পানিপুড়ি ওয়ালার গল্প 📚 || 10% Beneficiary To @shy-fox 🦊 & 5% @ abb-school

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

আজ সকাল হতেই খুব মনটা খারাপ। কোন কিছুই যেন ভাল লাগছে না। তবুও প্রতিদিনের নিয়ম অনুযায়ী অফিসে যেতে হলো। অফিসে রওনা হলাম এবং সকাল নয়টার মধ্যে অফিসে পৌঁছালাম। অফিসে আমার রুমে ঢুকতে আমাদের অফিসের অফিস সহায়ক শফিক আামাকে সালাম দিলেন । তারপর আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ম্যাডাম চা খাবেন? লেবু দিয়ে এককাপ চা দিবো? আমি রুমে ঢুকে আমর সিটে বসলাম এবং কিছুক্ষন বিশ্রাম নিলাম। তারপর শফিককে ডেকে বললাম ভাইয়া আদা লেবু দিয়ে চিনি ছাড়া চা দিবা।আমি সাধারনত প্রতিদিন দুধ চা খাই। আজকে কেন যেন রং চা খেতে মন চাইলো।
যাক, শুরু করে দিলাম অফিসের জরুরী সব কাজ। এদিকে আমার বস এর করনা প্রজেটিভ হওয়ায় তিনি ছুটিতে আছেন। তাই অফিস টা একটু ঠান্ডা। প্রতিদিনের মত অফিসের কাজ শেষ করে কিছুটা অবসর হলাম।

আজ মনটা খারাপ, আর মন খারাপ হলে আমি কিছুটা সময় বাহিরের পরিবেশে ঘুরাফিরা করে বাসায় ঢুকি। তাই আমার খুব কাছের একজন বন্ধবী কে ফোন করলাম। বললাম বিকেল ফ্রি থাকলে চল তালতলা মার্কেটে যাবো। পানিপুড়ি খাবো। আমার প্রস্তাবে সে ও রাজি হয়ে গেল। তাই অফিস শেষে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে অফিস হতে বের হয়ে খিলঁগাও তালতলা সুপার মার্কেটে আসলাম।

খিঁলগাও তালতলা সিটি সুপার মার্কেট হলো ঢাকা শহরের খিঁলগাও এলাকায় অবস্থিত। এটা আমাদের বাসার সামনেই। আর ভাগ্যক্রমে আমরা দুই বান্ধবী একই এলাকায় বসবাস করি।

যাক আজকে আমি আমার মন খারাপ বা ঘুরতে যাওযা নিয়ে কোন কিছু আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে বসিনি। আজ আমি এই যে পোস্টটি লিখছি তা একজন পানিপুড়ি বিক্রেতার গল্প নিয়ে যা কাল্পনিক নয়, বরং বাস্তব। আর আমার বাংলা ব্লগে যেদিন হতে আমি নতুন সদস্য ট্যাগ পাই সেদিন হতে ভেবে রেখেছি আমি এই পানিপুড়ি ওয়ালা মামাকে নিয়ে কিছু লিখব। আর আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হলো।

IMG20220619181906.jpg
মামার পানিপুড়ি

তালতলা সিটি সুপার মার্কেটে প্রতিদিন অনেক পানিপুড়ি বিক্রেতা রাস্তায় দাড়িয়ে পানিপুড়ি বিক্রি করেন। তেমনিই একজন আজকের গল্পের এই নায়ক । আর তিনি হলেন পানিপুড়ি ওয়ালা মামা। এই মার্কেটে গেলে যার পানিপুড়ি না খেলে মন ভরে না। অনেক সময় একসাথে দুই/তিন প্লেট ও খেয়ে ফেলি।

IMG20220619181721.jpg
পানিপুড়ি ওয়ালা মামা

মামার দোকানের কাছে যখন আমরা, গেলাম তখন সেখানে চার/পাঁচজন ছেলে মেয়ে দাড়িঁয়ে দাড়িঁয়ে পানিপুড়ি খাচ্ছে। মামার দোকানে সাধারনত সন্ধ্যা থেকে রাত্র অবধি মানুষ ভিড় থাকে । কিন্তু আমরা যখন সেখানে গেলাম তখন বিকেল সাড়ে পাঁচটা।
মামা আমাকে দেখে বলল আপা কয় প্লেট বানামু ?

