পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হাজীর বিরিয়ানি।
পুরান ঢাকার বিরিয়ানি
- The 22th June , 2022
- Wednesday
হ্যালো বন্ধুরা, আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আমি আজকে সেই দুপুর থেকেই ভাবছি আজকে কোন বিষয় নিয়ে পোস্ট করব। মাথায় আসছিল না। ব্যাচেলর পয়েন্ট নাটকের গত বেশ কয়েকটি পর্ব মিচ চলে গেছে। না দেখা রয়ে গেছে। ওগুলো দেখতে দেখতে অনেক সময় কেটে গেল আজ। এরপরই হঠাৎ আমার বিরিয়ানি খাওয়ার ইচ্ছে জাগলো। এখন বিরিয়ানি খাওয়া পসিবল না। কিন্তু বিরিয়ানি নিয়ে একটা কনটেন্ট লেখা ফেলা যেতে পারে। চলুন তাহলে বিরিয়ানি খেয়ে আসি। হেহেহে।
বিরিয়ানি পছন্দ করে না এমন মানুষ দেশে খুব কমই আছে । বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার মানুষদের কাছে বিরিয়ানি হলো একটা অমৃত খাদ্য। বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে অতিথি আপ্যায়নে বিরিয়ানির জুড়ি নেই। বাংলাদেশর প্রত্যেকটা শহরে, এমনকি গ্রামেও প্রচুর বিরিয়ানির দোকান দেখা যায়। বাহারি রকমের নাম। অলিতে-গলিতে সবখানেই ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের বিরিয়ানির দোকান। হাজী বিরানী, নান্না বিরানী এই দুইটা নাম খুব বেশি দেখা যায় প্রত্যেকটা জেলাতেই। এমন নামে বিরিয়ানির দোকান খুঁজে পাওয়া খুব একটা কঠিন নয়। কিন্তু পুরান ঢাকায় যেই অরিজিনাল হাজীর বিরিয়ানি আছে সেটার কোন শাখা বাংলাদেশ কোথাও নেই এখন পর্যন্ত। কিন্তু এই নামে হাজার হাজার দোকান আছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানির নামডাক বহু শুনেছি। ইচ্ছে ছিল অরিজিনাল এই হাজীর বিরিয়ানি তে গিয়ে বিরিয়ানি খাব। কিন্তু সেটা কখনো হয়ে ওঠেনি। এইতো কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই আমার রুমমেট রাহুল আর আমার বন্ধু পাপ্পু তিনজন সিদ্ধান্ত নিলাম যে * পুরান ঢাকায় যাব অরিজিনাল হাজীর বিরিয়ানি খাইতে ৷ তখন রাত, আর রাতেই ডিসিশন নিয়ে রওনা দিয়েছিলাম। আর সেদিন আমাদের বাসাতে আমার এলাকা থেকে একটা গেস্ট এসেছিল। মোট চারজন রাত আটটার দিকে সম্ভবত রওনা দিয়েছিলাম রিক্সায় করে পুরান ঢাকার উদ্দেশ্যে।
২০ মিনিটের মধ্যে আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম। ওই সাইডে অনেকগুলো বিরিয়ানির দোকান আছে কিন্তু আমরা টার্গেট করেই গিয়েছিলাম শুধুমাত্র হাজীর বিরিয়ানি তে গিয়ে বিরিয়ানি খাব। এটা সারাদেশে ফেমাস। আমরা যখন সেখানে গেলাম তখন দেখলাম কোন একটা চেয়ার ও ফাঁকা নেই যেখানে আমরা বসবো। আমাদের কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। একটা টেবিলে বসে ছিলো ৫ জন। উনারা খাওয়া শেষ করল তখনই আমরা ওই চেয়ারে বসলাম। আর ওখানে এত ব্যস্ততার মধ্যেও যাঁরা খাবার সার্ভ করছিল তাদের ব্যবহার ছিল সুন্দর। অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করে অ্যাটেনশন নিতে হচ্ছিল না। ওখানে সব খাসির মাংসের বিরিয়ানি। অর্ডার দিয়ে আমি খুবই এক্সাইটেড হয়ে বসেছিলাম। কখন সেই দেশ সেরা বিরিয়ানি মুখে দিব। অর্ডার দিয়ে বেশি সময় বসে থাকতে হয়নি। অল্পসময়ের মধ্যেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত সেই বিরিয়ানি আমাদের সামনে চলে আসলো।
