভেইন অর্থাৎ যেখানে সুই ফুটিয়ে রক্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও থেমে থাকি নি।

সেবার রক্ত দেওয়ার পর আমরা বন্ধুরা বুঝতে পারি এলাকায় একটি ব্ল্যাড ব্যাংক অনেক প্রয়োজন।রক্তের অভাবে অনেক মুমূর্ষু রোগী মারা যায়। তারপর সবাই মিলে একটি ব্ল্যাড ব্যাঙ্ক খোলার সিদ্ধান্ত নেই।সেই গল্প আরেকদিন শোনাব।

IMG_20230514_123141.jpg

আপনারা জানেন আমার পরীক্ষা চলছে,পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত। এর মাঝেই আমার এক ভার্সিটি মেট ফোন দিয়ে বলে যে ওর ভাতিজির জন্য রক্ত প্রয়োজন। এখন আমার বাড়ি থেকে রক্ত দিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।আর যারা রক্ত নেয় সেই টেকনিশিয়ান রাও নিষেধ করেছে রক্ত দিতে।তারউপর আবার পরিক্ষা চলছে।সব মিলিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলাম।

কিন্তু তারপরেও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম যে রক্ত দেব। তবে যেতে হবে সেই বগুড়ায়।নিজের পকেটের টাকা খরচ করে গেলাম।তারপর বন্ধু সাজ্জাদ এর সাথে দেখা করলাম। ও আমাকে নিয়ে গেল একটি ক্লিনিকে। সেখানে ক্রস ম্যাচিং করার পর রক্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হল। কিন্তু এবারো বিপত্তি। টেকনিশিয়ান অনভিজ্ঞ ছিল।ফলে প্রথমবার সুই ফোটালেও রক্ত ব্যাগে আসছিল না। ফলে আবার পাশেই সুই ফোটানো হল। কিন্তু উনি বরাবর এর মত এবারো ব্যর্থ।

IMG_20230514_130939.jpg

টেকনিশিয়ান রক্ত দিতে নিষেধ করলেন।কিন্তু রোগীর মুখের দিকে তাকিয়ে আরেকবার সুই ফোটাতে বললাম,কারন উনারাও বগুড়ার বাইরে থেকে এসেছে কষ্ট করে।এখন উনাদের ফিরিয়ে দেওয়াটা আমার মন মানছিল না।আমার জোরাজুরিতে টেকনিশিয়ান রাজি হল।তখন একজন নার্স কে আনা হল সুই ফোটানোর জন্য। উনি ব্যান্ড এত জোরে বাধলেন যে হাতে দাগ পড়ে গিয়েছিল।তবে এবার ভাগ্য ভাল রক্ত আসা শুরু হল।তবে অনেক সময় লাগছিল। এক ব্যাগ ভর‍তে প্রায় ৪৫মিনিট লাগল।

IMG_20230514_132659.jpg

এরপর সুই খুলে নেওয়ার পর সেই নার্স বললেন আপনি খুবই ইমার্জেন্সি না হলে আর কখনোই ব্লাড দেবেন না।মানুষের উপকার করতে গিয়ে বিপদে পড়ে যাবেন।আপনার ভেইন এত ন্যারো যে সুই ভেইন এর থেকেও মোটা। বেশি খোচাখুচি করতে গিয়ে ভেইন ই বেশি ছিদ্র হয়ে গেলে ঝামেলায় পড়ে যাবেন।আমিও উনার সাথে সম্মত হলাম যে ইমার্জেন্সি ছাড়া আর ব্লাড দেব না। এরপর কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে চলে আসলাম। আসার সময় উনারা গাড়ি ভাড়া দিতে চাইলেও আমি নেইনি।এখন দুই হাতের তিন জায়গায় ফাস্ট এইড লাগানো,ভাবতেছি বাড়িতে কি বলব।সবাই আমার জন্য প্রার্থনা করবেন।

আজকে এই পর্যন্তই।সবাই আমার বন্ধুর ভাতিজির জন্য দোয়া করবেন সে যেন জলদি সুস্থ হয়ে ওঠে।ধন্যবাদ সম্পূর্ণ পোস্ট পড়ার জন্য।
Sort:  
 2 years ago 

খুবই অবাক করা লাগছে আপনি ১৫ বার রক্ত দিয়েছেন, এবং এটা ১৬ তম বার দিচ্ছেন।শুনেই আপনার প্রতি অনেক শ্রদ্ধা অনেক বেড়ে গেল। আপনাকে সাধুবাদ জানাই মহত্ব এই কাজের জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্য ভাইয়া।

 2 years ago 

আপনার একটি কথা আমার অনেক ভালো লেগেছে ভাইয়া আমরা এমন দেশে আছি যেখানে পানি কিনে খেতে হয় , আর সেই দেশে এক ব্যাগ রক্ত বিনামূল্যে পাওয়া যায়। দেখতে দেখতে আপনি ১৬ বার রক্ত দিয়েছেন তা জেনে আরও ভালো লাগলো। আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্য অনেক শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা রইল ভাইয়া। ‌

 2 years ago 

খুব ভালো লাগলো ভাইয়া পোস্টটি পড়ে। আপনি ১৫ বার রক্ত দিয়ে আজ ১৬ বারের মতো দিচ্ছেন। এটা খুবই মহৎ একটি কাজ।আমরা যারা সুস্থ আছি, আমরা পারি রক্ত দান করতে। এতে মঙ্গল সবার।অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।

 2 years ago (edited)

আপনি অনেক সুন্দর একটা কাজ করছেন ভাই। এইরকম অনেক মানুষ আছে যারা রক্তর জন্য কিছু করতে না পারে।আপনি ১৬ তম রক্ত দিয়ে অনেক সুন্দর একটা কাজ করছেন ভাই। আপনার পোস্ট পড়ে আমাকে খুব ভালো লাগলো, আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

আপনাকেও ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 2 years ago 

ভাইয়া আপনার মত আমিও কয়েকবার রক্ত দিয়েছি। রক্ত দেওয়ার মতো মহৎ কাজ আমার কাছে মনে হয় না আর কিছু আছে। রক্ত দিয়ে যদি কারো প্রাণ বাঁচানো যায় এক্ষেত্রে নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে হয়। যদিও আপনার মত এতবার দেওয়া হয়নি রক্ত। তবে অন্যের ভালোর জন্য নিজের ক্ষতি করবেন না। খুব দরকার ছাড়া আর কাউকে রক্ত দিবেন না।

আপনাদের মত মানুষের জন্যই হয়তো এখনো বলা হয় যে দেশে এখনো ভালো মানুষ রয়েছে। যদিও আমাদের ইন্ডিয়াতেও রক্তের তেমন কোন অভাব হয় না, মোটামুটি একটু খোঁজখবর লাগালেই রক্ত ম্যানেজ হয়ে যায়। যাইহোক শেষ পর্যন্ত যে আপনি রক্ত দিতে পেরেছেন এটাই অনেক। আপনার জন্য হয়তো একজন অসুস্থ রোগী পুনরায় তার জীবন ফিরে পেলো।

 2 years ago 

ধন্যবাদ দাদা।

Coin Marketplace

STEEM 0.13
TRX 0.22
JST 0.030
BTC 83643.17
ETH 1910.52
USDT 1.00
SBD 0.78