ব্লাকমেইলের ফাঁদে যখন আমিঃ
আসসালামু আলাইকুম |
---|
আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন? আমি ও ভালো আছি ইনশাআল্লাহ। বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার করবো আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি। যে ঘটনাটি আমি কোনদিন ও ভুলতে পারিনি। আসলে আমাদের সমাজের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে কিছু মানুষ রুপি অমানুষ রয়েছে যা প্রতিনিয়তই চেস্টা করে অন্যকে ঠকিয়ে বা ধোকা দিয়ে কিভাবে সমাজে বেঁচে থাকা যায়। চলুন তাহলে শুরু করা যাক - |
---|
Copyright free image source:pixels
পোস্ট ক্যাটাগরিঃ বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে একটি গল্প। |
---|
পোস্টের শিরোনামঃ ব্লাকমেইলের ফাঁদে যখন আমি। |
---|
পোস্টের তারিখঃ ৪ঠা কার্তিক ১৪২৯ খ্রিস্টাব্দ(বাংলা)। |
---|
তো আমি যে জবগুলোতে এপ্লাই করেছিলাম তার মধ্যে একটি জব ছিলো সোনার বাংলা কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারি পদে। কিন্তু এখানে শুধু বিভিন্ন অফিসের চিঠি পত্র ডেলিভারি করতে হবে, ভারি কোন পণ্য বা দ্রব্য সামগ্রী না। তো সেই জবটায় আমাকে কল করলো। আমি তাদের অফিসে গেলাম গিয়ে কথা বার্তা বলার পর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন যে আমি জবটা করবো কিনা, আমি বললাম জি স্যার আমি জবটি করতে চাই। সাথে আমার লেখা-পড়ার বিষয়টি ও খুলে বললাম। তারা আমার সব শুনে ও জবটা আমাকে দিতে রাজি হলো।
আমি ও আমার প্রয়োজনে চাকুরীটা ফাইনাল করে নিলাম। পরেরদিন থেকেই আমি ডিউটিতে আসবো বলে চলে আসলাম। আমার বেতন ধরা হলো-১৮০০/- দুপুরের খাবার বাবদ ৪০ টাকা এবং যাতায়াত ভাড়া যা আসে তা একচুয়াল দিবে।
পরের দিন আমি জয়েন করলাম। আমার অফিস ছিলো মালিবাগে। আমার বাসা ছিল পুরান ঢাকার নারিন্দায়। যাই হোক আমি নিয়মিত অফিসে আসতেছি এবং কাজ করতেছি। আমার বেশির ভাগ ডেলিভারি এরিয়া ছিল মতিঝিল-দিলকুশা এলাকায়। তো একদিন আমি গাড়িতে গিয়ে আরামবাগ নেমে সেখান থেকে ডেলিভারি করতে করতে মতিঝিলে বাংলাদেশে ব্যাংকের সামনে আসি। জাস্ট বাংলাদেশের ব্যাংকের সামনে আসার সাথে সাথেই পিছন থেকে একজন লোক আমাকে ডাক দিল।
Copyright free image source:pixels
আমাকে কিছু না ভেবে সরল মনে তার কাছে যাই।
কাছে গেলে সে আমাকে জিজ্ঞেস আপনি কি করেন আমি বললাম একটা কুরিয়ারে চাকুরী করি। তখন সে আমাকে বলে সে ডিবির লোক, আমি তার কথা বিশ্বাস করলাম। লোকটা আমাকে জিজ্ঞেস করলো আপনি কি লেখা পড়া করেন? আমি বললাম জী, লোকটা জিজ্ঞেস করল কোথায় লেখা পড়া করেন? আমি বললাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। তখন লোকটা আমার কাছে বলে, আপনার আইডি কার্ড আছে? আমি বললাম আইডি কার্ড নাই তবে একটা লাইব্রেরী কার্ড আছে।
লোকটা আমার লাইব্রেরী কার্ডটা চাইলো। আমি ব্যাগ থেকে লাইব্রেরী কার্ডটি বের করে তার হাতে দিলাম। সে কার্ডটি হাতে নিয়ে দেখে বললো এটার তো মেয়াদ শেষ। আসলেই কার্ডটির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল, ওটার মেয়াদ ছিল এক বছরের। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে ওনি যদি ডিবির লোকই হয় তাহলে আমার আইডি কার্ড কেন চাচ্ছে। আমার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছিল।
