হ্যাল্লো বন্ধুরা
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসী, সবাইকে আমার নমষ্কার /আদাব। কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি আপনারা সকলেই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় পরিবারসহ সুস্থ আছি, ভালো আছি।যদিও আসলে ঠান্ডায় গলার অবস্থা বেশি ভালো না, তবে সেটাকে এখনো তেমন বেশি পাত্তা দেয়ার চেষ্টা করেছি না আর কি! আজ আপনাদের সাথে নতুন একটি পোষ্ট শেয়ার করতে চলে এসেছি। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে কমিউনিটি থেকেই যেহেতু আজকের পোষ্ট এর বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে দিয়েছে, তাই বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতেই আমার আজকের পোষ্ট। আপনাদের কেমন লাগলো জানাবেন অবশ্যই... তো চলুন, আর বেশি কথা না বাড়িয়ে চলে যাই আজকের পোষ্ট টি তে.... ৷
!

ছবিটি discord থেকে নেয়া
মূল লেখার আগে একটি জেন গল্প শেয়ার করতে ইচ্ছে করছে। মহামতি বুদ্ধের কাছে একজন শিষ্য প্রশ্ন করলো, " সত্য কি"? বুদ্ধ উত্তর না দিয়ে পাশের একটি পুকুর থেকে এক পাত্র ভর্তি জল আনতে বললেন। শিষ্য জল আনতে গিয়ে দেখে পুকুরে কয়েকটি গরু গোসল করছে, জল নোংরা হয়ে আছে। ফিরে গিয়ে বুদ্ধ কে সে বিষয়ে বললে বুদ্ধ বলেন কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবারো জল আনতে। শিষ্য সে অনুযায়ী অপেক্ষা করে তারপর আবারো গেলো জল আনতে। এবারে গিয়ে দেখে পুকুরের জল আগের থেকে বেশ পরিষ্কার, স্বচ্ছ হয়েছে। পাত্র ভর্তি করে জল এনে বুদ্ধদেব এর সামনে রাখলো শিষ্য। এবার বুদ্ধদেব একটু হেসে বললেন, "দেখেছো? কিছুটা সময় দেয়ার ফলে পুকুরের ঘোলা ময়লা জল নিজের থেকেই স্বচ্ছ হয়ে গিয়েছে, কোনো হস্তক্ষেপ না করার ফলে। সত্যকে জানার জন্য মনকে স্থির করাটা বেশি প্রয়োজন। অস্থির হৃদয় কখনো সত্যকে দেখতে পারে না। ধৈর্য্য ধরে, কিছুটা সময় দিলে সত্য নিজে থেকেই স্পষ্ট হয়ে উঠে। সত্য এমন ই। "
বর্তমান সময়টার প্রেক্ষিতে এই গল্পটার কথাই বারবার মনে পড়ছিলো আমার। বাঙালি বরাবরই আবেগপ্রবণ জাতি। বাঙালির আবেগকে একটু নাড়া দিলেই কোনো রকমের যুক্তি না ভেবেই আবেগের বশেই অনেক কিছু করে ফেলানো সম্ভব এই জাতিকে দিয়ে। অথচ আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব- কারণ আমাদের বিবেক রয়েছে বলেই। অথচ আমরা যেনো বিবেক দিয়ে চিন্তা ভাবনা করতেই ভুলে যাচ্ছি। চিলে কান নিয়ে যাচ্ছে শুনেই চিলের পেছনে ভৌ-দৌড় শুরু করে দিচ্ছি। আমরা কি ভুলে যাচ্ছি না যে একতাই বল? আমরা আবেগের উস্কানিতে ভুলে যাচ্ছি আমাদের অতীত? প্রাচীন কালে আমরা তো একই ছিলাম! ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র কনসেপ্ট টাই আমার কাছে ব্যক্তিগত ভাবে অবাক করার মতো লাগে। আমরা কী ভুলে যাচ্ছি যে জাতীয় পতাকা যে কোনো স্বাধীন দেশের গর্বের, স্বার্বভৌমত্বের প্রতীক? আমাদের বিবেক কি একবার ও বাঁধা দেয় না যে কোনো দেশের জাতীয় পতাকার অমর্যাদা করার থেকে?? এই অবমাননা যদি কেউ সমর্থন করে, এরপরেও কি আমরা নিজেদের " মানুষ " বলে দাবী করার যোগ্য?? অথচ নিজেদের দোষ স্বীকার না করে এখনো একে অন্যের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি তেই ব্যস্ততা যেন সকলের! কী লজ্জার! এই কোন্দলের মাঝে একতা নামের "সত্য" টা ঘোলা হয়ে যাচ্ছে। অস্থির হৃদয় দিয়ে কেউ যেন সত্য টা দেখতে পাচ্ছে না..... আচ্ছা, বৈচিত্র্যতা ছাড়া কি আসলেই চলা সম্ভব? তাহলে এত এত বৈচিত্র্যময় প্রাণী জগৎ, উদ্ভিদ জগৎ কেন এই পৃথিবীতে?? বৈচিত্র্যতা আছে বলেই তো পৃথিবী টা এমন সুন্দর! বৈচিত্র্যতা যদি অপ্রোয়জনীয়ই হতো, তবে হাতের পাঁচটা আঙুল পাঁচ রকমের করে কেন বানালেন সৃষ্টিকর্তা? আকাশের রঙ যদি এত বৈচিত্র্যময় না হয়ে প্রতিদিনই একই রকম ই থাকতো, তবে কী আকাশের দিকে আদৌ কেউ এত আগ্রহ নিয়ে তাকাতো প্রতিদিন??
আমার গতকালকের পোস্ট এও কিছুটা বলেছিলাম আমি এ বিষয় নিয়ে। আমরা এপাড় বাংলা ওপাড় বাংলার মানুষ মিলেমিশে একে অন্যের পাশে থেকে কাজ করলে কত সুন্দর পরিবেশে সকলে মিলে একে অন্যের একই পরিবার হিসেবে থাকা যায় তার অন্যতম উদাহরণ " আমার বাংলা ব্লগ " পরিবার 😍। এই ছোট্ট পরিবার টি দুই বাংলার পারস্পরিক বন্ধনের অন্যতম উদাহরণ হিসেবেই মানি। এভাবেই যদি পুরো দুই দেশের সকলে মিলেমিশে থাকতে পারতাম, তবে পুরো বাঙালি জাতিই পৃথিবীর বুকে অন্য রূপে প্রকাশিত এবং উদ্ভাসিত হতে পারতাম!
পরিশেষে আমি আমার কথা বলতে চাই, আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ, আমি শান্তি চাই। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতি আমি আর দেখতে পারি না। জুলাই - আগস্ট এর ঘটনার সময় থেকেই আমি যথেষ্ট মানসিক দিক থেকে সেন্সেটিভ হয়ে আছি। এমন বিদ্বেষ, কোন্দল আমি আর নিতেই পারি না। আমি চাই এমন উত্তাল পরিস্থিতি যেনো খুব জলদি শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাপ্ত হয়। আগের মতোই ভাতৃত্ব এর বন্ধন এ আবদ্ধ হয় যেনো দুই দেশ। মন থেকেই যেন সকলে সকলকে ক্ষমা করে দিতে পারে, এমন কোনো সমাধান হোক। মনে এক,মুখে আরেক এমন যেন না হয়। আমি আর কথা বাড়াচ্ছি না। আমার জন্য দোয়ার দরখাস্ত রইলো আপনাদের কাছে। সকলের সুস্থতা কামনা করে আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি।
এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে 🌼 ধন্যবাদ 🌼