সাথে ছিলো লেবু, মরিচ, পেঁয়াজ। সব মিলিয়ে দেখতেও দারুন ছিল। এবার আসলো সেই মুহূর্ত, যখন আমি বিরিয়ানির এক লোকমা মুখে তুলে নিলাম। মুখে দেওয়ার পর থেকে আমি পুরো হারিয়ে গিয়েছিলাম। শুধু স্বাদটা অনুভব করছিলাম। মুখে নেওয়া থেকে শুরু করে পেটে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মুহূর্তটা এত সুন্দর একটা সুস্বাদু ব্যাপার মুখের মধ্যে ঘটে চলছিল, যে কি আর বলব। কিভাবে বুঝাই..। মাংসগুলোতে চাপ দিলে গলে যাচ্ছিল। মাংসের টুকরাগুলো ছিল পারফেক্ট সাইজের। কিছু কিছু খাবার মুখে নিলে আপনা-আপনি চোখটা বন্ধ হয়ে আসে, যখন খাবারটি তুখোড় সুস্বাদু হয়। নিঃসন্দেহে আমার লাইফে খাওয়া সেরা বিরিয়ানি ছিল।
এক প্লেটে যা ছিল তাই ছিল আমার জন্য পারফেক্ট। আর নিতে হয় নি পরে। খাওয়ার পরে একটা বোরহানি নিয়েছিলাম। এটাও হাজীর বিরিয়ানির নিজস্ব প্রোডাক্ট। বিরিয়ানি খাওয়া শেষ করে, বোরহানি খেয়ে চরম তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বাইরে চলে আসলাম। এরপর টাকা পয়সা পে করে রিক্সা নিয়ে বাসার দিকে ফিরে এলাম।
মন ভরে যাওয়া খাবার খেয়ে, তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে রাত সাড়ে দশটার দিকে ঢাকা শহরে রিক্সায় চড়ে বাতাস খেতে খেতে পথ চলতে দারুন লাগছিল। দশ পনের মিনিটের মধ্যেই বাসায় চলে এসেছিলাম। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোড দিয়ে এসেছিলাম। তখন রাস্তা বেশ ফাঁকাই ছিল। এজন্য ফিরতে বেশি একটা সময় লাগেনি।
তো এটাই ছিল আমার পুরান ঢাকার সেই ঐতিহ্যবাহী বিরিয়ানি খাওয়ার গল্প। মাঝেমাঝেই যাওয়ার ইচ্ছে আছে। অনেক আগেই গিয়েছিলাম কিন্তু শেয়ার করা হয়নি। আজ শেয়ার করেই ফেললাম। আশাকরি আপনাদের ভাল লেগেছে। মন্তব্য জানাবেন অবশ্যই কমেন্ট বক্সে। আমি বিদায় নিচ্ছি এখানেই। দেখা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

কি আর বলবো ভাই এই খাওয়ার অনুভূতি আপনি এমন ভাবে প্রকাশ করেছেন যে আমার মনে হচ্ছে আমি এখনই খেয়ে আসি। আর লোভ সামলাতে পারছি না আসলে হাজী বিরানি খুবই মজাদার। আপনি ঠিক বলেছেন আসলে বিরায়ানি পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না ।ধন্যবাদ আপনাকে বিরিয়ানি খাওয়ার সেই মজার মুহূর্তগুলো শেয়ার করার জন্য।
গানে গল্পে পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানির অনেক সু-নাম শুনেছি। আজ আপনি ছবি দেখিয়ে মোটামুটি আকারে জিভেজল এনে দিলেন। এবার কখনো ওইদিকে গেলে আর মিস করছি না।
পুরান ঢাকার বিরিয়ানি আমাদের বাংলাদেশসহ ভারতেও অত্যন্ত সুনাম রয়েছে। প্রতিবছর অনেক ভারতীয় বাঙালি এখানে এসে এই বিরানির টেস্ট নিয়ে যায়। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে আমার কখনো যাওয়া হয়নি। আপনার আজকের বিরায়ানি খাওয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝখানে এত সুন্দর করে উপস্থাপন করার জন্য অনেক কৃতজ্ঞ আমরা।
