ডাক্তারী জীবনের প্রথম ইনকাম দশটাকা।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি-
বর্তমানে আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করতেছি। এখানে আমি প্রায় দশ বছর যাবৎ কাজ করতেছি। দশ বছরে অনেক মানুষ কোম্পানিতে এসেছে আবার চলে গেছে। প্রাইভেট কোম্পানিতে ম্যানেজমেন্ট মন চাইলে নতুন লোক নিয়োগ দেয় আবার মন চাইলে লোক ছাঁটাই করে দেয়। মানে বলা যায় শূণ্যে বাস করার মত। এসব কোম্পানিতে কয়দিন জব করা যাবে কেউ শিউর দিয়ে বলতে পারে না। একটু এদিক সেদিক হলেই বলে দিবে আপনার আগামীকাল থেকে অফিসে আসার দরকার নেই। একটি ছোট্ট বাক্যের মাধ্যমেই এসব সেক্টরে চাকরী জীবনের ইতি ঘটে। রাতে অফিস করে বাসায় গেলে,সকাল বেলা এসে অফিসে প্রবেশ করা যাবে এমন কোন গ্যারান্টিও নেয়। আবার ছুটিও খুব কম। দুই ঈদ ছাড়া অফিস বন্ধ থাকে না। সিএল ছুটির জন্য এপ্লিকেশন জমা দিলেও কত কাহিনী কত কথা শুনতে হয়। সে জন্য চাকরী থেকে মোটামুটি মন উঠে যাচ্ছে। পরাধীন হয়ে আর থাকতে মন চাইছে না। একদিকে স্বাধীন ভাবে কোন কিছু করার চিন্তা অন্যদিকে যেহেতো প্রাইভেট সেক্টরে চাকরীর কোন গ্যারান্টি নেই, সে জন্য হঠাৎ করে মাথার মধ্যে বিজনেস করার চিন্তা আসলো। কিন্তুু কি বিসনেস করা যায় সেই চিন্তা করতে লাগলাম।
অনেক দিক চিন্তা ভাবনা করে মেডিসিনের বিজসনেসটা আমার কাছে ভালো লেগে যায়। আর এটা এমন একটি বিজনেস যেটা বৃদ্ধ বয়সেও করা যাবে। একদিকে মানব সেবা হবে অন্য দিকে ইনকামের বিষয়টা তো আছেই। সেই চিন্তা থেকেই একটি ফার্মেসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তুু ফার্মেসী দেওয়া তো মুখে কথা নয়, যে বললাম আর করে ফেললাম। এটা তো এমন নয় যে, ক্রেতা আসলো আর আমি আলু, পেঁয়াজের মত কেজি ধরে মেপে বিক্রয় করে দিলাম। ফার্মেসী দিতে হলে মেডিকেল বিষয়ে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। সময় দিতে হবে, অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। একজন ফার্মেসিস্টের সাথে এই বিষয়টা আলাপ আলোচনা করলাম। তিনি আমাকে সর্বপ্রথম দুই একটি কোর্স করার পরামর্শ দিলেন। মানে মেডিকেল বিষয়ে কিছু কোর্স আছে, সে গুলো করতে পারলে কিছু সার্টেফিকেট হবে। ফার্মেসী জীবনে কাজে লাগবে।
এখন ইনলাইনে খোঁজাখুজির পরে জানতে পারলাম যারা জেনারেল বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছে, তারা যদি ইচ্ছা করে LMAF, DMS, RMP এসব কোর্স করে ফার্মেসী পরিচালনা করতে পারবে। আবার সি ক্যাটাগরি ফার্মেসি কোর্স করেও মেডিসিন সেল করতে পারবে। আমি একটু অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে সরকারি লাইসেন্স প্রাপ্ত একটি কোচিং সেন্টারে DMS কোর্সে ভর্তি হলাম। এটা এক বছরের একটি কোর্স। DMS করে আমি আবার RMP কোর্সও করবো। আমি গত বছর নভেম্বরে DMS কোর্সে ভর্তি হয়ে ছিলাম। আর কয়েক মাসের মধ্যেই আমার এই কোর্সটি শেষ হয়ে যাবে। আমি DMS কোর্সে ভর্তি হওয়ার পাশাপাশি একটি ফার্মেসীতেও সময় দিতাম। সন্ধার পরে অফিস থেকে গিয়ে রাত ১১টা পর্যন্ত সেখানে সময় দিতেছি। একটি ফার্মেসীতে তিনমাস কাজ করার পরে সেই ফার্মেসীর মালিক ফার্মেসী ভিসা পেয়ে নিউজিল্যান্ড চলে গেছে। তারপর আমার বাসার পাশে আরেকটি ফার্মেসীতে সময় দিতেছি।
