স্মৃতিবিজড়িত কুয়াশাচ্ছন্ন এক সকালে অ্যাসেম্বলি ক্লাস
আজ - বৃহস্পতিবার
হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক অনেক ভালো রয়েছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো রয়েছি। 'আমার বাংলা ব্লগ'এর সকল ভাইবোন বন্ধুদের কে আমার পক্ষ থেকে সালাম এবং অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে যাচ্ছি আজকের নতুন একটি পোস্ট। আজ আমি আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি গত বারোই ফেব্রুয়ারির কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশের নিচে এসেম্বলি ক্লাস আর জান্নাতুল ম্যাডামের বিদ্যালয় থেকে বিদায় নেওয়ার মর্মাহত অনুভূতি নিয়ে।
'আমার বাংলা ব্লগ' কোয়ালিটি সম্পন্ন পোস্ট |
---|
বারোই ফেব্রুয়ারি, স্কুলের উদ্দেশ্যে সকাল আটটার সময় বের হয়েছিলাম। বাড়ি থেকে বের হওয়ার মুহূর্তে আকাশে সূর্য উঠে পড়েছিল। আকাশ দেখে মনে হয়েছিল আজকে দারুন রোদ হবে। তবে স্কুলে পৌঁছানোর পূর্বে আকাশে যেন হঠাৎ কুয়াশা ঢেকে আসলো। হঠাৎ করে এমন কুয়াশা ঢেকে আসা যেন কেউ মেনে নিতে পারছিল না। হঠাৎ করে সূর্যের আলো মেঘের আড়ালে ঢেকে কুয়াশা নেমে এলো চারিপাশে। আর আমাদের বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি ক্লাস শুরু হয় সকাল নয় টার সময়। সকাল ৯ টা বাজতে বাজতে আরো ঘন কুয়াশা ঢেকে আসলো চারিপাশে। ইতোমধ্যে অনেক ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে এসে উপস্থিত হয়ে গেছে। অ্যাসেমলি ক্লাস শুরু হল। পূর্ব দিনের ন্যায় প্রথমে জাতীয় পতাকা উত্তোলন; জাতীয় পতাকার সম্মান প্রদর্শন; পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত;শপথ বাক্য পাঠ এবং জাতীয় সংগীত। যেহেতু অনলাইনে ছবি বা ভিডিও আপলোড করতে হয় তাই যে কোন মুহূর্তে আমি ফটোগ্রাফি বা ভিডিও করতে পারি। হঠাৎ এমন কুয়াশা তাই ভেবেছিলাম সিক্ত বিদায় নেওয়ার পথে তাই একটা ভিডিও করি। আর এর মাঝে মাঝে ফটোগ্রাফি করে রাখছিলাম। হঠাৎ আমাদের প্রাণ প্রিয় ম্যাডাম জান্নাতুল বলে উঠলো আজকে স্কুল থেকে বিদায় নেব দিনটা ভালো গেল না, কুয়াশা নেমে আসলো। তখন আমি নিশ্চিত হলাম উনি আজকে স্কুল ছেড়ে চলে যাবেন। উনি কেন স্কুল ছেড়ে চলে যাবেন কখন যাবেন বিস্তারিত আমার জানা ছিল না। তবে উনি চলে যাবেন কিছুদিন ধরে কমবেশি কানে আসছিল, কারণ অনেক পথ অতিক্রম করে তাকে স্কুলে আসতে হয় কিন্তু বেতন বৃদ্ধি না হওয়ায়, চলাচল কঠিন হয়ে গেছিল। উনি আরো বলেছিলেন পরিবারের দিক থেকে সমস্যা তার। কিছুদিন পর হঠাৎ যেমন কুয়াশা আমাদের সকলকে বিব্রত করছিল ঠিক জান্নাতুল ম্যাডামের এমন সিদ্ধান্ত আমাদের সকলের জন্য মর্মাহত করছিল। লক্ষ্য করছিলাম জাতীয় সংগীতের সময় অন্যান্য ম্যাডামদের চোখে পানি।
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স
কোরআন তেলাওয়াত,শপথ বাক্য ও জাতীয় সংগীতের পর শুরু হলো পিটি প্যারেড। যেহেতু প্রচন্ড কুয়াশা নেমে এসেছিল এই মুহূর্তে অনেক ছাত্রছাত্রী পিটি প্যারেড করতে আনন্দ বোধ করছিল। কারণ পিটি প্যারেড করার সময় সকলের গা ঘেমে যায়। তাই অনেকের অনেক সমস্যা বা কষ্ট হয়। এমন কোন কুয়াশা আর হালকা বাতাসে প্যারেড করতে তেমন কষ্ট হচ্ছিল না। তবে সকলের মনে একটু কষ্ট হচ্ছিল ম্যাডাম আজকে চলে যাবে স্কুল ছেড়ে এই চিন্তা মাথায় রেখে। কারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উনি