এরপর লোকটা আমাকে বললো আপনার কাছে কি আছে? বললাম আমার কাছে তেমন কিছুই নাই, তারপর লোকটা আবার বলবো কতো টাকা আছে আপনার কাছে? আমি বললাম আমার কাছে ১৪০ টাকা আছে। সে আমাকে বললো যা আছে তাই বের কর। আমি আমার মানি ব্যাগে থাকা ১৪০ টাকা বের করে লোকটার হাতে দিলাম।
লোকটা ১২০ টাকা নিয়ে ২০ টাকা আমার হাতে দিয়ে বললো এবার ডানে বামে না তাকিয়ে সোজা চলে যা। আমি ভীষন ভয় পেয়ে কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা সামনের দিকে চলে গেলাম। পরে আমি বুঝতে পারলাম যে লোকটা আমাকে ব্লাকমেইল করেছে। কিন্তু আমি প্রথমে বুঝতে পারি নাই।
সেদিন আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। কারণ ওখানে আমার লাঞ্চের টাকা ছিলো, যার কারণে সেদিন আমি লাঞ্চ করতে পারিনি। তাছাড়া সে সময়ে ১২০ টাকা মানে একজন সাধারণ মানুষ এর কাছে অনেক কিছু ছিল। এটা ছিল আমার জীবনের অন্যতম স্বরণীয় একটি ঘটনা। যা আমি কোন দিন ও ভুলতে পারবো না।
Copyright free image source:pixels
সুতরাং আমি সবাইকে অনুরোধ করবো, জীবনে চলার পথে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। কেননা আমাদের জীবন সর্ব ক্ষেত্রে বিরাজ করছে এইসব অমানুষগুলি যারা কিছু বুঝে উঠার আগেই আমাদেরকে ব্লাকমেইল করে আমাদের সব কিছুই হাতিয়ে নেয়। ধন্যবাদ সবাইকে।

বর্তমান সময়ে এমন অনেক মানুষ আছে যারা মানুষদেরকে ব্ল্যাকমেল করতে অনেক বেশি ভালোবাসে। আমি মনে করি আপনাকে যেই ব্যক্তিটি ডিবির পরিচয় দিয়ে ধরেছিল সে আসলে হয়তো শহরের কোন টুকাই। আপনার কাছ থেকে ১২০ টাকা নিয়েছিল এটা জেনে খুবই খারাপ লাগলো যে আপনি সেদিন দুপুর বেলা না খেয়ে ছিলেন। বর্তমান শহরটা আগের তুলনায় বেশি খারাপ অবস্থা এখন যেখানে সেখানে ছিনতাই হচ্ছে, কদিন আগেই শুনতে পেলাম রেললাইনের ধার ধরে আসা কয়েকজন ছেলের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়া হয়েছে। আসলে এরকম পরিস্থিতিতে যারা পড়েছে তারাই একমাত্র বুঝতে পেরেছে যে তখনকার সেই সময়টা কতটা অসহায় মনে হয় নিজের কাছে। চমৎকার একটি ব্ল্যাকমেল এর ঘটনা পড়লাম ভালো লাগলো।
জী ভাইয়া আপনি ঠিকই বলেছেন। এখন মানুষ শুধু চিন্তা করে কিভাবে একজন অন্যজনের সাথে চিটারি বাটপারি করবে।ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আসলে এরকম পথে ঘাটে অনেক দেখা যায় যারা ঠকিয়ে এরকম টাকা-পয়সা নিয়ে যায়। আসলে লোকটি যদি ডিবির লোক হতো তাহলে রাস্তায় কেন আপনার থেকে টাকা চাইবে। আর তখনকার সময় সত্যিই ১২০ টাকা অনেক বেশি মূল্যবান ছিল। লোকটি টাকা নিয়ে যাওয়াতে আপনি লাঞ্চ করতে পারেননি এটা শুনে ভীষণ খারাপ লাগলো। আসলে আমাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকা উচিত।
সেদিন আমি টাকাগুলোর জন্য খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্যের জন্য।