আমি সন্ধার পরে যখন ফার্মেসীতে যায় তখন সেখানে প্রচুর রোগি থাকে। সব থেকে বেশি রোগি হলো এলার্জির রোগী। প্রতিদিন একশত রোগি আসলে এর মধ্যে ৯০ জন আসে এলার্জির সমস্যা নিয়ে। শুনতেছি যারা করোনার সময় চতুর্থ ডোজ পর্যন্ত দিয়েছে তাদের এলার্জির সমস্যাটা একটু বেশি দেখা যাচ্ছে। মানে ভ্যাকসিন দিয়ে যে এলার্জি হয়েছে এমন না। আগে কিছু এলার্জি ছিল, এখন সেটা একটু বেড়েছে। যায়হোক এটা কতটা সত্যা সেটা পরিক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া কিছু বলা যাবে না।
বয়স্ক রোগি যারা আসে, তারা এসেই বলে প্রেসারটা একটু মেপে দেন। আমি যতক্ষন ফার্মেসীতে থাকি ততক্ষন আমিই সবার প্রেসার মাপি। অধিকাংশ মানুষের লো প্রেসার থাকে। দুই একজানের হাই প্রেসার থাকে। তো ছয় মাসে অনেক রোগির প্রেসার মেপেছি, কিন্তুু কেউ কোন টাকা পয়সা দেয়নি। অনেক মানুষ আসে প্রেসার পেমে ঔষুধ ও নেয় না, চলে যায়। এটা স্বভাবিক কারো ঔষুধ না লাগলে সে ঔষুধ নিবে কেন। এটা নিয়ে আমার বা ফার্মেসীর মালিকের কোন অভিযোগ নাই। তবে গত পরশু দিন রাত সাড়ে দশটার দিকে ফার্মেসী গুছাচ্ছি, এগারোটার দিকে বন্ধ করে ফেলবো। এমন সময় একজন মহিলা এসে বললো ডাক্তার আমার প্রেসারটা একটু মেপে দেন। আমি স্বাভাবিক ভাবে প্রেসার মেপে দিলাম। তার প্রেসার ছিল ১১০/৫০ মানে কিছুটা লো প্রেসার। ঠিক ভাবে খাওয়া দাওয়া করলে ঠিক হয়ে যাবে। এই প্রেসারে যদি রোগি স্বাভাবিক জীবন পরিচালিত করতে কোন সমস্যা না হয়। তাহলে কোন সমস্যা নাই। ঐ মহিলা বললেন আমি কিছুক্ষন আগে অন্য একটি ফার্মেসীতে প্রেসার মেপেছিলাম। তারা বললো আমার প্রেসার নাকি ১৪০/৮০ মানে হাই প্রেসার। কিন্তুু আমি তো জানি আমার লো প্রেসার, এই কারনে দৌড়ে আপনাদের কাছে আসলাম আরেকবার প্রেসারটা মাপার জন্য। আমি বললাম হয়তো তিনির কোথাও ভুল হয়েছে। মহিলাটি কোন ঔষুধ নেয়নি, যাওয়ার সময় আমার হাতে দশ টাকার একটি নোট গুজে দিলেন।
আমি তো অবাক প্রেসার মেপে আমরা তো কারো থেকে টাকা নেয় না। তিনিকে অনেক জোরাজোড়ি করার পরেও টাকা রিটার্ন দিতে পারলাম না। তিনি বললেন আমি সবসময় প্রেসার মেপে টাকা দেয়। রেখে দেন এটা কোন খারাপ বিষয় না। ফার্মেসীর মালিক বললেন রেখে দেও তিনি খুশি হয়ে তোমাকে দিয়েছেন। এমাউন্ট দশ টাকা হলেও এটা আমার ডাক্তারী জীবনের প্রথম ইনকাম। আমার কাছে দশ লাখ টাকার সমান।😍
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
ফটোগ্রাফির বিবরণ:
ডিভাইস | মোবাইল |
---|---|
মডেল | realme-53 |
নাম | ডাক্তারী জীবনের প্রথম ইনকাম দশটাকা। |
স্থান | শিবু মার্কেট , নারায়নগঞ্জ, ঢাকা, বাংলাদেশ। |
তারিখ | ২১/০৯/২০২৪ |
কমিউনিটি | আমার বাংলা ব্লগ |
ফটোগ্রাফার | @joniprins |
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