গান নাচ শিখাতেন। খুব সুন্দর ভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। আপনার সাথে আমিও পরিচালনা করতাম। কোন কোন দিন উনি একা পরিচালনা করতেন আবার কোন কোনদিন আমি একা পরিচালনা করতাম। মাঝেমধ্যে আমরা দুজন মিলে এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করতাম। তাই ভাবতে খারাপ লাগছিল দীর্ঘদিনের পথ চলে না প্রত্যাশা মনের মধ্যে তবে সে স্বপ্ন অচিরে নষ্ট হওয়ার পথে। তাই যেন পিটি প্যারেড এর সময় ছাত্র-ছাত্রীদের ঠিকঠাক রাখার বিষয়ে আমার মনোযোগ ঠিক রইলো না। তবুও মনকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম।
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স
প্রিটি প্যারেডের সব শেষ মুহূর্তে প্রধান শিক্ষক সকলকে ডানে ঘুরতে বলেন অর্থাৎ যে দিকে ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড এর বোর্ড টাঙ্গানো থাকে। হয়তো এই মুহূর্তটা আমি ওয়ানডে ওয়ান ওয়ার্ড পড়াতাম। তবে বেশ কিছুদিন আমি তা ছেড়ে দিয়েছি। কারণ কতদিন না জানি স্কুলে থাকবো, অন্যদের স্বীকার প্রয়োজন হয়েছে। তাই এখন ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড পড়ানো শুরু করেছে ফারজানা ম্যাডাম। উনি আমার অনার্স মাস্টার্স লেভেলের বান্ধবী। হয়তো তার সাথে খুবই আনন্দে সময় পার হয় তারপরেও জান্নাতুল ম্যাডাম ছিলেন অতি প্রিয় আর শ্রদ্ধেয়ভাজন ব্যক্তি। যাই হোক এই মুহূর্তে ফারজানা ম্যাডাম প্লে শ্রেণী থেকে টু পর্যন্ত এবং তৃতীয় শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীর পর্যন্ত দুই ধাপে যে ওয়ান ডে ওয়ান ওয়ার্ড দেওয়া থাকে তা সুন্দর করে পড়ালেন। তবে পাশ থেকে ২-৩ জন ছাত্রী আমাকে বলছিল স্যার ম্যাডামের পড়ানো আমাদের পছন্দ নয় আপনি পড়ান না কেন। আমি বলেছিলাম সবাই তো সবার মত হতে পারে না, যে যেমন ভাবে পড়াতে পারে ঠিক সেভাবেই মন থেকে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করো। তখন তার মধ্য থেকে একজন ছাত্রী আমাকে বলে উঠলো স্যার আপনার মন ভালো নেই জানি জান্নাতুল ম্যাডাম চলে যাবে তাই। কি করে তাকে বুঝাবো? তাই বলে উঠলাম না হঠাৎ কুয়াশা নেমে এসেছে তাই ভালো লাগছে না। তবে সে যে সত্য কথা বলছিল। ছোট ছেলে মেয়ে হলে কি হবে তারাও বুঝতে পারে। একজন বলে উঠলো স্যার রোকসানা ম্যাডাম কান্না করছে জান্নাতুল ম্যাডামের জন্য? আমি তখন কোন উত্তর তাদেরকে দিলাম না। বললাম পরে জানতে পারবে তাই বলে সেখান থেকে একটু দূরে হেঁটে গেলাম।
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স
এসেম্বলি ক্লাস হল, পিটি প্যারেড হল। পিটি প্যারেড শেষে বাম ডান শব্দ করতে করতে ছেলেমেয়েরা যেমন সারিবদ্ধ ভাবে ক্লাসের দিকে চলে যায়, তার ঠিক সেভাবে চলে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তবে তারা ক্লাসে যাওয়ার পূর্বে লাইন ঠিক রাখতে আমি সামনে দাঁড়িয়ে বাম ডান বলে লাইন ঠিক রাখলাম। তখন যেন সে মুডটা আমার মধ্যে ছিল না তাই পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর ম্যাডামদের বলছিলাম আপনারা ওই দায়িত্বটা পালন করে সুন্দরভাবে সারিবদ্ধভাবে যাওয়ার সুযোগ করে দিন। ঠিক এমন মুহূর্তে হঠাৎ লক্ষ্য করলাম জান্নাতুল ম্যাডাম আমার দিকে একবার তাকালেন। উনার চোখে পানি টলমল করছিল। উনি যতক্ষণ স্কুলে ছিলেন ততক্ষণ আমি উনার থেকে দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করছিলাম। কারণ কারোর চোখের পানি আমার সহ্য হয় না বা কোন কারনে আমিও মন খারাপ করতে চাই না। মনে মনে ভাবছিলাম কষ্ট লাগতে পারে কিন্তু যার যার সে চলে যাচ্ছে তাকে তো আমি বারণ করতে পারি না। সবাই তার নিজ নিজ ভালো-মন্দ বোঝে। আবার কেউ রয়েছে আমার মত যে নিজের ভালো বুঝেও বুঝতে চায় না। প্রথম ক্লাস শেষ হলো দ্বিতীয় ক্লাস শেষ হলো এভাবে চতুর্থ ক্লাস শেষে হঠাৎ জান্নাতুল ম্যাডাম আমাকে বলছে ভাইয়া কোন ভুল ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করে দিও আমি আজ থেকে স্কুল ছেড়ে দিলাম। আমি উনার পানে না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে মন কে বুঝতে চেষ্টা করছিলাম। আর এভাবেই গত ১২ ফেব্রুয়ারি দিন টা মন খারাপের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছিল। হয়তো উনি মাঝেমধ্যে বোকার পরিচয় দিতেন তারপরেও আমার অতি প্রিয় ম্যাডাম ছিলেন। আকাশের বুকে যেমন কুয়াশা নেমে এসেছিল ঠিক তেমনি আমাদের বিদ্যালয়ের বুকেও কুয়াশা নেমে এসেছিল ঐদিন।
Photography device: Infinix hot 11s
সোর্স
💌আমার পরিচয়💌
আমি মোঃ নাজিদুল ইসলাম (সুমন)। বাংলা মাস্টার্স ফার্স্ট ক্লাস মেহেরপুর গভমেন্ট কলেজ। আমার বাসা গাংনী-মেহেরপুর। মড়কা বাজার, গাংনী,মেহেরপুর এ গ্রীনরেইন ল্যাবরেটরি স্কুল নামক প্রি-ক্যাডেট স্কুলের সহকারি শিক্ষক । ইলেকট্রনিক্সের যন্ত্রপাতি মেরামত ও সৌর প্যানেল নিয়ে রিসার্চ করতে পছন্দ করি। প্রাকৃতিক দৃশ্য ফটোগ্রাফি করা আমার সবচেয়ে বড় ভালোলাগা। দীর্ঘদিনের আমি পাঙ্গাস মাছ চাষী এবং বিরহের কবিতা লেখতে খুবই ভালোবাসি। |
---|
পোস্টটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার পরিচিতি | কিছু বিশেষ তথ্য |
---|---|
আমার নাম | @sumon09🇧🇩🇧🇩 |
ফটোগ্রাফি ডিভাইস | মোবাইল |
ব্লগিং মোবাইল | Infinix hot 11s |
ক্যামেরা | camera-50mp |
আমার বাসা | মেহেরপুর |
আমার বয়স | ২৬ বছর |
আমার ইচ্ছে | লাইফটাইম স্টিমিট এর 'আমার বাংলা ব্লগ' এ ব্লগিং করা |
পুনরায় কথা হবে পরবর্তী কোন পোস্টে, ততক্ষণ ভালো থাকা হয় যেনো। আল্লাহ হাফেজ। |
---|
বর্তমানে আবারও শীত বেড়েছে। সেই সাথে কুয়াশা বেড়েছে। সকাল বেলায় অনেক কুয়াশা থাকে। জান্নাতুল ম্যাডামের পারিবারিক সমস্যার কারণে হয়তো উনাকে স্কুল ছাড়তে হচ্ছে।
এছাড়া যদি কাঙ্খিত বেতন না হয় তাহলে সব দিক থেকে সমস্যা হয়ে যায়। তবে আশা করছি সব ঠিক হয়ে যাবে। যেহেতু নতুন স্কুল তাই একটু সময় লাগবে।
হ্যাঁ একদম ঠিক কথা বলেছেন আপু
পরিবেশের অবস্থা যেমনই হোক না কেন আমরা সব সময় চেষ্টা করি আমাদের নির্দিষ্ট নিয়ম গুলো অনুসরণ করার জন্য। যদিও শীতের কারণে প্রতিনিয়তই প্রচুর পরিমাণে কুয়াশা পড়ছে তারপরও আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি এর মাধ্যমে আমরা একদিন উন্নতির শীর্ষস্থানে পৌঁছে যাব।
হ্যাঁ একদম ঠিক কথা
শীত প্রায় শেষের দিকে তবুও শীতের প্রকোপ কমছে না। কুয়াশা ঘেরা পরিবেশ সকালে সত্যিই অবাক করে দেয়। যে সময় সূর্য মামার উপস্থিতি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। মাঝে মাঝে এরকম দেখতে পাওয়া যায় হঠাৎ পরিষ্কার আবার কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ দ্বারা ঘেরা প্রকৃতির সবকিছুই পরিবর্তনের দিকে। অনেক ভালো লেগেছে আপনার স্কুলের অ্যাসেম্বলির মুহূর্তের দৃশ্য দেখে।
কিছুটা শীত কম হলেও কুয়াশা বেশি।