VOTE @bangla.witness as witness
OR @rme as your proxy

আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি।
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
অসাধারণ সুন্দর ভাবে সম্পূর্ণ বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন। মহামতি বুদ্ধের উদাহরণ দিয়ে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিলেন আপনার অভিমত। পতাকা অবমাননা অর্ধশিক্ষিতদের কাজ। যেকোনো দেশের পতাকায় সকলের কাছে অত্যন্ত সম্মানীয় একটি জিনিস। নিজেকে ভালো রাখবো আর অন্যের ঘর ভাঙবো এই আচরণ মানব জাতির হতে পারে না।
কী যে এক লজ্জার ইতিহাস তৈরি করা হচ্ছে দাদা ! শিক্ষিত বা বিবেকবান হলে তো এমন কোন কাজ করতেই পারতো না।
অসাধারণ বলেছেন আপু সত্য কে জানার জন্য মনকে স্থির করা প্রয়োজন। একটা গুজবের বশে ঝোঁকের বসে কিছু একটা করে ফেললেই হলো না।ঐটার ফলাফল ও চিন্তা করতে হয়। আমি কখনোই একটা দেশের পতাকা ঐ দেশের জাতীয় সংগীত অবমাননা করা সাপোর্ট করি না। এটা ঘৃণার একটা কাজ।
সেইটাই ভাই! আবেগের বশে কী লজ্জার কাজ করা হচ্ছে, সেটাও বিবেকে আসে না ওদের। আর যে কোনো স্বাধীন দেশের পতাকার যে কোনো অবমাননা কোনো বিবেকবান মানুষ ই সমর্থন করবে না।