কেনো আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল "জিওর্দানো ব্রুনোকে" || 10% for @shy-fox
"আমার বাংলা ব্লগে আপনাদের সকলকে জানাই আমার সালাম"
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগ পরিবারের সকলের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে শুরু করছি আমার আজকের এই ব্লগ।আশা করি আমি আমার দক্ষতার মাধ্যমে আপনাদের সকলের নিকট ভালো কিছু উপস্থাপন করতে সক্ষম হবো,এবং আপনাদের ও ভালো লাগবে।
আজকে আমি আপনাদের সামনে একটি ডকুমেন্টারি পোস্ট সাজিয়েছি।পৃথিবীর একজন সেরা নির্ভীক বিজ্ঞানীকে নিয়ে।যদিও ইচ্ছে ছিলো ভিডিও করে দিবো কিন্তু হয়ে উঠে নি তবে সামনে এরকম কিছু করার ইচ্ছে আছে।গতকালকে ১৭ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞানের কলুষিত একটি দিনের মধ্যে অন্যতম।এইদিনে একজন মহান বিজ্ঞানীকে তার সত্য প্রচারের জন্য হত্যা করা হয় তার নাম হলো "জিওর্দানো ব্রুনো"।আর কালকে হ্যাং আউট এর কারণে পোস্টটি করা হয়ে উঠেনি।আসলে হয় কি জানেন যেদিন হ্যাং আউট থাকে সেদিন খুব বেশি আমি এক্সাইটেড থাকি।আর আমি সাধারণত রাতে পোস্ট করে থাকি তাই ওইদিন সময় মেলাতে পারি না তাই আজকে এই ডকুমেন্টারি টি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।একটু ধৈর্য নিয়ে পড়বেন আশা করি অনেক কিছুই জানতে পারবেন।
জিওর্দানো ব্রুনোকে নিয়ে কিছু তথ্য:
১৫৪৮ সালের ইতালির ইতালির ভিসুভিয়াস পর্বতমালার অদূরে "নোলা" নামক ছোট্টো শহরে জন্মগ্রহণ করেন।এবং ১৬০০ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি তাকে হত্যার মাধ্যমে নিঃশেষ করা হয় তার শরীরকে।তিনি ছিলেন একাধারে দার্শনিক,ধর্মযাজক,বিশ্বতত্ত্ব বিশারদ এবং ওকালিস্ট।ব্রুনো তার স্মৃতিবর্ধন পদ্ধতির জন্য আজ জগৎ বিখ্যাত যা সংগঠিত জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনিই প্রথম মতবাদ প্রচার করেছিলেন যে মহাবিশ্ব অসীম এবং তার কোনো কেন্দ্র নাই।আর এজন্য প্রচলিত ধর্মের বিরোধিতার অপরাধে পুড়ে মরতে হয়েছিল।
মূল কাহিনী:
সত্যের কখনো মৃত্যু হয় না।সত্য সত্যই,একদিন না একদিন সবাইকে মেনে নিতেই হয়।যদিও তাৎক্ষণিক মানতে একটু কষ্ট হয়।কিন্তু সত্য তো আর পরিবর্তন হয় না।সত্যকে যদি সবাই প্রত্যাখ্যান করে কিন্তু একজন বিশ্বাস করে তবে সেটিয় সত্য।সত্য কখনো বদলায় না বরং সময় এর পরিবর্তনে অন্ধকারছন্য কুসংস্কার পাল্টে যায়
১৬০০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সেদিনের এই দিনটা ছিল সত্য হত্যার দিন,বিজ্ঞানের ইতিহাসে এক নিষ্ঠুর তম দিন।তারা গলা টিপে নয় বরং একধাপ এগিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল সত্যের স্রষ্টাকে।কিন্তু সত্যকে হত্যা করা কি এত সহজ সত্য তো সূর্যের আলোর মতোই ঝকঝকে পরিষ্কার।হয়তো সেই সত্যবাদী সেই মহানুভব এর শরীরটাকে জ্বালিয়েছিল। কিন্তু কি পেয়েছে তারা?সেই সত্যবাদীকে আজও গোটা বিশ্ববাসী মনে রেখেছে।বরং সেই লোক গুলো তাকে এনে দিয়েছে আমৃত্তুর স্বাদ।তিনি আছেন চিরো স্মরণীয় হয়ে, পৃথিবীর দেয়াল লিখনে চাইলেও তার নামটি এখন মুছে ফেলা সম্ভব নয়।