আমি বল্লাম মামা দুই প্লেট দেন। একটা ঝাল বেশি আর একটা ঝাল হালকা। মামা আমাদের পানিপুড়ি বানাচ্ছে। ততক্ষনে মামার দোকান খালি করে সবাই চলে গেছে। তাই এখন মামা একটু হালকা আছে।

আমি আস্তে আস্তে মামার একটু সামনে গেলাম। আর মামাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম – মামা আপনার তো এই দোকান আগে এই রকম পেন্ডেল এর নিচে ছিলো না, আগে তো আপনি সবার মত করে খোলা আকাশের নিচে দাড়িয়ে পানিপুড়ি বিক্রি করতেন। আর এখন দেখি সুন্দর পেন্ডেল এর নিচে দাড়িয়ে পানিপুরি বিক্রি করেন বিষয়টা কি? যদি একটু বলতেন। মামা বলল এটা মার্কেট কমিটি আমাকে অনুমতি দিছে। অবশ্য এর জন্য আমারে মাসে মাসে ভাড়া দিতে হয়। আমার পানিপুড়ি খাইয়া এলাকার পুলাপাইনরা মজা পায়। আর তাই আমার দোকানে প্রতিদিন অনেক পোলাপাইন ভিড় হয়। আর হের লাইগা, মার্কেট কমিটি আমারে এহানে বইবার কইছে।

মামা আপনার এই দোকানের ভাড়া দিতে হয় কত?
মামা- প্রতি মাসে এই দোকানের ভাড়া দেই দশ হাজার টাকা।
তা, মামা আপনার শুধু পানিপুড়ি বিত্ক্রি করে সব খরচ বাদ দিযে লাভ কিছু থাকে ?
মামা- আরে কি কন আপা? আপনেগো দোয়ায় আর আল্লাহর রহমতে এই দোকানের টাকা দিয়া আমার দুই সন্তান লেখা পড়া করে।

মামা আপনার পরিবারে কে কে আছে?
মামা- আমার পরিবারে আমার বউ, একটা ছেলে, আর একটা মেয়ে আছে। মেয়েটা আপনেগো দোয়ায় সিদ্বেশ্বরী মহিলা কলেজে অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষে আর ছেলে টা খিলগাঁও মডেল কলেজে আইএ ফাস্ট ইয়ারে পড়ে।
মামা, এই যে আপনার পানিপুড়ি এত যে, মজা তার পুরাটাই কি আপনি নিজে করেন?
মামা- আরে না। আমি এত কিছু কি নিজে বানাইতে পারি? শুধু ফুসকাটা কিন্না আনি। আর এই যে দেখতাছেন ঘুরনি এইডা আমার বউ নিজেই বানায়। প্রতিদিনি আামার বউ ভোরে ঘুম থেইকা উইঠা নামায কালাম শেষ করে নাস্তা পানি তৈরি করে। হেয় আমার পুরা সংসার দেখার পর প্রতিদিন প্রায় পাঁচ/ছয় কেজি ডাবলীর ঘুর্নি তৈরি করে, টক বানায় ।

IMG20220619181814.jpg
কিনা ফুচকা

IMG20220619181805.jpg
ঘরে বানানো টক

IMG20220619181827.jpg
ঘরে বানানো ঘুরনী

আর পানির পুড়ি বানাইতে আনুসাঙ্গিক যা লাগে সব হেয় তৈরি কইরা দেয়। আমি শুধু এহানে আইন্না বানাইয়া দেই। আবার এই যে দেখতাছেন এহানে এত যা বলবাটি আছে রাতে সব হেই পরিস্কার করে।

আপনার এই দোকানে আপনার প্রতিদিন কত টাকা বিক্রি হয়?
মামা- প্রতিদিনি আমার আড়াই থেইকা তিন হাজার টাকা বিক্রি আছে। কারন আমি তো এহানে সকাল দশটা থেইকা শরু কইরা রাত্র দশটা অবধি বসি। এইসমস্ত কথা বলতে বলতে পানি পুড়ি বানানো শেষ হেলো মামার। আর মামার হাতের পানিপুড়ি খেয়ে এবং আমার বাংলা ব্লগে লেখার মত একটি গল্প পেয়ে আমার মন অনেক ভাল হয়ে গেল।