ভাইরে ভাই,,,এমনে কেউ ছবি তুলে নাকি!জিভ তো ঠিক থাকেনা।
আমাদের এদিকে কোনো বিরিয়ানির দোকান মানেই তার সাইনবোর্ডে লেখা থাকবে,,ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হাজীর বিরিয়ানি পাওয়া যায়।
অথচ,যার কোনো ঠিক ঠিকানাই নেই কোথাকার বিরিয়ানি।
ঢাকা গেলে ইনশাল্লাহ খেয়ে দেখবো।ছবি দেখে লোভ সামলানো যাচ্ছেনা।
শুভ কামনা রইলো 🌺
পুরান ঢাকার হাজী বিরিয়ানি খুবই বিখ্যাত। আমি অনেকবার খেয়েছি হাজী বিরিয়ানী। আপনি বিরিয়ানি খাওয়া শেষে বোরহানি ও নিলেন😋😋😋।আমারতো শুনেই খুব খেতে ইচ্ছে করছে।বিরিয়ানি আমারও খুব পছন্দ।আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া বিরিয়ানি নিয়ে এত সুন্দর একটি পোষ্ট শেয়ার করার জন্য।
ঠিকই বলেছেন ভাই বিরানি আমাদের জন্য প্রিয় একটি খাবার, বিরিয়ানি হলে আমার আর কোন কিছু লাগেনা, তবে এখনো আমার পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানি খাওয়া হয়নি যদিও অনেক ফেক হাজী বিরানি খাওয়া হয়েছে 😁, ভাবছি কোন একদিন বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে পুরান ঢাকা ঘুরে আসব।
পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানির কথা অনেক শুনেছি। কিন্তু কখনো খাওয়া হয়নি। আপনার বিরিয়ানির প্লেট দেখেই মনে হচ্ছে অনেক সুস্বাদু বিরিয়ানি গুলা। তাছাড়া ঠিক বলেছেন বিরিয়ানি পছন্দ করেনা এরকম মানুষ খুবই কম পাওয়া যায়। আমি নিজেও বিরিয়ানি অনেক পছন্দ করি। এত সুন্দর একটা পোস্ট শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
পুরান ঢাকার হাজী বিরানী আসলেই বিখ্যাত। আর এই নামেই সারাদেশের অলিতে গলিতে কত বিরিয়ানির দোকান আছে তা গুনে শেষ করা যাবে না।
পুরান ঢাকার হাজী বিরানী যদিও খাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি তবে শুনেছি এটা আসলেই অমৃত।
আপনার বিরিয়ানি খাওয়ার গল্পটি পড়ে বেশ ভালো লাগলো।
আমাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
একদম ঠিক বলেছেন ভাই পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হাজীর বিরিয়ানির বাংলাদেশ কোথাও কোন শাখা না থাকলেও এই নামের যত্রতত্র অসংখ্য রেস্টুরেন্ট আছে। আমার জেলা শহরে হাজির বিরিয়ানি নামে তিন-চারটা রেস্টুরেন্ট লক্ষ্য করেছি। যাইহোক পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী হাজীর বিরিয়ানি খেতে গিয়ে অভিজ্ঞতাটুকু পড়ে খুব ভালো লাগলো। সত্যি বলতে আসল হাজির বিরিয়ানি আমি কোনদিন খাইনি। ইচ্ছা আছে এবার ঢাকায় গেলে প্রথমে এই কাজটা সেরে ফেলব।
ধন্যবাদ আপনাকে
হাজির বিরিয়ানি নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক রেস্টুরেন্ট চালু হয়েছে। তবে আপনার কাছ থেকে প্রথম জানলাম যে অরিজিনাল হাজীর বিরিয়ানির অন্য কোন শাখা নেই। সত্তিকারের হাজীর বিরিয়ানি খাওয়া এখনো আমার হয়ে ওঠেনি। ইচ্ছা আছে আপনার মত আমিও কোন একদিন এর শাদ গ্রহণ করব। ধন্যবাদ বিরিয়ানি খাওয়ার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য।