পৃথিবীর বুকে প্রতিনিয়ত কত কিছু নিত্য নতুন সৃষ্টির উদ্ভাবন আর আবিষ্কার চলছে।আর সেইসব আবিষ্কার এর পিছনে অবদান আছে নাম না জানা বিজ্ঞানীদের।অনিশিকার্য অবদান এবং অমূল্য আত্মত্যাগ।সেইসাথে বৈজ্ঞানিক সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে ধর্মগুরু থেকে শুরু করে সেইসকল দার্শনিক,বিজ্ঞানীদের পোহাতে হয়েছে নির্মম বাধার সম্মুখীন কখনো পড়তে হয়েছে সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের বড়ো বড়ো আমলাদের রোষানলে আবার জীবন হারাতে হয়েছে অনেক বিজ্ঞানীদের।ঠিক তেমনি একজন নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন "জিওর্দানো ব্রুনো"।তার জন্ম ছিলো ১৫৪৮ এ ইতালির নেপলস এর নোলাতে।
জিওর্দানো ব্রুনোকে যেদিন হত্যা করা হবে সেদিন রাজপথ থেকে শুরু করে,রাস্তার প্রতিটি অলিগলি লোকে লোকারণ্য।রাস্তায় এতটা ভরা ছিলো যে একটি মশাও প্রবেশ করার সুযোগ নেই। যে যেভাবে পারছে এই দৃশ্য দেখার জন্যে হা করে তাকিয়ে আছে কেউবা ঘরের চালের উপর থেকে তাকিয়ে আছে কেউবা বেড়ার ফাঁক দিয়ে উকি মারছে।সকলের চোখেমুখে কি পৈশাচিক আনন্দ।বেশ আগ্রহ উদ্দীপনা নিয়ে অবাক দৃষ্টিতে হা করে প্রত্তকেই উপস্থিত মঞ্চের চারদিকে।হবেই না বা কেনো আর কিছুক্ষণ এর মধ্যে সত্যকে হত্যা করা হবে হাহা।আর যার বলিদান হবে তিনি আর কেউ নন তিনিই ব্রুনো।জিওর্দানো ব্রুনোর অপরাধ কি ছিল জানেন?তার অপরাধ ছিল ধর্ম এবং বাইবেলের বিরুদ্ধে কথা বলেছে, হুম ঠিক ধরেছেন এটিই তার মহা অপরাধ।তিনি কুসংস্কারছন্ন বিশ্বাসের পিন্ডে সত্যের তরবারি দিয়ে আঘাত করেছেন।আর এজন্যই তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয় জনসম্মুখে।উদ্দেশ্য ছিল একটাই যেনো কেউ কোনোদিন সত্যকে উচিয়ে তোলার সাহস না পায়।কিন্তু যারা নির্ভীক সত্যকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চায় তাদেরকে কি দমিয়ে রাখা সম্ভব।
ব্রুনো একজন অনন্য অসাধারণ ছিলেন।তিনি একাধারে,দার্শনিক,জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গণিতবিদ।১৬০০ সালের ২০ জানুয়ারি তার সত্য উত্থাপন এর জন্য তাকে একজন ধর্মদ্রোহী আখ্যায়িত করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।এবং তারই প্রেক্ষিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রোমের কেন্দ্রীয় বাজার campo de Fiori তে।যেখানে জনসম্মুখে খুটিরে সঙ্গে বেধে মিথ্যাকে বাঁচিয়ে রেখে ধর্ম ব্যাবসা চালিয়ে যেতে এবং ধর্মালয় গুলিকে টিকিয়ে রাখতে হত্যা করা হলো কালকের সেই কলুষিত দিনে।আগুনে পোড়ানোর আগে তার হাত পা লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে দিয়েছিল নিষ্ঠুর মানুষগুলো।তার জিহ্বা পর্যন্ত বেধে দিয়েছিল🥺।কারণ সেই ধর্ম ব্যাবসায়ী গুলও ভয় পাচ্ছিল কোনো এক কারণে।