IMG20220619181906.jpg

এই পানিপুড়ি কিভাবে পাবেন? দাম কত? এর পানিপুড়ির রেটিং-
মামার পানিপুড়ির দোকানটি ঢাকার খিঁলগাও তালতলা সিটি সুপার মার্কেটে। খিলঁগাও রেইলগেট নেমে যে কোন রিকশা চালক কে বললেই নিয়ে যাবে তালতলা সিটি সুপার মার্কেটে।
প্রতি প্লেট পানিপুড়ি মাত্র ত্রিশ টাকা।
আর রেটিং বা টেস্ট একশতে একশ।
যাই হোক, বন্ধরা আজ আমি আমার লিখনির মাঝে আপনাদের কাছে যে বিষয়টি উপস্থাপন করলাম তা থেকে খুব সহজে বুঝা যায় যে,মানুষের ইচ্ছা শক্তিটাই বড়। আসলে কোন কাজই ছোট না। মানুষ চাইলে অনেক ছোট কাজ করেও তার পরিবার পরিজনকে সুখে শান্তিতে রাখতে পারে।
আশা করি লেখাটি আপনাদের সবার খুব ভাল লাগবে।
কেমন লাগলো তা জানাতে ভুলবেন না যেন-

steemit ID- @maksudakawsar
Discord ID-@maksudakawsar#5058

Sort:  
 3 years ago 

যদি কখনো খিলগাঁও তালতলা যাওয়া হয় তাহলে অবশ্যই মামার দোকানের পানি পুরি খাব। পানিপুরি কে আমাদের এদিক ফুচকা বলে। মনমুগ্ধকর এই ফুচকা আমারও খুব পছন্দের। আপনি দুর্দান্ত লেখক। এবং অনেক পরিশ্রমী। আপনি যে মোবাইল দিয়ে ছবিগুলো তুলেছেন তা উল্লেখ্য করলে আপনার পোস্টটি আরোও পূর্ণাঙ্গ হত। শুভকামনা রইল আপু।

 3 years ago 

জি ভাইয়া অবশ্যই আসবেন আমাদের এলাকায়। আর আপনাকে ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান পরামের্শের জন্য

 3 years ago 

পানিপুড়ি খেতে আমার ও খুব ভালোলাগে। একেক জায়গায় এটার একেক নাম। আমরা এটাকে ফুচকা বলি।আপনার লিখার মাধ্যমে পানিপুড়ি মামার গল্পটা খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। আপনার প্রতি শুভকামনা রইল।

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া। আমার জন্য দোয়া করবেন।

 3 years ago 

আমি আবার ভাবলাম পানি পুরি কোন খাবারের নাম আসলে মিলাতে পারছিলাম না পরে দেখলাম যে এটা আসলে ফুচকার নাম। আমরা একা এটাকে ফুচকা বলে থাকি এটা আসলে সত্যিই খেতে খুবই মজার খুব সুন্দর গল্প তুলে ধরেছেন ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

ভাইয়া ফুচকা তো বলে বড় আকারের যেটা সেটাকে। আর এইটাকে বলে পানিপুড়ি। আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া।

আপনার পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলো। আপনি যে পানিপুরি ওয়ালার গল্পটা আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন এই বিষয়টা আমার কাছে ভালো লেগেছে। তবে আমি পানিপুরি ওয়ালা আয়ের কথা শুনে অবাক হয়েছি। আমাদের দেশে অনেক শিক্ষিত ছেলে মেয়ে চাকরি করে মাসে ২০/৩০ হাজার টাকার উপরে বেতন পায় না। অথচ পানিপুরি ওয়ালা মাসে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা ইনকাম করছে। কি অদ্ভুত অবস্থা এই দেশের।

 3 years ago 

ধন্যবাদ ভাইয়া। আশা করি আপনারা আমাকে এভাবে কাজ করার জন্য উৎসাহিত করে পাশে থাকবেন। আপনাদের অনুপ্রেরনা পেলে আমি আগামিতে আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোষ্ট তৈরি করতে পারবো।

 3 years ago 

আপনি পানিপুড়িওয়ালার গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আপনার গল্পটি সত্যি আনকমন একটি গল্প ছিলো।আশা করি সামনে আরো এমন গল্প শেয়ার করবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.25
JST 0.034
BTC 94126.54
ETH 2654.67
USDT 1.00
SBD 0.69