উত্তর আধুনিক সাহিত্য চর্চায় মুক্তগদ্যের চলন। চেনা অন্তর্বাস ও সঙ্গীহীন ভোর
উত্তর আধুনিক সাহিত্যে মুক্তগদ্যের চলন।
আজ আপনাদের জন্য রইল একটি মুক্তগদ্য। আপনাদের আগেই বলেছিলাম যে মুক্ত গদ্য হল আধুনিক কবিতার একটি নতুন রূপ। এখানে গদ্যের সঙ্গে কাব্যিক ঢঙের এক অভূতপূর্ব সংমিশ্রণ ঘটানো হয়। যার মাধ্যমে চেনা গদ্যের রূপে আমরা কবিতার মত কাব্যকে উপস্থাপনা করাতে পারি। আর সেখানেই মুক্তগদ্যের চলন সাবলীলভাবে এগিয়ে যায় একটি ভাবকে কেন্দ্র করে। এখানে যে গদ্যটি আপনাদেরকে পড়তে দিলাম সেখানে আপনারা সঠিক একটি মুক্তগদ্যের চলন সম্পর্কে বুঝতে পারবেন। রূপকের সঙ্গে কাব্য কে মিশিয়ে এখানে সাহিত্যের একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করা হয়েছে। আপনারাই পড়ে জানাবেন সার্বিকভাবে আপনাদের এই সাহিত্য টি কেমন লাগলো। এখানে আপনারা উত্তর আধুনিক সাহিত্য ধারার একটি পরিচয়ও পেতে পারবেন। এভাবেই ধীরে ধীরে সাহিত্য বিভিন্ন বাঁক দিয়ে নির্দিষ্ট একটি দিকে এগিয়ে চলেছে। আর আমরা চেষ্টা করি সেই বাঁকগুলো পরপর ধরতে।
💐মুক্তগদ্য💐
চেনা অন্তর্বাস ও সঙ্গীহীন ভোর
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
কেন জানিনা বড় অন্ধকার হয়ে আসে চারপাশ৷ মাঝেমাঝে মনে হয় কিসের দিকে চেয়ে আছি রোজ? কোন উদ্দেশ্যে ঘিরে আছি তৃষ্ণার্ত গহ্বর? দমফাটা শ্বাসের বিপরীতে হেঁটে দেখেছি তুমি আছো৷ যেদিন একচিলতে ঠোঁটের দামে মিশিয়েছিলে উনপঞ্চাশ শতাংশ লভ্যাংশ, সেদিন একা লাগেনি একটুও৷ হিসাবটা একান্ন শতাংশ হয়ে ওঠার আগেই কিভাবে যেন বুকে উড়ে এলো পরিযায়ী ফ্লেমিংগো৷ ডানা ঝাপটে খুঁটে খেলো পছন্দের কয়েকটি অন্তর্বাস৷ আমি লজ্জিত না হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম গন্তব্যের কথা। সে নির্বাক উড়ে গেল। আবার একান্ন শতাংশের ভর্তুকি মিশিয়ে ভাবতে শুরু করলাম তুমি আছো৷ তুমি মিলেমিশে আছো প্রতি দিন, রাত। উদ্দেশ্য বহির্ভূত ঠিকানায় চিঠি আসে ঘনঘন৷ অথচ আড়াল করে গড়িয়ে আসে না তোমার দায়বদ্ধ কাজল।
একদিন মেলায় যাব ভাবলাম৷ সেদিনও সঙ্গীহীন। ফুচকার নিপিড়ীত কোণ তখনও রক্তাক্ত। আঘাত গুরুতর। ডান চোখে ভোগ বিলাসের দাগ। মেলা থেকে যে পথ থিতু হয় তোমার শরীরের দিকে, সেই পথে নিয়ন লাগানো নেই একটাও৷ হয়ত স্থানীয় বালক পথ চেনায় আঙুল তুলে। কিন্তু আমি নিঃশব্দে সাড়া দিই ইশারায়৷ শব্দে তোমার ঘুম ভেঙে গেলে মুছে যায় ঔপনিবেশিক চিহ্ন।
প্রতিটি গহ্বরের রং ধুসর। অনাড়ম্বর পৃথিবীর দিকে সমস্ত আলো। আমার সাহসী চোখে বিপর্যস্ত জানলা। উল্লম্ব ভাবে কয়েকটি অক্ষত ক্ষমতাবৃত্তের গরাদ। ছোঁ মেরে নিয়ে গেছে রাত। দায়ী করবার আগেই ঘুম ঘোরে লুটিয়ে পড়েছে সকলে। বাধা দিইনি তোমাকেও। আমার পরিপূর্ণ দেয়ালে শুধু অনিদ্রায় ফাটল। ঘুমোতে চাইলে চোখে নামে গোপন রাত্রি। বাৎসায়ন সূত্রের অলিখিত অংশে ভরে গেছে রজঃস্বলা ঘাম। অসমাপ্ত রয়ে গেছে গভীর গলিপথ।
আমি হয়ত রোজ ছুঁয়ে থাকার কথা বলি। আর নির্দিষ্ট আঙুলে বেঁধে রাখি অসম্পূর্ণ এনগেজমেন্ট রিং। কিন্তু সূর্যোদয়ের প্রতিশ্রুতি দিইনি এখনও৷ বরং একলা রাতে সূর্যের দিকে এগিয়ে দিয়েছি অচেনা নক্ষত্র। পরজীবি শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে পরস্মৈপদী আলো।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
https://x.com/KausikChak1234/status/1907491879341703369?t=ZJGcrUuWTPkerC3uooGLAw&s=19
https://x.com/KausikChak1234/status/1907493273356349484?t=JfoIDqmzhYUrlEOzyvd_Vg&s=19