যদিওবা মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আগে তাকে সুযোগ দিয়েছিল সেই ভন্ড গুলো যেনো সে তার কথা ফিরিয়ে নেয়,সে যেনো অকপটে স্বীকার করে নেয় সে যেগুলো বলছিল সব তার মনগড়া কথা।কিন্তু ব্রুনো তা করেন নি তিনি বাঁচিয়ে রেখেছেন সত্যকে হারিয়ে দিয়েছেন মিথ্যাকে।আসলে সত্য এর জোর এখানেই,সত্য কখনো কাউকে মাথা নত করতে শেখায় না।সত্যের পথে হাসতে হাসতে জীবন দেওয়া যায়।এরপর ব্রুনোকে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো।জ্বলতে থাকলো ব্রুনোর শরীর,আর ওই আগুনের শিখায় জখন খসে পড়ছিলো ব্রুনোর শরীরের মাংস গুলো,সেই পোড়া মাংসের সাথে যেনো সৃষ্টি হচ্ছিল নতুন এক ইতিহাস হেরে যাচ্ছিল মিথ্যে,হেরে গিয়েছিল সব অন্ধ বিশ্বাস।সেদিন সেই লেলিহান শিখা গুলো ব্রুনোকে হত্যা করেনি বরং তারা আজ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে জ্যোতির্বিজ্ঞানের গতির সাথে মহাবিশ্বের প্রতিটি গ্রহ উপগ্রহে।
একটু সাভাবিক মস্তিষ্কে চিন্তা করে দেখুনত কি এমন অপরাধ ছিল তার।তিনি তো শুধু বলেছিলেন "পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরছে।পৃথিবী সৌরজগতের একটি গ্রহ ছাড়া এর কোনো তাৎপর্য নেই।এই পৃথিবী,এই বিশ্বজগৎ চিরস্থায়ী নয়,একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে।"এই চরম সত্যটাই তিনি তুলে ধরেছিলেন সেই কুসংস্কারছন্ন কালে।
আর আজকের এই সময়ে এসে তার কথার উপর ভর করে এগিয়ে চলেছে জ্যোতির্বিজ্ঞান,গবেষণা হচ্ছে তাকে নিয়ে।শুধু ওই সময়টায় মানুষ জানত না,একটু বুঝতেও চায় নি।কিন্তু আজকে দেখুন ছোট ছোট বাচ্চারা এই কথা জানে সবাই অকপটে শিকার করে নেয় সেদিনের সেই চরম সত্যগুলো।কি অদ্ভুদ না!সেই সময়কার মানুগুলোর মধ্যে প্রচুর জ্ঞানের অভাব ছিল।তারা মনে করতো পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে সব গ্রহ উপগ্রহ।আর এই কথা নাকি ধর্মগ্রন্থে লেখা ছিল।আর জার কারণে তারা ধরে নিয়েছিল ব্রুনো এর এই ধরনের কথা ধর্ম বিরুধি,এই কথা যদি সবাই মেনে নেয় তাহলে সবাই ধর্মদ্রোহী হয়ে যাবে সবাই শয়তান হয়ে যাবে।আর তাই তাকে হত্যা করার জন্য এত আয়োজন।কিন্তু উল্টো কি হলো সেই ব্রুনোর সেই সত্যের উপর দাড়িয়ে আছে আজকের এই পৃথিবী নামক ছোট্ট গ্রহটি।
আজকের এই দিনেও এসে দেখা যায় অনেক ধর্ম ব্যাবসায়ী তাদের ধর্মান্ধতা ছড়িয়ে যতসব কুসংস্কার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।কারণ ওই একটাই তাদের ধর্ম ব্যাবসা টিকিয়ে রাখা।আমাদের উচিত এসব ধর্মান্ধ থেকে বের হয়ে বেশি বেশি বিজ্ঞান চর্চা করা।প্রয়োজন হলে প্রতি ঘরে ঘরে গিয়ে প্রশ্ন করা তবেই সফল হবে ব্রুনোর সেই বলিদান।নাহয় আমাদেরকেও একদিন পুড়ে মরতে হবে ওই ব্রুনোর মত করে।
সত্য সদা সবসময় নির্ভীক
আজকের মত এখানেই শেষ করছি।আশা করি এই ডকুমেন্টরিটির মাধ্যমে আপনারা অনেক কিছু জানতে পারবেন।অনেক কিছুই উপলদ্ধি করতে পারবেন।শুভকামনা রইলো আপনাদের সবার জন্য ভালো থাকবেন নিরাপদে থাকবেন।
ধন্যবাদ🌿

টুইটার