রক্তখেকো রাক্ষুসে অসুখ: থ্যালাসেমিয়া
|| আজ ৮ মে ,২০২৪ || রোজ: বুধবার ||
হ্যাল্লো বন্ধুরা
প্রিয় আমার বাংলা ব্লগবাসী, সবাইকে আমার নমষ্কার /আদাব। কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশা করছি আপনারা সকলে বেশ ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আমিও মহান সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদে পরিবারসহ বেশ ভালোই আছি। আজ আবারো আপনাদের সামনে হাজির হলাম নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আশা করবো আজকের পোষ্ট টি আপনাদের ভালো লাগবে।
আজ ৮ই মে, ২৫ শে বৈশাখ। আজ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিবস। কিন্তু এর পাশাপাশি আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস আজ। বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস হিসেবে প্রতি বছর পালিত হয় এই বিশেষ দিনটি৷ কবিগুরুর জন্মদিন যেমন সকলেই জানে, ঠিক এই থ্যালাসেমিয়া রোগটি সম্পর্কেও প্রত্যেকেরই জানা প্রয়োজন । কারণ থ্যালাসেমিয়া একটি জীবনব্যাপী রক্তখেকো অসুখ!
আসলে থ্যালাসেমিয়া কি? থ্যালাসেমিয়া হলো মূলত একটি জেনেটিক ব্যাধি। যার ফলে দেহে রক্তের অন্যতম উপাদান, হিমোগ্লোবিন, এর পর্যাপ্ত উৎপাদন সম্ভব হয় না। যার ফলে লোহিত রক্তকণিকার ঘাটতি হয় এবং পরবর্তীকালে রক্তাল্পতা দেখা দেয়, যা " এনিমিয়া" নামে পরিচিত।
আসলে আমাদের মানব দেহ এমন ভাবে তৈরি করা, এর ভেতরে প্রতিনিয়তই নানা ধরনের কার্যক্রম চলতেই থাকে। কিন্তু এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াগুলোই যদি ব্যহত হয় জন্মগতভাবেই, তখন? থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যাক্তির ক্ষেত্রে এমন কিছুই ঘটে থাকে! আগেই বলেছি, এটি জীনগত ব্যাধি। অর্থাৎ, এই ব্যাধিতে কেবলমাত্র জন্মগত ভাবেই একজন মানবশিশু আক্রান্ত হয়। আমরা জানি, মানব শিশু অর্ধেক ক্রোমোজম পায় তার বাবার থেকে আর অর্ধেক ক্রোমোজম পায় তার মায়ের থেকে। একজন শিশুর বাবা এবং মা দুইজনই যদি থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হন, তবেই সেই বাবা-মায়ের দ্বারা উৎপাদিত শিশুটি শতকরা ২৫ শতাংশ চান্স থাকে যে সে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হবে। এখানে " থ্যালাসেমিয়া বাহক" এবং " থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত " দুটি আলাদা টার্ম, যাদের মাঝে বিস্তর ফারাক রয়েছে। থ্যালাসেমিয়া বাহক মানে কিন্তু তিনি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগী নন। কিন্তু একজন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত রোগীর বাবা এবং মা উভয়েই নিশ্চিত ভাবেই থ্যালাসেমিয়ার বাহক!
যেহেতু এই রোগটি জিনগত, তাই এটা প্রতিরোধে একমাত্র কার্যকরী উপায় হচ্ছে বিয়ের আগে পাত্র এবং পাত্রী উভকেই একটি রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে তারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না! " হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস " নামক একটি রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় কেউ থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা। পাত্র-পাত্রী উভয়েই যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হয়ে থাকেন তবে তাদের সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২৫%। অর্থাৎ শুধুমাত্র দুইজন থ্যালাসেমিয়া বাহকের বিয়ে না হলেই এই ভয়াবহ রোগটি থেকে পৃথিবী মুক্তি পাবে! যেহেতু থ্যালাসেমিয়া বাহক এর বিশেষ করে তেমন কোন আলাদা অসুবিধা হয় না, তাই আমরা অধিকাংশ মানুষ জানিও না যে আমরা থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না!! অর্থাৎ আমরা জানিও না, আমাদের অসচেতনতা, আমাদের আগামী প্রজন্মকে কত বড় ঝুকিতে ফেলে দিতে পারে!! এই বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবসে (৮ই মে), আসুন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় ঐক্যবদ্ধ হই।আমরা সচেতন হলে, তবে নিয়েই এই ভয়াহব রক্ত খেকো রাক্ষুসে অসুখ থেকে মুক্তি পেতে পারে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম!
এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোষ্টটি পড়ার জন্য আপনাকে 🌼 ধন্যবাদ 🌼
আমি- তিথী রানী বকসী, স্টিমিট আইডি @tithyrani। জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। পেশায় একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। বিবাহিতা এবং বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছি।২০২৩ সালের জুন মাসের ১৯ তারিখে স্টিমিটে জয়েন করেছি। OR
ভ্রমণ করা, বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া, কবিতাবৃত্তি করা আমার শখ। পাশাপাশি প্রতিদিন চেষ্টা করি নতুন নতুন কিছু না কিছু শিখতে, ভাবতে। যেখানেই কোন কিছু শেখার সুযোগ পাই, আমি সে সুযোগ লুফে নিতে চাই৷ সর্বদা চেষ্টা থাকে নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করার।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট আপনি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপু। এই বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানতাম না। তবে ধারণা পেয়েছিলাম অনেক আগে। তবে আজকে আপনার এই পোস্ট পড়ার মধ্য দিয়ে একদম ক্লিয়ার হয়ে গেলাম। এত সুন্দর একটি বিষয় আমাদের মাঝে আলোচনা করার জন্য ধন্যবাদ।
থ্যালাসেমিয়া যে একটা জেনেটিক ব্যাধি, আমি শুধু এটুকুই জানতাম। তবে নিচের এই ব্যাপারটা জানা ছিল না আমার।
যাইহোক, আপনি এই কথাটা একেবারে ঠিক বলেছেন দিদি, বিয়ের আগে অন্তত এই ব্যাপারটা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। তাহলে হয়তো এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
হ্যা ভাই। এই রোগ টা কেবলমাত্র সচেতনতা দিয়েই নির্মূল করা সম্ভব। নিজেও একটা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নিয়েন পারলে। আমরা সচেতন হলেই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সেইফ থাকবে।
একদম ঠিক কথা বলেছেন দিদি, আমরা সচেতন হলেই আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম নিরাপদে থাকবে।