এটা আপনি একদম ঠিক কথা বলেছেন ভাইয়া প্রাইভেট কোম্পানিগুলোতে চাকরির কোন নিশ্চয়তা থাকেনা একবার নিষেধ করে দিলেই সেখানে আর যাবার মত কোন অবস্থায় থাকে না। আমিও চিন্তা করছি বিজনেস করার জন্য শিক্ষকতা পেশা আর ভালো লাগছে না। আমারও শিক্ষাগত বেশ ভালো লাগলো যদি এটা সরকারি প্রতিষ্ঠান হতো। যাই হোক প্রথম দিনে আপনি পেশার মেপে দশ টাকা উপার্জন করতে পেরেছেন এটা জানতে পেরে ভালই লাগলো।
জী ভাইয়া একটা স্বাধীন পেশায় যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি। ধন্যবাদ।
আপনার পোস্ট পড়ে বেশ ভালো লাগলো ভাইয়া। ফার্মেসি দিতে গেলে ডাক্তারের মত না হলে ডাক্তার হতে হয়। আর যেকোন কাজ তো হুটহাট করে করা যায় না। আপনি কয়েকটি জায়গায় কোর্সও করেছেন এটা বেশ ভাল বিষয়। আর আজকে আপনি একটা ফার্মেসিতে থাকেন সেখান থেকেই প্রেসার মেপে প্রথম দশ টাকা ইনকাম করেছেন। আপনার অনুভূতিটা জানতে পেরে বেশ ভালো লাগলো। এভাবে একদিন অনেক বড় কিছু হবেন শুভকামনা রইল ভাইয়া।
জী আপু অনেক কিছু শিখতে হয়। অনেক অভিজ্ঞতা লাগে। ধন্যবাদ।
শুভকামনা রইল এগিয়ে যান ডাক্তারি পেশায়। তবে এমন ডাক্তার হতে হবে পাবলিক যাকে দেখে স্বস্তি পায়। আপনার মধ্যে সে মনোবল সৃষ্টি হোক, ভবিষ্যতে ভালো পর্যায়ে উঠতে পারেন তেমনটাই দোয়া প্রার্থনা করি।
যারা এমবিবিএস ডাক্তার তাদের এসব বলেন। যেন গলা না কাটে। আমরা তো জাষ্ট মেডিসিন সেল করি। ধন্যবাদ।
এটা একেবারে ঠিক বলেছেন প্রাইভেট চাকরীর কোন নিশ্চয়তা নেই। মালিক পক্ষ যখন তখন চাকরী থেকে বাদ দিতে পারেন। তবে আপনি ফার্মেসী ব্যবসা করার জন্য বিভিন্ন কোর্স করছে তা একেবারেই সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়। এই ব্যবসায় লস কম। তবে ইনভেস্ট একটু বেশি। তবে আপনি যখন লক্ষ্য ঠিক করেছেন সফল হবেন।অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য।
জী আপু দোয়া করবেন। যেন লক্ষে পৌছতে পারি। ধন্যবাদ।
প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করলে শান্তি নেই। মেডিসিন ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ভালোই করেছেন। প্রথমবার পাওয়া 10 টাকা লাখ টাকার সমান। আশা করছি ভালো কিছুই করতে পারবেন। শুভকামনা রইলো ভাইয়া।
জী আপু চেষ্টা করছি, ব্যবসা আগে শিখতেছি। পরে শুরু করবো। ইনশাআল্লাহ।
আপনার পোস্ট পড়ে অনেক ভালো লাগলো। সত্যি বলেছেন ভাইয়া প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করলে সব সময় রিস্ক এর মধ্যে থাকতে হয়। এটা ঠিক মহিলাটি দশ টাকা দিয়েছে খুশি হয়ে এটাই অনেক। আপনি ঠিকই বলেছেন জীবনের প্রথম ইনকাম দশ টাকা দশ লক্ষ টাকার সমান। বেশ ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।
জী আপু এমাউন্ট কম হলেও অনুভূতি দারুন ছিল। ধন্যবাদ।
প্রেসার মেপে টাকা নেওয়া হয় অনেক জায়গায় ভাইয়া।আপনি হয়তো এটা জানেন না।ভালো লাগলো আপনার প্রথম ইনকাম রোগী দেখে ১০ টাকা।আর আপনি বেশ বুদ্ধিমান যে ভালো একটি প্রফেশন বাছাই করেছেন ভবিষ্যতের জন্য।ফার্মেসি পরিচালনা করার দক্ষতা অর্জন করে সেই অনুযায়ী কাজ করলে বেশ সফল হওয়া যায়,ধন্যবাদ।